০২ মে ২০২৫, শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বর্ষা এখন ঢের দেরি, শহরে বাড়ছে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার প্রকোপ

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার
  • / 9

পুবের কলম প্রতিবেদক: আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় গত কয়েক দিন ধরে এই বৃষ্টি তো এই রোদ। মাঝেমাঝে বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় জলও জমছে। বংশবিস্তার করতে আরও সুবিধে হচ্ছে মশাদের। মশার বাড়বাড়ন্তে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে শুরু করেছে মশাবাহিত রোগের খবর। তবে ডেঙ্গির তুলনায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, ১ জানুয়ারি থেকে শনিবার পর্যন্ত শহরে ৩৫০ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। ওই একই সময়ে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ জন।

স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, গত বছর রাজ্যের মধ্যে কলকাতা পুর-এলাকাতেই মশাবাহিত রোগের দাপট ছিল সবচেয়ে বেশি। সব মিলিয়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৪, ৫০০ জন। ডেঙ্গির রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল ৭৫০০ জনের। গত বারের মতো পরিস্থিতি যাতে এ বার না হয়, সে জন্যে বছরের শুরু থেকেই নজরদারির পাশাপাশি সচেতনতা প্রচারে জোর দিয়েছে পুরসভা। মশাবাহিত রোগের যা পরিসংখ্যান, তাতে প্রশাসনের পাশাপাশি আমজনতাকেও আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন পতঙ্গবিদরা। মশাবাহিত রোগের আসল মরসুম বর্ষা। এখনও বর্ষা নামতে দেরি। তার আগেই প্রকোপ শুরু হয়েছে।

শহরে যে মশাবাহিত রোগ বাড়ছে, তা স্পষ্ট কলকাতার প্যাথলজি ল্যাবগুলির পরিসংখ্যানেও। মৌলালি লাগোয়া নামী একটি প্যাথ-ল্যাবের এক কর্তা জানাচ্ছেন, গত ৭ দিনে রোজই যেখানে গড়ে এক জনের রক্তের নমুনায় ডেঙ্গি পজিটিভ রিপোর্ট আসছে, সেই জায়গায় অন্তত ২-৩ টি করে নমুনা ম্যালেরিয়া পজিটিভ হচ্ছে। পিয়ারলেসের ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর শুভ্রজ্যোতি ভৌমিকের বক্তব্য, ‘বড়দের তুলনায় ছোটদের মধ্যেই ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি। সেই তুলনায় ডেঙ্গি কম।’

তাঁর পরামর্শ, দুদিনের বেশি জ্বর, পেটের সমস্যা বা গায়ে র‍্যাশ বেরোনোর মতো উপসর্গ থাকলেই রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত।’ শিশু চিকিৎসক পায়েল সেনগুপ্ত বলেন, ‘বেশি তাপমাত্রার জ্বর কিংবা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসাকেই যুগ যুগ ধরে ম্যালেরিয়ার প্রধান উপসর্গ ধরা হতো। কিন্তু এখন জ্বর ছাড়াও খুব বেশি জল না-খেয়েও আধ ঘণ্টা অন্তর প্রস্রাব, ডায়েরিয়া, শ্বাসকষ্টের সমস্যা হচ্ছে ম্যালেরিয়ায়। তাই এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলেই ঘরে বসে না থেকে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।’

শহরে গত বছর যে যে জায়গাগুলিতে মশাবাহিত রোগের দাপট ছিল,  সেই এলাকাগুলিতে এখন থেকেই কাউন্সিলারদের নিয়মিত প্রচারে নামতে বলা হয়েছে পুরসভার তরফে। আবার ফাঁকা জায়গার পাশাপাশি যেখানে যেখানে জল জমতে পারে, সে দিকে বাড়তি নজর দিতে কঠিন বর্জ্য অপসারণ বিভাগকে বলেছেন পুর-কমিশনার বিনোদ কুমার। পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ম্যালেরিয়ার লার্ভা নীচের তলের থেকেও উপরে ছাদে বেশি জন্মায়। তাই সবার কাছে অনুরোধ, ছাদে নজর দিন। রাতে অবশ্যই মশারি টাঙিয়ে ঘুমোন এবং অবশ্যই বাড়ির চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখুন।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বর্ষা এখন ঢের দেরি, শহরে বাড়ছে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার প্রকোপ

আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার

পুবের কলম প্রতিবেদক: আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় গত কয়েক দিন ধরে এই বৃষ্টি তো এই রোদ। মাঝেমাঝে বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় জলও জমছে। বংশবিস্তার করতে আরও সুবিধে হচ্ছে মশাদের। মশার বাড়বাড়ন্তে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে শুরু করেছে মশাবাহিত রোগের খবর। তবে ডেঙ্গির তুলনায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, ১ জানুয়ারি থেকে শনিবার পর্যন্ত শহরে ৩৫০ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। ওই একই সময়ে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ জন।

স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, গত বছর রাজ্যের মধ্যে কলকাতা পুর-এলাকাতেই মশাবাহিত রোগের দাপট ছিল সবচেয়ে বেশি। সব মিলিয়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৪, ৫০০ জন। ডেঙ্গির রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল ৭৫০০ জনের। গত বারের মতো পরিস্থিতি যাতে এ বার না হয়, সে জন্যে বছরের শুরু থেকেই নজরদারির পাশাপাশি সচেতনতা প্রচারে জোর দিয়েছে পুরসভা। মশাবাহিত রোগের যা পরিসংখ্যান, তাতে প্রশাসনের পাশাপাশি আমজনতাকেও আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন পতঙ্গবিদরা। মশাবাহিত রোগের আসল মরসুম বর্ষা। এখনও বর্ষা নামতে দেরি। তার আগেই প্রকোপ শুরু হয়েছে।

শহরে যে মশাবাহিত রোগ বাড়ছে, তা স্পষ্ট কলকাতার প্যাথলজি ল্যাবগুলির পরিসংখ্যানেও। মৌলালি লাগোয়া নামী একটি প্যাথ-ল্যাবের এক কর্তা জানাচ্ছেন, গত ৭ দিনে রোজই যেখানে গড়ে এক জনের রক্তের নমুনায় ডেঙ্গি পজিটিভ রিপোর্ট আসছে, সেই জায়গায় অন্তত ২-৩ টি করে নমুনা ম্যালেরিয়া পজিটিভ হচ্ছে। পিয়ারলেসের ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর শুভ্রজ্যোতি ভৌমিকের বক্তব্য, ‘বড়দের তুলনায় ছোটদের মধ্যেই ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি। সেই তুলনায় ডেঙ্গি কম।’

তাঁর পরামর্শ, দুদিনের বেশি জ্বর, পেটের সমস্যা বা গায়ে র‍্যাশ বেরোনোর মতো উপসর্গ থাকলেই রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত।’ শিশু চিকিৎসক পায়েল সেনগুপ্ত বলেন, ‘বেশি তাপমাত্রার জ্বর কিংবা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসাকেই যুগ যুগ ধরে ম্যালেরিয়ার প্রধান উপসর্গ ধরা হতো। কিন্তু এখন জ্বর ছাড়াও খুব বেশি জল না-খেয়েও আধ ঘণ্টা অন্তর প্রস্রাব, ডায়েরিয়া, শ্বাসকষ্টের সমস্যা হচ্ছে ম্যালেরিয়ায়। তাই এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলেই ঘরে বসে না থেকে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।’

শহরে গত বছর যে যে জায়গাগুলিতে মশাবাহিত রোগের দাপট ছিল,  সেই এলাকাগুলিতে এখন থেকেই কাউন্সিলারদের নিয়মিত প্রচারে নামতে বলা হয়েছে পুরসভার তরফে। আবার ফাঁকা জায়গার পাশাপাশি যেখানে যেখানে জল জমতে পারে, সে দিকে বাড়তি নজর দিতে কঠিন বর্জ্য অপসারণ বিভাগকে বলেছেন পুর-কমিশনার বিনোদ কুমার। পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ম্যালেরিয়ার লার্ভা নীচের তলের থেকেও উপরে ছাদে বেশি জন্মায়। তাই সবার কাছে অনুরোধ, ছাদে নজর দিন। রাতে অবশ্যই মশারি টাঙিয়ে ঘুমোন এবং অবশ্যই বাড়ির চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখুন।