উত্তরপ্রদেশে দলিত যুবককে পিটিয়ে হত্যা, সরব রাহুল গান্ধি
- আপডেট : ৭ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার
- / 346
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ‘‘আমরা ‘যোগীবাবা’র লোক। কাউকে তোয়াক্কা করি না।’’ দলিত যুবককে পিটিয়ে হত্যার সময় গেরুয়া হার্মাদরা তাকে এমনটাই বলেছিল। মর্মান্তিক এই ঘটনা সামনে আসতেই আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। সরব হয়েছে নাগরিক সমাজ থেকে বিরোধী দলগুলি। তাদের বক্তব্য, যোগী-জমানায় উত্তরপ্রদেশ যে অপরাধীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে তা এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট। সেইসঙ্গে এটাও প্রমাণ হল—গেরুয়া শিবিরের ছত্রছায়ায় থাকলে যে কোনও অপরাধ করে পার পাওয়া যায়। আর সেটা ওই গেরুয়া-গুণ্ডাদের কথা থেকেই স্পষ্ট। বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধিও।
ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের রায়বেরেলির ফতেহপুর এলাকায়। রায়বেরেলি কেন্দ্রটি কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধির। এখানেই ‘ড্রোন-চোর’ অপবাদ দিয়ে হরিওম বাল্মীকি নামে ৩৮ বছরের ওই দলিত যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সম্প্রতি, এলাকায় গুজব ছড়ায় চোরের ড্রোন ব্যবহার করে লোকদের বাড়ি থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করছে। সেই আবহে ওই দলিত যুবককেও ‘ড্রোন-চোর’ বলে দাগিয়ে দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। বিষয়টি জানার পরই নিহতের পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন রাহুল গান্ধি। উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অজয় রাই নিজে নিহতের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে রাহুল বলেন, কংগ্রেস তাঁদের সঙ্গে রয়েছে। ন্যায়ের লড়াইয়ে কংগ্রেস তাঁদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ২ অক্টোবর তারা উঞ্ছাহার এলাকার রেলওয়ে ট্রাকের কাছ থেকে এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করে। সেটিকে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয় মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য। পরে একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায় কয়েকজন লোক এক ব্যক্তিকে বেধড়ক পেটাচ্ছে। ভিডিয়োটি দেখে পুলিশ ৫ অভিযুক্তকে আটক করে। দায়ের হয় এফআইআরও। পুলিশের ডিজিপি রাজীব কৃষ্ণা বলেন, কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে এক সাব ইন্সপেক্টর সহ তিন পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জীব কুমার সিন্হা সাংবাদিকদের বলেন, উঞ্ছাহার এলাকায় এক ব্যক্তিকে চোর ভেবে ভুল করে কয়েকজন মিলে পিটিয়ে হত্যা করে। একটি এফআইআর দায়ের হয়েছে। ৫জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। এদিকে, নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর কংগ্রেস নেতা অজয় রাই বলেন, যোগী সরকারের অধীনে জঙ্গল রাজের একটি ভয়াবহ ছবি হচ্ছে এই নৃশংস পিটিয়ে হত্যার ঘটনা।
হরিওম বাল্মীকি যখন তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন সেইসময় পুলিশের সামনেই তাঁকে পেটানো হয়। যখন তিনি রাহুল গান্ধির নাম নিয়েছিলেন, সেইসময় হামলাকারীরা বলে আমরা ‘বাবা’র (যোগী আদিত্যনাথ) লোক। আর এরপরই রাই কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘এই ‘বাবা’র লোকরাই পুরো উত্তরপ্রদেশে গুন্ডামি করে চলেছে।’’ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল বলেন, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের শাসনে উত্তরপ্রদেশ নরকে পরিণত হয়েছে দলিত ও সংখ্যালঘুদের কাছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বিজেপি আশ্রিত গুন্ডারা যখন হরিওম বাল্মীকি নামের ওই দলিত যুবককে ঘিরে ধরে রড, বেল্ট দিয়ে পেটাচ্ছিল, সেইসময় সে প্রাণে বাঁচতে রাহুল গান্ধির নাম নিয়েছিল। বলেছিল, এই কেন্দ্রটি রাহুল গান্ধির এবং রাহুল গান্ধি তাকে চেনেন। এরপর ওই হামলাকারী হার্মাদরা পালটা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, তারাও ‘বাবা’র (যোগী আদিত্যনাথ) লোক। কাউকে ভয় পায় না।



















































