০৫ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার, ১৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কতদিন সংখ্যালঘুরা শহিদ হতেই থাকবে!

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২২, বুধবার
  • / 70

রামপুরহাট অগ্নিকাণ্ডে মৃত দম্পতি

বিশেষ প্রতিবেদকঃ পশ্চিমবাংলায় সংখ্যালঘু মুসলিমরা জনসংখ্যার কমবেশি ৩০ শতাংশ। কিন্তু সেই সিপিএম-এর আমল থেকেই দেখা গেছে পশ্চিমবাংলায় যে রাজনৈতিক খুন কিংবা গণহত্যা হয়েছে, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ কিংবা লুঠপাট হয়েছে তার শতকরা ৮০ শতাংশই হচ্ছে মুসলিমরা। দেখা গেছে তারা বামফ্রন্ট, এসইউসিআই কিংবা কংগ্রেসের লেঠেল হিসেবেই কাজ করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে হয়ে মুসলিমরাই অকাতরে একে অপরের প্রাণ নিয়েছে, আর প্রাণ দিয়েছে। পক্ষ প্রতিপক্ষ উভয়েই তাদেরকে দিন কয়েকের জন্য ‘শহিদ’-এর মর্যাদা দিয়েছে। তারপর তাদের বিধবা বউ, এতিম শিশুর খবর নেওয়ার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি।

খাদ্য আন্দোলনে নিহত নুরুলের মাকে নিয়ে সিপিএম অবশ্য অনেক গণসঙ্গীত তৈরি করেছিল। বিভিন্ন সভাসমিতিতে তাঁকে প্রদর্শনও করেছিল। কিন্তু সেই নুরুলের মায়ের খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান ও চিকিৎসা নিয়ে কেউ ভাবেনি। তৃণমূল ভবনে শহিদদের যে তালিকা টাঙানো ছিল তাতেও এক উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে মুসলিমরা।মুসলিম প্রধান জেলা মুর্শিদাবাদ তো রাজনৈতিক খুনোখুনিতে ভারতের মধ্যে এক শ্রেষ্ঠ আসন করে নিয়েছিল। বাম নেতারা ওই পরিবারগুলিকে সান্তনা দিতেন, তোদের ভাই, তোদের বাবা জনগণের জন্য প্রাণ দিয়েছে, এ কি কম গর্বের কথা! কিন্তু দেখা যেত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কিংবা তাদের পরিবারগুলির কেউই শ্রেণির লড়াইতে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন না।

আরও পড়ুন: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বানারহাট থেকে ফিরতেই বিজেপি সাংসদ কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ সংখ্যালঘুদের

পশ্চিমবাংলায় মুসলিমরা সেইসময় যে কতটা গরিব ছিল, তাদের শিক্ষার হার কি ছিল, নারীদের অবস্থা কতটা তথৈবচ ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কংগ্রেস বা বাম নেতারা কিন্তু এই শোচনীয় অবস্থা স্বীকার করতেন না। তাঁরা বলতেন, আমরা হিন্দু-মুসলিম বুঝি না। যে শ্রেষ্ঠ, যে যোগ্য আমাদের সরকারে তাঁরাই সুযোগ পায়। কিন্তু মুসলিমরা কখনই সেই সুযোগ না পার্টিতে না সরকারে না চাকরিতে যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারত।

আরও পড়ুন: রাজ্যগুলিতে হজ কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রককে উদ্যোগী হতে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

 

আরও পড়ুন: রমযানে রেশনে বাড়তি সামগ্রী পাবেন সংখ্যালঘুরা

দু-একজন নেহার বানু অবশ্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কাজ হাসিল করতে পেরেছিলেন। কিন্তু টিকতে পারেননি। সাচার কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর বিমানবাবু, অনিল বিশ্বাস, সেলিম সাহেবরা খানিকটা বুঝেছিলেন, এই সম্প্রদায়টির তার কি হাল করে ছেড়েছেন। বাংলাদেশের মুসলিমরা যখন রেডিও, টিভি, সরকারি চাকরি, রাষ্ট্রসংঘ, পুলিশ,প্রশাসন, অ্যাম্বাসি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, তখন সাচার কমিটি জানিয়েছে বাংলার মুসলিমরা কি অবস্থায় রয়েছে। অথচ ২৫ বছর আগেও তারা একই ছিলেন। পশ্চিমবাংলার মুসলিমরা বরং পূর্ববাংলার মুসলিমদের থেকে অনেকাংশেই এগিয়ে ছিলেন।

ছোট আঙারিয়া, নানুর, রামপুরহাট সব জায়গাতেই গণহত্যার শিকার মুসলিমরা। এই ট্র্যাডিশন কতদিন সমানে চলবে?

 

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

কতদিন সংখ্যালঘুরা শহিদ হতেই থাকবে!

আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২২, বুধবার

বিশেষ প্রতিবেদকঃ পশ্চিমবাংলায় সংখ্যালঘু মুসলিমরা জনসংখ্যার কমবেশি ৩০ শতাংশ। কিন্তু সেই সিপিএম-এর আমল থেকেই দেখা গেছে পশ্চিমবাংলায় যে রাজনৈতিক খুন কিংবা গণহত্যা হয়েছে, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ কিংবা লুঠপাট হয়েছে তার শতকরা ৮০ শতাংশই হচ্ছে মুসলিমরা। দেখা গেছে তারা বামফ্রন্ট, এসইউসিআই কিংবা কংগ্রেসের লেঠেল হিসেবেই কাজ করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে হয়ে মুসলিমরাই অকাতরে একে অপরের প্রাণ নিয়েছে, আর প্রাণ দিয়েছে। পক্ষ প্রতিপক্ষ উভয়েই তাদেরকে দিন কয়েকের জন্য ‘শহিদ’-এর মর্যাদা দিয়েছে। তারপর তাদের বিধবা বউ, এতিম শিশুর খবর নেওয়ার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি।

খাদ্য আন্দোলনে নিহত নুরুলের মাকে নিয়ে সিপিএম অবশ্য অনেক গণসঙ্গীত তৈরি করেছিল। বিভিন্ন সভাসমিতিতে তাঁকে প্রদর্শনও করেছিল। কিন্তু সেই নুরুলের মায়ের খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান ও চিকিৎসা নিয়ে কেউ ভাবেনি। তৃণমূল ভবনে শহিদদের যে তালিকা টাঙানো ছিল তাতেও এক উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে মুসলিমরা।মুসলিম প্রধান জেলা মুর্শিদাবাদ তো রাজনৈতিক খুনোখুনিতে ভারতের মধ্যে এক শ্রেষ্ঠ আসন করে নিয়েছিল। বাম নেতারা ওই পরিবারগুলিকে সান্তনা দিতেন, তোদের ভাই, তোদের বাবা জনগণের জন্য প্রাণ দিয়েছে, এ কি কম গর্বের কথা! কিন্তু দেখা যেত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কিংবা তাদের পরিবারগুলির কেউই শ্রেণির লড়াইতে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন না।

আরও পড়ুন: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বানারহাট থেকে ফিরতেই বিজেপি সাংসদ কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ সংখ্যালঘুদের

পশ্চিমবাংলায় মুসলিমরা সেইসময় যে কতটা গরিব ছিল, তাদের শিক্ষার হার কি ছিল, নারীদের অবস্থা কতটা তথৈবচ ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কংগ্রেস বা বাম নেতারা কিন্তু এই শোচনীয় অবস্থা স্বীকার করতেন না। তাঁরা বলতেন, আমরা হিন্দু-মুসলিম বুঝি না। যে শ্রেষ্ঠ, যে যোগ্য আমাদের সরকারে তাঁরাই সুযোগ পায়। কিন্তু মুসলিমরা কখনই সেই সুযোগ না পার্টিতে না সরকারে না চাকরিতে যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারত।

আরও পড়ুন: রাজ্যগুলিতে হজ কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রককে উদ্যোগী হতে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

 

আরও পড়ুন: রমযানে রেশনে বাড়তি সামগ্রী পাবেন সংখ্যালঘুরা

দু-একজন নেহার বানু অবশ্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কাজ হাসিল করতে পেরেছিলেন। কিন্তু টিকতে পারেননি। সাচার কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর বিমানবাবু, অনিল বিশ্বাস, সেলিম সাহেবরা খানিকটা বুঝেছিলেন, এই সম্প্রদায়টির তার কি হাল করে ছেড়েছেন। বাংলাদেশের মুসলিমরা যখন রেডিও, টিভি, সরকারি চাকরি, রাষ্ট্রসংঘ, পুলিশ,প্রশাসন, অ্যাম্বাসি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, তখন সাচার কমিটি জানিয়েছে বাংলার মুসলিমরা কি অবস্থায় রয়েছে। অথচ ২৫ বছর আগেও তারা একই ছিলেন। পশ্চিমবাংলার মুসলিমরা বরং পূর্ববাংলার মুসলিমদের থেকে অনেকাংশেই এগিয়ে ছিলেন।

ছোট আঙারিয়া, নানুর, রামপুরহাট সব জায়গাতেই গণহত্যার শিকার মুসলিমরা। এই ট্র্যাডিশন কতদিন সমানে চলবে?