নাগরিকত্বের প্রমাণ চেয়ে প্রাক্তন ভারতীয় সেনার পরিবারকে হেনস্থা হিন্দুত্ববাদীদের

- আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 56
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ১৯৯৯-এর কার্গিল যুদ্ধে দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছিলেন উত্তরপ্রদেশের প্রতাপগড়ের বাসিন্দা হাকিমুদ্দিন শেখ। তাঁর পরিবারের আরও কয়েকজন দেশের সেবায় কাজ করেছেন। এবার সেই প্রাক্তন ভারতীয় সেনার পরিবারকে বাংলাদেশি বলে চরম হেনস্থা করার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। হাকিমুদ্দিনের পরিবারের ‘নাগরিকত্ব’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। এমনকি তারা ‘বাংলাদেশি’ বলেও তাঁদের দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
সূত্রের খবর, শনিবার মধ্যরাতে প্রাক্তন সেনা জওয়ান হাকিমুদ্দিনের ভাই ইরশাদ শেখের পুনের বাড়িতে জোর করে প্রবেশ করে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর ৮০ জনের একটি দল। তাদের সঙ্গে ছিল সাদা পোশাকে দু’জন পুলিশ কর্মীও। বাড়িতে ঢুকেই ইরশাদ সহ তাঁর স্ত্রী ও শিশুদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে হুমকি দিতে থাকে হিন্দুত্ববাদীরা। তারা ইরশাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ দেখতে চাই। ‘আপনারা কারা’ এই প্রশ্ন তুললে তাঁকে মারমুখি হয়ে ওঠে হিন্দুত্ববাদীরা। ইরশাদের অভিযোগ, শেষ পর্যন্ত তাদের সমস্ত পরিচয়পত্র দেখালে তবেই রেহায় মেলে। পরিচয়পত্র দেখার পর তারা বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার সময় হুমকিও দিয়ে যায়। তারা বলেন, এই ঘটনা যেনো পুলিশে না জানানো হয়। যদিও পরিবার নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন প্রাক্তন সেনা জওয়ানের ভাই।
চারশো বছর ধরে তাদের পরিবার এই দেশেই বসবাস করছে। তাদের বাবা-দাদারা এই দেশেই জন্ম গ্রহণ করেছেন। তারপরও তাদের ‘বাংলাদেশি’ হেনস্থা করা তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও। ইরশাদ জানান, “আমার বড় ভাই উত্তরপ্রদেশে থাকেন। কিন্তু আমি এবং আরও দুই ভাই পরিবার নিয়ে বহু দশক ধরে এখানে (পুনের চন্দন নগর এলাকায়) বসবাস করছি। এতদিন এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি।” তাঁর অভিযোগ, এদিন মধ্যরাতে উত্তেজিত জনতা সদর দরজায় ধাক্কা দিয়ে জোর করে বাড়িতে প্রবেশ করে। দরজা খুলতেই কেউ কেউ ভেতরে ঢুকে আমাদের আধার কার্ড দেখতে চাইতে শুরু করে। আমরা কাগজপত্র দেখিয়েছি, তারপরও তারা মানতে চায়নি। আমাদের কাগজপত্রকে ‘ভুয়ো’ বলে দাবি করে তারা। এরপর মহিলা ও শিশুদের আধার কার্ড দেখাতে বলেন।
এই ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, বাইরে বহু হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর সদস্যরা জড়ো হয়েছে, বেশকিছু সদস্য বাড়িতে প্রবেশ করছে। কেউ কেউ হুডেড জ্যাকেট দিয়ে মুখ ঢেকে রাখতেও দেখা গিয়েছে। যদিও ওই ফুটেজে তাদের সবার মুখ দেখা যায়নি। ইরশাদ শেখ বলেন, তিনি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, যে তার পরিবার ৬০ বছর ধরে এই এলাকার বাসিন্দা। তাছাড়াও তার বড় ভাই এবং দুই চাচা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে দীর্ঘ সময় দেশের জন্য কাজ করেছেন। তাঁর কথায়, “বড় ভাই হাকিমুদ্দিন শেখ ২০০০ সালে সেনার হাবিলদার হিসাবে অবসর নিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে লড়াই করেছিলেন এক চাচা এবং তিনি বীরত্বের পদক পেয়েছিলেন। আরেক চাচা ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।”
অভিযোগ, এই সমস্ত বিষয় তাদের বললে তারা তা শুনতে চায়নি। হিন্দুত্ববাদীরা ইরশাদের পরিবারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বাংলাদেশি বলে অপবাদ দেয়। নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ হলে তারা তদন্ত করে দেখতে পারেন বলেও জানায় ইরশাদ। সে কথায় কান না দিয়ে অনেকেই ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে থাকে। জানা গিয়েছে, যে দু’জন পুলিশের পোষাকে ছিল তারা ইরসাদ সহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের থানায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের সমস্ত নথি যাচাই করা হয়। তাদের নথিতে কোনও অবৈধতা বা অসঙ্গতি না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ইরসাদ জানান,”আমাদের এই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে নিষেধ করেছে পুলিশ। এমনকি কোনও অভিযোগ দায়ের না করতে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। অভিযোগ দায়ের করলে আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। যেহেতু আমাদের কাগজপত্র আসল…তারা এখন আমাদের চুপ থাকতে বলছে।”
এবিষয়ে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সোমে মুন্ডে ইরশাদ শেখের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, বাড়িতে জোর করে ঢুকে পড়ার কোনও ঘটনা ঘটেনি। তবে নথি যাচাইয়ের জন্য কয়েকজন পুলিশকর্মীকে পাঠানো হয়েছিল। কমিশনারের কথায়, ‘পুনেতে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। আমরা খবর পেয়ে তা যাচাই করতে ওই বাড়িতে যাই। যেহেতু রাতের বেলা ছিল, তাই কেবলমাত্র কয়েকজন পুরুষ সদস্যকে পুলিশের সাথে থানায় যেতে বলা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে তাদের নথিতে কোনো অবৈধতা বা অসঙ্গতি পাওয়া যায়নি।”
এদিকে প্রাক্তন সেনা জওয়ান হাকিমুদ্দিন শেখ এক সংবাদ সংস্থাকে বলেন, “আমরা ৫০ বছর ধরে পুনেতে বসবাস করছি। পুনেতে থাকাকালীন আমার কাকা মহম্মদ সেলিম ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। আমার পরিবারকে নাগরিকত্বের নামে যেভাবে হেনস্থা করা হয়েছে তা নিন্দাজনক। প্রয়োজনে আমি পুলিশের সাথে কথা বলব এবং ঘটনার ব্যাখ্যা চাইব।”