০৪ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পতৌদির পক্ষে সুপ্রিম স্থগিতাদেশে, স্বস্তিতে ভোপালের মুসলিমরা

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৯ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার
  • / 308

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: মধ্যপ্রদেশের ইতিহাস থেকে মুসলিম ঐতিহ্য মুছে ফেলতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে রাজ্যের বিজেপি সরকার। বিশেষ করে ভোপালের শেষ নবাব হামিদুল্লাহ খানকে টার্গেটে করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব। রাজ্যের মন্ত্রী নরেন্দ্র শিবাজি প্যাটেল বলেছেন, হামিদুল্লাহ ছিলেন বিশ্বাসঘাতক। ১৯৪৭ সালে তিনি ভারতভুক্তির বিরোধিতা করেন।

 

১৫ আগস্ট তিনি নাকি রাজ্যের কোথাও তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করতে দেননি। একথা বলে মন্ত্রী হামিদুল্লাহ এর নামাঙ্কিত সব ভবনের নাম বদলে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেন। এই আবহের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির এক বেঞ্চ সঈফ আলি খান এবং তাঁর পরিবারের পক্ষেই রায় দিয়ে এখানকার মুসলিমদের মধ্যে স্বস্তির সঞ্চার করেছে। সঈফের পতৌদির রাজ পরিবার আফগান পাঠান বংশোদ্ভূত। তাঁর প্রপিতামহ ফয়েজ তালাব খান ১৮০৪ সালে পতৌদির প্রথম নবাব হন।

আরও পড়ুন: I love Muhammad’ ব্যানারকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা অসাংবিধানিক: জামায়াতে ইসলামি হিন্দ

 

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা তকমা দিয়ে কারমাইকেল হস্টেলের আবাসিকদের উপর আক্রমণের অভিযোগ

তাঁর পিতামহ নবাব ইফতিকার আলি খান পতৌদির সঙ্গে ভোপালের নবাব কন্যা সাজিদা সুলতানার বিবাহ হয়। এর মধ্য দিয়ে ভোপালের নবাব পরিবারের সঙ্গে পতৌদির নবাবের মেলবন্ধন হয়। ইফতিকার আলি খান প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটার ছিলেন। ১৯৪৬ সালে তিনি ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন। অন্যদিকে সাজিদা ছিলেন শিল্প সংস্কৃতি জগতের অনন্য ব্যক্তিত্ব।

আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট এন্ট্রান্স ২০২৫: ওবিসি সংরক্ষণ ইস্যুতে হাই কোর্টের স্থগিতাদেশ

 

২০১১ সালে সঈফ পতৌদির ১০ ম নবাব হন। যদিও ১৯৭১ সালেই রাজন্যপ্রথা বিলুপ্ত হয়। সেই সঈফের পরিবারের সম্পত্তি, যার মূল্য আনুমানিক ১৫ হাজার কোটি টাকা, বেহাত করতে বিজেপি উঠে পড়ে লেগেছিল। গোড়ায় নিম্ন আদালত রায় দেয় যে, পতৌদি রাজপরিবারের পুরো সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে সঈফই পাবেন। কিন্তু মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট সেই রায় খারিজ করে দেয়।

 

এরপর সঈফের পরিবার সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হন। সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট এর রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়ে ফের মামলাটি নিম্ন আদালতে পাঠিয়েছে। স্থানীয় আইনজীবী ইমরান কুরেশি বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ নিছক স্থগিতাদেশ হিসেবে দেখলে ভুল হবে। রাজনৈতিক ভাবে এই সম্পত্তি দখলের চেষ্টা ধাক্কা খেল। নবাব পরিবারের সম্পত্তি হিন্দু রাজা ভোজ এর সম্পত্তি বলে দাবি করেছেন বিজেপি বিধায়ক রামেশ্বর শর্মা। স্থানীয় মানুষজনের এই নিয়ে প্রবল ক্ষোভ।

অথচ কয়েক শতক ধরে ভোপালে নবাবরা রাজত্ব করেছেন। বেগম শাহ জাহান, বেগম সুলতানা জাহান আধুনিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রেল যোগাযোগ গড়ে তুলতে প্রভূত উদ্যোগ নেন। এখানে তাজ উল মসজিদ, মোতিমহল, শৌকত মহল স্থাপত্যের অত্যাশ্চর্য দৃষ্টান্ত হয়ে আজও বহাল। রয়েছে হামিদিয়া হাসপাতাল, হামিদিয়া স্কুলও। এইসব নিয়ে এখানকার মুসলিমরা গর্বিত।

 

বিজেপি সরকার সমস্ত স্মৃতি চিহ্ন মুছে দিতে চাইছে। মোহন যাদব মুখ্যমন্ত্রী হয়েই মোহ লিয়া রে নামে এক পর্যটন প্রকল্প চালু করেন, যাতে উজ্জয়িনী, খাজুরাহো, ওরচার উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়। অথচ ভোপাল এবং মান্ডুকে তালিকার বাইরে রাখা হয়। এই দুই অঞ্চলে মুসলিম স্মৃতি লতায়পাতায় ছড়িয়ে রয়েছে। যুবকর্মী আমির হুসেনের আশঙ্কা, সহজে রণে ভঙ্গ দেবে না বিজেপি। নিম্ন আদালতে ফের কোনও ফন্দি আঁটবে। তাই এখানকার মুসলিমরা স্বস্তিতে নেই।

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

পতৌদির পক্ষে সুপ্রিম স্থগিতাদেশে, স্বস্তিতে ভোপালের মুসলিমরা

আপডেট : ৯ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: মধ্যপ্রদেশের ইতিহাস থেকে মুসলিম ঐতিহ্য মুছে ফেলতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে রাজ্যের বিজেপি সরকার। বিশেষ করে ভোপালের শেষ নবাব হামিদুল্লাহ খানকে টার্গেটে করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব। রাজ্যের মন্ত্রী নরেন্দ্র শিবাজি প্যাটেল বলেছেন, হামিদুল্লাহ ছিলেন বিশ্বাসঘাতক। ১৯৪৭ সালে তিনি ভারতভুক্তির বিরোধিতা করেন।

 

১৫ আগস্ট তিনি নাকি রাজ্যের কোথাও তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করতে দেননি। একথা বলে মন্ত্রী হামিদুল্লাহ এর নামাঙ্কিত সব ভবনের নাম বদলে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেন। এই আবহের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির এক বেঞ্চ সঈফ আলি খান এবং তাঁর পরিবারের পক্ষেই রায় দিয়ে এখানকার মুসলিমদের মধ্যে স্বস্তির সঞ্চার করেছে। সঈফের পতৌদির রাজ পরিবার আফগান পাঠান বংশোদ্ভূত। তাঁর প্রপিতামহ ফয়েজ তালাব খান ১৮০৪ সালে পতৌদির প্রথম নবাব হন।

আরও পড়ুন: I love Muhammad’ ব্যানারকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা অসাংবিধানিক: জামায়াতে ইসলামি হিন্দ

 

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা তকমা দিয়ে কারমাইকেল হস্টেলের আবাসিকদের উপর আক্রমণের অভিযোগ

তাঁর পিতামহ নবাব ইফতিকার আলি খান পতৌদির সঙ্গে ভোপালের নবাব কন্যা সাজিদা সুলতানার বিবাহ হয়। এর মধ্য দিয়ে ভোপালের নবাব পরিবারের সঙ্গে পতৌদির নবাবের মেলবন্ধন হয়। ইফতিকার আলি খান প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটার ছিলেন। ১৯৪৬ সালে তিনি ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন। অন্যদিকে সাজিদা ছিলেন শিল্প সংস্কৃতি জগতের অনন্য ব্যক্তিত্ব।

আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট এন্ট্রান্স ২০২৫: ওবিসি সংরক্ষণ ইস্যুতে হাই কোর্টের স্থগিতাদেশ

 

২০১১ সালে সঈফ পতৌদির ১০ ম নবাব হন। যদিও ১৯৭১ সালেই রাজন্যপ্রথা বিলুপ্ত হয়। সেই সঈফের পরিবারের সম্পত্তি, যার মূল্য আনুমানিক ১৫ হাজার কোটি টাকা, বেহাত করতে বিজেপি উঠে পড়ে লেগেছিল। গোড়ায় নিম্ন আদালত রায় দেয় যে, পতৌদি রাজপরিবারের পুরো সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে সঈফই পাবেন। কিন্তু মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট সেই রায় খারিজ করে দেয়।

 

এরপর সঈফের পরিবার সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হন। সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট এর রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়ে ফের মামলাটি নিম্ন আদালতে পাঠিয়েছে। স্থানীয় আইনজীবী ইমরান কুরেশি বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ নিছক স্থগিতাদেশ হিসেবে দেখলে ভুল হবে। রাজনৈতিক ভাবে এই সম্পত্তি দখলের চেষ্টা ধাক্কা খেল। নবাব পরিবারের সম্পত্তি হিন্দু রাজা ভোজ এর সম্পত্তি বলে দাবি করেছেন বিজেপি বিধায়ক রামেশ্বর শর্মা। স্থানীয় মানুষজনের এই নিয়ে প্রবল ক্ষোভ।

অথচ কয়েক শতক ধরে ভোপালে নবাবরা রাজত্ব করেছেন। বেগম শাহ জাহান, বেগম সুলতানা জাহান আধুনিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রেল যোগাযোগ গড়ে তুলতে প্রভূত উদ্যোগ নেন। এখানে তাজ উল মসজিদ, মোতিমহল, শৌকত মহল স্থাপত্যের অত্যাশ্চর্য দৃষ্টান্ত হয়ে আজও বহাল। রয়েছে হামিদিয়া হাসপাতাল, হামিদিয়া স্কুলও। এইসব নিয়ে এখানকার মুসলিমরা গর্বিত।

 

বিজেপি সরকার সমস্ত স্মৃতি চিহ্ন মুছে দিতে চাইছে। মোহন যাদব মুখ্যমন্ত্রী হয়েই মোহ লিয়া রে নামে এক পর্যটন প্রকল্প চালু করেন, যাতে উজ্জয়িনী, খাজুরাহো, ওরচার উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়। অথচ ভোপাল এবং মান্ডুকে তালিকার বাইরে রাখা হয়। এই দুই অঞ্চলে মুসলিম স্মৃতি লতায়পাতায় ছড়িয়ে রয়েছে। যুবকর্মী আমির হুসেনের আশঙ্কা, সহজে রণে ভঙ্গ দেবে না বিজেপি। নিম্ন আদালতে ফের কোনও ফন্দি আঁটবে। তাই এখানকার মুসলিমরা স্বস্তিতে নেই।