সিএএ নিয়ে মাঠে বিজেপি, পাল্টা বাঙালি অস্মিতার ডাক মমতার

- আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৫, বুধবার
- / 39
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: বাংলাভাষীদের প্রতি ভিন্রাজ্যে হেনস্থার অভিযোগ তুলে ফের আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি— বাঙালিদের টার্গেট করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ধরপাকড় চলছে। বিজেপি এর পাল্টা বক্তব্যে বলছে, যাঁদের ধরা হচ্ছে তাঁরা ‘ভারতীয়’ নন, বরং বাংলাদেশি বা রোহিঙ্গা। তৃণমূল ‘বাঙালি অস্মিতা’র নামে জনমত গড়তে পথে নেমেছে, আর বিজেপি পাল্টা চাল হিসেবে খুলছে ‘সিএএ সহযোগিতা শিবির’।
উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, উত্তরবঙ্গ— উদ্বাস্তুপ্রধান এলাকাগুলিতে জোরকদমে নাগরিকত্বের আবেদনপত্র সংগ্রহ শুরু করেছে বিজেপি। সিএএ (নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন) ঘিরে যেসব আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তা কাটাতেই দলীয় স্তরে প্রচার ও সচেতনতা শিবির চালানো হচ্ছে। মতুয়া মহাসঙ্ঘও ইতিমধ্যে এই কাজে সক্রিয় হয়েছে। মতুয়া সঙ্ঘাধিপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর জানিয়েছেন, যাঁদের আবেদন করতে অসুবিধা, তাঁদের হয়ে ফর্ম পূরণ করবে সংগঠন। পাশাপাশি প্রশিক্ষিত তরুণদের মোতায়েন করা হচ্ছে এলাকায় এলাকায়।
সবচেয়ে বড় মতুয়া ঘনত্বের এলাকা বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রে প্রথম সিএএ সহযোগিতা শিবির খোলা হয়েছে। বিজেপির প্রাক্তন সংগঠনিক সহকারী গোপাল গয়ালির উদ্যোগে এই শিবির চালাচ্ছেন তাঁর ভাই সৌরভ গয়ালি, বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা। বনগাঁ দক্ষিণেও এক দিনের শিবির হয়েছে। হরিণঘাটা, ঠাকুরনগর এবং শীঘ্রই উত্তরবঙ্গেও এই উদ্যোগ চালু হবে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গেছে।
বিজেপির প্রচারে জোর দেওয়া হচ্ছে CAA আইনের ১০-ডি অনুচ্ছেদের ওপর। বলা হচ্ছে, যাঁরা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পার্সি বা জৈন এবং ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর বা তার আগে ভারতে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্বের আবেদন গ্রহণযোগ্য। এমনকি নথিপত্র না থাকলেও আবেদন জমা দেওয়া যাবে। পরবর্তী পর্যায়ে জেলা স্তরের শুনানিতে বা দফায় দফায় নথি জমা দিলেই চলবে।
২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকার যে জিএসআর ৬৮৫ এবং ৬৮৬ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, তাতে বলা হয়, প্রতিবেশী দেশ থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁদের ‘আশ্রয়প্রার্থী’ ধরা হবে এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় (ন্যাচারালাইজেশন) নাগরিকত্ব মিলবে। বিজেপির দাবি— এটি নাগরিকত্ব ‘দেওয়ার’ আইন, ‘কেড়ে নেওয়ার’ নয়।
সিএএ কার্যকর হওয়ার পরে মতুয়া সমাজে ভয়ভীতির বাতাবরণ তৈরি হয়। তৃণমূল এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে সরব হয়েছে ‘বাঙালি অপমান’ ও ‘ভোটার নির্যাতন’-এর অভিযোগ তুলে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি মন্তব্য করেন, ভাষার ভিত্তিতে নাগরিকত্ব বঞ্চনা চললে তা মেনে নেওয়া হবে না। এরই পাশাপাশি তিনি অভিযোগ তোলেন, বিজেপি ‘বাংলাদেশি’ ট্যাগ দিয়ে প্রকৃত ভারতীয়দের হয়রানি করছে।
সিএএ আইন পাস হয়েছিল ২০১৯ সালে, কিন্তু বিধি প্রকাশিত হয়েছে ২০২৪-এ। এরপরেও বহু উদ্বাস্তু নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করেননি। তৃণমূলের ‘অস্মিতা’ লাইন রাজনৈতিক ময়দান গরম করতেই বিজেপির ‘সিএএ সহায়তা অভিযান’ শুরু বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলছেন, “CAA বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের, আমরা সেই কাজই করছি।” সেই সঙ্গেই বিজেপি নেতাদের দাবি— তাঁদের সহায়তায় উদ্বাস্তু সমাজ ক্রমেই আস্থা ফিরিয়ে পাচ্ছে।
CAA এবং ভাষাগত পরিচয় নিয়ে উত্তেজনার আবহে রাজ্যের রাজনৈতিক চালচিত্র নতুন বাঁকে মোড় নিচ্ছে। মমতার ‘অস্মিতা’র পাল্টা হিসেবে বিজেপি তুলে ধরছে ‘নাগরিকত্ব নিশ্চয়তার’ প্রতিশ্রুতি। দুই বৃহৎ দলের এই দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত হচ্ছে উদ্বাস্তু এলাকাগুলি। পরবর্তী সময়ে এই সংঘাত কী মোড় নেবে, তার ওপরই নির্ভর করবে ২০২৬ সালের ভোটের চালচিত্র— এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।