৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, বুধবার, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশের ইতিহাস বিকৃত করতে হিন্দুত্ববাদীদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে: রোমিলা থাপার

কলকাতা ও নয়াদিল্লি : ইতিহাসকে রাজনৈতিক প্রচার হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতে ঐতিহাসিকদের স্কুলের নতুন পাঠ্যক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক সাবধানে পরীক্ষা করা দরকার। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার আরেকজন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিবের ৯০ তম জন্মদিন উদযাপনের একটি অনলাইন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন। ‘ইন ডিফেন্স অব হিস্ট্রি’ শিরোনামের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইরফান হাবিব, অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়েক, ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি কংগ্রেসের (আইএইচসি) সভাপতি অমিয় কুমার বাগচি, ইতিহাসবিদ আদিত্য মুখোপাধ্যায় এবং সিপিআই এমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তার বক্তব্যের সময়, থাপার বলেন, “রাজনৈতিক মতাদর্শ রক্ষার জন্য বর্তমানে জনপ্রিয়, বিকৃত ইতিহাসকে” বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। “এই কল্পনাপ্রসূত ইতিহাসকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি চ্যানেল এবং চকচকে ম্যাগাজিনের মাধ্যমে, এমন সব জায়গা যেখানে কেউ জাল থেকে সত্যকে আলাদা করতে পারেনা। এগুলি শিক্ষার মতো আরও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতেও প্রচার করা হচ্ছে।”
নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটার অধ্যাপক রোমিলা থাপার এ কথা বলেন। ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (এনসিইআরটি) ইতিহাস পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন করার কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে তার এই মন্তব্য । রাজ্যসভার সচিবালয়ের কমিটি বিভাগ থেকে জানুয়ারি ও জুন মাসে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে মহিলা, শিশু, যুব এবং খেলাধুলা সম্পর্কিত বিভাগীয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটি “বিষয়বস্তুতে সংস্কার এবং স্কুলের পাঠ্যপুস্তকের নতুন নকশা করবে।” তাদের ফোকাস থাকবে “পাঠ্যপুস্তক থেকে জাতীয় বীরদের সম্পর্কে ঐতিহাসিক তথ্য ও বিকৃতির রেফারেন্স অপসারণ; ভারতীয় ইতিহাসের সকল সময়ের সমান বা আনুপাতিক রেফারেন্স নিশ্চিত করা; এবং গার্গী, মৈত্রেয়ী, অথবা ঝাঁসির রাণী, রানী চান্নাম্মা, চাঁদ বিবি এবং জলকারি বাইয়ের মতো নারী নায়কদের ভূমিকা তুলে ধরতে হবে বেশি করে। বিজ্ঞপ্তিতে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ আহ্বান করার সময় দেওয়া হয়েছিল।
এর পরে, ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি কংগ্রেস কঠোর ভাষায় বিবৃতি জারি করে বলেছে, ” এনসিইআরটি পাঠ্যপুস্তকগুলিতে সংস্কার আনার নামে যে ভুল তথ্য এবং পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি প্রবর্তিত করছে তা বিপজ্জনক।” বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বর্তমান পাঠ্যপুস্তকের সমালোচনা বা সংস্কারের যে কথা ভাবা হচ্ছে, তা “জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ঐতিহাসিকদের কোনো বিশেষজ্ঞ সংগঠন থেকে উদ্ভূত নয়, বরং একটি রাজনৈতিক অবস্থান থেকে। যা বৈষম্যমূলক অনাকাডেমিক ব্যক্তিদের পছন্দের।”
উল্লেখ্য, বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ বিনয় সহস্রবুদ্ধি, সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, পিপিআরসির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যও। সরকারের এই বর্তমান প্রচেষ্টা ২০০১-২০০২ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের বর্তমান এনসিইআরটি পাঠ্যপুস্তক থেকে অনেক ইতিহাস মুছে ফেলার প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।‘সাম্প্রদায়িক পক্ষপাতদুষ্টদের লেখা বই” বাজারে ছাড়া হয়।
বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে,রোমিলা থাপার বলেন, “ইতিহাসকে রাজনৈতিক প্রচার হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতেই হবে। কর্তৃত্বকারীদের দ্বারা ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে।যা বেশ বিপদের।
ভারতে শিক্ষার গৈরিকীকরণ নিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন বিতর্ক চলছে। এক দিকে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার, ইরফান হাবিব, ডি এন ঝা প্রভৃতিকে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে তথা দেশবিরোধী হিসাবে, অপর দিকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযোগ ক্রমশই কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার এই সংকট শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষার স্তরে তা নয়, একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে যে স্কুলস্তরের পাঠ্যপুস্তকগুলিও বারে বারেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসছে।

ট্যাগ :
সর্বধিক পাঠিত

খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে ঢাকায় যাচ্ছেন জয়শংকর

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

দেশের ইতিহাস বিকৃত করতে হিন্দুত্ববাদীদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে: রোমিলা থাপার

আপডেট : ১৫ অগাস্ট ২০২১, রবিবার

কলকাতা ও নয়াদিল্লি : ইতিহাসকে রাজনৈতিক প্রচার হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতে ঐতিহাসিকদের স্কুলের নতুন পাঠ্যক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক সাবধানে পরীক্ষা করা দরকার। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার আরেকজন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিবের ৯০ তম জন্মদিন উদযাপনের একটি অনলাইন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন। ‘ইন ডিফেন্স অব হিস্ট্রি’ শিরোনামের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইরফান হাবিব, অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়েক, ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি কংগ্রেসের (আইএইচসি) সভাপতি অমিয় কুমার বাগচি, ইতিহাসবিদ আদিত্য মুখোপাধ্যায় এবং সিপিআই এমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তার বক্তব্যের সময়, থাপার বলেন, “রাজনৈতিক মতাদর্শ রক্ষার জন্য বর্তমানে জনপ্রিয়, বিকৃত ইতিহাসকে” বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। “এই কল্পনাপ্রসূত ইতিহাসকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি চ্যানেল এবং চকচকে ম্যাগাজিনের মাধ্যমে, এমন সব জায়গা যেখানে কেউ জাল থেকে সত্যকে আলাদা করতে পারেনা। এগুলি শিক্ষার মতো আরও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতেও প্রচার করা হচ্ছে।”
নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটার অধ্যাপক রোমিলা থাপার এ কথা বলেন। ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (এনসিইআরটি) ইতিহাস পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন করার কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে তার এই মন্তব্য । রাজ্যসভার সচিবালয়ের কমিটি বিভাগ থেকে জানুয়ারি ও জুন মাসে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে মহিলা, শিশু, যুব এবং খেলাধুলা সম্পর্কিত বিভাগীয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটি “বিষয়বস্তুতে সংস্কার এবং স্কুলের পাঠ্যপুস্তকের নতুন নকশা করবে।” তাদের ফোকাস থাকবে “পাঠ্যপুস্তক থেকে জাতীয় বীরদের সম্পর্কে ঐতিহাসিক তথ্য ও বিকৃতির রেফারেন্স অপসারণ; ভারতীয় ইতিহাসের সকল সময়ের সমান বা আনুপাতিক রেফারেন্স নিশ্চিত করা; এবং গার্গী, মৈত্রেয়ী, অথবা ঝাঁসির রাণী, রানী চান্নাম্মা, চাঁদ বিবি এবং জলকারি বাইয়ের মতো নারী নায়কদের ভূমিকা তুলে ধরতে হবে বেশি করে। বিজ্ঞপ্তিতে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ আহ্বান করার সময় দেওয়া হয়েছিল।
এর পরে, ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি কংগ্রেস কঠোর ভাষায় বিবৃতি জারি করে বলেছে, ” এনসিইআরটি পাঠ্যপুস্তকগুলিতে সংস্কার আনার নামে যে ভুল তথ্য এবং পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি প্রবর্তিত করছে তা বিপজ্জনক।” বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বর্তমান পাঠ্যপুস্তকের সমালোচনা বা সংস্কারের যে কথা ভাবা হচ্ছে, তা “জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ঐতিহাসিকদের কোনো বিশেষজ্ঞ সংগঠন থেকে উদ্ভূত নয়, বরং একটি রাজনৈতিক অবস্থান থেকে। যা বৈষম্যমূলক অনাকাডেমিক ব্যক্তিদের পছন্দের।”
উল্লেখ্য, বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ বিনয় সহস্রবুদ্ধি, সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, পিপিআরসির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যও। সরকারের এই বর্তমান প্রচেষ্টা ২০০১-২০০২ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের বর্তমান এনসিইআরটি পাঠ্যপুস্তক থেকে অনেক ইতিহাস মুছে ফেলার প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।‘সাম্প্রদায়িক পক্ষপাতদুষ্টদের লেখা বই” বাজারে ছাড়া হয়।
বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে,রোমিলা থাপার বলেন, “ইতিহাসকে রাজনৈতিক প্রচার হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতেই হবে। কর্তৃত্বকারীদের দ্বারা ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে।যা বেশ বিপদের।
ভারতে শিক্ষার গৈরিকীকরণ নিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন বিতর্ক চলছে। এক দিকে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার, ইরফান হাবিব, ডি এন ঝা প্রভৃতিকে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে তথা দেশবিরোধী হিসাবে, অপর দিকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযোগ ক্রমশই কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার এই সংকট শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষার স্তরে তা নয়, একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে যে স্কুলস্তরের পাঠ্যপুস্তকগুলিও বারে বারেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসছে।