১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সরকারি পদক্ষেপকে "বেআইনি ও অযৌক্তিক" বলে আখ্যা, স্থগিতাদেশ চেয়ে আইনি আবেদন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের হুমকির প্রেক্ষিতে উত্তপ্ত মার্কিন শিক্ষাঙ্গনে

বিদেশি ছাত্র ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা: ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ২৩ মে ২০২৫, শুক্রবার
  • / 160

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রাচীন ও খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিদেশি ছাত্রদের ভর্তি নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তকে বেআইনি ও অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে।

শুক্রবার হার্ভার্ডের পরিচালন পর্ষদের প্রেসিডেন্ট অ্যালান এম গার্বার এক বিবৃতিতে বলেন, “সরকারের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাক্ষেত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং এটি বেআইনি ও অসাংবিধানিক।” তিনি জানান, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা আদালতে স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার মার্কিন সরকার ঘোষণা করে যে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় আর বিদেশি ছাত্রদের ভর্তি নিতে পারবে না। একই সঙ্গে বর্তমান শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যেই ভর্তি হওয়া বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, না হলে তাদের শিক্ষাবিষয়ক ভিসা বাতিল করা হবে।

আরও পড়ুন: মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ভাঙার দায়ে আদানি সংস্থা ফের তদন্তের জালে

এই নির্দেশের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র জেসন নিউটন ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য চরম অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। হার্ভার্ড এ ধরনের অমানবিক ও অযৌক্তিক নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে।”

আরও পড়ুন: বিদেশি পড়ুয়াদের জন্য ভিসা ইন্টারভিউ বন্ধ করল ট্রাম্প

ট্রাম্প প্রশাসন কিছু শর্তে হার্ভার্ডকে আবার বিদেশি ছাত্র ভর্তি করার সুযোগ দিতে চায়। আমেরিকার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের তরফে একটি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যদি বিশ্ববিদ্যালয় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশি ছাত্রদের তথ্যাদি সরবরাহ করে, তবে ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিসিটর প্রোগ্রাম’ (SEVP) এর শংসাপত্র বাতিল করা হবে না।

আরও পড়ুন: ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি: ভারতে আইফোন উৎপাদন করলে অ্যাপলকে দিতে হবে ২৫% শুল্ক

গত ২২ মে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সচিব ক্রিস্টি নোয়াম হার্ভার্ডকে একটি চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন যে, SEVP শংসাপত্র প্রত্যাহার করা হবে যদি তারা নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ না নেয়।

হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ মনে করছে, প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতাকেই ক্ষুণ্ণ করছে না, বরং আন্তর্জাতিক শিক্ষার পরিবেশ ও বৈচিত্র্যকে ধ্বংস করছে। বর্তমানে হার্ভার্ডে ১২০টিরও বেশি দেশের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে, যাঁদের মধ্যে অনেকেই বিশ্বমানের গবেষণা ও শিক্ষা প্রকল্পে যুক্ত।

বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে শুধু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হবে না, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির বৈশ্বিক সুনাম ও নেতৃত্বও প্রশ্নের মুখে পড়বে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী লক্ষ লক্ষ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর জন্য এটি একটি নিরাশাজনক বার্তা। এর ফলে ভবিষ্যতে তারা ইউরোপ, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে পারে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

সরকারি পদক্ষেপকে "বেআইনি ও অযৌক্তিক" বলে আখ্যা, স্থগিতাদেশ চেয়ে আইনি আবেদন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের হুমকির প্রেক্ষিতে উত্তপ্ত মার্কিন শিক্ষাঙ্গনে

বিদেশি ছাত্র ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা: ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়

আপডেট : ২৩ মে ২০২৫, শুক্রবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রাচীন ও খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিদেশি ছাত্রদের ভর্তি নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তকে বেআইনি ও অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে।

শুক্রবার হার্ভার্ডের পরিচালন পর্ষদের প্রেসিডেন্ট অ্যালান এম গার্বার এক বিবৃতিতে বলেন, “সরকারের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাক্ষেত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং এটি বেআইনি ও অসাংবিধানিক।” তিনি জানান, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা আদালতে স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার মার্কিন সরকার ঘোষণা করে যে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় আর বিদেশি ছাত্রদের ভর্তি নিতে পারবে না। একই সঙ্গে বর্তমান শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যেই ভর্তি হওয়া বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, না হলে তাদের শিক্ষাবিষয়ক ভিসা বাতিল করা হবে।

আরও পড়ুন: মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ভাঙার দায়ে আদানি সংস্থা ফের তদন্তের জালে

এই নির্দেশের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র জেসন নিউটন ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য চরম অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। হার্ভার্ড এ ধরনের অমানবিক ও অযৌক্তিক নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে।”

আরও পড়ুন: বিদেশি পড়ুয়াদের জন্য ভিসা ইন্টারভিউ বন্ধ করল ট্রাম্প

ট্রাম্প প্রশাসন কিছু শর্তে হার্ভার্ডকে আবার বিদেশি ছাত্র ভর্তি করার সুযোগ দিতে চায়। আমেরিকার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের তরফে একটি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যদি বিশ্ববিদ্যালয় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশি ছাত্রদের তথ্যাদি সরবরাহ করে, তবে ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিসিটর প্রোগ্রাম’ (SEVP) এর শংসাপত্র বাতিল করা হবে না।

আরও পড়ুন: ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি: ভারতে আইফোন উৎপাদন করলে অ্যাপলকে দিতে হবে ২৫% শুল্ক

গত ২২ মে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সচিব ক্রিস্টি নোয়াম হার্ভার্ডকে একটি চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন যে, SEVP শংসাপত্র প্রত্যাহার করা হবে যদি তারা নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ না নেয়।

হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ মনে করছে, প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতাকেই ক্ষুণ্ণ করছে না, বরং আন্তর্জাতিক শিক্ষার পরিবেশ ও বৈচিত্র্যকে ধ্বংস করছে। বর্তমানে হার্ভার্ডে ১২০টিরও বেশি দেশের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে, যাঁদের মধ্যে অনেকেই বিশ্বমানের গবেষণা ও শিক্ষা প্রকল্পে যুক্ত।

বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে শুধু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হবে না, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির বৈশ্বিক সুনাম ও নেতৃত্বও প্রশ্নের মুখে পড়বে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী লক্ষ লক্ষ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর জন্য এটি একটি নিরাশাজনক বার্তা। এর ফলে ভবিষ্যতে তারা ইউরোপ, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে পারে।