০৩ অগাস্ট ২০২৫, রবিবার, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৭ রমযানে বদরের যুদ্ধ ইনসাফ প্রতিষ্ঠার পয়গাম

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৩, সোমবার
  • / 33

১৭ রমযানে বদরের যুদ্ধ ইনসাফ প্রতিষ্ঠার পয়গামআহমদ হাসান ইমরান:  রবিবার ছিল ১৭ রমযান। ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ দিবস। যুদ্ধ কথাটি ব্যবহৃত হলেও আসলে এই সংগ্রাম ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। বদরের প্রান্তরে মাহে রমযানে সংঘটিত এই লড়াই ছিল অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম।

সকলেই জানেন, আল্লাহতে বিশ্বাসী এবং তাওহীদ বা একেশ্বরবাদী মুসলিমরা মক্কায় ১৩ বছর ধরে নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। বহুবার হযরত মুহাম্মদ সা.-সহ তাঁর সাহবীদের প্রাণ সংশয় হয়েছে। তাঁদের অপরাধ ছিল, তাঁরা মানুষকে এক আল্লাহকে মেনে চলার ডাক দিয়েছিলেন। ডাক দিয়েছিলেন কুসংস্কার, অন্যায়, অত্যাচার, নারী নির্যাতন দূর করার এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠার। আর এই পয়গামই মক্কার কুরাইশ ও অন্যান্য গোষ্ঠীর সহ্য হয়নি। ফলে প্রথমে হযরত মুহাম্মদ সা. ও পরে ইসলাম গ্রহণ করা মুসলিমরা মক্কা থেকে মদিনায় চলে আসেন। আর রাসূল মুহাম্মদ সা.-এর নেতৃত্বে মদিনায় মুসলিমদের অবস্থান ক্রমশ দৃঢ় ও শক্তিশালী হতে থাকে। ফলে মক্কার অবিশ্বাসীরা মদিনা থেকেও মুসলিমদের উৎখাত করার জন্য চক্রান্ত করতে থাকে।

আরও পড়ুন: প্রয়াত রামকৃষ্ণ মঠ, মিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বামী প্রভানন্দজি মহারাজ,  শোকবার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

তাঁরা স্পষ্ট অনুধাবন করে হযরত মুহাম্মদ সা. নির্দেশিত ইসলাম শুধু মক্কাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, তা ছড়িয়ে পড়বে সম্পূর্ণ আরব উপত্যকায়, আর একদিন সারা বিশ্বে। এছাড়া মদিনা মাঝখানে অবস্থিত হওয়ায় কুরাইশদের বাণিজ্য পথ নিয়েও ছিল আশঙ্কা। তাঁরা সঠিক ধারণা করেছিলেন যে, মক্কার মুসলিমরা শত্রুতায়রত কুরাইশদের বাণিজ্য ও কাফেলার চলা বন্ধ করে দিতে পারে।

আরও পড়ুন: ব্রিটেনের ঐতিহাসিক স্যাটেলাইট মিশন ব্যর্থ

তাই কুরাইশরা মদিনায় সংহত মুসলিমদের অঙ্কুরেই বিনাশ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আর এই খবর মদিনাবাসীদের অজানা ছিল না। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, মক্কার কুরাইশরা বিরাট প্রস্তুতি, সৈন্যবল এবং অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মদিনা আক্রমণের জন্য এগিয়ে আসছে।

সত্যি কথা বলতে কি, এই ধরনের বিশাল বাহিনী মোকাবিলা করার মতো সামর্থ মুসলিমদের ছিল না। কুরাইশদের সেনাবাহিনীতে ছিল প্রায় ১ হাজার যোদ্ধা। আর তাদের মোকাবিলা করার জন্য রাসূল মুহাম্মদ সা.-এর নেতৃত্বে মদিনাবাসীরা মাত্র ৩১৩ জন সেনাকে জোগাড় করতে পেরেছিল। উভয় পক্ষই সমবেত হয়েছিল মদিনার কাছে অবস্থিত বদরের প্রান্তরে। দুনিয়ার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে, এই অসম যুদ্ধে কুরাইশদের বিজয় ছিল নিশ্চিত। আর তাহলেই ইসলামের নবী মুহাম্মদ সা. ও তাঁর পয়গাম-সহ তাওহীদের বার্তা দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।

কিন্তু মুসলিমরা শুধু জাগতিক উপকরণের উপর ভরসা করেনি। তারা ভরসা করেছিল আল্লাহ্‌র মদতের উপর। লড়াই শুরু হওয়ার আগে আসমানের দিকে দুহাত তুলে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে রসূল সা. প্রার্থনা করেছিলেন, হে আল্লাহ্ এই বিশাল সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করার শক্তি ক্ষুদ্র এই মোমিন বাহিনীর নেই। আজ যদি মুসলিমরা হেরে যায়, তাহলে তোমাকে আল্লাহ্‌র বলে ডাকার কেউ থাকবে না। মুসলিমরা ঈমানি শক্তি নিয়ে কুরাইশদের বিশাল বাহিনীর মুখোমুখি হল। আল্লাহ্তায়লা ফেরেশতাদের দিয়ে ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনীর কাছে গায়েবি মদত পাঠালেন। ৩১৩ জন সাহাবী ১৭ রমযানের বদর প্রান্তরের যুদ্ধে প্রায় হাজার জনের কুরাইশ বাহিনীকে পরাজিত করলেন। হতাহত হয়ে ও ক্ষয়ক্ষতি সহ্য করে অবিশ্বাসী কুরাইশ বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে মক্কায় ফিরে গেল। মাহে রমযানের মধ্যে অস্তিত্ব রক্ষার এই যুদ্ধে মুসলিমরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লে আজ সারা বিশ্বে ইসলামের নাম-গন্ধ থাকত না।

রমযানের মধ্যে হযরত মুহাম্মদ সা. তাঁর সাথীদের নিয়ে ইসলামের মাধ্যমে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম করেন, তাকে নিঃসন্দেহে মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ বিপ্লব বলা যায়। তিনি সর্ব প্রথম ন্যায় বিচার সম্মত একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। অপসংস্কৃতি, বৈষম্য, নির্যাতন ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রকৃতপক্ষেই মুসলিমরা সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করেছিলেন। ১৭ রমযান বদরের যুদ্ধের কথা কুরআন, হাদিস ও ইতিহাসে বিস্তৃতভাবে বিবৃত রয়েছে। আমাদের প্রতি বছরই এই সংগ্রামকে স্মরণ করে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

১৭ রমযানে বদরের যুদ্ধ ইনসাফ প্রতিষ্ঠার পয়গাম

আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৩, সোমবার

১৭ রমযানে বদরের যুদ্ধ ইনসাফ প্রতিষ্ঠার পয়গামআহমদ হাসান ইমরান:  রবিবার ছিল ১৭ রমযান। ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ দিবস। যুদ্ধ কথাটি ব্যবহৃত হলেও আসলে এই সংগ্রাম ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। বদরের প্রান্তরে মাহে রমযানে সংঘটিত এই লড়াই ছিল অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম।

সকলেই জানেন, আল্লাহতে বিশ্বাসী এবং তাওহীদ বা একেশ্বরবাদী মুসলিমরা মক্কায় ১৩ বছর ধরে নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। বহুবার হযরত মুহাম্মদ সা.-সহ তাঁর সাহবীদের প্রাণ সংশয় হয়েছে। তাঁদের অপরাধ ছিল, তাঁরা মানুষকে এক আল্লাহকে মেনে চলার ডাক দিয়েছিলেন। ডাক দিয়েছিলেন কুসংস্কার, অন্যায়, অত্যাচার, নারী নির্যাতন দূর করার এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠার। আর এই পয়গামই মক্কার কুরাইশ ও অন্যান্য গোষ্ঠীর সহ্য হয়নি। ফলে প্রথমে হযরত মুহাম্মদ সা. ও পরে ইসলাম গ্রহণ করা মুসলিমরা মক্কা থেকে মদিনায় চলে আসেন। আর রাসূল মুহাম্মদ সা.-এর নেতৃত্বে মদিনায় মুসলিমদের অবস্থান ক্রমশ দৃঢ় ও শক্তিশালী হতে থাকে। ফলে মক্কার অবিশ্বাসীরা মদিনা থেকেও মুসলিমদের উৎখাত করার জন্য চক্রান্ত করতে থাকে।

আরও পড়ুন: প্রয়াত রামকৃষ্ণ মঠ, মিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বামী প্রভানন্দজি মহারাজ,  শোকবার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

তাঁরা স্পষ্ট অনুধাবন করে হযরত মুহাম্মদ সা. নির্দেশিত ইসলাম শুধু মক্কাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, তা ছড়িয়ে পড়বে সম্পূর্ণ আরব উপত্যকায়, আর একদিন সারা বিশ্বে। এছাড়া মদিনা মাঝখানে অবস্থিত হওয়ায় কুরাইশদের বাণিজ্য পথ নিয়েও ছিল আশঙ্কা। তাঁরা সঠিক ধারণা করেছিলেন যে, মক্কার মুসলিমরা শত্রুতায়রত কুরাইশদের বাণিজ্য ও কাফেলার চলা বন্ধ করে দিতে পারে।

আরও পড়ুন: ব্রিটেনের ঐতিহাসিক স্যাটেলাইট মিশন ব্যর্থ

তাই কুরাইশরা মদিনায় সংহত মুসলিমদের অঙ্কুরেই বিনাশ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আর এই খবর মদিনাবাসীদের অজানা ছিল না। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, মক্কার কুরাইশরা বিরাট প্রস্তুতি, সৈন্যবল এবং অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মদিনা আক্রমণের জন্য এগিয়ে আসছে।

সত্যি কথা বলতে কি, এই ধরনের বিশাল বাহিনী মোকাবিলা করার মতো সামর্থ মুসলিমদের ছিল না। কুরাইশদের সেনাবাহিনীতে ছিল প্রায় ১ হাজার যোদ্ধা। আর তাদের মোকাবিলা করার জন্য রাসূল মুহাম্মদ সা.-এর নেতৃত্বে মদিনাবাসীরা মাত্র ৩১৩ জন সেনাকে জোগাড় করতে পেরেছিল। উভয় পক্ষই সমবেত হয়েছিল মদিনার কাছে অবস্থিত বদরের প্রান্তরে। দুনিয়ার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে, এই অসম যুদ্ধে কুরাইশদের বিজয় ছিল নিশ্চিত। আর তাহলেই ইসলামের নবী মুহাম্মদ সা. ও তাঁর পয়গাম-সহ তাওহীদের বার্তা দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।

কিন্তু মুসলিমরা শুধু জাগতিক উপকরণের উপর ভরসা করেনি। তারা ভরসা করেছিল আল্লাহ্‌র মদতের উপর। লড়াই শুরু হওয়ার আগে আসমানের দিকে দুহাত তুলে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে রসূল সা. প্রার্থনা করেছিলেন, হে আল্লাহ্ এই বিশাল সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করার শক্তি ক্ষুদ্র এই মোমিন বাহিনীর নেই। আজ যদি মুসলিমরা হেরে যায়, তাহলে তোমাকে আল্লাহ্‌র বলে ডাকার কেউ থাকবে না। মুসলিমরা ঈমানি শক্তি নিয়ে কুরাইশদের বিশাল বাহিনীর মুখোমুখি হল। আল্লাহ্তায়লা ফেরেশতাদের দিয়ে ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনীর কাছে গায়েবি মদত পাঠালেন। ৩১৩ জন সাহাবী ১৭ রমযানের বদর প্রান্তরের যুদ্ধে প্রায় হাজার জনের কুরাইশ বাহিনীকে পরাজিত করলেন। হতাহত হয়ে ও ক্ষয়ক্ষতি সহ্য করে অবিশ্বাসী কুরাইশ বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে মক্কায় ফিরে গেল। মাহে রমযানের মধ্যে অস্তিত্ব রক্ষার এই যুদ্ধে মুসলিমরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লে আজ সারা বিশ্বে ইসলামের নাম-গন্ধ থাকত না।

রমযানের মধ্যে হযরত মুহাম্মদ সা. তাঁর সাথীদের নিয়ে ইসলামের মাধ্যমে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম করেন, তাকে নিঃসন্দেহে মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ বিপ্লব বলা যায়। তিনি সর্ব প্রথম ন্যায় বিচার সম্মত একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। অপসংস্কৃতি, বৈষম্য, নির্যাতন ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রকৃতপক্ষেই মুসলিমরা সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করেছিলেন। ১৭ রমযান বদরের যুদ্ধের কথা কুরআন, হাদিস ও ইতিহাসে বিস্তৃতভাবে বিবৃত রয়েছে। আমাদের প্রতি বছরই এই সংগ্রামকে স্মরণ করে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।