‘সার্ক’-এর বিকল্প গোষ্ঠী গঠনে চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশ, উদ্বিগ্ন ভারত

- আপডেট : ৩০ জুন ২০২৫, সোমবার
- / 34
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতে বড়সড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত। নিষ্ক্রিয় ‘সার্ক’-এর (SAARC) বিকল্প হিসেবে একটি নতুন আঞ্চলিক জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে চীন ও পাকিস্তান। সেই জোট তৈরির প্রক্রিয়ায় অন্যতম সঙ্গী হিসেবে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নামও। ১৯ জুন চীনের কুনমিঙে আয়োজিত এক ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে এই নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয় বলে একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বেজিং, ইসলামাবাদ ও ঢাকার উচ্চপদস্থ সরকারি প্রতিনিধিরা। সূত্রের খবর, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে একত্রিত করে ‘সার্ক’-এর বাইরে একটি নতুন, চীনের প্রভাবাধীন সংগঠন গড়ে তোলার বিষয়ে সক্রিয় আগ্রহ দেখিয়েছে তিন দেশই। ওই জোটে ‘সার্ক’-ভুক্ত বাকি দেশগুলিকে (ভারত, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান) আমন্ত্রণ জানানোর কথাও বিবেচনা করা হয়েছে। যদিও বাংলাদেশের তরফে এই ধরনের বৈঠকের কথা অস্বীকার করা হয়েছে, কিন্তু নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যাচ্ছে, চীন এই উদ্যোগে অত্যন্ত সিরিয়াস।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে শেষবার সার্ক সম্মেলন হয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালে পাকিস্তানে পরবর্তী সম্মেলনের পরিকল্পনা হলেও, উরি হামলার পর ভারতের বয়কটের কারণে সেই বৈঠক বাতিল হয়। ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান ওই সম্মেলনে যোগ না দেওয়ায় সার্ক কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে চীন তার নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে একটি নতুন আঞ্চলিক জোট গড়ার চেষ্টা করছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক মহল।
চীনের এই পদক্ষেপের পিছনে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য স্পষ্ট। বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংঘাত ও কর বাড়ানোর হুমকির প্রেক্ষিতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে পাশে পেতে চায় বেজিং। বাণিজ্য, অবকাঠামো, এবং উন্নয়নমূলক কাজে যৌথ অংশগ্রহণের মাধ্যমে অঞ্চলটিতে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চায় চীন। একইসঙ্গে ভারতকেও এই জোটে অন্তর্ভুক্ত করতে আগ্রহী তারা।
তবে নয়াদিল্লি এই প্রস্তাবে কতটা সাড়া দেবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কারণ, ‘সার্ক’-এর গুরুত্ব ধরে রাখতে আগ্রহী ভারত বরাবরই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিতে আঞ্চলিক সহযোগিতার পক্ষে। চীন-নিয়ন্ত্রিত নতুন জোটে অংশগ্রহণ ভারতের কৌশলগত ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই প্রস্তাবের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চলছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা। ‘সার্ক’-এর বিকল্প গঠনের মাধ্যমে বেজিং কি ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করতে চাইছে? এই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের ভূরাজনীতিই দেবে। তবে এখনই ভারত এই প্রস্তাবকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলে অনুমান।