রোযা শরীর-মন পরিশুদ্ধ করে

- আপডেট : ৮ এপ্রিল ২০২২, শুক্রবার
- / 33

ড. সুরঞ্জন মিদ্দে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। বাঙালি খ্রিস্টান সমাজের একজন অগ্রণী ব্যক্তিত্বও। রমযান ও রোযা নিয়ে তাঁর অনুভূতির কথা শুনলেন প্রদীপ মজুমদার ।
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : ছোটবেলায় আমি থাকতাম দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বাসন্তিতে। আমাদের এলাকাটি হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টানের এক মহা মিলনের স্থান। ভোরে ঘুম ভাঙতো আজানের ধ্বনি শুনে। কোনও দিন আমাদের কাছে তা বিরক্তিকর বলে মনে হয়নি। বরং বেশ ভালো লাগত। আবার রমযান মাস এলে মধ্যরাতে শুনতে পেতাম মসজিদের মাইক থেকে মুসলিমদের উদ্দেশে সজাগ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেহরি খাওয়ার সময় হয়ে গেছে। তার পরই হতো ফজরের নামায। আমরা দেখেছি, মুসলিম প্রতিবেশিদের মধ্যে সেই সময় কতটা উৎসাহ ও উদ্দীপনা। সেহরি বা মধ্যরাতে কিছু খাবার খেয়ে, ফজরের নামাযের জন্য অপেক্ষা। তারপর নামায সেরে কেউ ঘুমিয়ে পড়ত, কেউ বা তখন থেকেই চাষাবাদ বা নিত্য দিনের কাজে নেমে পড়তেন।
এরপর দেখেছি, সারাদিন অনাহারে থেকেও তাদের কোনও ক্ষুধার কাতরতা নেই, বরং দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে নিত্যদিনের কাজকর্ম করতে দেখেছি। পরে জেনেছি, এটাই ইসলামের নির্দেশনা। যে মাসে পবিত্র কুরআন শরিফ নাজিল হয়েছিল, সেই মাসে রোযা রেখে আল্লাহর স্মরণ করলে তাঁর নৈকট্য পাওয়া যায়। রমযান মাস আসলে সংযম চর্চার মাস বলে আমার মনে হয়। সারাদিন অনাহারে থেকে দারিদ্রের ক্ষুধার জ্বালা অনুভব করা যায়। তাই বোধহয় সন্ধ্যায় রোযা ভাঙার সময় ইফতার করতে অনেককেই ডেকে নেওয়া হয়। এই যে দলগতভাবে খাওয়ার অভ্যাস, যেখানে কোনও ভেদাভেদ নেই, সেটাই তো প্রকৃত সাম্য। প্রথম প্রথম অফিসে, দোকানে দেখতাম এক সঙ্গে অনেকে মিলে ফলাহার করে রোযা ভাঙছেন। তখন এর আধ্যাত্মিক মাহাত্ম ততটা বুঝতাম না। পরবর্তীতে পড়াশোনা করে, মুসলিম বন্ধুদের কাছ থেকে জেনেছি, রোযা আসলেই সংযমের ব্রত। লোভ- লালসা- ভোগবাদ পরিহার করার অভ্যাস গড়ে তোলার এক শৃঙ্খলিত চর্চা।
উপবাস করা প্রায় সব ধর্মেই রয়েছে। আমাদের খ্রিস্টান সমাজে গুড ফ্রাইডে উপলক্ষে সারাদিন উপবাসে থাকার ৪০ দিনের রীতি আছে। তবে সেটা যার যার খুশি মতো। কেউ এক সপ্তাহ উপবাসে থাকে, কেউ একদিন-দুইদিন। শরীরকে রেস্ট দেওয়া দরকার। কিন্তু ইসলামে রমযান মাস জুড়ে যে রোযা রাখার নিয়ম তাতে শরীর, মন পরিশুদ্ধ হয়। পরিশুদ্ধ হয় সমাজ। কারণ, রোযা মানুষকে পাপ কাজ করা থেকে বিরত রাখে।