কর্নাটকে হিজাব মামলা হাইকোর্টে

- আপডেট : ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২, শনিবার
- / 14
পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ হিজাব পরার কারণে ক্লাস করতে দেওয়া হচ্ছে না কর্নাটকের উদুপি কলেজে ছাত্রীদের। বার বার অনুরোধ করেছেন হিজাবি ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেনি কলেজ। এই ছাত্রীদের ক্লাসে পর্যন্ত ঢুকতে দিতে রাজি হননি কলেজের অধ্যক্ষ। স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক বলেছেন, ওদের কলেজে ঢুকতে দেওয়া হবে না। দরকারে ওরা অনলাইনে ক্লাস করুক। বাধ্য হয়ে এই ছাত্রীরা মামলা করেছেন কর্নাটক হাইকোর্টে। ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার শুনানি।
পিটিশনে ছাত্রীরা বলেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র হিজাব পরার কারণে তাদের ক্লাস করতে দিচ্ছে না। তাদের ধর্মীয় ও মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। এই মৌলিক অধিকার রক্ষার তাগিদেই তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। পড়ুয়াদের বক্তব্য, কর্নাটক হাইকোর্ট মৌলিক অধিকার ইস্যুতে রাজ্যকে নির্দেশিকা জারি করুক। মৌলিক অধিকার যাতে ভঙ্গ না হয়, তা নিশ্চিত করা হোক।
পিটিশনে হিজাবি ছাত্রীরা জানিয়েছে, কেবল হিজাবের কারণে তাদের হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ এবং অন্যান্য অধ্যাপকরা তাদের কীভাবে অপমান করেছেন পিটিশনে তার উল্লেখ করা হয়েছে। বিজেপির নেতারা এই ইস্যুতে বিভাজনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বেশ কিছু কলেজ পড়ুয়াকে উসকে তোলা হয়েছে বাইরে থেকে। তারা গেরুয়া শাল পরে কলেজে আসার ধুয়ো তুলেছিল। আসলে হিজাব বন্ধ করার জন্যেই যে গেরুয়া শাল চালুর প্রস্তাব তা বুঝতে বাকি থাকেনি কারও।
ইসলামে হিজাবের কথা রয়েছে। তা অসাড় দাবি নয়। কিন্তু হিন্দু ধর্মে কোথাও গেরুয়া শালের কথা নেই। কিন্তু তাও তাকে ইস্যু বানানো হয়েছে, বিভাজনের রাজনীতির কথা মাথায় রেখে।
ছাত্রীরা জানিয়েছে, তারা ভর্তির সময় থেকেই এই কলেজে হিজাব পরে আসছে, হিজাব পরে থাকলে তাদের কলেজে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না, এমন কোনও বার্তা দেওয়া হয়নি তাদের।
হিজাব ইস্যুকে সামনে রেখে বিদ্বেষ রাজনীতি করছে কর্নাটক সরকার। সে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া থেকে কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি থেকে স্বরা ভাস্কর, প্রত্যকেই বিজেপি শাসিত কর্নাটক সরকারের এই আচরণের তীব্র নিন্দা করেছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে সিদ্দারামাইয়া বলেন, সরকারি কলেজে হিজাব পরিহিতাদের প্রবেশ করতে না দেওয়া মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। মেয়েদের মুখের সামনে কলেজের অধ্যক্ষ দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন। তারা কাঁদছে। আমি সে ভিডিয়ো দেখেছি। সরকারি কলেজে কোনও পোশাক-বিধি নেই।আসলে বিজেপি সরকার এই ইস্যু সামনে রেখে বিভাজন চাইছে।
সরকারি কলেজে হিজাব নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে ট্যুইটে শশী থারুর বলেছেন, যে যা খুশি পরতে পারেন। এখানে সবাই স্বাধীন। এটাই ভারতের শক্তি। হিজাব নিষিদ্ধ হলে শিখদের পাগড়ির কী হবে? হিন্দুদের কপালে চিহ্ন? খ্রিস্টানদের ক্রশবিদ্ধ? ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছে এই কলেজ। মেয়েদের ঢুকতে দিন পড়তে দিন। তাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে দিন’।
মেহবুবা মুফতি ট্যুইটে লেখেন, ‘মুসলিম মেয়েরা তাদের পোশাকের কারণে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মুসলিমদের প্রান্তিককরণকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। এইভাবে গান্ধির ভারতকে গডসের ভারতে রূপান্তরের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হল।
অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর ট্যুইটে লেখেন, ‘বোম্মাই স্যার আপনার রাজ্যে আইনের শাসন এবং সংবিধান যে ঠিক আছে তা নিশ্চিত করুন। এই মেয়েদের সঙ্গে যা হচ্ছে তা অসাংবিধানিক ও বেআইনি। কলেজের অধ্যক্ষ সংবিধানের ২৫নং ধারা লঙ্ঘন করছে। আপনার কাজ করুন! মনে রাখবেন আপনি সংবিধানের শপথ নিয়েছেন।’