রাজতন্ত্র নিপাত যাক! লন্ডনে বিক্ষোভ মিছিল

- আপডেট : ১১ মে ২০২৫, রবিবার
- / 133
পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: ফের রাজতন্ত্র বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল লন্ডন। ট্রাফালগার স্কোয়ারে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান একদল জনতা। দেশটির শীর্ষস্থানীয় ব্রিটিশ রাজতন্ত্র বিরোধী দল রিপাবলিকের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এদিন বিভিন্ন রাজতন্ত্রবিরোধী প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভে শামিল হন বহু মানুষ। ‘রাজতন্ত্র নিপাত যাক’ স্লোগান ওঠে মিছিল থেকে। প্রতিবছরই দেশটিতে রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বলা বাহুল্য, রাজতন্ত্র সম্পর্কে গত এক দশকে ব্রিটিশদের দৃষ্টিভঙ্গি আরও খারাপ হয়েছে। সিএনএনের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্রিটেনের এক-তৃতীয়াংশ (৩৬ শতাংশ) প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক বলেছেন, ১০ বছর আগে ব্রিটিশ রাজপরিবার সম্পর্কে যে দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, তা এখন আরও নেতিবাচক হয়েছে। ২১ শতাংশ বলেছেন, ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রতি তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি আরও ইতিবাচক হয়েছে। আর বাকিদের কাছে রাজতন্ত্র নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই। সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করা প্রতি ১০ জনের অন্তত ৩ জন বলেছেন, রাজপরিবার নিয়ে খবরে কোনও আগ্রহ তাঁদের নেই। এমনকি রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেকে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সরব হন একদল জনতা।
সিএনএনের সমীক্ষা অনুসারে, গত এক দশকে রাজপরিবারের প্রতি আগ্রহ হারানোর পেছনে এ পরিবার ঘিরে একাধিক ব্যক্তির বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টির কথা উঠে এসেছে। ২০১৯ সালে বিতর্কে জড়িয়ে রাজপরিবারের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান প্রিন্স অ্যান্ড্রু। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ভার্জিনিয়া জিওফ্রে নামের এক নারী যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে অভিযোগ করেছিলেন, ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য ও ডিউক অব ইয়র্ক প্রিন্স অ্যান্ড্রু ২০০১ সালে তাঁকে তিনবার যৌন নির্যাতন করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। পরে মামলাটি আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি করেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু।
রাজকীয় প্রতিষ্ঠানটি বছরের পর বছর ধরে বর্ণবাদের গুরুতর অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছে। সাসেক্সের ডাচেস মেগান অভিযোগ করেন, তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছিল এবং রাজপরিবার থেকে তিনি বর্ণবাদী আচরণ সয়েছেন। ২০২০ সালে প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগান মার্কেল রাজপরিবারের দায়িত্ব ছেড়ে যান।
গত জানুয়ারিতে প্রিন্স হ্যারি তাঁর আত্মজীবনী স্পেয়ার-এ ব্রিটেনের রাজপরিবারের নানা গোপন কথা সামনে আনেন। হ্যারি তাঁর আত্মজীবনী স্পেয়ার-এ নিজের জীবনসংগ্রামের পাশাপাশি রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন। এর মধ্যে তাঁর বাবা প্রিন্স চার্লস, সৎমা ক্যামিলা ও বড় ভাই প্রিন্স উইলিয়ামের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ তুলেছেন।
এসব অভিযোগ ও বিতর্ক রাজপরিবারের প্রতি জনসাধারণের বিরূপ মনোভাব তৈরি করতে সাহায্য করেছে। এখন ব্রিটিশ রাজপরিবারকে রোল মডেল হিসেবে দেখেন কি না, এমন প্রশ্ন করা হয় সিএনএনের সমীক্ষায়। এর উত্তরে ৪৪ শতাংশ ব্রিটিশ বলেছেন, মানুষের পছন্দ করার মতো রাজপরিবারে নেতৃত্ব তৈরি ও নির্দেশনা দেওয়া ভালো উৎস তৈরি হয়নি। ৫৫ শতাংশ তরুণ রাজপরিবারকে রোল মডেল মানতে নারাজ। তবে ৪১ শতাংশ একে রোল মডেল মানেন। তবে ১৫ শতাংশ এ বিষয়ে নিশ্চিত নন।
রাজপরিবারের সব সদস্যকেও অবশ্য একইভাবে দেখা হয় না। প্রিন্স উইলিয়াম ও ক্যাথরিনকে ৬২ শতাংশ ব্রিটিশ পছন্দ করেন। প্রিন্স উইলিয়ামকে পছন্দ করেন না ১৪ শতাংশ আর ক্যাথরিনকে পছন্দ করেন না ১৩ শতাংশ। অন্যরা এ বিষয়ে মতামত দেননি। প্রিন্স চার্লসকে ৫০ শতাংশের কিছু কম লোক পছন্দ করেন। তাঁকে পছন্দ করেন না, এমন মত ২৩ শতাংশের। কুইন কনসোর্ট ক্যামিলাকে নিয়ে মত বিভক্ত। তাঁকে পছন্দ করেন ৩৪ শতাংশ, অপছন্দ করেন ৩২ শতাংশ আর মত দেননি ৩১ শতাংশ। প্রিন্স হ্যারি ও মেগানকে অপছন্দ করার লোকই বেশি। প্রিন্স হ্যারিকে পছন্দ করেন না, এমন হার ৫২ শতাংশ আর মেগানকে অপছন্দ করেন ৫৬ শতাংশ।