বিলকিস কাণ্ডে আসামীদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে ৬ হাজার মানুষের স্বাক্ষর সম্বলিত যৌথ বিবৃতি

- আপডেট : ১৯ অগাস্ট ২০২২, শুক্রবার
- / 10
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বিলকিস বানো কাণ্ডে স্বাধীনতা দিবসের দিনই মুক্তি পায় এই নৃশংস, বর্বরোচিত ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১১ জন কয়েদী। বন্দিদের মুক্তির পরেই মিষ্টি বিনিময়ও চলে। আর সাজাপ্রাপ্ত কয়েদীদের মুক্তির পর পরই দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। এই রায়ের পরে সবচেয়ে বিধ্বস্ত বিলকিস বানো নিজে।
এক বক্তব্যে বিলকিস বানো জানিয়েছেন, এই রায়ে তিনি স্তম্ভিত। এই রায় ন্যায়বিচারের প্রতি আমার বিশ্বাসকে আঘাত করেছে। ২০২২ সালের ১৫ অগাস্ট, বিগত ২০ বছরের ট্রমা আমাকে আবার বিপর্যস্ত করে দিয়ে গেল। আমি শুনলাম যে ১১ জন দোষী ব্যক্তি, যারা আমার পরিবার এবং আমার জীবন ধ্বংস করেছে এবং আমার ৩ বছরের মেয়েকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে, তারা মুক্ত করে দেওয়া হল। কোনও নারীর বিচার এভাবে শেষ হয় কী করে? আমি আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে বিশ্বাস করতাম। আমি রাষ্ট্রের ওপর আস্থা রেখেছিলাম, এবং আমি ধীরে ধীরে আমার ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতাম। বিলকিস বলেন, এই আসামীদের মুক্তি আমার কাছ থেকে আমার শান্তি কেড়ে নিয়েছে, ন্যায়বিচারের প্রতি আমার বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিয়েছে। আমার দুঃখ এবং আমার ভেঙে যাওয়া বিশ্বাস শুধু আমার একার নয়, প্রতিটি মহিলার যারা আদালতে ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম তাদের সকলের।
এদিকে গোধরায় বিলকিস বানোর অপরাধীদের আগাম মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি উঠেছে। ছ’হাজার মানুষের স্বাক্ষর সম্বলিত এক যৌথ বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে ১১ জন দোষীর মুক্তির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক এবং পুনরায় কারাগারেই নিক্ষেপ করা হোক।
ইতিমধ্যেই বিলকিস বানো মামলায় আদেশ প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছেন মন্ত্রী কেটি রামা রাও। টিআরএস-এর কার্যনির্বাহী সভাপতি, মন্ত্রী কেটি রামা রাও একটি ট্যুইট করে বলেন, প্রিয় নরেন্দ্র মোদিজী, আপনি যদি সত্যিই মহিলাদের সম্মান করার কথা বোঝাতে চেয়েছেন, তাহলে গুজরাত সরকার যে ১১ জন ধর্ষককে মুক্তি দিয়েছে, তার প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ করছি। এটিকে হাল্কাভাবে না নিয়ে জাতির প্রতি বিচক্ষণতা দেখান’।
আর একটি ট্যুইট করে কেটি রামা রাও ভারতীয় দণ্ডবিধি ও ফৌজদারি কার্যবিধির যথাযথ সংশোধন করার জন্য অনুরোধ করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘যাতে কোনও ধর্ষক বিচার বিভাগের মাধ্যমে জামিন পেতে না পারে। একমাত্র কঠোর আইনি ব্যবস্থা ও বিচার বিভাগের দ্রুত প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সঠিক বিচার দেওয়া সম্ভব’।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ৩ মার্চ বিলকিসকে দাহোদ জেলার লিমখেদা তালুকে গণধর্ষণের শিকার হতে হয়েছিল। তখন বিলকিস গর্ভবতী ছিলেন। সেই অভিশপ্ত দিনে যে ১৪ জনকে হত্যা করেছিল দাঙ্গাকারীরা, তার মধ্যে বিলকিসের তিন বছরের শিশুকন্যা সালেহাও ছিল।