বাজার ছেয়ে বিদেশি আপেল, কাশ্মীরে চাষিরা ঘোর সঙ্কটে
- আপডেট : ৫ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার
- / 251
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: জম্মু-কাশ্মীরের আপেলচাষিরা যে সঙ্কটে পড়েছেন, তা গত এক দশকে কখনও দেখা যায় নি। আপেলচাষিরা বলছেন, আপেলের দাম প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গিয়েছে। সারা দেশে পাইকারি বাজারে আপেলের চাহিদা অনেক কমে গিয়েছে। ফলে সোপোর থেকে সোপিয়ানের আপেলচাষিরা হতাশায় ভুগছেন। বিদেশি আপেলে দেশের বাজার ছেয়ে গিয়েছে। কাশ্মীর উপত্যকা আপেলচাষি এবং ব্যবসায়ী ইউনিয়নের সভাপতি বসির আহমেদ বশির বলেছেন, জীবনে আপেলের চাহিদা এত কমে যেতে কখনও দেখিনি। চাষিরা চাষ করতে এবং প্যাকিং করতে যা খরচ করেছেন সেই টাকাই ওঠেনি।
গত বছরের তুলনায় দাম প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গিয়েছে। পুরো আপেল শিল্প ধুঁকছে। পুলওয়ামার আপেলচাষি বিলাল আহমেদ খান বলেছেন, গত বছরেই যে আপেলের বাক্স ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রি করেছি এবছর সেই মানের আপেলের বাক্স ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি করেছি। আপেল গাছ থেকে পাড়া, বাছাই করা এবং প্যাকেট করার খরচই ওঠেনি। অনেক উৎপাদক রাজ্যের বাইরে আপেল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ বিমানে এক বাক্স আপেলের ভাড়া পড়ে যাচ্ছে ৪০০ টাকা।
কাশ্মীরে সোপিয়ানকে আপেল উপত্যকা বলা হয়। সেই আপেল উপত্যকার মন এখন বিষন্ন। ওখানকার এত ভালো আপেল, অথচ দিল্লি বা চন্ডীগড় মাণ্ডি থেকে কোনও বরাতই আসেনি। সারা বছরের পরিশ্রম ব্যর্থ হল। কাশ্মীরে আপেল চাষ শুধু পেশা নয়, গোটা উপত্যকার অর্থনৈতিক জীবনরেখা স্বরূপ। কাশ্মীরে প্রতি বছর ২০ লক্ষ টন আপেল উৎপাদন হয়, যা ভারতের মোট উৎপাদনের ৭০ শতাংশ। গোটা দেশে আপেল চাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ৩৫ লক্ষ লোক জড়িত। প্রতি বছর জম্মু-কাশ্মীরে হাজার কোটি টাকা যুক্ত হয়। এবছর ব্যবসা চৌপাট হয়েছে।
আপেল ব্যবসায় সঙ্কটের প্রধান কারণ আফগানিস্তান এবং ইরান থেকে অনেক সস্তায় দেশে আপেল আসছে। গোটা দেশে ছেয়ে গিয়েছে বিদেশি আপেল। এবার হিমাচলেও প্রচুর আপেল উৎপাদন হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাড়তি পরিবহন খরচ, প্যাকেজিং এবং শ্রমিকের খরচ। তারপর শ্রীনগর -জম্মু জাতীয় সড়ক বন্ধ থাকায় অনেক আপেল নষ্ট হয়েছে। আবার এই বছর মার্কেট ইন্টারভেনশন স্কিম নেই। এই প্রকল্প থাকলে কিছু সুবিধা মেলে। ফলে চাষিরা পুরোপুরি ব্যাবসায়ী এবং কমিশন এজেন্টের উপর নির্ভরশীল।
বসির বললেন, সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে কাশ্মীরের আপেল ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাশ্মীরে আপেল শিল্পে সঙ্কট দেখা দিলে অন্যত্র তার প্রভাব পড়ে। চাষিরা ঋণ শোধ করতে পারবেন না, শ্রমিকরা কাজ হারাবেন এবং স্থানীয় বাজারে চাহিদা কমবে। এই কারণে চাষিরা সরকারের কাছে ভরতুকি, এম আই এস এবং পশ্চিম এশিয়ায় রফতানির জন্য ইনসেনটিভ দাবি করেছেন। এবার প্রচুর আপেল হয়েছে কাশ্মীরে। সব আপেল গুদামঘরে পড়ে রয়েছে। আপেলচাষি সওকত আহমেদ বললেন, আপেল কাশ্মীরের সত্তা, শুধু একটা ফল নয়।





























