১৯ জুলাই ২০২৫, শনিবার, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বীরভূমে ফের রক্তাক্ত সংঘর্ষ: হাথিয়া গ্রামে এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে বোমাবাজি, নিহত ৩

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ২১ জুন ২০২৫, শনিবার
  • / 92

AI দ্বারা নির্মিত

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: বীরভূম জেলার লাভপুর থানার অন্তর্গত হাথিয়া গ্রামে জমি ও এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে ফের চরম উত্তেজনা ছড়াল। শনিবার সকাল থেকেই গ্রামে শুরু হয় ব্যাপক বোমাবাজি, যাতে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ৩ জন নিহত ও ৫ থেকে ৬ জন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। ঘটনার জেরে পুরো এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শেখ মইনুদ্দিন, মকবুল শাহ ও শরিফুল শাহ নামে কয়েকজন দীর্ঘদিন ধরে হাথিয়া গ্রামে নকল সোনার কয়েনের কারবার, চুরি, ডাকাতি ও রাহাজানির মতো অপরাধে জড়িত ছিল। তাদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক অভিযোগও জমা পড়ে। সম্প্রতি স্থানীয় বাসিন্দারা মকবুল ও তার দলবলকে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করেন।

তৃণমূল নেতা নজরুল ইসলাম জানান, “ওই অসামাজিক ব্যক্তিদের গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার তারা দলবল নিয়ে গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করে বোমাবাজি করতে করতে। গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ করায় তারা সেদিন পিছু হটে।” কিন্তু অভিযোগ, শনিবার সকালে ফের গ্রামে প্রবেশের চেষ্টা করে মইনুদ্দিন ও মকবুলরা এবং শুরু করে বেপরোয়া বোমাবাজি।

আরও পড়ুন: মুসলিম ভোটারদের মৃত বলে বাদ দেওয়ার চেষ্টা অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে, দাবি তৃণমূলের

এই সময় পুকুরপাড়ে বসে ছিলেন শেখ সাবির (১৪) ও শেখ আলমগীর (২৪)। আচমকা বোমার আঘাতে দু’জনের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। আরও জানা গেছে, বোমার আঘাতে ১০ বছর বয়সী এক শিশুও প্রাণ হারায়। তবে ওই শিশুর পরিচয় এখনো জানা যায়নি। গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছেন আরও অন্তত ৫ জন। স্থানীয়দের দাবি, নিহত দুই যুবক তৃণমূল ঘনিষ্ঠ পরিবারের সন্তান। যদিও তাঁদের প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক যোগাযোগ এখনও স্পষ্ট নয়।

আরও পড়ুন: ফের অশান্ত মণিপুর, বন্দুকবাজের গুলিতে মৃত্যু ৪ জনের

এদিকে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে দুপুর সাড়ে এগারোটার সময় বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। পুলিশের দাবি, তারা দু’জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনাস্থলে রওনা দিয়েছেন বোলপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘দুই জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। তদন্ত চলছে।’’ নাবালকের মৃত্যু নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।

আরও পড়ুন: গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষের উপর ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৮১ জন নিহত

নিহতদের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য সিউড়ি সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুরো ঘটনাকে ঘিরে রাজনীতিও উত্তপ্ত। বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল কড়া ভাষায় বলেন, ‘‘তৃণমূল বরাবরই অপরাধীদের মদত দিয়েছে। আজ তারই ফল পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।’’

উল্লেখ্য, গত বছরের মার্চ মাসেও এই হাথিয়া গ্রামেই নকল অস্ত্র তৈরির কারখানা উদ্ধারকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অশান্তি ছড়িয়েছিল। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, বিক্ষোভ এবং শূন্যে গুলি ছোড়ার মতো ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনার রেশ কাটার আগেই ফের প্রাণঘাতী বোমাবাজিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠল হাথিয়া গ্রাম।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বীরভূমে ফের রক্তাক্ত সংঘর্ষ: হাথিয়া গ্রামে এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে বোমাবাজি, নিহত ৩

আপডেট : ২১ জুন ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: বীরভূম জেলার লাভপুর থানার অন্তর্গত হাথিয়া গ্রামে জমি ও এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে ফের চরম উত্তেজনা ছড়াল। শনিবার সকাল থেকেই গ্রামে শুরু হয় ব্যাপক বোমাবাজি, যাতে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ৩ জন নিহত ও ৫ থেকে ৬ জন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। ঘটনার জেরে পুরো এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শেখ মইনুদ্দিন, মকবুল শাহ ও শরিফুল শাহ নামে কয়েকজন দীর্ঘদিন ধরে হাথিয়া গ্রামে নকল সোনার কয়েনের কারবার, চুরি, ডাকাতি ও রাহাজানির মতো অপরাধে জড়িত ছিল। তাদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক অভিযোগও জমা পড়ে। সম্প্রতি স্থানীয় বাসিন্দারা মকবুল ও তার দলবলকে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করেন।

তৃণমূল নেতা নজরুল ইসলাম জানান, “ওই অসামাজিক ব্যক্তিদের গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার তারা দলবল নিয়ে গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করে বোমাবাজি করতে করতে। গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ করায় তারা সেদিন পিছু হটে।” কিন্তু অভিযোগ, শনিবার সকালে ফের গ্রামে প্রবেশের চেষ্টা করে মইনুদ্দিন ও মকবুলরা এবং শুরু করে বেপরোয়া বোমাবাজি।

আরও পড়ুন: মুসলিম ভোটারদের মৃত বলে বাদ দেওয়ার চেষ্টা অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে, দাবি তৃণমূলের

এই সময় পুকুরপাড়ে বসে ছিলেন শেখ সাবির (১৪) ও শেখ আলমগীর (২৪)। আচমকা বোমার আঘাতে দু’জনের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। আরও জানা গেছে, বোমার আঘাতে ১০ বছর বয়সী এক শিশুও প্রাণ হারায়। তবে ওই শিশুর পরিচয় এখনো জানা যায়নি। গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছেন আরও অন্তত ৫ জন। স্থানীয়দের দাবি, নিহত দুই যুবক তৃণমূল ঘনিষ্ঠ পরিবারের সন্তান। যদিও তাঁদের প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক যোগাযোগ এখনও স্পষ্ট নয়।

আরও পড়ুন: ফের অশান্ত মণিপুর, বন্দুকবাজের গুলিতে মৃত্যু ৪ জনের

এদিকে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে দুপুর সাড়ে এগারোটার সময় বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। পুলিশের দাবি, তারা দু’জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনাস্থলে রওনা দিয়েছেন বোলপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘দুই জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। তদন্ত চলছে।’’ নাবালকের মৃত্যু নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।

আরও পড়ুন: গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষের উপর ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৮১ জন নিহত

নিহতদের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য সিউড়ি সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুরো ঘটনাকে ঘিরে রাজনীতিও উত্তপ্ত। বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল কড়া ভাষায় বলেন, ‘‘তৃণমূল বরাবরই অপরাধীদের মদত দিয়েছে। আজ তারই ফল পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।’’

উল্লেখ্য, গত বছরের মার্চ মাসেও এই হাথিয়া গ্রামেই নকল অস্ত্র তৈরির কারখানা উদ্ধারকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অশান্তি ছড়িয়েছিল। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, বিক্ষোভ এবং শূন্যে গুলি ছোড়ার মতো ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনার রেশ কাটার আগেই ফের প্রাণঘাতী বোমাবাজিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠল হাথিয়া গ্রাম।