এআই ডেটা সেন্টার: বাংলায় বিপ্লব, বিপুল কর্মসংস্থানের উদ্যোগ

- আপডেট : ১৭ অগাস্ট ২০২৫, রবিবার
- / 30
পুবের কলম প্রতিবেদক: পশ্চিমবঙ্গ, বিশেষ করে কলকাতা, এখন এআই ডেটা সেন্টার তৈরির একটি নতুন কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। এই পরিবর্তনের মূল কেন্দ্র হলো নিউটাউনের সিলিকন ভ্যালি, যেখানে একের পর এক ডেটা সেন্টার গড়ে উঠছে। এই অগ্রগতিরই একটি অংশ হিসেবে, সম্প্রতি কন্ট্রোলএস ডেটাসেন্টারস লিমিটেড তাদের প্রথম ডেটা সেন্টারের উদ্বোধন করেছে।
কন্ট্রোলএস-এর ডেটা সেন্টার: এক নতুন দিগন্ত
কলকাতার নিউটাউনে ৫.৬ একর জায়গার উপর এই অত্যাধুনিক ডেটা সেন্টারটি তৈরি করা হয়েছে। এর প্রথম পর্যায়ের কাজ ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ হয়েছে এবং বর্তমানে এটি চালু আছে। সংস্থার পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই ডেটা সেন্টারের ক্ষমতা বর্তমানে ১৬ মেগাওয়াট হলেও, ২০৩০ সালের মধ্যে তা ৬০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে।
এই বিশাল প্রকল্পের জন্য কন্ট্রোলএস প্রায় ২২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে, যা প্রায় ৪০০ কর্মসংস্থান তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কন্ট্রোলএস ডেটা সেন্টারের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি। ২০৩০ সালের মধ্যে তারা তাদের সমস্ত ডেটা সেন্টারে অচিরাচরিত শক্তি ব্যবহারের ক্ষমতা অর্জন করবে বলে জানিয়েছে। এটি পরিবেশ সংরক্ষণে তাদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন।
ভারতে ডেটা সেন্টারের চাহিদা বৃদ্ধির কারণ – কন্ট্রোলএস-এর কর্মকর্তারা মনে করেন, ডেটা ব্যবহারের বৃদ্ধির নিরিখে ভারত বিশ্বের শীর্ষ তিনটি দেশের মধ্যে রয়েছে।এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যেমন:
ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তা: নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম এবং ডিজনি+ হটস্টারের মতো প্ল্যাটফর্মগুলির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে।
ডিজিটাল লেনদেন: ইউপিআই ব্যবস্থার মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ই-কমার্সের প্রসার: অনলাইন কেনাকাটা এখন ভারতীয়দের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক ব্যবহার: ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলির ব্যবহার অনেক বেড়েছে। এই সব কারণই ভারতে ডেটা সেন্টারের চাহিদাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে, যা এই ধরনের নতুন বিনিয়োগের পথ খুলে দিচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহায়ক নীতি ডেটা সেন্টার শিল্পের প্রসারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কন্ট্রোলএস তাদের ডেটা সেন্টার নীতিমালার ভূয়সী প্রশংসা করেছে। এই নীতির ফলে ডেটা সেন্টার সংস্থাগুলি একাধিক সুবিধা পাচ্ছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিলিকন ভ্যালিতে বিপুল কর্মসংস্থানের লক্ষে এই নয়া উদ্যোগ নিয়েছেন। এর ফলে গোটা বিশ্বে তার প্রভাব পড়বে। বাংলা থেকে লক্ষ লক্ষ আইটি বিশেষজ্ঞ পাড়ি দেন। তাঁরা এখন বাংলায় কাজ করতে পারবেন।
স্ট্যাম্প ডিউটিতে ছাড়: জমির স্ট্যাম্প ডিউটির ওপর ১০০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
বিদ্যুতের বিলে ছাড়: প্রথম পাঁচ বছরের জন্য বিদ্যুতের বিলের ওপর ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
একজানালা নীতি : দ্রুত এবং সহজে ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য একজানালা নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।
এই ধরনের সহায়ক নীতি ডেটা সেন্টার সংস্থাগুলিকে পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করছে এবং রাজ্যকে একটি ডিজিটাল হাব হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করছে।
সংস্থাটি আশা করছে, এই ডেটা সেন্টারের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ ২০২৬ সালের শেষ বা ২০২৭ সালের শুরুর দিকে সম্পন্ন হবে। এই প্রকল্প শুধু কন্ট্রোলএস-এর জন্যই নয়, বরং পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।