মোল্লা জসিমউদ্দিন: শুক্রবার রাজ্যের মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকাকে নোটিস ইস্যু করলো কলকাতা হাইকোর্ট। নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলায় উত্তর চেয়ে নোটিস দেওয়া হয়েছে রাজ্যের শীর্ষ আমলা কে। আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তার মধ্যে জবাব দিতে হবে কলকাতা হাইকোর্টে। এদিন এই নোটিস জারি করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। নিয়োগ দুর্নীতিতে জামিন সংক্রান্ত মামলায় এই নোটিস জারি করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। রাজ্য অনুমতি না দেওয়ায় অভিযুক্ত বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না বলেই এই নোটিস দেওয়া হয়েছে।নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় বেশ কয়েকজন সরকারি আধিকারিককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে অনেকেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্যদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। সিবিআই আদালতে যুক্তি দিয়েছে যে সরকারি অফিসারদের ক্ষেত্রে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে গেলে রাজ্যের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন হয়। সেটা যেহেতু পাওয়া সম্ভব হয়নি, সেই কারণে তদন্ত এগোচ্ছে না।
এদিন এই মামলার শুনানি পর্বে বিচারপতি বলেন, “উচ্চ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে, সেটা আইনের এবং জনগণের বিশ্বাসের ওপর ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলে।” আর্থিক দুর্নীতির গুরুত্ব শুধুমাত্র শাস্তির মেয়াদ থেকে বোঝা যায় না বলে জানিয়েছেন বিচারপতি। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘মানুষের আস্থা এবং সমাজের ওপর প্রশাসনিক ব্যবস্থার একটা সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে’। যদিও রাজ্যের দাবি, ‘সত্ সরকারি আধিকারিকদের যাতে তদন্তের নামে হয়রানি না করা হয়, সে কারণেই অনুমতি গ্রহণের এই নিয়ম বা আইন রয়েছে’। তবে বিচারপতি জানিয়েছেন, “তদন্ত যেখানে আদালতের নির্দেশে বা নজরদারিতে হচ্ছে, সেখানে হয়রানির জন্য করা হচ্ছে, এমনটা সেটা বলা যায়না।” রাজ্যের অনুমতি সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, “এটা একটা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি। এতে দেরি হওয়াটা দুঃখের বিষয়।” সেই বিষয়ে জবাব চেয়েই মুখ্যসচিবকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। এসএসসি কাণ্ডে অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুবিরেশ ভট্টাচার্য সহ একাধিক ব্যক্তির জামিন মামলায় সিবিআইয়ের তদন্তের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ।নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সিবিআইয়ের তরফ থেকে রাজ্যের কাছে যে অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল। সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কতদিনের মধ্যে নেওয়া সম্ভব হবে? তা জানতে চেয়েই নির্দেশ জারি করে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। আগামী ৩ এপ্রিলের মধ্যে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।
বিচারপতি বাগচী জানিয়েছেন, ”উচ্চ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সেটা আইনের এবং জনগণের বিশ্বাসের ওপর ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলে। আর্থিক দুর্নীতির গুরত্ব শুধুমাত্র সাজার মেয়াদ থেকে বোঝা যায় না। প্রশাসনিক ব্যবস্থা, মানুষের আস্থা এবং সমাজের ওপর এর একটা সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে।” তিনি বলেন, ”সত্ সরকারি আধিকারিকদের তদন্তের নামে হয়রানি থেকে রক্ষা করার জন্যই অনুমতি গ্রহণের এই নিয়ম বা আইন রয়েছে। কিন্তু যেখানে আদালতের নির্দেশে বা নজরদারিতে তদন্ত হচ্ছে, সেখানে সেই তদন্ত হয়রানির জন্য করা হচ্ছে প্রাথমিকভাবে সেটা বলা যায় না। অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া একটা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি। এতে দেরি হওয়াটা দুঃখের বিষয়।” আগামী ৩ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।