১৩ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষের উপর ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৮১ জন নিহত

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 162

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: গাজা উপত্যকার বিভিন্ন অঞ্চলে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৮১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। চলমান ক্ষুধা সংকটের মধ্যে বিপন্ন মানুষগুলো খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া এই হামলায় শুধুমাত্র গাজা সিটি ও উত্তরাঞ্চলে ৫৯ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, নেটজারিম করিডোরের কাছে, যা গাজার উত্তর ও দক্ষিণকে বিভক্ত করেছে, খাদ্য সহায়তা পাওয়ার আশায় অপেক্ষমাণ ১৬ জন নিহত হন।

ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা প্রতিদিন এই এলাকায় জড়ো হন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল-সমর্থিত Gaza Humanitarian Foundation (GHF)-এর সাহায্য গ্রহণের জন্য, যার কার্যক্রমকে জাতিসংঘ ‘মানবিক সহায়তার অস্ত্রীকরণ’ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে।

আরও পড়ুন: গাজা শিশু ও ক্ষুধার্তদের কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে: রাষ্ট্র সংঘ সংস্থার প্রধানের অভিযোগ

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাসসাম আবু শার AFP-কে জানান, “রাত ১টার দিকে আমাদের দিকে গুলি ছোড়া শুরু হয়। ট্যাঙ্ক, বিমান ও কোয়াডকপ্টার বোমা থেকে গুলিবর্ষণ চলে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা কাউকে সাহায্য করতে পারিনি, এমনকি নিজেরাও পালাতে পারিনি। এত ভিড় ছিল যে কারও পক্ষে গুলি থেকে বাঁচা সম্ভব ছিল না।”

আরও পড়ুন: আল-আকসা মসজিদ ‘রেড লাইন’ গাজা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে হামাসের প্রতিক্রিয়া পেল ইসরাইল

সম্প্রতি খাদ্য সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলি হামলার ঘটনা বেড়েছে, যাতে বহু মানুষ নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন: ফের অশান্ত মণিপুর, বন্দুকবাজের গুলিতে মৃত্যু ৪ জনের

দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার সংবাদদাতা তারেক আবু আজ্জুম জানান, “সহায়তা কেন্দ্রে হামলা এখন দৈনন্দিন ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তিন মাসের বেশি সময় ধরে ইসরাইলি অবরোধে গাজা এখন এক মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে, যেখানে মানবিক সহায়তার সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে।”

তিনি বলেন, “মানুষ বাধ্য হয়ে নির্দিষ্ট কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে আটা, পানি ও কম পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবারের প্যাকেট নিচ্ছে। কিন্তু এখন সেগুলোও প্রাণঘাতী হামলার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।”

Reuters-এর মতে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, কিছু ‘সন্দেহভাজন ব্যক্তি’ নেটজারিম এলাকায় সেনাবাহিনীর দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেছিল, যা সেনাদের জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল। তারা সতর্কবার্তা হিসেবে গুলি ছোড়ে বলে জানায়, তবে এ ঘটনায় তারা কোনো হতাহতের খবর জানে না বলে উল্লেখ করে।

একই দিনে, Shati Refugee Camp-এ চার্জিং পয়েন্টে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় ১৯ জন নিহত হয়। একই সময়ে জাবালিয়া অঞ্চলে ইসরাইলি বিমান হামলায় একাধিক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়।

গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে ৬৯টি মৃতদেহ ও ২২১ জন আহত ব্যক্তি ভর্তি করা হয়েছে বলে মেডিক্যাল সূত্রে জানা গেছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের পর থেকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৫৫,৭০৬ জন নিহত এবং ১,৩০,১০১ জন আহত  হয়েছে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষের উপর ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৮১ জন নিহত

আপডেট : ১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: গাজা উপত্যকার বিভিন্ন অঞ্চলে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৮১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। চলমান ক্ষুধা সংকটের মধ্যে বিপন্ন মানুষগুলো খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া এই হামলায় শুধুমাত্র গাজা সিটি ও উত্তরাঞ্চলে ৫৯ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, নেটজারিম করিডোরের কাছে, যা গাজার উত্তর ও দক্ষিণকে বিভক্ত করেছে, খাদ্য সহায়তা পাওয়ার আশায় অপেক্ষমাণ ১৬ জন নিহত হন।

ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা প্রতিদিন এই এলাকায় জড়ো হন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল-সমর্থিত Gaza Humanitarian Foundation (GHF)-এর সাহায্য গ্রহণের জন্য, যার কার্যক্রমকে জাতিসংঘ ‘মানবিক সহায়তার অস্ত্রীকরণ’ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে।

আরও পড়ুন: গাজা শিশু ও ক্ষুধার্তদের কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে: রাষ্ট্র সংঘ সংস্থার প্রধানের অভিযোগ

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাসসাম আবু শার AFP-কে জানান, “রাত ১টার দিকে আমাদের দিকে গুলি ছোড়া শুরু হয়। ট্যাঙ্ক, বিমান ও কোয়াডকপ্টার বোমা থেকে গুলিবর্ষণ চলে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা কাউকে সাহায্য করতে পারিনি, এমনকি নিজেরাও পালাতে পারিনি। এত ভিড় ছিল যে কারও পক্ষে গুলি থেকে বাঁচা সম্ভব ছিল না।”

আরও পড়ুন: আল-আকসা মসজিদ ‘রেড লাইন’ গাজা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে হামাসের প্রতিক্রিয়া পেল ইসরাইল

সম্প্রতি খাদ্য সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলি হামলার ঘটনা বেড়েছে, যাতে বহু মানুষ নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন: ফের অশান্ত মণিপুর, বন্দুকবাজের গুলিতে মৃত্যু ৪ জনের

দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার সংবাদদাতা তারেক আবু আজ্জুম জানান, “সহায়তা কেন্দ্রে হামলা এখন দৈনন্দিন ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তিন মাসের বেশি সময় ধরে ইসরাইলি অবরোধে গাজা এখন এক মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে, যেখানে মানবিক সহায়তার সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে।”

তিনি বলেন, “মানুষ বাধ্য হয়ে নির্দিষ্ট কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে আটা, পানি ও কম পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবারের প্যাকেট নিচ্ছে। কিন্তু এখন সেগুলোও প্রাণঘাতী হামলার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।”

Reuters-এর মতে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, কিছু ‘সন্দেহভাজন ব্যক্তি’ নেটজারিম এলাকায় সেনাবাহিনীর দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেছিল, যা সেনাদের জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল। তারা সতর্কবার্তা হিসেবে গুলি ছোড়ে বলে জানায়, তবে এ ঘটনায় তারা কোনো হতাহতের খবর জানে না বলে উল্লেখ করে।

একই দিনে, Shati Refugee Camp-এ চার্জিং পয়েন্টে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় ১৯ জন নিহত হয়। একই সময়ে জাবালিয়া অঞ্চলে ইসরাইলি বিমান হামলায় একাধিক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়।

গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে ৬৯টি মৃতদেহ ও ২২১ জন আহত ব্যক্তি ভর্তি করা হয়েছে বলে মেডিক্যাল সূত্রে জানা গেছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের পর থেকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৫৫,৭০৬ জন নিহত এবং ১,৩০,১০১ জন আহত  হয়েছে।