২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বনদফতরের চরম উদাসীনতায় ডুয়ার্সের গোঁসাইয়ের হাট  ইকো পার্ক হারাচ্ছে তার জৌলুস

অর্পিতা লাহিড়ী
  • আপডেট : ২ জানুয়ারী ২০২৩, সোমবার
  • / 41

 

 

আরও পড়ুন: ডুয়ার্সের কাঠামবাড়ি জঙ্গলে আগুন, চাঞ্চল্য

 

আরও পড়ুন: ডুয়ার্সে জলের টানে খাদ্যের খোঁজে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বানর দল

 

আরও পড়ুন: প্রচণ্ড দাবদাহে শুকিয়ে যাচ্ছে ডুয়ার্সের একাধিক জঙ্গলের ঝোরা

শুভজিৎ দেবনাথ ডুয়ার্স: “ডুয়ার্সের অতি পরিচিত গোঁসাইয়ের হাট  ইকো পার্ক আজ হারাতে বসেছে তার জৌলুস , বনদফতরের চরম উদাসীনতায় বিপন্ন হতে বসেছে গোঁসাইয়ের হাটের পাখিরালয়  এমনটাই মত পরিবেশ প্রেমীদের। দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস বন মন্ত্রীর।

বনদফতরের চরম উদাসীনতায় ডুয়ার্সের গোঁসাইয়ের হাট  ইকো পার্ক হারাচ্ছে তার জৌলুস

 

জলপাইগুড়ি বন বিভাগের মোরাঘাট রেঞ্জের খট্টিমারি গোঁসাইয়ের হাট  ইকো পার্কের থেকে মুখ ফিরিয়েছে পরিযায়ীরা! শীত পড়লেও দেখা নেই পরিযায়ী পাখির। ঝিলের সংস্কার না হওয়ায় কারণেই আগের মত আর পাখি আসছে না বলেই দাবি করছেন স্থানীয়রা ।উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগেও এখানকার মনোরম ঝিলের আকর্ষণে সারা বছরই ভিড় জমাতো প্রচুর পরিমাণে দেশী বিদেশী পাখির ঝাঁক । প্রায় ৪৮ থেকে ৫০ প্রজাতীর এখানে আসতো ।যেমন স্নেক নেক বার্ড, লেজার হুইসলিং ডাক , চকাচকি, গুড়িয়াল, ডাহুক, জল মুরগি, অল্প কিছু জলপিপি, পানকৌড়ি, মত সরাল প্রজাতির একাধিক পরিযায়ী পাখি। বছরের অন্যান্য ঋতুতে ও পাখিদের দেখা মিলত হামেশাই ।

বনদফতরের চরম উদাসীনতায় ডুয়ার্সের গোঁসাইয়ের হাট  ইকো পার্ক হারাচ্ছে তার জৌলুস

তাই পাখির ডাকে ঘুমিয়ে , পাখির ডাকে জেগে ওঠায় দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই পাখিরালয় সংলগ্ন খুকলুং রাভা বস্তি বাসিন্দাদের । বর্তমানে সেই ইকো পার্কের বেহাল অবস্থা । সংস্কার না করায় ঝিলের মধ্যে জমে রয়েছে প্রচুর কচুরিপানা।যার কারণেই পরিযায়ী পাখিরা এখানে আর ভিড় জমাচ্ছে না । এক সময় এই পাখি দেখতে ছুটে আসত উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক , পাখিপ্রেমী এবং পাখি বিশেষজ্ঞর থেকে দেশি বিদেশী পর্যটকরা । কিন্তু বর্তমানে সেই পক্ষীরালয় ও ইকো পার্ক টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পর্যটক দের জন্য ।অভিযোগ, নেই কোন পাহারা ও নজরদারি বন দপ্তরের । যার ফলে একদিকে যেমন চোরা শিকারিরা মেরে নিয়ে যাচ্ছে পরিযায়ী পাখি। তেমনি বাড়ছে অসামাজিক কাজ পরিত্যক্ত কটেজ গুলিতে।তৈরী করা কটেজ গুলির সমস্ত কিছু চুরি হয়ে গিয়েছে । নেই আসবা পত্র ,খাট ,বিছানা । এমনকি জানালা,দড়জাও খুলে নিয়ে গেছে নজর মিনারের। নজর দারি না থাকায় । গোটা এলাকা জুরে পরে রয়েছে প্লাস্টিকের গ্লাস , থালা , মদের বোতল ।

 

বনদফতরের চরম উদাসীনতায় ডুয়ার্সের গোঁসাইয়ের হাট  ইকো পার্ক হারাচ্ছে তার জৌলুস

 

ওই এলাকায় ঘুরতে আসা পর্যটক রেশমা খাতুন বলেন, আগে যখন এসেছিলাম তখন এই পার্কটি খুব ভাল ছিল দেশি-বিদেশি পাখি দেখতে পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এখানকার অবস্থা দেখলে মনে হয় এখানে মদ-জুয়ার ঠেক বসে। আগের মত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা দরকার এই ইকো পার্কটি তে।প্রসঙ্গত,এলাকা টির বর্ণময় পরিবেশ ও বৈচিত্র লক্ষ্য করে ২০০৭ সালে রাজ্যের প্রাক্তন প্রয়াত বনমন্ত্রী যোগেশ চন্দ্র বর্মন নিজে উদ্যোগী হয়ে ঝিলের সংরক্ষণের এবং জল সংরক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে ।যার ফল মিলেছে হাতেনাতে বছর কাটতে না কাটতেই আদর্শ পরিবেশের খোঁজে পেয়ে পরিযায়ী পাখিরা ধীরে ধীরে আসতে শুরু করে এই জলাশয় । আর পাখিদের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল গোসাইরহাট এই ঝিলটি ।স্থানীয় খুকলুং ,রাভা বস্তির বাসিন্দাদের স্বনির্ভর করে তোলার উদ্দেশ্যে এই ঝিলের সংস্কার করা হয় ।তৈরি করা হয়েছিল ওয়াচ টাওয়ার ও পর্যটকদের রাত্রি বাসের জন্য দুটি সুদৃশ্য কটেজ । শীতকালে যাতে পর্যটকরা ঘুরতে এসে এখানে রাত্রি যাপন করতে পারে বা পাখি গবেষকরা এখানে থেকে পাখিদের গবেষণা করতে পারে সেজন্য। কিন্তু বর্তমানে সেগুলোও আরো জরাজীর্ণ অবস্থা তাই ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী থেকে পর্যটকরাও সকলেই চান দ্রুত সংস্কার করা হোক এই গোসাইরহাট পক্ষীরালয় টির নজরদারি বারাক বনদপ্তর।

 

বন সুরক্ষা কমিটির সদস্য তথা এলাকার বাসিন্দা রবি রাভা বলেন , বহু দিন থেকে গোসাইয়ের হাট পার্ক টি বন্ধ রয়েছে । জরাজীর্ণ অবস্থায় পরে রয়েছে। আমরা পার্ক টি খুলবার জন্য বহুবার আবেদন জানিয়ে ছিলাম বিধায়ক, বনাধিকারিক দের কাছে। আশা করেছিলাম জানুয়ারি মাসের শুরুতে পার্ক টি খুলে যাবে । বনকর্মীদের নজরদারির অভাবে ঝিল টি নষ্ট হয়ে গিয়েছে । কচুরিপানা তে ভরে গেছে । দ্রুত সংস্কার করা উচিত ।নফর আলী,ডুয়ার্সের পরিবেশ প্রেমী সংস্থা ন্যাসের কর্মকর্তা বলেন , পার্কটি পরিচর্যার অভাবেই এভাবে নষ্ট হয়ে গেছে ।কয়েক বছর আগেও শীতের মরশুমে প্রায় ৪০-৫০ প্রজাতীর পাখি আসতো । এখন আর আসেনা ।পার্কের ভেতরে সব কিছু চুরি হয়ে গিয়েছে বন দফতরের নজর দারির অভাবে আজ নষ্টের পথে, এমন কি নজরদারি না থাকায় ভেতরে পাখি পর্যন্ত শিকার করা হচ্ছে বলেই আমাদের কাছে খবর আসছে। কটেজের সমস্ত আসবারপত্র চুরি হয়ে গিয়েছে দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন । আমরা পর্যটন কেন্দ্রটি চালু করার দাবিতে বন মন্ত্রীকে চিঠি করব।এবিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বনদফতরের চরম উদাসীনতায় ডুয়ার্সের গোঁসাইয়ের হাট  ইকো পার্ক হারাচ্ছে তার জৌলুস

আপডেট : ২ জানুয়ারী ২০২৩, সোমবার

 

 

আরও পড়ুন: ডুয়ার্সের কাঠামবাড়ি জঙ্গলে আগুন, চাঞ্চল্য

 

আরও পড়ুন: ডুয়ার্সে জলের টানে খাদ্যের খোঁজে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বানর দল

 

আরও পড়ুন: প্রচণ্ড দাবদাহে শুকিয়ে যাচ্ছে ডুয়ার্সের একাধিক জঙ্গলের ঝোরা

শুভজিৎ দেবনাথ ডুয়ার্স: “ডুয়ার্সের অতি পরিচিত গোঁসাইয়ের হাট  ইকো পার্ক আজ হারাতে বসেছে তার জৌলুস , বনদফতরের চরম উদাসীনতায় বিপন্ন হতে বসেছে গোঁসাইয়ের হাটের পাখিরালয়  এমনটাই মত পরিবেশ প্রেমীদের। দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস বন মন্ত্রীর।

বনদফতরের চরম উদাসীনতায় ডুয়ার্সের গোঁসাইয়ের হাট  ইকো পার্ক হারাচ্ছে তার জৌলুস

 

জলপাইগুড়ি বন বিভাগের মোরাঘাট রেঞ্জের খট্টিমারি গোঁসাইয়ের হাট  ইকো পার্কের থেকে মুখ ফিরিয়েছে পরিযায়ীরা! শীত পড়লেও দেখা নেই পরিযায়ী পাখির। ঝিলের সংস্কার না হওয়ায় কারণেই আগের মত আর পাখি আসছে না বলেই দাবি করছেন স্থানীয়রা ।উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগেও এখানকার মনোরম ঝিলের আকর্ষণে সারা বছরই ভিড় জমাতো প্রচুর পরিমাণে দেশী বিদেশী পাখির ঝাঁক । প্রায় ৪৮ থেকে ৫০ প্রজাতীর এখানে আসতো ।যেমন স্নেক নেক বার্ড, লেজার হুইসলিং ডাক , চকাচকি, গুড়িয়াল, ডাহুক, জল মুরগি, অল্প কিছু জলপিপি, পানকৌড়ি, মত সরাল প্রজাতির একাধিক পরিযায়ী পাখি। বছরের অন্যান্য ঋতুতে ও পাখিদের দেখা মিলত হামেশাই ।

বনদফতরের চরম উদাসীনতায় ডুয়ার্সের গোঁসাইয়ের হাট  ইকো পার্ক হারাচ্ছে তার জৌলুস

তাই পাখির ডাকে ঘুমিয়ে , পাখির ডাকে জেগে ওঠায় দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই পাখিরালয় সংলগ্ন খুকলুং রাভা বস্তি বাসিন্দাদের । বর্তমানে সেই ইকো পার্কের বেহাল অবস্থা । সংস্কার না করায় ঝিলের মধ্যে জমে রয়েছে প্রচুর কচুরিপানা।যার কারণেই পরিযায়ী পাখিরা এখানে আর ভিড় জমাচ্ছে না । এক সময় এই পাখি দেখতে ছুটে আসত উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক , পাখিপ্রেমী এবং পাখি বিশেষজ্ঞর থেকে দেশি বিদেশী পর্যটকরা । কিন্তু বর্তমানে সেই পক্ষীরালয় ও ইকো পার্ক টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পর্যটক দের জন্য ।অভিযোগ, নেই কোন পাহারা ও নজরদারি বন দপ্তরের । যার ফলে একদিকে যেমন চোরা শিকারিরা মেরে নিয়ে যাচ্ছে পরিযায়ী পাখি। তেমনি বাড়ছে অসামাজিক কাজ পরিত্যক্ত কটেজ গুলিতে।তৈরী করা কটেজ গুলির সমস্ত কিছু চুরি হয়ে গিয়েছে । নেই আসবা পত্র ,খাট ,বিছানা । এমনকি জানালা,দড়জাও খুলে নিয়ে গেছে নজর মিনারের। নজর দারি না থাকায় । গোটা এলাকা জুরে পরে রয়েছে প্লাস্টিকের গ্লাস , থালা , মদের বোতল ।

 

বনদফতরের চরম উদাসীনতায় ডুয়ার্সের গোঁসাইয়ের হাট  ইকো পার্ক হারাচ্ছে তার জৌলুস

 

ওই এলাকায় ঘুরতে আসা পর্যটক রেশমা খাতুন বলেন, আগে যখন এসেছিলাম তখন এই পার্কটি খুব ভাল ছিল দেশি-বিদেশি পাখি দেখতে পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এখানকার অবস্থা দেখলে মনে হয় এখানে মদ-জুয়ার ঠেক বসে। আগের মত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা দরকার এই ইকো পার্কটি তে।প্রসঙ্গত,এলাকা টির বর্ণময় পরিবেশ ও বৈচিত্র লক্ষ্য করে ২০০৭ সালে রাজ্যের প্রাক্তন প্রয়াত বনমন্ত্রী যোগেশ চন্দ্র বর্মন নিজে উদ্যোগী হয়ে ঝিলের সংরক্ষণের এবং জল সংরক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে ।যার ফল মিলেছে হাতেনাতে বছর কাটতে না কাটতেই আদর্শ পরিবেশের খোঁজে পেয়ে পরিযায়ী পাখিরা ধীরে ধীরে আসতে শুরু করে এই জলাশয় । আর পাখিদের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল গোসাইরহাট এই ঝিলটি ।স্থানীয় খুকলুং ,রাভা বস্তির বাসিন্দাদের স্বনির্ভর করে তোলার উদ্দেশ্যে এই ঝিলের সংস্কার করা হয় ।তৈরি করা হয়েছিল ওয়াচ টাওয়ার ও পর্যটকদের রাত্রি বাসের জন্য দুটি সুদৃশ্য কটেজ । শীতকালে যাতে পর্যটকরা ঘুরতে এসে এখানে রাত্রি যাপন করতে পারে বা পাখি গবেষকরা এখানে থেকে পাখিদের গবেষণা করতে পারে সেজন্য। কিন্তু বর্তমানে সেগুলোও আরো জরাজীর্ণ অবস্থা তাই ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী থেকে পর্যটকরাও সকলেই চান দ্রুত সংস্কার করা হোক এই গোসাইরহাট পক্ষীরালয় টির নজরদারি বারাক বনদপ্তর।

 

বন সুরক্ষা কমিটির সদস্য তথা এলাকার বাসিন্দা রবি রাভা বলেন , বহু দিন থেকে গোসাইয়ের হাট পার্ক টি বন্ধ রয়েছে । জরাজীর্ণ অবস্থায় পরে রয়েছে। আমরা পার্ক টি খুলবার জন্য বহুবার আবেদন জানিয়ে ছিলাম বিধায়ক, বনাধিকারিক দের কাছে। আশা করেছিলাম জানুয়ারি মাসের শুরুতে পার্ক টি খুলে যাবে । বনকর্মীদের নজরদারির অভাবে ঝিল টি নষ্ট হয়ে গিয়েছে । কচুরিপানা তে ভরে গেছে । দ্রুত সংস্কার করা উচিত ।নফর আলী,ডুয়ার্সের পরিবেশ প্রেমী সংস্থা ন্যাসের কর্মকর্তা বলেন , পার্কটি পরিচর্যার অভাবেই এভাবে নষ্ট হয়ে গেছে ।কয়েক বছর আগেও শীতের মরশুমে প্রায় ৪০-৫০ প্রজাতীর পাখি আসতো । এখন আর আসেনা ।পার্কের ভেতরে সব কিছু চুরি হয়ে গিয়েছে বন দফতরের নজর দারির অভাবে আজ নষ্টের পথে, এমন কি নজরদারি না থাকায় ভেতরে পাখি পর্যন্ত শিকার করা হচ্ছে বলেই আমাদের কাছে খবর আসছে। কটেজের সমস্ত আসবারপত্র চুরি হয়ে গিয়েছে দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন । আমরা পর্যটন কেন্দ্রটি চালু করার দাবিতে বন মন্ত্রীকে চিঠি করব।এবিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।