১৯ জুলাই ২০২৫, শনিবার, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

CBI তদন্তে ফাঁস ‘দেশের বৃহত্তম মেডিক্যাল কলেজ দুর্নীতি’: NMC স্বীকৃতির জন্য কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন, জড়িত সরকারি আমলা থেকে স্বঘোষিত গুরু

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ৫ জুলাই ২০২৫, শনিবার
  • / 98

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ভারতের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন (NMC) থেকে বেআইনিভাবে স্বীকৃতি পেতে কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়েছে -এমন বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে CBI-র তদন্তে। অভিযোগ, কোনও পরিকাঠামো, পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকা সত্ত্বেও একাধিক কলেজ ভুয়ো তথ্য এবং ঘুষের বিনিময়ে এনএমসি-এর ছাড়পত্র পেয়েছে। CBI এই দুর্নীতিকে “দেশের বৃহত্তম মেডিক্যাল কলেজ দুর্নীতি” হিসেবে বর্ণনা করেছে।

CBI-র এফআইআরে মোট ৩৪ জনের নাম রয়েছে, যার মধ্যে ৮ জন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আধিকারিক, এবং ৫ জন NMC-র পরিদর্শক চিকিৎসক। ইতিমধ্যে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে, দেশজুড়ে ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশে অন্তত ৪০টি মেডিক্যাল কলেজ ঘুষের বিনিময়ে স্বীকৃতি আদায় করেছে।

তদন্তকারীদের মতে, এই কলেজগুলির লক্ষ্য ছিল ছাত্র ভর্তি করে কোটি কোটি টাকা রোজগার করা, অথচ কোনও সঠিক পরিকাঠামো বা শিক্ষাগত মান ছিল না।

আরও পড়ুন: দেশজুড়ে মেডিক্যাল কলেজ দুর্নীতি: সিবিআইয়ের তদন্তে ফাঁস কোটি টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারি

CBI-র নজরে রয়েছেন একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি, যাঁরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দুর্নীতিতে জড়িত বলে অভিযোগ:

  • ডিপি সিংহ  – ইউজিসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সেসের বর্তমান আচার্য।

  • রবিশঙ্কর মহারাজা ওরফে রাওয়াতপুরা সরকার – স্বঘোষিত গুরু এবং শ্রী রাওয়াতপুরা ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসের চেয়ারম্যান।

  • সুরেশ সিংহ ভাদোরিয়া – ইনদওরের ইনডেক্স মেডিক্যাল কলেজের চেয়ারম্যান।

  • ময়ূর রাভাল – উদয়পুরের গীতাঞ্জলি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার।

তাঁদের বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়া-নেওয়া, সরকারি পরিদর্শকদের প্রভাবিত করা, এবং গুরুত্বপূর্ণ ফাইল অবৈধভাবে হস্তান্তরের অভিযোগ রয়েছে।

রায়পুরের শ্রী রাওয়াতপুরা ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস থেকে তদন্তের সূচনা। অভিযোগ, কলেজটি NMC পরিদর্শক দলকে ঘুষ দিয়ে ইতিবাচক রিপোর্ট সংগ্রহ করেছিল।

  • গ্রেফতার হন তিন চিকিৎসকসহ মোট ছয় জন।

  • মূল অভিযুক্তদের থেকে উদ্ধার হয় ৩৮.৩৮ লক্ষ টাকা নগদ, এবং এক সরকারি আবাসন থেকে উদ্ধার হয় ১৬.৬২ লক্ষ টাকা।

  • হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা লেনদেন করে ভাগ-বাঁটোয়ারা করত চক্রটি।

এই ঘটনা থেকেই CBI বুঝতে পারে, এই দুর্নীতির শিকড় দেশের বহু রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে।

CBI তদন্তে উঠে আসে মধ্যপ্রদেশের ইনডেক্স মেডিক্যাল কলেজ-এর চেয়ারম্যান সুরেশ ভাদোরিয়া বায়োমেট্রিক হাজিরায় ভুয়ো আঙুল ব্যবহার করিয়ে চিকিৎসকদের উপস্থিতি প্রমাণ করতেন।

উদয়পুরের গীতাঞ্জলি মেডিক্যাল কলেজ ও অন্ধ্রপ্রদেশের কাদিরি অঞ্চলের এজেন্ট বি হরিপ্রসাদ এবং অঙ্কম রামবাবু-র নামও উঠে এসেছে।
তাঁরা ভুয়ো রোগী ও কর্মী নিয়োগ করে মেডিক্যাল কলেজে এনএমসি পরিদর্শনের সময় বাস্তব পরিস্থিতি লুকাতেন।
বিশাখাপত্তনমের কৃষ্ণ কিশোর নামে এক ব্যক্তি ওয়ারাঙ্গলের একটি কলেজকে স্বীকৃতি পাইয়ে দিতে ৪ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন, এমন অভিযোগও উঠে এসেছে।

রবিশঙ্কর মহারাজা ওরফে রাওয়াতপুরা সরকার বহু মন্ত্রী, আমলা ও পুলিশকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। তাঁর ট্রাস্ট সরকারি প্রকল্প ও ভর্তুকি পাইয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পেত বলে অভিযোগ। অতীতে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বিতর্কেও নাম জড়িয়েছে রাওয়াতপুরার ট্রাস্টের।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

CBI তদন্তে ফাঁস ‘দেশের বৃহত্তম মেডিক্যাল কলেজ দুর্নীতি’: NMC স্বীকৃতির জন্য কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন, জড়িত সরকারি আমলা থেকে স্বঘোষিত গুরু

আপডেট : ৫ জুলাই ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ভারতের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন (NMC) থেকে বেআইনিভাবে স্বীকৃতি পেতে কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়েছে -এমন বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে CBI-র তদন্তে। অভিযোগ, কোনও পরিকাঠামো, পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকা সত্ত্বেও একাধিক কলেজ ভুয়ো তথ্য এবং ঘুষের বিনিময়ে এনএমসি-এর ছাড়পত্র পেয়েছে। CBI এই দুর্নীতিকে “দেশের বৃহত্তম মেডিক্যাল কলেজ দুর্নীতি” হিসেবে বর্ণনা করেছে।

CBI-র এফআইআরে মোট ৩৪ জনের নাম রয়েছে, যার মধ্যে ৮ জন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আধিকারিক, এবং ৫ জন NMC-র পরিদর্শক চিকিৎসক। ইতিমধ্যে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে, দেশজুড়ে ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশে অন্তত ৪০টি মেডিক্যাল কলেজ ঘুষের বিনিময়ে স্বীকৃতি আদায় করেছে।

তদন্তকারীদের মতে, এই কলেজগুলির লক্ষ্য ছিল ছাত্র ভর্তি করে কোটি কোটি টাকা রোজগার করা, অথচ কোনও সঠিক পরিকাঠামো বা শিক্ষাগত মান ছিল না।

আরও পড়ুন: দেশজুড়ে মেডিক্যাল কলেজ দুর্নীতি: সিবিআইয়ের তদন্তে ফাঁস কোটি টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারি

CBI-র নজরে রয়েছেন একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি, যাঁরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দুর্নীতিতে জড়িত বলে অভিযোগ:

  • ডিপি সিংহ  – ইউজিসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সেসের বর্তমান আচার্য।

  • রবিশঙ্কর মহারাজা ওরফে রাওয়াতপুরা সরকার – স্বঘোষিত গুরু এবং শ্রী রাওয়াতপুরা ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসের চেয়ারম্যান।

  • সুরেশ সিংহ ভাদোরিয়া – ইনদওরের ইনডেক্স মেডিক্যাল কলেজের চেয়ারম্যান।

  • ময়ূর রাভাল – উদয়পুরের গীতাঞ্জলি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার।

তাঁদের বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়া-নেওয়া, সরকারি পরিদর্শকদের প্রভাবিত করা, এবং গুরুত্বপূর্ণ ফাইল অবৈধভাবে হস্তান্তরের অভিযোগ রয়েছে।

রায়পুরের শ্রী রাওয়াতপুরা ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস থেকে তদন্তের সূচনা। অভিযোগ, কলেজটি NMC পরিদর্শক দলকে ঘুষ দিয়ে ইতিবাচক রিপোর্ট সংগ্রহ করেছিল।

  • গ্রেফতার হন তিন চিকিৎসকসহ মোট ছয় জন।

  • মূল অভিযুক্তদের থেকে উদ্ধার হয় ৩৮.৩৮ লক্ষ টাকা নগদ, এবং এক সরকারি আবাসন থেকে উদ্ধার হয় ১৬.৬২ লক্ষ টাকা।

  • হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা লেনদেন করে ভাগ-বাঁটোয়ারা করত চক্রটি।

এই ঘটনা থেকেই CBI বুঝতে পারে, এই দুর্নীতির শিকড় দেশের বহু রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে।

CBI তদন্তে উঠে আসে মধ্যপ্রদেশের ইনডেক্স মেডিক্যাল কলেজ-এর চেয়ারম্যান সুরেশ ভাদোরিয়া বায়োমেট্রিক হাজিরায় ভুয়ো আঙুল ব্যবহার করিয়ে চিকিৎসকদের উপস্থিতি প্রমাণ করতেন।

উদয়পুরের গীতাঞ্জলি মেডিক্যাল কলেজ ও অন্ধ্রপ্রদেশের কাদিরি অঞ্চলের এজেন্ট বি হরিপ্রসাদ এবং অঙ্কম রামবাবু-র নামও উঠে এসেছে।
তাঁরা ভুয়ো রোগী ও কর্মী নিয়োগ করে মেডিক্যাল কলেজে এনএমসি পরিদর্শনের সময় বাস্তব পরিস্থিতি লুকাতেন।
বিশাখাপত্তনমের কৃষ্ণ কিশোর নামে এক ব্যক্তি ওয়ারাঙ্গলের একটি কলেজকে স্বীকৃতি পাইয়ে দিতে ৪ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন, এমন অভিযোগও উঠে এসেছে।

রবিশঙ্কর মহারাজা ওরফে রাওয়াতপুরা সরকার বহু মন্ত্রী, আমলা ও পুলিশকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। তাঁর ট্রাস্ট সরকারি প্রকল্প ও ভর্তুকি পাইয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পেত বলে অভিযোগ। অতীতে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বিতর্কেও নাম জড়িয়েছে রাওয়াতপুরার ট্রাস্টের।