০১ জুন ২০২৫, রবিবার, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মহিলাদের বিরুদ্ধেও দায়ের হতে পারে গণধর্ষণের মামলা, জানাল ইলাহাবাদ হাই কোর্ট

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, মঙ্গলবার
  • / 15

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক : শুধু পুরুষ নয় মহিলাদের বিরুদ্ধেও দায়ের হতে পারে গণধর্ষণের মামলা, এমনটাই জানাল ইলাহাবাদ হাই কোর্ট। আদালত স্পষ্ট করে জানিয়েছে, কোনও মহিলা ধর্ষণ করতে পারেন না, তবে তিনি যদি এক দল লোককে ধর্ষণ করতে সাহায্য করেন, সেক্ষেত্রে মহিলাদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের মামলা দায়ের হতে পারে। ১৮৬০-এর ভারতীয় দণ্ডবিধির ২০১৩ সালে সংশোধিত ১৩ নম্বর আইন পর্যবেক্ষণ করে ৩৭৫ এবং ৩৭৬(ই)-র নয়া ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এ কথা জানিয়েছেন বিচারপতি শেখরকুমার যাদবের একক বেঞ্চ।

২০১৩ সালে সংশোধিত ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা অনুযায়ী কোনও মহিলার ইচ্ছের বিরুদ্ধে এবং জোর করে বা ভয় দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা আইনের চোখে চরম অপরাধ। সেই মহিলার বয়স যদি ১৬ বছরের নীচে হয় সে ক্ষেত্রে মহিলার ইচ্ছা এবং অনিচ্ছা উভয় ক্ষেত্রেই তা অপরাধযোগ্য বলে বিবেচ্য হবে।

আরও পড়ুন: বিপদ ডেকে এনেছিলেন নির্যাতিতা নিজেই, ধর্ষণ মামলায় বিতর্কিত মন্তব্য বিচারপতির

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের একটি এফআইআরের ভিত্তিতে এই মামলার শুনানি চলছিল আদালতে। অভিযোগ, ১৫ বছরের এক মেয়েকে অপহরণ করে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। তার বয়ান রেকর্ড করার পরে পুলিশ জানতে পারে, গোটা ঘটনায় এক মহিলাও জড়িত ছিল। তবে ঘটনার চার্জশিটে ওই মহিলার নাম ছিল না। তা সত্ত্বেও ৩৭৬ ডি ধারায় (ধর্ষণ-সহ যৌন অপরাধ) মামলার শুনানিতে ওই মহিলাকে তলব করা হয়।

আরও পড়ুন: সাভারকর মামলা: আইনি স্বস্তি মিলল না বিরোধী দলনেতার

এই পরিস্থিতিতে অভিযুক্ত ওই মহিলা সুনীতা পাণ্ডের আইনজীবী সওয়াল করেন যে, গণধর্ষণের মামলায় তাঁর মক্কেলকে ভুল করে আদালতে তলব করা হয়েছে। তাঁর মক্কেল একজন মহিলা। তাঁর পক্ষে অন্য মহিলাকে ধর্ষণ করা সম্ভব নয়। ফলে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭৬ ডি ধারায় কখনওই অভিযোগ আনা যায় না একজন মহিলার বিরুদ্ধে। তিনি আরও দাবি করেন, মহিলার পক্ষে যেহেতু ধর্ষণ করা সম্ভবই নয়, তাই গণধর্ষণের চার্জও আনা যায় না। ২০১২ সালে দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের পর ফৌজদারি দণ্ডবিধি সংশোধন করা হয়। সেই সংশোধিত ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের সাজা ‘মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে’ বলে ৩৭৬ ই ধারা যুক্ত করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে মন্তব্য: ওয়াইসির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ স্থগিত ইলাহাবাদ হাই কোর্টের

ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে গণধর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যে যে ধারায় মামলা রুজু করার নিদান রয়েছে, তার সব ক’টিতেই মহিলাদের যুক্ত করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি যাদব। রায় দেওয়ার সময়ে বিচারপতি ‘ব্যক্তি’ শব্দের উপর বিশেষ জোর দিয়ে জানান, এই শব্দটা সংবিধানে কোনও সংকীর্ণ অর্থ বহন করে না। এক্ষেত্রে ‘ব্যক্তি’ মানে কেবলই ‘একজন মানুষ’ বা ‘একজন পুরুষ’ বা ‘একজন নারী’, কে বোঝানো হচ্ছে এমন নয়। ‘ব্যক্তি’ বলতে যে কোনও সংঘবদ্ধ দলও বোঝাতে পারে, একাধিক লোককেও বোঝানো যেতে পারে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মহিলাদের বিরুদ্ধেও দায়ের হতে পারে গণধর্ষণের মামলা, জানাল ইলাহাবাদ হাই কোর্ট

আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, মঙ্গলবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক : শুধু পুরুষ নয় মহিলাদের বিরুদ্ধেও দায়ের হতে পারে গণধর্ষণের মামলা, এমনটাই জানাল ইলাহাবাদ হাই কোর্ট। আদালত স্পষ্ট করে জানিয়েছে, কোনও মহিলা ধর্ষণ করতে পারেন না, তবে তিনি যদি এক দল লোককে ধর্ষণ করতে সাহায্য করেন, সেক্ষেত্রে মহিলাদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের মামলা দায়ের হতে পারে। ১৮৬০-এর ভারতীয় দণ্ডবিধির ২০১৩ সালে সংশোধিত ১৩ নম্বর আইন পর্যবেক্ষণ করে ৩৭৫ এবং ৩৭৬(ই)-র নয়া ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এ কথা জানিয়েছেন বিচারপতি শেখরকুমার যাদবের একক বেঞ্চ।

২০১৩ সালে সংশোধিত ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা অনুযায়ী কোনও মহিলার ইচ্ছের বিরুদ্ধে এবং জোর করে বা ভয় দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা আইনের চোখে চরম অপরাধ। সেই মহিলার বয়স যদি ১৬ বছরের নীচে হয় সে ক্ষেত্রে মহিলার ইচ্ছা এবং অনিচ্ছা উভয় ক্ষেত্রেই তা অপরাধযোগ্য বলে বিবেচ্য হবে।

আরও পড়ুন: বিপদ ডেকে এনেছিলেন নির্যাতিতা নিজেই, ধর্ষণ মামলায় বিতর্কিত মন্তব্য বিচারপতির

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের একটি এফআইআরের ভিত্তিতে এই মামলার শুনানি চলছিল আদালতে। অভিযোগ, ১৫ বছরের এক মেয়েকে অপহরণ করে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। তার বয়ান রেকর্ড করার পরে পুলিশ জানতে পারে, গোটা ঘটনায় এক মহিলাও জড়িত ছিল। তবে ঘটনার চার্জশিটে ওই মহিলার নাম ছিল না। তা সত্ত্বেও ৩৭৬ ডি ধারায় (ধর্ষণ-সহ যৌন অপরাধ) মামলার শুনানিতে ওই মহিলাকে তলব করা হয়।

আরও পড়ুন: সাভারকর মামলা: আইনি স্বস্তি মিলল না বিরোধী দলনেতার

এই পরিস্থিতিতে অভিযুক্ত ওই মহিলা সুনীতা পাণ্ডের আইনজীবী সওয়াল করেন যে, গণধর্ষণের মামলায় তাঁর মক্কেলকে ভুল করে আদালতে তলব করা হয়েছে। তাঁর মক্কেল একজন মহিলা। তাঁর পক্ষে অন্য মহিলাকে ধর্ষণ করা সম্ভব নয়। ফলে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭৬ ডি ধারায় কখনওই অভিযোগ আনা যায় না একজন মহিলার বিরুদ্ধে। তিনি আরও দাবি করেন, মহিলার পক্ষে যেহেতু ধর্ষণ করা সম্ভবই নয়, তাই গণধর্ষণের চার্জও আনা যায় না। ২০১২ সালে দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের পর ফৌজদারি দণ্ডবিধি সংশোধন করা হয়। সেই সংশোধিত ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের সাজা ‘মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে’ বলে ৩৭৬ ই ধারা যুক্ত করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে মন্তব্য: ওয়াইসির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ স্থগিত ইলাহাবাদ হাই কোর্টের

ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে গণধর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যে যে ধারায় মামলা রুজু করার নিদান রয়েছে, তার সব ক’টিতেই মহিলাদের যুক্ত করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি যাদব। রায় দেওয়ার সময়ে বিচারপতি ‘ব্যক্তি’ শব্দের উপর বিশেষ জোর দিয়ে জানান, এই শব্দটা সংবিধানে কোনও সংকীর্ণ অর্থ বহন করে না। এক্ষেত্রে ‘ব্যক্তি’ মানে কেবলই ‘একজন মানুষ’ বা ‘একজন পুরুষ’ বা ‘একজন নারী’, কে বোঝানো হচ্ছে এমন নয়। ‘ব্যক্তি’ বলতে যে কোনও সংঘবদ্ধ দলও বোঝাতে পারে, একাধিক লোককেও বোঝানো যেতে পারে।