১৯ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ মুভিতে একপেশে গল্পের অবতারণা !

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২২, মঙ্গলবার
  • / 160

প্রতীকী ছবি

বিশেষ প্রতিবেদকঃ ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’। ৯০-এর দশকে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দুর্দশা ও কাশ্মীর থেকে চলে আসার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে এই মুভিতে। পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী অন্তত এমনটাই দাবি করেছেন। তবে ছবিটি নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে বিভিন্ন মহলে।
অভিযোগ উঠছে, ছবিটির ‘একপেশে’ ন্যারেটিভ বা বক্তব্য নিয়ে। ছবিটি সত্যের উপর বেস করে নির্মিত নয়। ভারতীয় বায়ু সেনার শহিদ স্কোয়ার্ডন লিডার রবি খান্নার স্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই অভিযোগ করেছেন। নির্মল খান্না বলেন, ছবিটি স্পষ্টতই একপেশেভাবে চিত্রিত করা হয়েছে গোটা ঘটনাটিকে। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁকে না জানিয়ে এমনকি স্বরাষ্ট্র দফতরের অনুমতি ছাড়াই তাঁর স্বামীকে নিয়ে কিছু দৃশ্যের অবতারণা করা হয়েছে। আর তা করা হয়েছে নেতিবাচক আলোকে।

 

আরও পড়ুন: I love Muhammad’ ব্যানারকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা অসাংবিধানিক: জামায়াতে ইসলামি হিন্দ

কাশ্মীরের গত তিন দশকের ইতিহাসে যত সংখ্যক কাশ্মীরি পণ্ডিত মিলিট্যান্টদের হাতে খুন হয়েছেন তাঁর থেকে অনেক বেশি গুণ বেশি খুন হয়েছেন সাধারণ মুসলিমরা। তাহলে তাঁদের সেই জীবন যন্ত্রণার সম্পূর্ণ কাহিনী না হোক একটু ঝলকও তুলে ধরা হল না কেন মুভিটিতে? ২০২১ সালে হরিয়ানার পিপি কাপুর তথ্য জানার অধিকার আইনের বলে আরটিআই করেন। তিনি একজন সমজকর্মী। আরটিআই মারফত তিনি জানতে চান কতজন মানুষ মিলিট্যান্টের হাতে খুন হয়। উত্তরে জানায় যায়, ৮৯ জন হিন্দু পণ্ডিত খুন হয় জঙ্গিদের আক্রমণে। অন্যদিকে খুন হওয়া সাধারণ নাগরিকের সংখ্যা ১৭২৪। যার অধিকাংশই হল সাধারণ কাশ্মীরি মুসলিম। অর্থাৎ মিলিট্যান্ট কর্তৃক হত্যাকৃত নাগরিকের মাত্র ৫ শতাংশ হিন্দু পণ্ডিত।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা তকমা দিয়ে কারমাইকেল হস্টেলের আবাসিকদের উপর আক্রমণের অভিযোগ

 

আরও পড়ুন: পতৌদির পক্ষে সুপ্রিম স্থগিতাদেশে, স্বস্তিতে ভোপালের মুসলিমরা

 

মতিলাল ভট্ট ‘পণ্ডিত হিন্দু ওয়েলেয়ার সোসাইটি’র সভাপতি। তিনি ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খুন হওয়া হিন্দু পণ্ডিতদের সংখ্যা জানান ২১৯জন। উল্লেখ্য, এটি ও একটি সরকারি পরিসংখ্যান। ১৯৯০ সালের ১৯ জানুয়ারি বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা জানায়, প্রায় ১০০০০০ (১ লক্ষ) পণ্ডিত উপত্যকা ছেড়ে চলে আসে। সরকার তাঁদেরকে উপত্যকা ছেড়ে আসার জন্য উৎসাহ ও সহায়তা প্রদান করে। সেইসময় কাশ্মীরের রাজ্যপাল ছিলেন জগমোহন।

 

 

তিনি ছিলেন কট্টর হিন্দুত্ববাদী। যদিও কাশ্মীরি মুসলিম ও হিন্দু পণ্ডিতরা সহধর ভাইয়ের মতো একসঙ্গে উপত্যকায় বাস করত, কিন্তু জগমোহন তাদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেন এই কথা বলে যে, জঙ্গিরা তোমাদের হত্যা করবে। ভারত সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৪০০০০ কাশ্মীরি পণ্ডিত উপত্যকা ত্যাগ করে। অভিযোগ, এরপর থেকেই কাশ্মীরি পণ্ডিতদেরকে ‘বলির বকরা’ বানাচ্ছে দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী  সংগঠনগুলি। ২০২১ সালে ‘কাশ্মীরি পণ্ডিত সংঘর্ষ সমিতি’ (কেপিএসএস) দাবি করে যে, দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য কাশ্মীরি পণ্ডিতদেরকে ব্যবহার করছে। ওই সংঠন ভারত সরকারের কাছে টিভি চ্যানেলগুলোতে কাশ্মীর সংক্রান্ত ডিবেট বন্ধ করারও আবেদন জানায়। যাতে করে কাশ্মীরি পণ্ডিতরা শান্তিতে থাকতে পারে।

 

 

বিতর্কমূলক তথ্য ও পরিসংখ্যানের দিয়ে এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৈরি করা ‘দা কাশ্মীর ফাইলস’ ছবিটি দেশের মধ্যে ঘৃণা, বিদ্বেষ আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।সোশ্যাল মিডিয়াতে সোমবার বিভিন্ন ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। সিনেমা হলের মধ্যেই দর্শকরা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলে চিৎকার করছেন। সে চিত্রও সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠে এসেছে। সাংবাদিক রানা আয়ুব একটি ভিডিয়ো ট্যুইটারে শেয়ার করেছেন। সেখানে দেখা যায় যে, কিছু দর্শক মুভিটি দেখে হলের মধ্যেই দাঁড়িয়ে চিৎকার করে স্লোগান দিচ্ছেন ‘জয় শ্রীরাম’, ‘দেশ কো গাদ্দারো কো গোলি মারো সালে কো।

 

এ দিন ট্যুইটারে আর্টিকেল ৩৭০ ও ট্রেন্ড হতে দেখা যায়। পোস্টকারীরা অনেকেই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য। এমনকি ‘দা কাশ্মীর ফাইলস’ ছবিটি নিয়ে ১০ লক্ষের কাছাকাছি মানুষ ট্যুইটারে পোস্ট করেছেন।

 

বিজেপি শাসিত তিন রাজ্য গুজরাত হরিয়ানা এবং মধ্যপ্রদেশ সরকার ইতিমধ্যে ছবিটির উপর থেকে বিনোদন শুল্ক তুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ছবিটি দেখতে যাওয়ার জন্য উৎসাহমূলক পোস্ট করতে দেখা যায় হিন্দুদের পোস্টার গার্ল অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াতকে। ছবিতে অভিনয় করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী ও অনুপম খের। দু’জনেরই বিজেপি যোগ সর্বজনবিদিত। ছবিটির মুক্তির পর পরিচালক বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রী ও তাঁর টিম প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেই ‘দা কাশ্মীর ফাইলস’ নামক এই বিভেদমূলক ছবিটির সাফল্য কামনা করেছেন।

 

যে কোনও মৃত্যু দুঃখের। মুভিটিতে যে ৬৫০জন কাশ্মীরি পণ্ডিতকে হত্যা করার কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, এই পরিসংখ্যান কোথা থেকে এল? তার কোনও স্পষ্ট জবাব কিন্তু কেউই দিচ্ছেন না। ওয়াকিফহাল মহল বলছেন, স্পর্শকাতর বিষয়ে এই ধরনের একপেশে ছবি কাশ্মীর উপত্যকায় এবং সেইসঙ্গে ভারতে অনৈক্য, বিভাজন এবং বিদ্বেষ তৈরিতে হাওয়া দেবে। কিছু বিশেষজ্ঞ এমনও বলছেন, এই মুভিটি কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ইস্যুটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে বিজেপির পরিকল্পনাকে আরও সংহত ও জোরদার করবে।

 

এই ভুল ধারণাও জোর পাবে যে, হিন্দু কাশ্মীরি পণ্ডিতরাই হচ্ছেন কাশ্মীরের আসল ভূমিপুত্র। আর কাশ্মীরি মুসলিমরা হচ্ছেন বহিরাগত! কাশ্মীরে ধর্মীয় জনবিন্যাস পরিবর্তন করার জন্য যারা চেষ্টা করছেন, তাদের কাজকর্মের প্রতি এই ধরণের প্রচারণা জনমত তৈরি করতে সাহায্য করবে।

 

কাশ্মীরে এখনও হাজার হাজার মুসলিম যুবক নিরুদ্দেশ রয়েছে। তাদের মা, বোন ও স্ত্রীরা জানতে চান, তাদের সন্তান বা স্বামী বেঁচে আছে না নিহত হয়েছে। হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন বা মানবাধিকার সংস্থাগুলি এই প্রশ্নে বার বার কাশ্মীর প্রশাসন ও ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছে, সঠিক জবাব তুলে ধরতে। কিন্তু সরকার এই বিষয়ে নিরুত্তরই রয়েছে। কাশ্মীরে যে এক লক্ষেরও বেশি তরুণ নিহত হয়েছে তাদের বিধবা বা অসহায় পরিবারের জন্য কারও কোনও সহানুভূতি নেই।

 

তাদের পুর্নবাসন বা সাহায্য করার ক্ষেত্রে কাউকেই এগিয়ে আসতে দেখা যায় না। কেউ তাদের নাম উচ্চারণও করে না। এইসব বিষয় নিয়ে অবশ্যই ডকুমেনটারি বা তথ্য চিত্র নির্মাণ করা যেতে পারে। নির্মাণ করা যেতে পারে কাশ্মীর ফাইলস-এর মতো অনেক মুভিও। কিন্তু সেইসব ক্ষেত্রে যারা এই চেষ্টা করবে তাদের ঠিকানা হবে শ্রীনগর বা জম্মুর শ্রীঘরে। যেভাবে কাশ্মীরি সাংবাদিকদের ইউপিপিএ-র মাধ্যমে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাতে কেউ এ বিষয়ে এগিয়ে আসার সাহস পাবে বলে মনে হয় না।

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ মুভিতে একপেশে গল্পের অবতারণা !

আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২২, মঙ্গলবার

বিশেষ প্রতিবেদকঃ ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’। ৯০-এর দশকে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দুর্দশা ও কাশ্মীর থেকে চলে আসার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে এই মুভিতে। পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী অন্তত এমনটাই দাবি করেছেন। তবে ছবিটি নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে বিভিন্ন মহলে।
অভিযোগ উঠছে, ছবিটির ‘একপেশে’ ন্যারেটিভ বা বক্তব্য নিয়ে। ছবিটি সত্যের উপর বেস করে নির্মিত নয়। ভারতীয় বায়ু সেনার শহিদ স্কোয়ার্ডন লিডার রবি খান্নার স্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই অভিযোগ করেছেন। নির্মল খান্না বলেন, ছবিটি স্পষ্টতই একপেশেভাবে চিত্রিত করা হয়েছে গোটা ঘটনাটিকে। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁকে না জানিয়ে এমনকি স্বরাষ্ট্র দফতরের অনুমতি ছাড়াই তাঁর স্বামীকে নিয়ে কিছু দৃশ্যের অবতারণা করা হয়েছে। আর তা করা হয়েছে নেতিবাচক আলোকে।

 

আরও পড়ুন: I love Muhammad’ ব্যানারকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা অসাংবিধানিক: জামায়াতে ইসলামি হিন্দ

কাশ্মীরের গত তিন দশকের ইতিহাসে যত সংখ্যক কাশ্মীরি পণ্ডিত মিলিট্যান্টদের হাতে খুন হয়েছেন তাঁর থেকে অনেক বেশি গুণ বেশি খুন হয়েছেন সাধারণ মুসলিমরা। তাহলে তাঁদের সেই জীবন যন্ত্রণার সম্পূর্ণ কাহিনী না হোক একটু ঝলকও তুলে ধরা হল না কেন মুভিটিতে? ২০২১ সালে হরিয়ানার পিপি কাপুর তথ্য জানার অধিকার আইনের বলে আরটিআই করেন। তিনি একজন সমজকর্মী। আরটিআই মারফত তিনি জানতে চান কতজন মানুষ মিলিট্যান্টের হাতে খুন হয়। উত্তরে জানায় যায়, ৮৯ জন হিন্দু পণ্ডিত খুন হয় জঙ্গিদের আক্রমণে। অন্যদিকে খুন হওয়া সাধারণ নাগরিকের সংখ্যা ১৭২৪। যার অধিকাংশই হল সাধারণ কাশ্মীরি মুসলিম। অর্থাৎ মিলিট্যান্ট কর্তৃক হত্যাকৃত নাগরিকের মাত্র ৫ শতাংশ হিন্দু পণ্ডিত।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা তকমা দিয়ে কারমাইকেল হস্টেলের আবাসিকদের উপর আক্রমণের অভিযোগ

 

আরও পড়ুন: পতৌদির পক্ষে সুপ্রিম স্থগিতাদেশে, স্বস্তিতে ভোপালের মুসলিমরা

 

মতিলাল ভট্ট ‘পণ্ডিত হিন্দু ওয়েলেয়ার সোসাইটি’র সভাপতি। তিনি ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খুন হওয়া হিন্দু পণ্ডিতদের সংখ্যা জানান ২১৯জন। উল্লেখ্য, এটি ও একটি সরকারি পরিসংখ্যান। ১৯৯০ সালের ১৯ জানুয়ারি বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা জানায়, প্রায় ১০০০০০ (১ লক্ষ) পণ্ডিত উপত্যকা ছেড়ে চলে আসে। সরকার তাঁদেরকে উপত্যকা ছেড়ে আসার জন্য উৎসাহ ও সহায়তা প্রদান করে। সেইসময় কাশ্মীরের রাজ্যপাল ছিলেন জগমোহন।

 

 

তিনি ছিলেন কট্টর হিন্দুত্ববাদী। যদিও কাশ্মীরি মুসলিম ও হিন্দু পণ্ডিতরা সহধর ভাইয়ের মতো একসঙ্গে উপত্যকায় বাস করত, কিন্তু জগমোহন তাদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেন এই কথা বলে যে, জঙ্গিরা তোমাদের হত্যা করবে। ভারত সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৪০০০০ কাশ্মীরি পণ্ডিত উপত্যকা ত্যাগ করে। অভিযোগ, এরপর থেকেই কাশ্মীরি পণ্ডিতদেরকে ‘বলির বকরা’ বানাচ্ছে দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী  সংগঠনগুলি। ২০২১ সালে ‘কাশ্মীরি পণ্ডিত সংঘর্ষ সমিতি’ (কেপিএসএস) দাবি করে যে, দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য কাশ্মীরি পণ্ডিতদেরকে ব্যবহার করছে। ওই সংঠন ভারত সরকারের কাছে টিভি চ্যানেলগুলোতে কাশ্মীর সংক্রান্ত ডিবেট বন্ধ করারও আবেদন জানায়। যাতে করে কাশ্মীরি পণ্ডিতরা শান্তিতে থাকতে পারে।

 

 

বিতর্কমূলক তথ্য ও পরিসংখ্যানের দিয়ে এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৈরি করা ‘দা কাশ্মীর ফাইলস’ ছবিটি দেশের মধ্যে ঘৃণা, বিদ্বেষ আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।সোশ্যাল মিডিয়াতে সোমবার বিভিন্ন ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। সিনেমা হলের মধ্যেই দর্শকরা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলে চিৎকার করছেন। সে চিত্রও সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠে এসেছে। সাংবাদিক রানা আয়ুব একটি ভিডিয়ো ট্যুইটারে শেয়ার করেছেন। সেখানে দেখা যায় যে, কিছু দর্শক মুভিটি দেখে হলের মধ্যেই দাঁড়িয়ে চিৎকার করে স্লোগান দিচ্ছেন ‘জয় শ্রীরাম’, ‘দেশ কো গাদ্দারো কো গোলি মারো সালে কো।

 

এ দিন ট্যুইটারে আর্টিকেল ৩৭০ ও ট্রেন্ড হতে দেখা যায়। পোস্টকারীরা অনেকেই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য। এমনকি ‘দা কাশ্মীর ফাইলস’ ছবিটি নিয়ে ১০ লক্ষের কাছাকাছি মানুষ ট্যুইটারে পোস্ট করেছেন।

 

বিজেপি শাসিত তিন রাজ্য গুজরাত হরিয়ানা এবং মধ্যপ্রদেশ সরকার ইতিমধ্যে ছবিটির উপর থেকে বিনোদন শুল্ক তুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ছবিটি দেখতে যাওয়ার জন্য উৎসাহমূলক পোস্ট করতে দেখা যায় হিন্দুদের পোস্টার গার্ল অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াতকে। ছবিতে অভিনয় করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী ও অনুপম খের। দু’জনেরই বিজেপি যোগ সর্বজনবিদিত। ছবিটির মুক্তির পর পরিচালক বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রী ও তাঁর টিম প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেই ‘দা কাশ্মীর ফাইলস’ নামক এই বিভেদমূলক ছবিটির সাফল্য কামনা করেছেন।

 

যে কোনও মৃত্যু দুঃখের। মুভিটিতে যে ৬৫০জন কাশ্মীরি পণ্ডিতকে হত্যা করার কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, এই পরিসংখ্যান কোথা থেকে এল? তার কোনও স্পষ্ট জবাব কিন্তু কেউই দিচ্ছেন না। ওয়াকিফহাল মহল বলছেন, স্পর্শকাতর বিষয়ে এই ধরনের একপেশে ছবি কাশ্মীর উপত্যকায় এবং সেইসঙ্গে ভারতে অনৈক্য, বিভাজন এবং বিদ্বেষ তৈরিতে হাওয়া দেবে। কিছু বিশেষজ্ঞ এমনও বলছেন, এই মুভিটি কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ইস্যুটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে বিজেপির পরিকল্পনাকে আরও সংহত ও জোরদার করবে।

 

এই ভুল ধারণাও জোর পাবে যে, হিন্দু কাশ্মীরি পণ্ডিতরাই হচ্ছেন কাশ্মীরের আসল ভূমিপুত্র। আর কাশ্মীরি মুসলিমরা হচ্ছেন বহিরাগত! কাশ্মীরে ধর্মীয় জনবিন্যাস পরিবর্তন করার জন্য যারা চেষ্টা করছেন, তাদের কাজকর্মের প্রতি এই ধরণের প্রচারণা জনমত তৈরি করতে সাহায্য করবে।

 

কাশ্মীরে এখনও হাজার হাজার মুসলিম যুবক নিরুদ্দেশ রয়েছে। তাদের মা, বোন ও স্ত্রীরা জানতে চান, তাদের সন্তান বা স্বামী বেঁচে আছে না নিহত হয়েছে। হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন বা মানবাধিকার সংস্থাগুলি এই প্রশ্নে বার বার কাশ্মীর প্রশাসন ও ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছে, সঠিক জবাব তুলে ধরতে। কিন্তু সরকার এই বিষয়ে নিরুত্তরই রয়েছে। কাশ্মীরে যে এক লক্ষেরও বেশি তরুণ নিহত হয়েছে তাদের বিধবা বা অসহায় পরিবারের জন্য কারও কোনও সহানুভূতি নেই।

 

তাদের পুর্নবাসন বা সাহায্য করার ক্ষেত্রে কাউকেই এগিয়ে আসতে দেখা যায় না। কেউ তাদের নাম উচ্চারণও করে না। এইসব বিষয় নিয়ে অবশ্যই ডকুমেনটারি বা তথ্য চিত্র নির্মাণ করা যেতে পারে। নির্মাণ করা যেতে পারে কাশ্মীর ফাইলস-এর মতো অনেক মুভিও। কিন্তু সেইসব ক্ষেত্রে যারা এই চেষ্টা করবে তাদের ঠিকানা হবে শ্রীনগর বা জম্মুর শ্রীঘরে। যেভাবে কাশ্মীরি সাংবাদিকদের ইউপিপিএ-র মাধ্যমে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাতে কেউ এ বিষয়ে এগিয়ে আসার সাহস পাবে বলে মনে হয় না।