রাশিয়া থেকে ভারতের তেল-অস্ত্র আমদানি নিয়ে চরম অসন্তুষ্ট আমেরিকা, ট্রাম্পের হুমকি: কেন এত ক্ষোভ?

- আপডেট : ১ অগাস্ট ২০২৫, শুক্রবার
- / 36
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: রাশিয়া থেকে খনিজ তেল ও অস্ত্র আমদানির জন্য ভারতকে হুঁশিয়ারি দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ঘোষণা করেছেন, এই লেনদেনের জেরে ভারতকে ‘জরিমানা’ দিতে হতে পারে। শুধু তাই নয়, ভারতীয় এবং রুশ অর্থনীতিকে ‘মৃত’ বলে কটাক্ষও করেন ট্রাম্প। অথচ, ভারত আমেরিকা থেকেও খনিজ তেল আমদানি করে। তা সত্ত্বেও কেন রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে এত ক্ষুব্ধ হোয়াইট হাউস ।
গত অর্থবর্ষে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬.৮ হাজার কোটি মার্কিন ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬ লক্ষ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারত থেকে রাশিয়ায় রফতানি হয়েছে মাত্র ৪৯০ কোটি ডলারের (প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা) পণ্য। অন্য দিকে, রাশিয়া থেকে আমদানি হয়েছে ৬.৩ হাজার কোটি ডলারের (প্রায় ৫.৫ লক্ষ কোটি টাকা) পণ্য।
তেল আমদানিতে ভারতের রাশিয়ার উপর নির্ভরতা বিগত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। বর্তমানে ভারতের মোট তেল আমদানির ৩৫ শতাংশই আসে রাশিয়া থেকে। যা আগে ছিল মাত্র ১ শতাংশ। ফলে রাশিয়া এখন ভারতের বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী দেশ। আগে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইরাকের উপর নির্ভরশীল থাকলেও ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়া সস্তায় তেল বিক্রি শুরু করে, এবং ভারত সেই সুযোগকে কাজে লাগায়। এতে ভারতের তেল আমদানিতে বিপুল সাশ্রয় হলেও পশ্চিমা দেশগুলির চোখে এই পদক্ষেপ ভালো ঠেকেনি।
তেল ছাড়াও ভারত বিপুল পরিমাণে রাশিয়া থেকে অস্ত্র আমদানি করে থাকে। যুদ্ধবিমান, ট্যাঙ্ক, মিসাইল-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রাশিয়া থেকেই আসে। অস্ত্র আমদানিতে ভারত সারা বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতের রাশিয়ার উপর নির্ভরতা কিছুটা কমেছে। ওয়াশিংটন এবং ইউরোপীয় দেশগুলির সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি বেড়েছে। তবুও রাশিয়া এখনও ভারতের অন্যতম অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতে, রাশিয়া থেকে আমদানি চলতে থাকলে ভারতের বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক পদক্ষেপ’ নেওয়া হতে পারে। ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ভারতের পণ্যের উপর ২৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। আরও অতিরিক্ত জরিমানার ইঙ্গিত দিয়েছেন, যদিও নির্দিষ্ট অঙ্ক এখনও জানাননি।
এই অবস্থায় নয়াদিল্লি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে তারা কোনও আপস করবে না। তেলের দাম ও প্রতিরক্ষা চাহিদা মেটাতে তারা যেখানে সুবিধা পাবে, সেখান থেকেই আমদানি চালিয়ে যাবে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চিনকে চাপ দিতে ভারতকে পাশে চাইছিল আমেরিকা। কিন্তু ভারত-রাশিয়া ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই পরিকল্পনায় জট তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। চলতি বছরের শেষে ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে মস্কো-নয়াদিল্লি সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানকে ভারতের বিকল্প হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে আমেরিকা। সম্প্রতি ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের মধ্যে বড়সড় একটি জ্বালানি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। ট্রাম্প কটাক্ষ করে বলেছেন, ভবিষ্যতে হয়তো পাকিস্তান ভারতকে তেল বিক্রি করবে। যদিও ভারতের দিক থেকে এখনও এ নিয়ে কোনও উদ্বেগ দেখা যায়নি। কারণ, পাকিস্তান নিজের চাহিদার তেলই আমদানি করে, রফতানির ক্ষমতা তার নেই।
রাশিয়া থেকে ভারতের খনিজ তেল ও অস্ত্র আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধিতে আমেরিকার ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ এখন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ভারতের বক্তব্য স্পষ্ট—কোনও দেশের চাপ নয়, জাতীয় স্বার্থই তাদের নীতি নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা নেবে।