বিজেপির লোক ধর্ম নিয়ে কথা বললে গ্রেফতার হয় না, সাসপেন্ডেড নেত্রীর নাম না করে আসানসোল থেকে আক্রমণাত্মক মমতা

- আপডেট : ২৮ জুন ২০২২, মঙ্গলবার
- / 8
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বর্ধমানে কৃষক বন্ধু (নয়া) প্রকল্পের উদ্বোধনের পরেই আজ মঙ্গলবার আসানসোলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সভার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রণংদেহী মূর্তিতে দেখা গেল তৃণমূল সুপ্রিমোকে। বিভিন্ন ইস্যুকে একের পর এক কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হন তিনি। অগ্নিপথ থেকে শুরু করে ধর্ম নিয়ে মন্তব্য, বেকারত্ব, নিয়োগ একাধিক ইস্যুতে নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রোশে ফেটে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে বলেন, ধর্ম নিয়ে যিনি মন্তব্য করেছেন তাকে আমি ছাড়ব না। বিজেপির লোক ধর্ম নিয়ে কথা বললে তাকে গ্রেফতার করা হয় না। এদিন নাম না করে বিজেপির সাসপেন্ডেড নেত্রী নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি। এদিন মঞ্চ থেকেই তিনি প্রশ্ন তোলেন, সমাজকর্মী তিস্তা শীতলাবাদকে গ্রেফতার করা হল কেন? জুবায়ের আহমেদকে কেন গ্রেফতার করা হল?
এদিন ফের ইডি, সিবিআই নিয়ে মমতাকে একইভাবে বলতে শোনা যায়, কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে ইডি, সিবিআই ধরে নিয়ে যায়।
অগ্নিবীর নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে বলেন, চার মাসের ট্রেনিং দিয়ে আর চার বছর পরে অগ্নিবীরদের রাখা যাবে না। অগ্নিবীরে সাধারণ পরিবারের ছেলেরা চাকরি পাবে না। চাকরি পাবে তাদের শাখার কিছু লোক। লোকসভা ভোট শেষ হলেই, অগ্নিবীরদের বলবে বাড়ি চলে যেতে। তারপরে রাজ্যগুলিকে দেখে নিতে বলা হচ্ছে। তোমাদের পাপ আমরা কেন নেব?
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, চাকরির জন্য আমাদের পছন্দ হবে স্থানীয়রাই। আমার হাতে ১৭ হাজার শিক্ষকদের চাকরি রয়েছে। কিন্তু আদালত না দিলে আমি কীভাবে দেব? আদালত থেকে নির্দেশ আনুন চাকরি হবে। বামেদের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করে বলেন, আইনজীবী বিকাশরঞ্জনের কাছে যান। বলুন আপনারা চাকরি নিয়েছেন, আপনারা চাকরি দিন।
কর্মসংস্থান নিয়ে ম্যারাথন তোপ দেগে মমতা বলেন, ত্রিপুরায় কত লোকের চাকরি চলে গিয়েছে। কেন্দ্র চাকরি কেড়ে নিচ্ছে। দেশে বেকারত্ব বাড়ছে আর রাজ্যে কর্ম সংস্থান বাড়ছে।
মহারাষ্ট্র সরকারের টালমাটাল অবস্থ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর গলায় শোনা গেল তীব্র আক্রমণের সুর। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, কোটি কোটি টাকা দিয়ে মহারাষ্ট্র ভাঙছে। বিধায়কদের কেনাবেচা করছে বিজেপি।
বিজেপি সরকারের একের পর এক তাদের কাজ নিয়ে তিনি তুলোধনা করে বলেন, কর্ম সংস্থান নিয়ে বিজেপি মিথ্যা কথা বলছে। দেশজুড়ে কৃষকদের কি অবস্থা। রেল, সেল প্রাইভেট হয়ে যাক আমি চাই না। সিলিন্ডারের দাম বেড়েছে। রেলে ৮০ হাজার পোস্ট খালি পড়ে আছে কেন?
আসানসোলের উন্নয়ন নিয়ে মমতা বলেন, আসানসোলের নতুন জেলা থেকে পুলিশ কমিশনারেট আমরা করেছি। মাল্টি ন্যাশনাল হাসপাতাল থেকে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় গড়েছি। আগামীদিনে অণ্ডাল বিমান বন্দর চালু হবে। দুর্গাপুর-পানাগড়-রানিগঞ্জ ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল মিউজিয়াম হবে। রানিগঞ্জে ১৫ হাজার গ্যাস সেল প্রকল্পে ১৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। দুর্গাপুর গ্যাস-শেল অনুসন্ধান প্রকল্পে বিনিয়োগ হবে। বগটুইকাণ্ডে ১০ জনের চাকরি দিয়েছি। দেউচা-পাচামিতে ১ লক্ষ মানুষের কাজ হবে।
লোকসভা জয়ের পর এই জেলার সফরের দ্বিতীয় দিনে আসানসোলে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মঞ্চ থেকেই মমতা বলেন, বাবুল সুপ্রিয় একজন গুণী শিল্পী। তবে বাবুল আসানসোলের সাংসদ ছিলেন। কিন্তু বাবুলকে বিজেপির পছন্দ হয়নি। বাবুল এখন বালিগঞ্জের সাংসদ। বাবুলের পাশাপাশি শত্রুঘ্ন সিনহাকে ধন্যবাদ জানিয়ে মমতা বলেন, তৃণমূলকে জিতিয়ে বিজেপিকে খামোশ করে দিয়েছে শত্রুঘ্ন। আসানসোলে ভোটে জয়, বিজেপির মুখের মতো জবাব হয়েছে।
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লাগাতার সুর চড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতে থাকেন, বাংলা এগিয়ে তাই বিজেপি হিংসায় জ্বলছে। বিজেপি খালি চারদিকে ছবি লাগাচ্ছে, ছবি লাগাতে লাগাতে বিজেপি একদিন সাইনবোর্ড হয়ে যাবে। বাংলায় আমরা বাড়ি তৈরি করলাম, বাংলায় বাড়ি তৈরি করলে ক্ষতি কী?
এদিন তার আক্রমণের নিশানায় ছিল সংবাদমাধ্যম। এদিন তিনি বলেন, টাকার জন্য ডিজিট্যাল খুলে ব্যবসা না করে সঠিক খবর পরিবেশন করুন। আমরা আপনাদের কাছ থেকে সঠিক তথ্য চাই। মমতা বলেন, আমি সোশ্যাল নেটওয়ার্কের পক্ষে। তবে যারা ভালো খবর ছড়ায় আমি তাদের পক্ষে। আর বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেক ভিডিও করে।
এদিন সোচ্চার হয়ে তিনি বলেন, পিএম টাকার হিসেব নেই। ১১০০ কোটি টাকা দিয়ে বিজেপি অফিস বানায়। তার প্রশ্ন আপনাদের কাছে নেই, অথচ বাংলায় কেউ কিছু করলেই আপনাদের প্রশ্ন। বিজেপি আসলে চিটিংবাজি করছে। বিজেপি ১০০ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না। জিএসটি নিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র, অথচ রাজ্যের প্রাপ্য দিচ্ছে না।