১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রিঙ্কু মজুমদারের একমাত্র সন্তানের দেহ উদ্ধার, চাঞ্চল্য

চামেলি দাস
  • আপডেট : ১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার
  • / 124

পুবের কলম প্রতিবেদকঃ দু’জনেই বিজেপি-র কর্মী। সবে একসঙ্গে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন। কিন্তু একমাসও কাটল না, বিজেপি-র দিলীপ ঘোষ এবং রিঙ্কু মজুমদারের জীবনে বিপর্যয় নেমে এল। রিঙ্কুর আগের পক্ষের ছেলে প্রীতম দাশগুপ্ত ওরফে সৃঞ্জয়ের রহস্যমৃত্যু হল। শাপুরজির আবাসন থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হল। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

কী করে এমন ঘটল? জানা যাচ্ছে, গতকাল রাতে প্রীতমের সঙ্গে এক বন্ধু ও বান্ধবী ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। প্রীতমের বন্ধুকে হাফপ্যান্ট পরা অবস্থায় দেখেন অনেকে। তাই তাঁরা রাতে ওই ফ্ল্যাটেই ছিলেন কি না প্রশ্ন উঠছে। ওই বান্ধবীকে আগেও সেখানে দেখা গিয়েছে এবং তাঁর সঙ্গে প্রীতমের বিয়ে হয়ে গিয়ে থাকতে পারে বলেও খবর।

আরও পড়ুন: পরপর দুই সভায় ডাক পেলেন না দিলীপ ঘোষ, দলের সঙ্গে কি সত্যিই দূরত্ব তৈরি হচ্ছে?

যে ফ্ল্যাট থেকে দেহ উদ্ধার হয়েছে প্রীতমের, তার দরজায় এখনও রিঙ্কুর নাম জ্বলজ্বল করছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, আজ সকাল ১০টা নাগাদ রান্নার লোক প্রথমে এসে প্রীতমকে অচৈতন্য অবস্থায় দেখতে পান। এক বন্ধু পা মাসাজ করছে। জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা চলছে। প্রীতমের মহিলা বান্ধবীই ফোন করেন রিঙ্কুকে। তিনি দৌড়াদৌড়ি করছিলেন।

আরও পড়ুন: digha jagannath dham:বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলে জগন্নাথধামে সস্ত্রীক দিলীপ ঘোষ! স্বাগত জানালেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী

এর পর বাড়িতে আসেন রিঙ্কু। আগেও এমন ঘটনা ঘটে বলে জানান রিঙ্কু। আগে কোনও একটি রোগ ছিল বলে তেমন কিছুই ঘটেছে বলে মনে হয় রিঙ্কুর। এর পর রিঙ্কুর গাড়িতে তুলেই প্রীতমকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

আরও পড়ুন: দিলীপ ঘোষের শুভ পরিণয়ে শুভেচ্ছাবার্তা -ফুল- মিষ্টি পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রী

প্রীতমের মামা পরিতোষ শীল জানিয়েছেন, ভাগ্নেকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। রাতেই ৯ টা থেকে ৯টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও প্রীতম যাননি। পরে ১০টা থেকে ১০টা ৩০মিনিট নাগাদ ফোন করেন প্রীতম। জানান, অফিস থেকে এসে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে সায়েন্স সিটিতে মামার জন্য অপেক্ষা করবেন বলে জানান। এদিনও ফের ফোন করেন পরিতোষ। কিন্তু বার বার ভয়েসমেলে চলে যাচ্ছিল ফোন। প্রীতম ঘুমাচ্ছেন ভেবে তাঁরা বেরিয়ে যান। আর তার পরই মর্মান্তিক খবর পান।

পরিতোষ জানিয়েছেন, মায়ের বিয়ে নিয়ে অসন্তোষের কোনও বালাই-ই ছিল না। যারপরনাই খুশি ছিলেন প্রীতম। রিঙ্কুর বিয়ের পর প্রীতমের মধ্যে কোনও পরিবর্তন দেখেননি তাঁরা। বরং আগের চেয়ে বেশি হাসিখুশি ছিলেন বলে জানিয়েছেন মামা পরিতোষ। ফলে কী কারণে মৃত্যু হল প্রীতমের, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। আর জি কর হাসপাতালে তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। তার রিপোর্ট হাতে পেলেই মৃত্যুর কারণ খোলসা হবে বলে জানা গিয়েছে।

মঙ্গলবার সন্ধেয় আরজি কর হাসপাতালের মর্গের সামনে স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারকে পাশে নিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, ক্ষ্মকল্পনাতীত, এমন দিন যে কখনও দেখতে হবে ভাবিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার আমার পুত্র সুখ হল না, পুত্র শোক হয়ে গেল!ক্ষ্ম অতীত স্মৃতি চারণা করে দিলীপ আরও বলেন, ক্ষ্মছেলেটা সর্বগুণ সম্পন্ন ছিল। এত ভাল ছেলেটা এভাবে চলে যাবে, কল্পনাও করতে পারছি না।ক্ষ্ম দিলীপের কথায়, ক্ষ্মআগের থেকে আমার সঙ্গে পরিচয় ছিল, খেলা দেখাতেও নিয়ে গিয়েছি। ওর প্রতি আমার মোহ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেটা যে এভাবে শেষ হয়ে যাবে, কল্পনাও করতে পারছি না। দিলীপ বলেন, এরকম একটা ঘটনা যার কোনও বর্ণনা দেওয়া যায় না। সকালে ওর মা রান্না করছিল, একটা ফোন এল, তারপরে এই ঘটনা। কীভাবে কী হল, আমরা বুঝতেও পারছি না। পুরোটাই একটা রহস্য। ময়নাতদন্তে নিশ্চয়ই সবটা জানা যাবে।

অন্যদিকে রিঙ্কু বলেন, ‘আমার ছেলে একবার দেড় বছর আগে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল, নিউরো ওষুধ খাওয়াতাম। ইদানীং সেই ওষুধগুলো ঠিকমতো খাচ্ছিল না। একাই থাকত, বাইরে বাইরে খেত। আমাকে বুঝতে দিত না, তবে বুঝতে পারতাম সব। না খেয়ে অফিস চলে যেত। খাওয়াদাওয়া ঠিক মতো করত না।’ বলতে বলতে কান্নায় গলা বুজে আসে রিঙ্কুর। ছেলে ভাল নেই, বুঝতে পেরেছিলেন মা, চেয়েওছিলেন কাছে এনে রাখতে, তবু সেটা করে ওঠার আগেই সব শেষ।

 

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

রিঙ্কু মজুমদারের একমাত্র সন্তানের দেহ উদ্ধার, চাঞ্চল্য

আপডেট : ১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার

পুবের কলম প্রতিবেদকঃ দু’জনেই বিজেপি-র কর্মী। সবে একসঙ্গে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন। কিন্তু একমাসও কাটল না, বিজেপি-র দিলীপ ঘোষ এবং রিঙ্কু মজুমদারের জীবনে বিপর্যয় নেমে এল। রিঙ্কুর আগের পক্ষের ছেলে প্রীতম দাশগুপ্ত ওরফে সৃঞ্জয়ের রহস্যমৃত্যু হল। শাপুরজির আবাসন থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হল। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

কী করে এমন ঘটল? জানা যাচ্ছে, গতকাল রাতে প্রীতমের সঙ্গে এক বন্ধু ও বান্ধবী ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। প্রীতমের বন্ধুকে হাফপ্যান্ট পরা অবস্থায় দেখেন অনেকে। তাই তাঁরা রাতে ওই ফ্ল্যাটেই ছিলেন কি না প্রশ্ন উঠছে। ওই বান্ধবীকে আগেও সেখানে দেখা গিয়েছে এবং তাঁর সঙ্গে প্রীতমের বিয়ে হয়ে গিয়ে থাকতে পারে বলেও খবর।

আরও পড়ুন: পরপর দুই সভায় ডাক পেলেন না দিলীপ ঘোষ, দলের সঙ্গে কি সত্যিই দূরত্ব তৈরি হচ্ছে?

যে ফ্ল্যাট থেকে দেহ উদ্ধার হয়েছে প্রীতমের, তার দরজায় এখনও রিঙ্কুর নাম জ্বলজ্বল করছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, আজ সকাল ১০টা নাগাদ রান্নার লোক প্রথমে এসে প্রীতমকে অচৈতন্য অবস্থায় দেখতে পান। এক বন্ধু পা মাসাজ করছে। জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা চলছে। প্রীতমের মহিলা বান্ধবীই ফোন করেন রিঙ্কুকে। তিনি দৌড়াদৌড়ি করছিলেন।

আরও পড়ুন: digha jagannath dham:বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলে জগন্নাথধামে সস্ত্রীক দিলীপ ঘোষ! স্বাগত জানালেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী

এর পর বাড়িতে আসেন রিঙ্কু। আগেও এমন ঘটনা ঘটে বলে জানান রিঙ্কু। আগে কোনও একটি রোগ ছিল বলে তেমন কিছুই ঘটেছে বলে মনে হয় রিঙ্কুর। এর পর রিঙ্কুর গাড়িতে তুলেই প্রীতমকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

আরও পড়ুন: দিলীপ ঘোষের শুভ পরিণয়ে শুভেচ্ছাবার্তা -ফুল- মিষ্টি পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রী

প্রীতমের মামা পরিতোষ শীল জানিয়েছেন, ভাগ্নেকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। রাতেই ৯ টা থেকে ৯টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও প্রীতম যাননি। পরে ১০টা থেকে ১০টা ৩০মিনিট নাগাদ ফোন করেন প্রীতম। জানান, অফিস থেকে এসে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে সায়েন্স সিটিতে মামার জন্য অপেক্ষা করবেন বলে জানান। এদিনও ফের ফোন করেন পরিতোষ। কিন্তু বার বার ভয়েসমেলে চলে যাচ্ছিল ফোন। প্রীতম ঘুমাচ্ছেন ভেবে তাঁরা বেরিয়ে যান। আর তার পরই মর্মান্তিক খবর পান।

পরিতোষ জানিয়েছেন, মায়ের বিয়ে নিয়ে অসন্তোষের কোনও বালাই-ই ছিল না। যারপরনাই খুশি ছিলেন প্রীতম। রিঙ্কুর বিয়ের পর প্রীতমের মধ্যে কোনও পরিবর্তন দেখেননি তাঁরা। বরং আগের চেয়ে বেশি হাসিখুশি ছিলেন বলে জানিয়েছেন মামা পরিতোষ। ফলে কী কারণে মৃত্যু হল প্রীতমের, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। আর জি কর হাসপাতালে তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। তার রিপোর্ট হাতে পেলেই মৃত্যুর কারণ খোলসা হবে বলে জানা গিয়েছে।

মঙ্গলবার সন্ধেয় আরজি কর হাসপাতালের মর্গের সামনে স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারকে পাশে নিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, ক্ষ্মকল্পনাতীত, এমন দিন যে কখনও দেখতে হবে ভাবিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার আমার পুত্র সুখ হল না, পুত্র শোক হয়ে গেল!ক্ষ্ম অতীত স্মৃতি চারণা করে দিলীপ আরও বলেন, ক্ষ্মছেলেটা সর্বগুণ সম্পন্ন ছিল। এত ভাল ছেলেটা এভাবে চলে যাবে, কল্পনাও করতে পারছি না।ক্ষ্ম দিলীপের কথায়, ক্ষ্মআগের থেকে আমার সঙ্গে পরিচয় ছিল, খেলা দেখাতেও নিয়ে গিয়েছি। ওর প্রতি আমার মোহ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেটা যে এভাবে শেষ হয়ে যাবে, কল্পনাও করতে পারছি না। দিলীপ বলেন, এরকম একটা ঘটনা যার কোনও বর্ণনা দেওয়া যায় না। সকালে ওর মা রান্না করছিল, একটা ফোন এল, তারপরে এই ঘটনা। কীভাবে কী হল, আমরা বুঝতেও পারছি না। পুরোটাই একটা রহস্য। ময়নাতদন্তে নিশ্চয়ই সবটা জানা যাবে।

অন্যদিকে রিঙ্কু বলেন, ‘আমার ছেলে একবার দেড় বছর আগে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল, নিউরো ওষুধ খাওয়াতাম। ইদানীং সেই ওষুধগুলো ঠিকমতো খাচ্ছিল না। একাই থাকত, বাইরে বাইরে খেত। আমাকে বুঝতে দিত না, তবে বুঝতে পারতাম সব। না খেয়ে অফিস চলে যেত। খাওয়াদাওয়া ঠিক মতো করত না।’ বলতে বলতে কান্নায় গলা বুজে আসে রিঙ্কুর। ছেলে ভাল নেই, বুঝতে পেরেছিলেন মা, চেয়েওছিলেন কাছে এনে রাখতে, তবু সেটা করে ওঠার আগেই সব শেষ।