বিশ্বজুড়ে সন্তান জন্মানোর হার হু-হু করে কমছে, কারণটা কী?
- আপডেট : ১১ জুন ২০২৫, বুধবার
- / 294
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: মুম্বই শহরে থাকেন নম্রতা নানগিয়া। স্বামী আর পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে ছোট্ট একটা সংসার। মেয়ের জন্মের পর থেকেই তাঁরা ভাবছিলেন আর একটা বাচ্চা নেবেন। কিন্তু যত দিন যাচ্ছিল, ততই একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল;এই সময়কালে দ্বিতীয় সন্তানের খরচ চালানো যাবে তো?
নম্রতা একটা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে কাজ করেন, আর তাঁর স্বামী এক টায়ার কোম্পানিতে চাকরি করেন। দেখতে দেখতে বুঝতে পারলেন, একটা বাচ্চার পেছনেই এত খরচ হচ্ছে, যে দ্বিতীয়টা নেওয়ার কথা ভাবলেও ভয় করে। স্কুলের ফি, স্কুলের বাসের খরচ, সাঁতারের ক্লাসের মাসিক ফি; সব মিলিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে।
নম্রতা বললেন, ‘আমাদের ছোটবেলায় এত কিছু ছিল না। স্কুল মানেই ছিল বই-খাতা, ব্যাস। এখনকার মতো অত এক্সট্রা ক্লাস, হবি ক্লাস, কিছুই ছিল না। এখন তো আঁকার ক্লাস, সাঁতার, স্পোর্টস, সব কিছুতেই ওদের নাম লেখাতে হয়। আমাদের সময় শুধু পড়াশোনা ছিল, এখন বাচ্চাদের ‘অলরাউন্ডার’ হতে হয়।’
রাষ্ট্রসংঘের জনসংখ্যা তহবিল এর সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট বলছে, নম্রতার অভিজ্ঞতা এখন একটা গ্লোবাল ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ তাঁদের ইচ্ছেমতো সন্তান নিতে পারছেন না। তার প্রধান কারণ;সন্তান পালনের খরচ আর জীবনের সঙ্গী নির্বাচনের জটিলতা।
১৪টা দেশে ১৪ হাজার মানুষের ওপর করা এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের মনমতো পরিবার গড়তে পারেননি। থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, হাঙ্গেরি, ইতালি, জার্মানি, সুইডেন, ব্রাজিল, মেক্সিকো, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা আর আমেরিকায় এই জরিপ চালানো হয়েছে।
রাষ্ট্রসংঘের জনসংখ্যা তহবিল -এর প্রধান নাতালিয়া কানেম জানিয়েছেন, জন্মহার যে হারে কমছে, তা অভূতপূর্ব। বেশিরভাগ মানুষ এখনও দুই বা তার বেশি সন্তান চান, কিন্তু চাইলেই তো আর সব হয় না। তাদের স্বপ্নের পরিবার গড়ার ইচ্ছা বাস্তবে পরিণত হচ্ছে না;এটাই আজকের সবথেকে বড় দুশ্চিন্তা।
সব দেশ মিলিয়ে ৩৯ শতাংশ মানুষ বলছেন, খরচের চাপে তাঁরা সন্তান নেওয়ার সাহস পান না। দক্ষিণ কোরিয়ায় এই হার সবচেয়ে বেশি;৫৮ শতাংশ। সুইডেনে সবচেয়ে কম;১৯ শতাংশ।
আর একটা বড় কারণ হল সময়ের অভাব। নম্রতা বলেন, ‘দিন শেষে একটা অপরাধবোধ কাজ করে। মনে হয়, মা হয়ে আমি মেয়ের জন্য সময়ই দিতে পারছি না। তাই এখন চাই, পুরো মন দিয়ে একটা সন্তানকেই বড় করতে।’
এভাবেই অর্থনৈতিক চাপ, সময়ের টানাপোড়েন, আর সামাজিক প্রত্যাশা মিলে বিশ্বজুড়ে সন্তান জন্মের হারকে নামিয়ে আনছে।




















































