৩১ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আধার নিয়ে নাজেহাল, সুযোগ বুঝে সর্বত্র ভুয়ো সংস্থার দাঁও

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২ এপ্রিল ২০২২, শনিবার
  • / 160

হাবিব মণ্ডল: বৈধ পরিচয়পত্র হিসেবে বর্তমানে আধার কার্ডের ব্যবহার প্রায় সকল ক্ষেত্রে অপরিহার্য। ব্যাঙ্ক, চিকিৎসা, রান্নার গ্যাস-সংক্রান্ত বিষয় থেকে রেশন-সামগ্রী তুলতে এখন প্রামাণ্য দলিল হিসেবে ‘মহার্ঘ’ ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা আধার কার্ড। ফলত, আধার কার্ডে ভুল, কার্ড না থাকা বা আধার কার্ড স্থানান্তর-সংক্রান্ত বিষয়ে প্রবল চাপে থাকেন ভুক্তভোগী নাগরিকরা। কার্যত, মানুষের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যজুড়ে রমরমা ব্যবসা ফেঁদেছে কিছু সংস্থা। এক একটা কার্ডের সংশোধন, নতুন কার্ড তৈরি কিংবা স্থানান্তরের জন্য হাতানো হচ্ছে ৪০০-৭০০ কিংবা হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ এই কাজের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার খরচ ধার্য করেছে মাত্র ৫০ টাকা। প্রতিটি জেলায় এমনই অস্বাভাবিক চড়া হারে চলছে আধার কার্ডের কালোবাজারি। যা সংবাদমাধ্যমে দৌলতে প্রায়ই সামনে আসছে।

সাধারণত আধার কার্ডের বেশিরভাগ তথ্যাদি নিজেই সংশোধন করা যায়। একটি স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সংযোগই যথেষ্ট। কিন্তু বায়োমেট্রিক-এর প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ না থাকায় গুনতে হচ্ছে মোটা টাকা।  সরকারি আধার কেন্দ্র থেকে করালেও খরচ যৎসামান্য। ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিস থেকেও তা করা যায়, কিন্তু ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে আধার কার্ড সংশোধনের জন্য প্রতিদিন ১৫ জন পর্যন্ত নাম নথিভুক্ত করা হয়। অন্যান্য কাজের চাপে সেখানকার কর্মীদের এই কাজে বেশি সময় দেওয়া সম্ভবও নয়। ফলত, সেখানে দিনে দিনে নামের পাহাড় তৈরি হয়। ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের অপেক্ষায় থাকলে না পাবে রেশন সামগ্রী, না হবে জরুরি কাজের অগ্রগতি। তাই দ্রুত ‘মহার্ঘ’ আধারের জন্য এই সংস্থাগুলির কাছে যেতে বাধ্য হন সাধারণ মানুষ।

আরও পড়ুন: নাগরিকত্বের প্রমাণ নয় আধার কার্ড: সাফ জানালেন ইউআইডিএআই প্রধান

মগরাহাট থানার যুগদিয়া পঞ্চায়েতের এক তরুণী জানাচ্ছে, ‘বিয়ের এক বছর পরও কার্ড স্থানান্তর করতে পারেনি। স্থানীয় ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে আধার সংক্রান্ত কাজ হচ্ছে না। অন্য কোনও কেন্দ্র থেকে করতে গেলে চাওয়া হচ্ছে মোটা টাকা।’ তাঁর আরও দাবি, ‘আধারের সরলীকরণ বা অসাধু ব্যবসায়ীদের বিষয়ে পদক্ষেপ নিক রাজ্য সরকার এবং প্রয়োজনীয় নজরদারি চালাক সংস্থাগুলির উপর।’

আরও পড়ুন: বদলে গেল প্যান, আধার, আইটিআর, ট্রেন বুকিং ও ক্রেডিট কার্ডের নিয়ম

এদিকে, জয়নগর থানার দক্ষিণ বারাসত পঞ্চায়েতের রমাকান্তবাটি গ্রামের দুই গৃহবধূ মাসুদা মণ্ডল ও জাসমিনা মণ্ডলের অভিযোগ, ‘দক্ষিণ বারাসত পোস্ট অফিসে আধার কার্ডের কাজ হচ্ছে। তার জন্য নাম লেখাতে হয়। কিন্তু পালা কবে আসবে তার ঠিক নেই। কারণ সেখানে হাজার হাজার নাম নথিভুক্ত হয়ে আছে।’ দুই বাচ্চার রেশন কার্ড হলেও আধার কার্ড না থাকায় রেশন পাচ্ছি না বলেও তাঁর অভিযোগ। তাদের দাবি, প্রতিটি পঞ্চায়েত, ব্লক, পোস্ট অফিস ও সরকারি ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের শাখায় নতুন আধার কার্ড প্রণয়ন বা সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়া হোক। প্রতিবেদক সংশ্লিষ্ট পোস্ট অফিসে যোগাযোগ করে জানতে পারেন— ‘এখনও ১,৫০০ নাম জমা পড়ে আছে। প্রতিদিন ৪-৬টার বেশি কার্ড করা হয় না। তাই কবে-কার নাম আসবে বলা শক্ত’

আরও পড়ুন: আধারের আদলে আপার কার্ড! জেনে নিন কার্যকারিতা

উল্লেখ্য, আধার সংশোধন করার জন্য শুধুমাত্র ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের কোনও সরকারি কর্মীকে ইউনিক ডিভাইস আইডেন্টিফিকেশন (UDAI) আইডি দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে আধার সংশোধন করতে পারেন সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মী এবং তা সংশ্লিষ্ট দফতরে বসেই সম্ভব।

সূত্রের খবর, সেই ইউডিআই লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দেন সরকারি কর্মীরা। আবার কোনও কোনও ইউডিআই হ্যাক করেও আধার-সংক্রান্ত কাজ চলছে বাজারে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চলে এইসব কালোবাজারি।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

আধার নিয়ে নাজেহাল, সুযোগ বুঝে সর্বত্র ভুয়ো সংস্থার দাঁও

আপডেট : ২ এপ্রিল ২০২২, শনিবার

হাবিব মণ্ডল: বৈধ পরিচয়পত্র হিসেবে বর্তমানে আধার কার্ডের ব্যবহার প্রায় সকল ক্ষেত্রে অপরিহার্য। ব্যাঙ্ক, চিকিৎসা, রান্নার গ্যাস-সংক্রান্ত বিষয় থেকে রেশন-সামগ্রী তুলতে এখন প্রামাণ্য দলিল হিসেবে ‘মহার্ঘ’ ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা আধার কার্ড। ফলত, আধার কার্ডে ভুল, কার্ড না থাকা বা আধার কার্ড স্থানান্তর-সংক্রান্ত বিষয়ে প্রবল চাপে থাকেন ভুক্তভোগী নাগরিকরা। কার্যত, মানুষের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যজুড়ে রমরমা ব্যবসা ফেঁদেছে কিছু সংস্থা। এক একটা কার্ডের সংশোধন, নতুন কার্ড তৈরি কিংবা স্থানান্তরের জন্য হাতানো হচ্ছে ৪০০-৭০০ কিংবা হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ এই কাজের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার খরচ ধার্য করেছে মাত্র ৫০ টাকা। প্রতিটি জেলায় এমনই অস্বাভাবিক চড়া হারে চলছে আধার কার্ডের কালোবাজারি। যা সংবাদমাধ্যমে দৌলতে প্রায়ই সামনে আসছে।

সাধারণত আধার কার্ডের বেশিরভাগ তথ্যাদি নিজেই সংশোধন করা যায়। একটি স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সংযোগই যথেষ্ট। কিন্তু বায়োমেট্রিক-এর প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ না থাকায় গুনতে হচ্ছে মোটা টাকা।  সরকারি আধার কেন্দ্র থেকে করালেও খরচ যৎসামান্য। ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিস থেকেও তা করা যায়, কিন্তু ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে আধার কার্ড সংশোধনের জন্য প্রতিদিন ১৫ জন পর্যন্ত নাম নথিভুক্ত করা হয়। অন্যান্য কাজের চাপে সেখানকার কর্মীদের এই কাজে বেশি সময় দেওয়া সম্ভবও নয়। ফলত, সেখানে দিনে দিনে নামের পাহাড় তৈরি হয়। ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের অপেক্ষায় থাকলে না পাবে রেশন সামগ্রী, না হবে জরুরি কাজের অগ্রগতি। তাই দ্রুত ‘মহার্ঘ’ আধারের জন্য এই সংস্থাগুলির কাছে যেতে বাধ্য হন সাধারণ মানুষ।

আরও পড়ুন: নাগরিকত্বের প্রমাণ নয় আধার কার্ড: সাফ জানালেন ইউআইডিএআই প্রধান

মগরাহাট থানার যুগদিয়া পঞ্চায়েতের এক তরুণী জানাচ্ছে, ‘বিয়ের এক বছর পরও কার্ড স্থানান্তর করতে পারেনি। স্থানীয় ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে আধার সংক্রান্ত কাজ হচ্ছে না। অন্য কোনও কেন্দ্র থেকে করতে গেলে চাওয়া হচ্ছে মোটা টাকা।’ তাঁর আরও দাবি, ‘আধারের সরলীকরণ বা অসাধু ব্যবসায়ীদের বিষয়ে পদক্ষেপ নিক রাজ্য সরকার এবং প্রয়োজনীয় নজরদারি চালাক সংস্থাগুলির উপর।’

আরও পড়ুন: বদলে গেল প্যান, আধার, আইটিআর, ট্রেন বুকিং ও ক্রেডিট কার্ডের নিয়ম

এদিকে, জয়নগর থানার দক্ষিণ বারাসত পঞ্চায়েতের রমাকান্তবাটি গ্রামের দুই গৃহবধূ মাসুদা মণ্ডল ও জাসমিনা মণ্ডলের অভিযোগ, ‘দক্ষিণ বারাসত পোস্ট অফিসে আধার কার্ডের কাজ হচ্ছে। তার জন্য নাম লেখাতে হয়। কিন্তু পালা কবে আসবে তার ঠিক নেই। কারণ সেখানে হাজার হাজার নাম নথিভুক্ত হয়ে আছে।’ দুই বাচ্চার রেশন কার্ড হলেও আধার কার্ড না থাকায় রেশন পাচ্ছি না বলেও তাঁর অভিযোগ। তাদের দাবি, প্রতিটি পঞ্চায়েত, ব্লক, পোস্ট অফিস ও সরকারি ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের শাখায় নতুন আধার কার্ড প্রণয়ন বা সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়া হোক। প্রতিবেদক সংশ্লিষ্ট পোস্ট অফিসে যোগাযোগ করে জানতে পারেন— ‘এখনও ১,৫০০ নাম জমা পড়ে আছে। প্রতিদিন ৪-৬টার বেশি কার্ড করা হয় না। তাই কবে-কার নাম আসবে বলা শক্ত’

আরও পড়ুন: আধারের আদলে আপার কার্ড! জেনে নিন কার্যকারিতা

উল্লেখ্য, আধার সংশোধন করার জন্য শুধুমাত্র ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের কোনও সরকারি কর্মীকে ইউনিক ডিভাইস আইডেন্টিফিকেশন (UDAI) আইডি দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে আধার সংশোধন করতে পারেন সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মী এবং তা সংশ্লিষ্ট দফতরে বসেই সম্ভব।

সূত্রের খবর, সেই ইউডিআই লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দেন সরকারি কর্মীরা। আবার কোনও কোনও ইউডিআই হ্যাক করেও আধার-সংক্রান্ত কাজ চলছে বাজারে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চলে এইসব কালোবাজারি।