ব্যাঙ্কের সাফাইকর্মী থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, দীর্ঘ লড়াইয়ের জীবনে এক অনুপ্রেরণার নাম প্রতীক্ষা টন্ডওয়ালকর

- আপডেট : ৩ অগাস্ট ২০২২, বুধবার
- / 50
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক : বাড়িতে অভাব, স্বামী বিয়োগ, মানসিক চিন্তাকে হেলায় দূরে সরিয়ে প্রতীক্ষা টন্ডওয়ালকরের জীবন এক অসাধারণ অনুপ্রেরণার কাহিনি। দীর্ঘ লড়াই, কষ্ট, ধৈর্য্য, অধ্যবসায়ের বলে স্টেস্ট ব্যাঙ্কের সাফাইকর্মী তিনি আজ ব্যাঙ্কের শীর্ষ কর্তাদের একজন।
মাত্র ২০ বছর বয়সে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার সাফাইকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন প্রতীক্ষা। বেতন ছিল মাসে ৬০-৬৫ টাকা। স্কুলের গণ্ডি পার না হওয়ার কারণে একজন সাফাইকর্মী হিসেবেই কাজ শুরু করেন তিনি। পুণের মেয়ে প্রতীক্ষার লড়াই শুরু হয় শৈশব থেকেই। দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়া প্রতীক্ষার জীবন শুরু হয়েছিল কষ্টের মধ্য দিয়েই। গরীব পরিবারের মেয়ের বিয়ে দেওয়াই তখন ছিল তার পরিবারের কাছে অন্যতম ভরসা।
মাত্র ১৬ বছর বয়সেই বিয়ে হয় প্রতীক্ষার। পাত্রের নাম সদাশিব কাড়ু। সদাশিব তখন মুম্বইতে থাকতেন। এসবিআই-তে তিনি বুক বাইন্ডার হিসেবে কাজ করতেন তিনি। বিয়ের এক বছরের মাথায় তাদের পুত্র বিনায়কের জন্ম হয়। তখন নবজাতক পুত্রকে নিয়ে গ্রামে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। এদিকে গ্রামে ফেরার সময় জীবনে অঘটন নেমে আসে প্রতীক্ষার। পুরো পরিবার দুর্ঘটনার মধ্যে পড়ে। মৃত্যু হয় সদাশিবের।
তখনও দশম শ্রেণীর গণ্ডি পার হননি প্রতীক্ষা। শুরু হয় নবজাতক সন্তানকে নিয়ে তার একা থাকার লড়াই। প্রতীক্ষার বয়স তখন মাত্র ২০। সম্বল ছিল স্বামীর বেতনের শেষ কিছু টাকা। সেই টাকা পেতে এসবিআই শাখায় যে ব্র্যাঞ্চে স্বামী সদাশিব কাজ করতেন সেখানে যান প্রতীক্ষা। বেঁচে থাকার জন্য একটি চাকরিও চান তিনি। দশম উত্তীর্ণ না হওয়ায় সাফাইকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। বেতন মাসে ৬০-৬৫ টাকা। ব্যাঙ্কের এলাকা পরিষ্কার, শৌচাগার সাফাই আসবাবপত্র ধুয়ে দিয়ে দুই ঘন্টা কাজ করতেন। কিন্তু ব্যাঙ্কের কাজ তাকে ক্রমশ অনুপ্রাণিত করে তোলে। প্রতীক্ষা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। তার স্বপ্নের পথে সঙ্গী হন কয়েকজন ব্যাঙ্ক কর্মী। ফর্ম পূরণ করে এক মাসের ছুটি দেওয়া ইত্যাদির বন্দোবস্ত করে প্রতীক্ষা দশম শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। প্রতীক্ষার পাশে দাঁড়ায় তার আত্মীয় স্বজন থেকে বন্ধুবান্ধবরা। সন্তান সামলে দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় পাশ করেন তিনি।
প্রতীক্ষা জানিয়েছেন, অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, ছেলের এক প্যাকেট বিস্কুট কিনতে হলে বাস থেকে এক স্টপেজ আগে নেমে যেতে হত পয়সা বাঁচাতে। যা টাকা জমাতে পেরেছিলেন, সেই টাকা দিয়েই মুম্বইয়ের ভিক্রোলিতে একটি নাইট কলেজে দ্বাদশ উত্তীর্ণ হন তিনি। ১৯৯৫ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক ওই কলেজ থেকে। এর পর ছিল স্বপ্নকে সার্থক করার পালা। বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাঙ্কের কেরানি পদে যোগদান। দক্ষতা, পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে উন্নতি। ১৯৯৩ সালে তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। তাঁর স্বামী ছিলেন একজন ব্যাঙ্ক মেসেঞ্জার। তিনিও সব সময় প্রতীক্ষাকে সাহায্য করেছিলেন। ২০০৪ সালে প্রতীক্ষা একজন ট্রেইনি অফিসার হিসেবে ব্যাঙ্কে যোগ দেন। তারপরে বিভিন্ন অফিসারের গ্রেড অতিক্রম করে তিনি এজিএম পদে উন্নীত হন।
১৯৬৪ সালের পুণের এক অখ্যাত গ্রামে দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়া প্রতীক্ষা টন্ডওয়ালকর আজ এক অনুপ্রেরণার নাম। এসবিআইয়ের সঙ্গে প্রতীক্ষাদেবীর যাত্রাপথ প্রায় ৩৭ বছরের। প্রতীক্ষার ভালো ব্যবহার, দক্ষতা, অধ্যবসায়, পরিশ্রম, ভালো কাজের জন্য তিনি তাঁর কর্মক্ষেত্রে প্রশংসা পেয়েছেন। খুব শীঘ্রই অবসর নেবেন তিনি। তবে অবসরের পরেও বসে থাকতে চান না তিনি।
২০২১ সালে তিনি ন্যাচেরোপ্যাথি কোর্সও সম্পন্ন করেছেন। বাকি জীবন এই ন্যাচেরোপ্যাথির মাধ্যমে মানুষের সেবা করে সময় কাটাতে চান তিনি।