২৪ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নরম পানীয় পান করতে গিয়ে বিপত্তি, অপারেশন করে গলা থেকে বের করা হল বোতলের ছিপি

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৪, শনিবার
  • / 8

পুবের কলম প্রতিবেদক: খাদ্যনালীর মুখে এমনভাবে গেঁথে বসে গিয়েছিল কোমল পানীয়র বোতলের এক ছিপি, যে সেটা বের করতেই চার বারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় চিকিৎসকদের। কিন্তু হাল ছাড়লে তো চলবে না। কাজেই রোগীর গলায় অপারেশন করে অবশেষে আড়াই ঘণ্টার প্রচেষ্টায় ওই ছিপি বের করতে চিকিৎসকরা সমর্থ হন। এই ঘটনা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের। চিকিৎসকরা বলছেন, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে আপাত নিরীহ কোনও কিছু যে কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, এই ঘটনা তারই এক প্রমাণ।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার বাসিন্দা ৬৯ বছর বয়সি এক প্রবীণকে কয়েক দিন আগে নিয়ে আসা হয়েছিল এখানে। কিছু খাওয়া দূর অস্ত, পানীয় জল-ও গিলতে পারছিলেন না তিনি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসকরা জানতে পারেন, কোনও পানীয় পান করার সময় কোনওভাবে ওই পানীয়র বোতলের ছিপিটি এই প্রবীণের গালের মধ্যে চলে যায়, তার পর থেকেই এই বিপত্তি দেখা দিয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা দেখেন, এই রোগীর গালের মধ্যে খাদ্যনালীর মুখে এমনভাবে গেঁথে বসে আছে ওই ছিপি যে পানীয় জল-ও আর গিলতে পারছেন না তিনি। এই অবস্থায় শুরু হয় চিকিৎসকদের প্রচেষ্টা‌। চেষ্টা চলতে থাকে যাতে অপারেশন না করে খাদ্যনালীর মুখে গেঁথে বসে থাকা ওই ছিপিটি বের করা সম্ভব হয়। কিন্তু চারবারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় চিকিৎসকদের।

কলকাতার সরকারি এই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকদের প্রাথমিক ওই প্রচেষ্টা যেমন ব্যর্থ হয়, তেমনই এখানকার গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের চিকিৎসকদের প্রাথমিক প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়। তবে, এই চিকিৎসকরাই অবশেষে সফল হয়েছেন। যার জেরে, আড়াই ঘণ্টা ধরে এই প্রবীণ রোগীর গলায় অপারেশন করে বাজার চলতি একটি কোমল পানীয়র বোতলের ছিপি বের করতে সমর্থ হন তাঁরা। চিকিৎসকদের এই দলে ছিলেন ইএনটি-র অধ্যাপক-চিকিৎসক সুদীপকুমার দাস, সার্জিক্যাল গ্যাসট্রোএন্টেরোলজির অধ্যাপক-চিকিৎসক দীপঙ্কর রায়, সিনিয়র অ্যানাস্থেসিয়োলজিস্ট চিকিৎসক দেবাশিস ঘোষ, ইএনটি-র চিকিৎসক তনয়া পাঁজা এবং জুনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তার শুভ্রজিৎ নস্কর আর কৃষ্ণকুমার যাদব।

ছিপিটি রোগীর খাদ্যনালীর মুখে গেঁথে বসে থাকার পর থেকে অপারেশন করে বের করা পর্যন্ত সব মিলিয়ে কয়েক দিন সময় চলে যায়। এরই মধ্যে খাদ্যনালীর ওই অংশে পচন ধরতে শুরু করেছিল। চিকিৎসক সুদীপকুমার দাস বলেন, ‘এই পচন রুখে দেওয়া গিয়েছে, ঠিক হয়ে যাবে। তবে ছিপিটি বের করতে আরও দেরি হয়ে গেলে পচন আরও বেড়ে যেত। এর ফলে রোগীর বিপদও আরও বেড়ে যেত। তবে এই রোগী এখন বিপন্মুক্ত।’ গলায় অপারেশন করে ছিপিটি বের করা হলেও এই রোগীকে কবে ছুটি দেওয়া হবে হাসপাতাল থেকে, এই বিষয়ে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানা গিয়েছে।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

নরম পানীয় পান করতে গিয়ে বিপত্তি, অপারেশন করে গলা থেকে বের করা হল বোতলের ছিপি

আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৪, শনিবার

পুবের কলম প্রতিবেদক: খাদ্যনালীর মুখে এমনভাবে গেঁথে বসে গিয়েছিল কোমল পানীয়র বোতলের এক ছিপি, যে সেটা বের করতেই চার বারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় চিকিৎসকদের। কিন্তু হাল ছাড়লে তো চলবে না। কাজেই রোগীর গলায় অপারেশন করে অবশেষে আড়াই ঘণ্টার প্রচেষ্টায় ওই ছিপি বের করতে চিকিৎসকরা সমর্থ হন। এই ঘটনা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের। চিকিৎসকরা বলছেন, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে আপাত নিরীহ কোনও কিছু যে কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, এই ঘটনা তারই এক প্রমাণ।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার বাসিন্দা ৬৯ বছর বয়সি এক প্রবীণকে কয়েক দিন আগে নিয়ে আসা হয়েছিল এখানে। কিছু খাওয়া দূর অস্ত, পানীয় জল-ও গিলতে পারছিলেন না তিনি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসকরা জানতে পারেন, কোনও পানীয় পান করার সময় কোনওভাবে ওই পানীয়র বোতলের ছিপিটি এই প্রবীণের গালের মধ্যে চলে যায়, তার পর থেকেই এই বিপত্তি দেখা দিয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা দেখেন, এই রোগীর গালের মধ্যে খাদ্যনালীর মুখে এমনভাবে গেঁথে বসে আছে ওই ছিপি যে পানীয় জল-ও আর গিলতে পারছেন না তিনি। এই অবস্থায় শুরু হয় চিকিৎসকদের প্রচেষ্টা‌। চেষ্টা চলতে থাকে যাতে অপারেশন না করে খাদ্যনালীর মুখে গেঁথে বসে থাকা ওই ছিপিটি বের করা সম্ভব হয়। কিন্তু চারবারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় চিকিৎসকদের।

কলকাতার সরকারি এই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকদের প্রাথমিক ওই প্রচেষ্টা যেমন ব্যর্থ হয়, তেমনই এখানকার গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের চিকিৎসকদের প্রাথমিক প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়। তবে, এই চিকিৎসকরাই অবশেষে সফল হয়েছেন। যার জেরে, আড়াই ঘণ্টা ধরে এই প্রবীণ রোগীর গলায় অপারেশন করে বাজার চলতি একটি কোমল পানীয়র বোতলের ছিপি বের করতে সমর্থ হন তাঁরা। চিকিৎসকদের এই দলে ছিলেন ইএনটি-র অধ্যাপক-চিকিৎসক সুদীপকুমার দাস, সার্জিক্যাল গ্যাসট্রোএন্টেরোলজির অধ্যাপক-চিকিৎসক দীপঙ্কর রায়, সিনিয়র অ্যানাস্থেসিয়োলজিস্ট চিকিৎসক দেবাশিস ঘোষ, ইএনটি-র চিকিৎসক তনয়া পাঁজা এবং জুনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তার শুভ্রজিৎ নস্কর আর কৃষ্ণকুমার যাদব।

ছিপিটি রোগীর খাদ্যনালীর মুখে গেঁথে বসে থাকার পর থেকে অপারেশন করে বের করা পর্যন্ত সব মিলিয়ে কয়েক দিন সময় চলে যায়। এরই মধ্যে খাদ্যনালীর ওই অংশে পচন ধরতে শুরু করেছিল। চিকিৎসক সুদীপকুমার দাস বলেন, ‘এই পচন রুখে দেওয়া গিয়েছে, ঠিক হয়ে যাবে। তবে ছিপিটি বের করতে আরও দেরি হয়ে গেলে পচন আরও বেড়ে যেত। এর ফলে রোগীর বিপদও আরও বেড়ে যেত। তবে এই রোগী এখন বিপন্মুক্ত।’ গলায় অপারেশন করে ছিপিটি বের করা হলেও এই রোগীকে কবে ছুটি দেওয়া হবে হাসপাতাল থেকে, এই বিষয়ে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানা গিয়েছে।