০৭ নভেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ২০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নয়া সেন্সরশিপের মুখে কাশ্মীরি সাংবাদিকরা!

সাংবাদিকদের বেতন-ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কিত তথ্য চেয়ে ফরমান প্রশাসনের

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ৬ নভেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 118

পুবের কলম, শ্রীনগর: গেরুয়া শাসনামলে একাধিকবার সংবাদমাধ্যমের টুটি চেপে দরা হয়েছে। ফের সংবাদমাধ্যমকে কণ্ঠরোধের চেষ্টা সরকারের। জম্মু ও কাশ্মীরের তথ্য দফতর গত ছয় মাসের বেতন স্লিপসহ সাংবাদিকদের ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়ে নির্দেশিকা জারি করেছে। সরকারের এই ফরমানে রীতিমত উদ্বিগ্ন উপত্যকার সাংবাদিকরা। সংবাদ কর্মী ও সাংবাদিকদের ওপর দমনপীড়নের নতুন কৌশল এবং হয়রানি নতুন পন্থা বলে অভিযোগ তুলেছে সাংবাদিকরা। ব্যক্তিগত তথ্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সরকারের এমন ফরমানের তীব্র সমালোচনা করেছেন তারা। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩১ অক্টোবর, ফিল্ড অফিসারদের উদ্ধৃত করে, যুগ্ম ডিরেক্টর, কাশ্মীরের সমস্ত জেলা তথ্য কর্মকর্তাদের (ডিআইও) কঠোর সতর্কতা দেখাতে এবং জেলার মধ্যে কর্মরত স্বীকৃত, অনুমোদিত এবং প্রকৃত মিডিয়া কর্মীদের একটি যাচাইকৃত তালিকা নিয়মিত আপডেট করার নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশে বলা হয়েছে, যেকোনো ব্যক্তি বা সত্তা যদি মিডিয়ার পরিচয়পত্রের অপব্যবহার করে, জোর করে কাজ করে, অথবা ব্যক্তিগত বা আর্থিক লাভের জন্য কর্মকর্তা, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিদের বদনাম করার চেষ্টা করে অবিলম্বে তা জানাতে বলা হয়েছে। সাংবাদিকদের একাংশের বক্তব্য, কিছু পোর্টাল, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া পেজ অপব্যবহার এবং জালিয়াতি করছে এবং ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। তবে, এই মানদণ্ডের ওপর দাঁড়িয়ে সমস্ত সাংবাদিককুলে আক্রমণ করা উচিত নয়। যারা জালিয়াতিতে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক। কেনো মূলধারার সংবাদকর্মীদের টার্গেট করা হচ্ছে। এক সাংবাদিক বলেন, ইতিমধ্যেই তিনি একটি ফোনকল পেয়েছিলেন। তিনি কোথায় কাজ করছেন, তারা কী অর্থ পাচ্ছেন এবং কোন জায়গা থেকে অর্থ আসছেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছিল। সাংবাদিকের কথায়, “তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, কেন আমি দেশবিরোধী নিবন্ধ লিখছি, যার জবাবে আমি বলেছিলাম, যে আমরা কেবল তথ্য প্রকাশ করছি।”

শ্রীনগরের স্বাধীন সাংবাদিক আদিল হুসেন বলেন, সাংবাদিকের তথ্য নেওয়ার প্রক্রিয়া নতুন নয়। তবে এই সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ‘সোশ্যাল মিডিয়া সাংবাদিকদের’ প্রতি। তাঁর মতে, “প্রতি বছর তথ্য বিভাগের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের ফোন করেন। এবার এমনটা হচ্ছে, কারণ অনেক যাচাই না করা পোর্টাল খুলে গেছে, যার কারণেই হয়তো এমনটা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ভাল জিনিস হল এই সাংবাদিকদের এবং সংস্থাগুলির জন্য যাচাই-বাছাই করা হবে। যারা হয় কর্মচারীদের বেতন দেয় না, বা তাদের সত্যিই কম পরিমাণ অর্থ প্রদান করে। এটি তাদের রাডারে রাখবে।” আদিল হুসেন আরও বলেন, এই সিদ্ধান্ত স্বাধীন সাংবাদিকদেরও রাডারে নিয়ে আসবে। কর্তৃপক্ষ স্বাধীন সাংবাদিকদের নিয়মিত কর্মরত সাংবাদিকদের থেকে আলাদা করে দেবে এবং তাদের হয়রানি করা সহজ হবে।

এদিকে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, “যেখানেই এই ধরণের ঘটনা রিপোর্ট করা হোক না কেন, সমন্বিত আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ কর্তৃপক্ষের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে এবং বিলম্ব না করে এই অফিসে সম্পূর্ণ তথ্যগত বিবরণ সরবরাহ করতে হবে।” এছাড়াও সমস্ত জেলা প্রশাসকদের এই ধরণের যেকোনো ঘটনা, মাঠ পর্যায়ের তথ্য এবং গৃহীত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা তুলে ধরে একটি পর্যায়ক্রমিক সতর্কতা নোট জমা দিতে বলা হয়েছে।

সরকারি নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের আধার ও প্যান কার্ড, নিয়োগপত্র, সংস্থার যোগাযোগের বিবরণ, ছয় মাসের বেতন বা ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, একাডেমিক যোগ্যতার শংসাপত্র এবং ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (টুইটার) এবং সংশ্লিষ্ট মিডিয়া আউটলেটের ইনস্টাগ্রাম পেজের লিঙ্ক জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে কাশ্মীরের স্বাধীন সাংবাদিক গাফিরা কাদির প্রশাসনের এই নির্দেশ নিয়ে বলেছেন, “কাশ্মীরি সাংবাদিকদের মধ্যে ইতিমধ্যে একটি প্যারানোয়া রয়েছে। কারণ আমাদের নিয়মিত তল্লাশির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এটি বিষয়টি সাংবাদিকদের কর্মক্ষেত্রকে আরও কঠিন করে তুলবে। বেশিরভাগ স্বাধীন সাংবাদিক অনুদান এবং ফেলোশিপ পান; তবে তাদের বেতনের কোনো রশিদ নেই। তাঁর কথায়, “এই আদেশে বোঝা যাচ্ছে যে তারা যা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মনে করেন তা আর্থিক লাভের জন্য করা হচ্ছে। এভাবে নিবন্ধ লেখার জন্য বিদেশি প্রকাশনা থেকে আমরা যে অর্থ পাই তাকে আর্থিক লাভ বা এমনকি দেশদ্রোহী বলে দাগিয়ে দেওয়া সহজ হবে।” প্রসঙ্গত, দীর্ঘসময় ধরে উপত্যকার সাংবাদিকরা ব্যাপক সেন্সরশিপের মুখোমুখি হয়েছেন। অনেকে অভিযোগ করেছেন, যে তাদের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার জন্য তাদের লেখালেখি বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে। নতুন করে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের নির্দেশিকার তীব্র সমালোচনা করেছে কাশ্মীর প্রেস ক্লাব।

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

নয়া সেন্সরশিপের মুখে কাশ্মীরি সাংবাদিকরা!

সাংবাদিকদের বেতন-ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কিত তথ্য চেয়ে ফরমান প্রশাসনের

আপডেট : ৬ নভেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম, শ্রীনগর: গেরুয়া শাসনামলে একাধিকবার সংবাদমাধ্যমের টুটি চেপে দরা হয়েছে। ফের সংবাদমাধ্যমকে কণ্ঠরোধের চেষ্টা সরকারের। জম্মু ও কাশ্মীরের তথ্য দফতর গত ছয় মাসের বেতন স্লিপসহ সাংবাদিকদের ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়ে নির্দেশিকা জারি করেছে। সরকারের এই ফরমানে রীতিমত উদ্বিগ্ন উপত্যকার সাংবাদিকরা। সংবাদ কর্মী ও সাংবাদিকদের ওপর দমনপীড়নের নতুন কৌশল এবং হয়রানি নতুন পন্থা বলে অভিযোগ তুলেছে সাংবাদিকরা। ব্যক্তিগত তথ্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সরকারের এমন ফরমানের তীব্র সমালোচনা করেছেন তারা। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩১ অক্টোবর, ফিল্ড অফিসারদের উদ্ধৃত করে, যুগ্ম ডিরেক্টর, কাশ্মীরের সমস্ত জেলা তথ্য কর্মকর্তাদের (ডিআইও) কঠোর সতর্কতা দেখাতে এবং জেলার মধ্যে কর্মরত স্বীকৃত, অনুমোদিত এবং প্রকৃত মিডিয়া কর্মীদের একটি যাচাইকৃত তালিকা নিয়মিত আপডেট করার নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশে বলা হয়েছে, যেকোনো ব্যক্তি বা সত্তা যদি মিডিয়ার পরিচয়পত্রের অপব্যবহার করে, জোর করে কাজ করে, অথবা ব্যক্তিগত বা আর্থিক লাভের জন্য কর্মকর্তা, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিদের বদনাম করার চেষ্টা করে অবিলম্বে তা জানাতে বলা হয়েছে। সাংবাদিকদের একাংশের বক্তব্য, কিছু পোর্টাল, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া পেজ অপব্যবহার এবং জালিয়াতি করছে এবং ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। তবে, এই মানদণ্ডের ওপর দাঁড়িয়ে সমস্ত সাংবাদিককুলে আক্রমণ করা উচিত নয়। যারা জালিয়াতিতে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক। কেনো মূলধারার সংবাদকর্মীদের টার্গেট করা হচ্ছে। এক সাংবাদিক বলেন, ইতিমধ্যেই তিনি একটি ফোনকল পেয়েছিলেন। তিনি কোথায় কাজ করছেন, তারা কী অর্থ পাচ্ছেন এবং কোন জায়গা থেকে অর্থ আসছেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছিল। সাংবাদিকের কথায়, “তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, কেন আমি দেশবিরোধী নিবন্ধ লিখছি, যার জবাবে আমি বলেছিলাম, যে আমরা কেবল তথ্য প্রকাশ করছি।”

শ্রীনগরের স্বাধীন সাংবাদিক আদিল হুসেন বলেন, সাংবাদিকের তথ্য নেওয়ার প্রক্রিয়া নতুন নয়। তবে এই সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ‘সোশ্যাল মিডিয়া সাংবাদিকদের’ প্রতি। তাঁর মতে, “প্রতি বছর তথ্য বিভাগের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের ফোন করেন। এবার এমনটা হচ্ছে, কারণ অনেক যাচাই না করা পোর্টাল খুলে গেছে, যার কারণেই হয়তো এমনটা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ভাল জিনিস হল এই সাংবাদিকদের এবং সংস্থাগুলির জন্য যাচাই-বাছাই করা হবে। যারা হয় কর্মচারীদের বেতন দেয় না, বা তাদের সত্যিই কম পরিমাণ অর্থ প্রদান করে। এটি তাদের রাডারে রাখবে।” আদিল হুসেন আরও বলেন, এই সিদ্ধান্ত স্বাধীন সাংবাদিকদেরও রাডারে নিয়ে আসবে। কর্তৃপক্ষ স্বাধীন সাংবাদিকদের নিয়মিত কর্মরত সাংবাদিকদের থেকে আলাদা করে দেবে এবং তাদের হয়রানি করা সহজ হবে।

এদিকে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, “যেখানেই এই ধরণের ঘটনা রিপোর্ট করা হোক না কেন, সমন্বিত আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ কর্তৃপক্ষের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে এবং বিলম্ব না করে এই অফিসে সম্পূর্ণ তথ্যগত বিবরণ সরবরাহ করতে হবে।” এছাড়াও সমস্ত জেলা প্রশাসকদের এই ধরণের যেকোনো ঘটনা, মাঠ পর্যায়ের তথ্য এবং গৃহীত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা তুলে ধরে একটি পর্যায়ক্রমিক সতর্কতা নোট জমা দিতে বলা হয়েছে।

সরকারি নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের আধার ও প্যান কার্ড, নিয়োগপত্র, সংস্থার যোগাযোগের বিবরণ, ছয় মাসের বেতন বা ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, একাডেমিক যোগ্যতার শংসাপত্র এবং ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (টুইটার) এবং সংশ্লিষ্ট মিডিয়া আউটলেটের ইনস্টাগ্রাম পেজের লিঙ্ক জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে কাশ্মীরের স্বাধীন সাংবাদিক গাফিরা কাদির প্রশাসনের এই নির্দেশ নিয়ে বলেছেন, “কাশ্মীরি সাংবাদিকদের মধ্যে ইতিমধ্যে একটি প্যারানোয়া রয়েছে। কারণ আমাদের নিয়মিত তল্লাশির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এটি বিষয়টি সাংবাদিকদের কর্মক্ষেত্রকে আরও কঠিন করে তুলবে। বেশিরভাগ স্বাধীন সাংবাদিক অনুদান এবং ফেলোশিপ পান; তবে তাদের বেতনের কোনো রশিদ নেই। তাঁর কথায়, “এই আদেশে বোঝা যাচ্ছে যে তারা যা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মনে করেন তা আর্থিক লাভের জন্য করা হচ্ছে। এভাবে নিবন্ধ লেখার জন্য বিদেশি প্রকাশনা থেকে আমরা যে অর্থ পাই তাকে আর্থিক লাভ বা এমনকি দেশদ্রোহী বলে দাগিয়ে দেওয়া সহজ হবে।” প্রসঙ্গত, দীর্ঘসময় ধরে উপত্যকার সাংবাদিকরা ব্যাপক সেন্সরশিপের মুখোমুখি হয়েছেন। অনেকে অভিযোগ করেছেন, যে তাদের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার জন্য তাদের লেখালেখি বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে। নতুন করে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের নির্দেশিকার তীব্র সমালোচনা করেছে কাশ্মীর প্রেস ক্লাব।