১৬ জুন ২০২৫, সোমবার, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নেপালে নবজাতকদের জন্য চালু হল প্রথম ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’

আবুল খায়ের
  • আপডেট : ৯ জুন ২০২৫, সোমবার
  • / 79

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ নেপালে নবজাতকদের জন্য প্রথমবারের মতো চালু হলো ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ বা মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক। ‘অমৃত কোষ’ নামের এই ব্যাংকটি চালু করা হয়েছে রাজধানী কাঠমান্ডুতে, যা ইউনিসেফ এবং নেপালের সরকারের যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুতে চালু হওয়া এই উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মাতৃদুগ্ধ বঞ্চিত নবজাতকদের সঠিক পুষ্টি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

নেপালে প্রতিবছর প্রচুর অপরিণত শিশু জন্ম নেয়- যারা হয়তো সময়ের আগেই জন্ম নিয়েছে, অথবা জন্মের পরই নানা শারীরিক জটিলতায় ভোগে। অনেক মা সন্তান জন্ম দেওয়ার পর পরই দুধ তৈরি করতে পারেন না, আবার অনেক সময় নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রাখতে হয়, যেখানে সরাসরি স্তন্যদান সম্ভব হয় না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মাতৃদুগ্ধের বিকল্প সরবরাহ ব্যবস্থা ছিল না বললেই চলে। সেই সমস্যা সমাধানে এবার বড় পদক্ষেপ নিয়েছে নেপাল সরকার। শিশুমৃত্যুর হার কমানো এবং মাতৃদুগ্ধ বঞ্চিত শিশুদের জীবন রক্ষা করাই এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য।

ইউনিসেফের পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ অপরিণত শিশু জন্ম নেয়। এর মধ্যে প্রায় ৮১ হাজার শিশু জন্ম নেয় নেপালসহ অন্যান্য নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে। এ ধরনের শিশুদের জীবন বাঁচাতে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো মায়ের দুধের মতো পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা। কাঠমান্ডুতে স্থাপিত ‘অমৃত কোষ’ এখন এই প্রয়োজন মেটাতে পারছে।

নেপালের সারিতা ক্ষাত্রী তামাং নামের এক মা সম্প্রতি কাঠমান্ডুর পরোপকার মাতৃসদনে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু তার স্তনে তখনো দুধ তৈরি হয়নি। এই অবস্থায় তার নবজাতক যেন দুধ থেকে বঞ্চিত না হয়, সেজন্যই হাসপাতালের ‘অমৃত কোষ’ শাখা থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে অন্য মায়েদের দান করা দুধ। এভাবে বহু নবজাতক নিয়মিত পুষ্টি পাচ্ছে।

স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা দপ্তরের প্রধান ডা. বিবেক কুমার লাল জানিয়েছেন, “মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই। এটি শিশুর জন্য যেমন পুষ্টির উৎস, তেমনি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি, প্রসূতি মায়ের দেহেও দুধ পান করানোর উপকার পড়ে।” বর্তমানে ‘অমৃত কোষ’-এর সক্ষমতা অনুযায়ী, প্রতি মাসে প্রায় ৫০০ জন শিশুকে নিয়মিত দুধ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে।

তবে ডা. বিবেক জানিয়েছেন, বাজেট ঘাটতির কারণে আপাতত কাঠমান্ডুর বাইরের জেলাগুলোতে এই ব্যাংকের শাখা খোলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে ভবিষ্যতে দেশের প্রতিটি জেলায় ‘অমৃত কোষ’ চালু করা, যাতে দেশের প্রতিটি নবজাতক শিশু এই সুবিধা পায়।

নেপালে এই প্রথম মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক চালুর ঘটনা কেবল একটি চিকিৎসা উদ্যোগ নয়-এটি একটি সামাজিক ও মানবিক পদক্ষেপ, যা নবজাতক শিশুর পুষ্টি ও জীবনের জন্য এক নতুন আশার আলো। ভবিষ্যতে এই ধরনের উদ্যোগ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও অনুকরণীয় হয়ে উঠতে পারে।

 

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

নেপালে নবজাতকদের জন্য চালু হল প্রথম ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’

আপডেট : ৯ জুন ২০২৫, সোমবার

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ নেপালে নবজাতকদের জন্য প্রথমবারের মতো চালু হলো ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ বা মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক। ‘অমৃত কোষ’ নামের এই ব্যাংকটি চালু করা হয়েছে রাজধানী কাঠমান্ডুতে, যা ইউনিসেফ এবং নেপালের সরকারের যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুতে চালু হওয়া এই উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মাতৃদুগ্ধ বঞ্চিত নবজাতকদের সঠিক পুষ্টি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

নেপালে প্রতিবছর প্রচুর অপরিণত শিশু জন্ম নেয়- যারা হয়তো সময়ের আগেই জন্ম নিয়েছে, অথবা জন্মের পরই নানা শারীরিক জটিলতায় ভোগে। অনেক মা সন্তান জন্ম দেওয়ার পর পরই দুধ তৈরি করতে পারেন না, আবার অনেক সময় নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রাখতে হয়, যেখানে সরাসরি স্তন্যদান সম্ভব হয় না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মাতৃদুগ্ধের বিকল্প সরবরাহ ব্যবস্থা ছিল না বললেই চলে। সেই সমস্যা সমাধানে এবার বড় পদক্ষেপ নিয়েছে নেপাল সরকার। শিশুমৃত্যুর হার কমানো এবং মাতৃদুগ্ধ বঞ্চিত শিশুদের জীবন রক্ষা করাই এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য।

ইউনিসেফের পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ অপরিণত শিশু জন্ম নেয়। এর মধ্যে প্রায় ৮১ হাজার শিশু জন্ম নেয় নেপালসহ অন্যান্য নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে। এ ধরনের শিশুদের জীবন বাঁচাতে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো মায়ের দুধের মতো পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা। কাঠমান্ডুতে স্থাপিত ‘অমৃত কোষ’ এখন এই প্রয়োজন মেটাতে পারছে।

নেপালের সারিতা ক্ষাত্রী তামাং নামের এক মা সম্প্রতি কাঠমান্ডুর পরোপকার মাতৃসদনে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু তার স্তনে তখনো দুধ তৈরি হয়নি। এই অবস্থায় তার নবজাতক যেন দুধ থেকে বঞ্চিত না হয়, সেজন্যই হাসপাতালের ‘অমৃত কোষ’ শাখা থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে অন্য মায়েদের দান করা দুধ। এভাবে বহু নবজাতক নিয়মিত পুষ্টি পাচ্ছে।

স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা দপ্তরের প্রধান ডা. বিবেক কুমার লাল জানিয়েছেন, “মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই। এটি শিশুর জন্য যেমন পুষ্টির উৎস, তেমনি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি, প্রসূতি মায়ের দেহেও দুধ পান করানোর উপকার পড়ে।” বর্তমানে ‘অমৃত কোষ’-এর সক্ষমতা অনুযায়ী, প্রতি মাসে প্রায় ৫০০ জন শিশুকে নিয়মিত দুধ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে।

তবে ডা. বিবেক জানিয়েছেন, বাজেট ঘাটতির কারণে আপাতত কাঠমান্ডুর বাইরের জেলাগুলোতে এই ব্যাংকের শাখা খোলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে ভবিষ্যতে দেশের প্রতিটি জেলায় ‘অমৃত কোষ’ চালু করা, যাতে দেশের প্রতিটি নবজাতক শিশু এই সুবিধা পায়।

নেপালে এই প্রথম মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক চালুর ঘটনা কেবল একটি চিকিৎসা উদ্যোগ নয়-এটি একটি সামাজিক ও মানবিক পদক্ষেপ, যা নবজাতক শিশুর পুষ্টি ও জীবনের জন্য এক নতুন আশার আলো। ভবিষ্যতে এই ধরনের উদ্যোগ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও অনুকরণীয় হয়ে উঠতে পারে।