গাজার পথে সহায়তা নৌকা আটক, গ্রেটা থুনবার্গসহ ১২ জন মানবাধিকার কর্মী আটক

- আপডেট : ৯ জুন ২০২৫, সোমবার
- / 80
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: সোমবার ভোররাতে ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা একটি মানবিক সহায়তা নৌকাকে আটক করে। নৌকাটিতে ছিলেন সুইডেনের পরিচিত জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ ১২ জন মানবাধিকার ও পরিবেশকর্মী।
তারা গাজার প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য, ওষুধ এবং শিশুদের ফর্মুলা দুধ পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। দীর্ঘদিনের অবরোধ ও চলমান সংঘর্ষের কারণে গাজার মানুষগুলো এক ভয়াবহ সংকটে আছে। এই মানবিক সংকটের মধ্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে তারা গাজার মানুষের পাশে দাঁড়াতে, তাদের জন্য সহায়তা পৌঁছে দিতে এবং অবরোধের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে এই যাত্রায় বের হয়েছিলেন।
তবে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নৌকাটি অবৈধভাবে গাজার তীরে প্রবেশের চেষ্টা করছিল এবং নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তা আটক করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য, হামাসের হাতে অস্ত্র পৌঁছানো রোধ করার জন্য এই অবরোধ চালানো হচ্ছে। আটক নৌকায় থাকা সবাইকে নিরাপদ রাখা হয়েছে এবং সহায়তা সামগ্রী গ্রহণযোগ্য সরকারি পথে গাজার কাছে পাঠানো হবে।
গ্রেটা থুনবার্গ আটক হওয়ার আগে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, তআমাদের অপহরণ করতে চলেছে ইসরাইল।দ তিনি তাঁর পরিবার, বন্ধু ও সমর্থকদের দ্রুত তাদের মুক্তির জন্য সুইডেন সরকারের উপর চাপ বাড়ানোর অনুরোধ জানান। এই ভিডিও বার্তা ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’ নামে সংগঠনটি প্রকাশ করেছে, যারা এই যাত্রাটি সংগঠিত করেছিল।
তুরস্ক এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন ও মানবতাবিরোধী বলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা এটিকে তনিরপরাধ মানুষদের উপর নিষ্ঠুর হামলাদ হিসেবে উল্লেখ করেছে। একই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে অনেক মানবাধিকার সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের নেতারা এই ঘটনার পেছনে থাকা সংকটের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।
গাজার মানুষের জীবন যুদ্ধের কারণে অসহনীয় হয়ে উঠেছে। খাদ্য, পানি ও ওষুধের সংকট ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল থেকে বারবার চাপ আসছে, যাতে অবরোধ তুলে নেওয়া হয় এবং জরুরি সহায়তা নির্বিঘ্নে পৌঁছে দেওয়া যায়। যদিও ইসরাইল বলছে, অবরোধ দরকার যাতে হামাস অস্ত্র সঞ্চার করতে না পারে, কিন্তু অনেক মানবাধিকারকর্মী বলছেন, এই অবরোধ সাধারণ মানুষকে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে।
‘মাদলীন’ নামের এই জাহাজটি সিসিলি থেকে যাত্রা শুরু করেছিল।
সেখানে ছিলেন গ্রেটা থুনবার্গের পাশাপাশি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য ফরাসি প্রতিনিধি রিমা হাসান, যিনি দীর্ঘদিন থেকে ইসরাইলি নীতির কঠোর সমালোচনা করে আসছেন এবং ইসরাইল তাকে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল। নৌকাটি গাজার পথে যাওয়ার আগেই আটক হওয়ার পর থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
ইসরাইলি বিদেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নৌকায় থাকা সবাই নিরাপদ আছে এবং শীঘ্রই তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরানো হবে। তারা কিছু ভিডিও প্রকাশ করেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, আটকদেরকে জল ও খাবার দেওয়া হচ্ছে। তবে আটকের ঘটনাটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের মধ্যে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
এই ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দেয় গাজার সংকটের গভীরতা, যেখানে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা কারণের ছায়ায় অসংখ্য সাধারণ মানুষ যন্ত্রণায় রয়েছে। ছোট ছোট মানবিক উদ্যোগ, যেমন গ্রেটার এই যাত্রা, বিশ্ববাসীর মনে এক বার্তা ছড়িয়ে দেয় যে, যুদ্ধের মাঝেও মানবতা, সহানুভূতি ও আশা বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। তবে আরও বৃহত্তর উদ্যোগ ও আন্তর্জাতিক সহায়তা ছাড়া গাজার মানুষের দুঃখ দূর করা কঠিন।