১২ নভেম্বর ২০২৫, বুধবার, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দিল্লির বিস্ফোরণ ‘মানবতাবিরোধী’ অপরাধ, মন্তব্য বিশিষ্ট মুলসিম নেতাদের

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার
  • / 213

পুবের কলম, নয়াদিল্লি: দিল্লির বিস্ফোরণকে ‘মানবতাবিরোধী’ অপরাধ বলে মন্তব্য করল দেশের বিশিষ্ট মুলসিম নেতারা। একইসঙ্গে সোমের বিস্ফোরণের ঘটনাকে নিন্দা এবং গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। জামায়াতে ইসলামী হিন্দের সভাপতি সৈয়দ সাদাতুল্লাহ হুসাইনি এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “এটা মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ। আমরা এই মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। এই ভয়াবহ ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা আহতদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করছি এবং তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।” কেন্দ্রীয় সরকার বিস্ফোরণের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামী হিন্দের সভাপতি। একইভাবে জমিয়ত উলামা-ই-হিন্দও বিস্ফোরণে প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে এবং এই জঘন্য কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। জমিয়ত প্রধান মাওলানা মাহমুদ আসাদ মাদানি বলেছেন, “আমরা জনগণকে শান্ত ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি এবং যাচাই না করা তথ্য বা গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।” কেন্দ্র-রাজ্যকে অসহায় পরিবারগুলিকে সহায়তা করতে এবং আহতদের হাসপাতালে সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আবেদন জানিয়েছেন বিশিষ্ট আলেম মাওলানা জহির আব্বাস রিজভী। তাঁর কথায়, “দোষীদের কঠোরতম শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

চিশতি ফাউন্ডেশনের প্রধান ও আজমীর শরীফ দরগার প্রধান সৈয়দ সালমান চিশতি এক বিবৃতিতে এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “গভীর শোক ও দুঃখের সঙ্গে আমরা এই মর্মান্তিক বিস্ফোরণে যাদের প্রিয়জন প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি এবং এই মর্মান্তিক ঘটনায় আহতদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।” তিনি সকল সম্প্রদায়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং বিবেকের অধিকারী ব্যক্তিদের প্রার্থনা, সহমর্মিতার চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আমাদের মানবতা হল ঘৃণা, ভয় ও সন্দেহের পরিবর্তে ভালোবাসা এবং শান্তি ও সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।” ইন্টারফেইথ হারমনি ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি ড. খাজা ইফতিখার আহমেদ এই হামলাকে ভারতের সার্বভৌমত্বের ওপর কাপুরুষোচিত হামলা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সব শ্রেণীর মানুষকে এর নিন্দা করার আহ্বান জানান। তাঁর মতে, “এই বর্বর কর্মকাণ্ড, যা অসংখ্য নিরীহ প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। জাতির আত্মাকে গভীরভাবে আঘাত করেছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশপ্রেমিক প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত। গভীর শোক ও সংকল্পের এই সময়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানো।” প্রখ্যাত সার্জন ও পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত ডাঃ ইলিয়াস আলীর কথায়, যারা সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদকে বেছে নিয়েছে তারা ইসলামের অনুসারী নয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের উচিত তাদের বয়কট করা।

উল্লেখ্য, সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লির লালকেল্লার সামনে একটি গাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের পরই গাড়িগুলিতে আগুন লেগে যায়। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত বহু। বিস্ফোরণের পরই গোটা এলাকায় হলস্থূল পড়ে য়ায়। তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ, দমকল এবং একাধিক অ্যাম্বুল্যান্স। কী কারণে বিস্ফোরণ হল, তা এখনও জানা যায়নি। নাশকতার দিকটি উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুড় চড়িয়েছেন অনেকেই। তাঁরা অভিযোগ তুলেছেন, এই ভয়াবহতা এবং বিস্ফোরণ সম্পূর্ণ গোয়েন্দা ও নিরাপত্তার ব্যর্থতা। মুসলিম পলিটিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার সভাপতি ড. তসলিম রাহমানি বলেন, “গত কয়েকদিনে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার সন্দেহে গুজরাট থেকে হরিয়ানা পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এতে বোঝা যায়, এজেন্সিগুলোর কাছে তথ্য ছিল। তবুও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় জোর দেওয়া হল না? কেন আগাম সর্তকতা অবলম্বন করা হল না? এটি সম্পূর্ণ সরকারের ব্যর্থতা।” নিহতদের প্রতি শোকপ্রকাশ করে ড. রাহমানি আরও বলেন, ‘এ ধরনের প্রতিটি ঘটনার পর বিপুল সংখ্যায় মুসলমানদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এটি একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে বদনাম করার একটি উপায় হয়ে ওঠেছে। অতীতের অনেক মামলায় আদালত পরে অভিযুক্তকে নির্দোষ ঘোষণা করেছে। তবুও কেউ জিজ্ঞাসা করে না, যে আসল অপরাধী কে।” দিল্লি সংখ্যালঘু কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. জাফরুল ইসলাম খান বলেছেন, “যখনই এ ধরনের ঘটনা ঘটে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সংবাদমাধ্যমগুলি মুসলমানদের নাম ফুটিয়ে তোলে এবং নিদিষ্ট একটি সম্প্রদায়কে কলঙ্কিত করে। এটা রাজনৈতিক লাভের খেলার মতো হয়ে উঠেছে। এমন অনেক ঘটনা পরে বানোয়াট বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষতি হয়ে গেছে।”

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

দিল্লির বিস্ফোরণ ‘মানবতাবিরোধী’ অপরাধ, মন্তব্য বিশিষ্ট মুলসিম নেতাদের

আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার

পুবের কলম, নয়াদিল্লি: দিল্লির বিস্ফোরণকে ‘মানবতাবিরোধী’ অপরাধ বলে মন্তব্য করল দেশের বিশিষ্ট মুলসিম নেতারা। একইসঙ্গে সোমের বিস্ফোরণের ঘটনাকে নিন্দা এবং গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। জামায়াতে ইসলামী হিন্দের সভাপতি সৈয়দ সাদাতুল্লাহ হুসাইনি এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “এটা মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ। আমরা এই মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। এই ভয়াবহ ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা আহতদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করছি এবং তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।” কেন্দ্রীয় সরকার বিস্ফোরণের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামী হিন্দের সভাপতি। একইভাবে জমিয়ত উলামা-ই-হিন্দও বিস্ফোরণে প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে এবং এই জঘন্য কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। জমিয়ত প্রধান মাওলানা মাহমুদ আসাদ মাদানি বলেছেন, “আমরা জনগণকে শান্ত ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি এবং যাচাই না করা তথ্য বা গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।” কেন্দ্র-রাজ্যকে অসহায় পরিবারগুলিকে সহায়তা করতে এবং আহতদের হাসপাতালে সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আবেদন জানিয়েছেন বিশিষ্ট আলেম মাওলানা জহির আব্বাস রিজভী। তাঁর কথায়, “দোষীদের কঠোরতম শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

চিশতি ফাউন্ডেশনের প্রধান ও আজমীর শরীফ দরগার প্রধান সৈয়দ সালমান চিশতি এক বিবৃতিতে এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “গভীর শোক ও দুঃখের সঙ্গে আমরা এই মর্মান্তিক বিস্ফোরণে যাদের প্রিয়জন প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি এবং এই মর্মান্তিক ঘটনায় আহতদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।” তিনি সকল সম্প্রদায়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং বিবেকের অধিকারী ব্যক্তিদের প্রার্থনা, সহমর্মিতার চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আমাদের মানবতা হল ঘৃণা, ভয় ও সন্দেহের পরিবর্তে ভালোবাসা এবং শান্তি ও সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।” ইন্টারফেইথ হারমনি ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি ড. খাজা ইফতিখার আহমেদ এই হামলাকে ভারতের সার্বভৌমত্বের ওপর কাপুরুষোচিত হামলা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সব শ্রেণীর মানুষকে এর নিন্দা করার আহ্বান জানান। তাঁর মতে, “এই বর্বর কর্মকাণ্ড, যা অসংখ্য নিরীহ প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। জাতির আত্মাকে গভীরভাবে আঘাত করেছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশপ্রেমিক প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত। গভীর শোক ও সংকল্পের এই সময়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানো।” প্রখ্যাত সার্জন ও পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত ডাঃ ইলিয়াস আলীর কথায়, যারা সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদকে বেছে নিয়েছে তারা ইসলামের অনুসারী নয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের উচিত তাদের বয়কট করা।

উল্লেখ্য, সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লির লালকেল্লার সামনে একটি গাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের পরই গাড়িগুলিতে আগুন লেগে যায়। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত বহু। বিস্ফোরণের পরই গোটা এলাকায় হলস্থূল পড়ে য়ায়। তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ, দমকল এবং একাধিক অ্যাম্বুল্যান্স। কী কারণে বিস্ফোরণ হল, তা এখনও জানা যায়নি। নাশকতার দিকটি উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুড় চড়িয়েছেন অনেকেই। তাঁরা অভিযোগ তুলেছেন, এই ভয়াবহতা এবং বিস্ফোরণ সম্পূর্ণ গোয়েন্দা ও নিরাপত্তার ব্যর্থতা। মুসলিম পলিটিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার সভাপতি ড. তসলিম রাহমানি বলেন, “গত কয়েকদিনে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার সন্দেহে গুজরাট থেকে হরিয়ানা পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এতে বোঝা যায়, এজেন্সিগুলোর কাছে তথ্য ছিল। তবুও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় জোর দেওয়া হল না? কেন আগাম সর্তকতা অবলম্বন করা হল না? এটি সম্পূর্ণ সরকারের ব্যর্থতা।” নিহতদের প্রতি শোকপ্রকাশ করে ড. রাহমানি আরও বলেন, ‘এ ধরনের প্রতিটি ঘটনার পর বিপুল সংখ্যায় মুসলমানদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এটি একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে বদনাম করার একটি উপায় হয়ে ওঠেছে। অতীতের অনেক মামলায় আদালত পরে অভিযুক্তকে নির্দোষ ঘোষণা করেছে। তবুও কেউ জিজ্ঞাসা করে না, যে আসল অপরাধী কে।” দিল্লি সংখ্যালঘু কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. জাফরুল ইসলাম খান বলেছেন, “যখনই এ ধরনের ঘটনা ঘটে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সংবাদমাধ্যমগুলি মুসলমানদের নাম ফুটিয়ে তোলে এবং নিদিষ্ট একটি সম্প্রদায়কে কলঙ্কিত করে। এটা রাজনৈতিক লাভের খেলার মতো হয়ে উঠেছে। এমন অনেক ঘটনা পরে বানোয়াট বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষতি হয়ে গেছে।”