১২ জুলাই ২০২৫, শনিবার, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জোরদার সম্পর্ক: চালু হচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সরাসরি উড়ান

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ৭ ডিসেম্বর ২০২৪, শনিবার
  • / 54

ঢাকা: জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক হিমশীতল অবস্থায় পৌঁছেছে। এখন নতুন করে সংখ্যালঘু ইস্যু তুলে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কেও টানোপোড়ন দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হচ্ছে বাংলাদেশের। মুক্তিযুদ্ধের পর এই প্রথম করাচি থেকে জাহাজ এসে ভিড়েছে চট্টগ্রাম ব¨রে। এর পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু হতে যাচ্ছে। বাণিজ্যিক সম্পর্কও বাড়বে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে চালু হতে যাচ্ছে সরাসরি ফ্লাইট। গুজব নয়, এই খবর জানিয়েছেন করাচিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার এস এম মাহবুবুল আলম। এমন উদ্যোগ দ্বিপাক্ষিক এবং তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ককে জোরদার করবে বলেও জানান তিনি। অনেকে ভাবছেন, ইউনূস সরকারই প্রথম পাকিস্তানের সঙ্গে দহরম-মহরম শুরু করল। কিন্তু ইতিহাস বলছে, মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভের পর শেখ মুজিব ক্ষমতায় এসেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোকে ঢাকায় এনেছিলেন। ভারত বিরোধিতার পালে হাওয়া দিয়েছিলেন। দুঃখের হলেও সত্য যে এই তথাকথিত ভারত বিরোধিতা শুরু করেছিলেন স্বয়ং মুজিব। ভুট্টোকে তিনি ১৯৭৪ সালে বুকে জড়িয়ে ধরেন ঢাকায়। রেড কার্পেট ওয়েলকাম জানান। বাংলাদেশে যারা এর বিরোধিতা করেছিল তাদেরকে মুজিবের পুলিশ পেটায়।  যে পাকিস্তান মাত্র ২ বছর আগে গণহত্যা চালাল বাঙালিদের উপর, তাদেরকেই স্বাগত জানান মুজিবুর রহমান। এই দ্বিচারিতা, এই রাজনীতি, এই কূটনীতি তৎকালীন ভারত সরকারও ভালো চোখে দেখেনি। অনেকেই সেসময় বলতে শুরু করেছিল, মুজিব তো মুক্তিযুদ্ধের ময়দানে লড়াই করেননি। পাকিস্তানে আয়েস করেছেন। তাই তিনি লাখো শহিদ, ধর্ষিতা নারীদের সঙ্গে বেইমানি করতে পারলেন! সেই ট্র্যাডিশন মেনেই বোধহয় ভারতকে ছেড়ে এখন পাকিস্তানের দিকে মুখ ফেরাচ্ছে পড়শি বাংলাদেশ। এর ফলে মোদি সরকার উপমহাদেশে একদম নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ল বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

এদিকে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নতির নজির স্বরূপ ™াঞ্জাবে ব্যবসায়ীদের জোট ‘হায়দরাবাদ চেম্বার অব স্মল ট্রেডার্স অ্যান্ড স্মল ইন্ডাস্ট্রি’র সহযোগিতায় হায়দরাবাদ দুই দেশের আমদানিকারক ও রফতানিকারকদের জন্য একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে বলেও জানিয়েছেন বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বার্ষিক বাণিজ্য প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের জন্য পকিস্তানের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মাহবুবুল আলম। তাদের অংশগ্রহণের সুবিধায় ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ওপর জোর দিয়েছেন। বাংলাদেশকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় বাজার হিসেবে বর্ণনা করে এইচসিএসটিএসআইকে ঢাকায় একটি প্রতিনিধি দলও পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন মাহবুবুল আলম। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুততর করার। করাচিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশ তার পণ্য ৮০টি দেশে রপ্তানি করে বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় করছে। তবে, তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে শক্তিশালী বাণিজ্য-সম্পর্কের মাধ্যমে তা আরও সম্প্রসারণ ও বিস্তৃত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

Tag :

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

জোরদার সম্পর্ক: চালু হচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সরাসরি উড়ান

আপডেট : ৭ ডিসেম্বর ২০২৪, শনিবার

ঢাকা: জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক হিমশীতল অবস্থায় পৌঁছেছে। এখন নতুন করে সংখ্যালঘু ইস্যু তুলে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কেও টানোপোড়ন দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হচ্ছে বাংলাদেশের। মুক্তিযুদ্ধের পর এই প্রথম করাচি থেকে জাহাজ এসে ভিড়েছে চট্টগ্রাম ব¨রে। এর পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু হতে যাচ্ছে। বাণিজ্যিক সম্পর্কও বাড়বে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে চালু হতে যাচ্ছে সরাসরি ফ্লাইট। গুজব নয়, এই খবর জানিয়েছেন করাচিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার এস এম মাহবুবুল আলম। এমন উদ্যোগ দ্বিপাক্ষিক এবং তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ককে জোরদার করবে বলেও জানান তিনি। অনেকে ভাবছেন, ইউনূস সরকারই প্রথম পাকিস্তানের সঙ্গে দহরম-মহরম শুরু করল। কিন্তু ইতিহাস বলছে, মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভের পর শেখ মুজিব ক্ষমতায় এসেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোকে ঢাকায় এনেছিলেন। ভারত বিরোধিতার পালে হাওয়া দিয়েছিলেন। দুঃখের হলেও সত্য যে এই তথাকথিত ভারত বিরোধিতা শুরু করেছিলেন স্বয়ং মুজিব। ভুট্টোকে তিনি ১৯৭৪ সালে বুকে জড়িয়ে ধরেন ঢাকায়। রেড কার্পেট ওয়েলকাম জানান। বাংলাদেশে যারা এর বিরোধিতা করেছিল তাদেরকে মুজিবের পুলিশ পেটায়।  যে পাকিস্তান মাত্র ২ বছর আগে গণহত্যা চালাল বাঙালিদের উপর, তাদেরকেই স্বাগত জানান মুজিবুর রহমান। এই দ্বিচারিতা, এই রাজনীতি, এই কূটনীতি তৎকালীন ভারত সরকারও ভালো চোখে দেখেনি। অনেকেই সেসময় বলতে শুরু করেছিল, মুজিব তো মুক্তিযুদ্ধের ময়দানে লড়াই করেননি। পাকিস্তানে আয়েস করেছেন। তাই তিনি লাখো শহিদ, ধর্ষিতা নারীদের সঙ্গে বেইমানি করতে পারলেন! সেই ট্র্যাডিশন মেনেই বোধহয় ভারতকে ছেড়ে এখন পাকিস্তানের দিকে মুখ ফেরাচ্ছে পড়শি বাংলাদেশ। এর ফলে মোদি সরকার উপমহাদেশে একদম নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ল বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

এদিকে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নতির নজির স্বরূপ ™াঞ্জাবে ব্যবসায়ীদের জোট ‘হায়দরাবাদ চেম্বার অব স্মল ট্রেডার্স অ্যান্ড স্মল ইন্ডাস্ট্রি’র সহযোগিতায় হায়দরাবাদ দুই দেশের আমদানিকারক ও রফতানিকারকদের জন্য একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে বলেও জানিয়েছেন বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বার্ষিক বাণিজ্য প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের জন্য পকিস্তানের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মাহবুবুল আলম। তাদের অংশগ্রহণের সুবিধায় ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ওপর জোর দিয়েছেন। বাংলাদেশকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় বাজার হিসেবে বর্ণনা করে এইচসিএসটিএসআইকে ঢাকায় একটি প্রতিনিধি দলও পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন মাহবুবুল আলম। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুততর করার। করাচিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশ তার পণ্য ৮০টি দেশে রপ্তানি করে বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় করছে। তবে, তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে শক্তিশালী বাণিজ্য-সম্পর্কের মাধ্যমে তা আরও সম্প্রসারণ ও বিস্তৃত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।