গাজার ২০ লাখ মানুষকে সরানোর নীলনকশা, ‘গ্রেট’ নিয়ে আলোচনা আমেরিকা – ইসরাইলের

- আপডেট : ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার
- / 43
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা এখন কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরাইলের অব্যাহত বোমাবর্ষণ ও সামরিক আগ্রাসনে গোটা অঞ্চল মৃত্যুপুরীতে রূপ নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আবারও আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের যৌথ এক বিতর্কিত পরিকল্পনা। মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট,এর দাবি, গাজার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দাকে অস্থায়ীভাবে বাইরে সরানোর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন কর্মকর্তাদের হাতে থাকা ৩৮ পাতার নথিতে প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে গ্রেট; গাজা রিকনস্টিটিউশন, ইকনমিক অ্যাক্সেলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন। এর আওতায় গাজার বাসিন্দাদের অন্তত চার বছরের জন্য দেশছাড়া হয়ে থাকতে হবে। মিশর, কাতারসহ কয়েকটি দেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে। এই সময়ে ভাড়া ভর্তুকি, নগদ অর্থ ও ডিজিটাল টোকেনের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এক বছরের জন্য খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হল গাজাকে আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র ও স্মার্ট সিটিতে রূপান্তর করা। সেখানে নির্মিত হবে স্কুল, হাসপাতাল, শিল্পকারখানা, বহুতল আবাসন ও সবুজ এলাকা। জমির মালিকরা পরবর্তীতে ডিজিটাল টোকেনের বিনিময়ে ফ্ল্যাট পাবেন বলে প্রস্তাবে উল্লেখ আছে। এছাড়া বৈদ্যুতিক যানবাহন, বিমানঘাঁটি ও ডেটা সেন্টার স্থাপনের কথাও বলা হয়েছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে মার্কিন সরকারের সরাসরি অর্থ ব্যয় হবে না; বিনিয়োগ আহ্বান জানানো হবে বিশ্বের ধনকুবেরদের কাছে। সর্বনিম্ন বিনিয়োগের সীমা ধরা হয়েছে ১০০ মিলিয়ন ডলার।
তবে এই পরিকল্পনা নিয়ে ইতিমধ্যেই তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এতে গাজার সাধারণ মানুষ কতটা উপকৃত হবেন তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। অনেকের অভিযোগ, গাজার দুর্দশাকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিলের পথ তৈরি করছেন।
ফাঁস হওয়া এই পরিকল্পনার সমালোচকদের মধ্যে ছিলেন সুইজারল্যান্ডভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ট্রায়াল ইন্টারন্যাশনাল, এর নির্বাহী পরিচালক ফিলিপ গ্রান্ট। তিনি বলেন, তএটি আসলে গণউচ্ছেদের নীলনকশা, যেটিকে উন্নয়ন হিসেবে বাজারজাত করা হচ্ছে। এর ফল কী? আন্তর্জাতিক অপরাধের এক আদর্শ উদাহরণ; জোরপূর্বক জনসংখ্যা স্থানান্তর, জনমিতি প্রকৌশল এবং সামষ্টিক শাস্তি। এ পরিকল্পনার নকশা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা; যার মধ্যে করপোরেট প্রতিষ্ঠানও অন্তর্ভুক্ত; আগামী কয়েক দশক ধরে আইনি দায় এড়াতে পারবেন না।
এমনকি ইসরাইলি গণমাধ্যমেও এ প্রস্তাব নিয়ে তীব্র সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। বামঘেঁষা দৈনিক হারেতজ,এর এক কলামে একে বর্ণনা করা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল ট্রাম্পীয় ধাঁচের দ্রুত ধনী হওয়ার পরিকল্পনা।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস এই পরিকল্পনা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম বলেন, গাজা বিক্রির জন্য নয়। এটি শুধু একটি শহর নয়, বরং বৃহত্তর ফিলিস্তিনি মাতৃভূমির অবিচ্ছেদ্য অংশ। আরেকজন হামাস কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমাদের জনগণকে উচ্ছেদ করে দখলদারকে শক্তিশালী করার সব ষড়যন্ত্রই বাতিল ও অন্যায্য।