১৭ মে ২০২৫, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
হুতি মুখপাত্র বলেছেন, তারা ইসরাইলের “বিরতিহীন গনহত্যা” বন্ধ না করলে আক্রমণ থামাবে না। লুফথান্সা, ডেল্টা, এয়ার ফ্রান্স এবং ইতালিয়ান এয়ারওয়েজ মঙ্গলবার ও বুধবারের উড়ান বাতিল করেছে।

হুতি আক্রমণে স্তব্ধ ইসরাইলি বিমান বন্দর, উড়ান বাতিল একাধিক সংস্থার

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ৫ মে ২০২৫, সোমবার
  • / 195

পুবের কলম ডেস্ক:   হুতিরা ইসরাইলের সব বিমানবন্দরে হামলা চালিয়ে ‘সম্পূর্ণ বিমান বন্দর অবরোধ’ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে, যা বেঞ্জি গুরিয়ন বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে শুরু হয়েছে।

ইয়েমেন ভিত্তিক হুতিরা  জানিয়েছে যে তারা ইসরাইলের বিভিন্ন বিমান বন্দরকে বারবার লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে একটি “সম্পূর্ণ বিমান বন্দর অবরোধ” আরোপ করবে। হুতি পক্ষের খবরে বলা হয়, বেঞ্জি গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এই অভিযানের শীর্ষ লক্ষ্য হবে । হুতি মহড়া বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারেয়ি এক পোস্টে জানিয়েছেন, ইসরাইল গাজার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বাড়ানো, এবং নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারণের জন্য তাদের এই হামলা।

আরও পড়ুন: ইসরাইল গাজায় “যুদ্ধের কৌশল হিসেবে অনাহারকে” ব্যবহার করছে। গাজার ৭০ শতাংশ এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ

হুতিদের মানবিক সমন্বয় কেন্দ্র (Humanitarian Operations Coordination Center) গতকাল এক বিবৃতিতে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (IATA) এবং ICAO-সহ বিশ্বব্যাপী বিমান সংস্থাগুলোকে একটি মেইল পাঠিয়ে সতর্ক করেছে। ওই মেইলে সব আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সকে “দখলদার ইসরাইলের বিমানবন্দরে যাওয়া সব রুট বাতিল করে নিতে” অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে তাদের বিমান ও যাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত থাকে। হুতিরা তাদের এই নতুন বিমান বন্দর লড়াইকে গাজার মানুষের পক্ষে একাত্মতা ও প্রতিবাদ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

আরও পড়ুন: ইসরাইলি অবরোধে মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে গাজার ২,৯০,০০০ শিশু

মঙ্গলবার তেল আবিবের নিকটবর্তী বেঞ্জি গুরিয়ন বিমানবন্দরের বাইরে রাস্তায় একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, যার ফলে আটজন অভ্যন্তরীণ কর্মচারী সামান্য আহত হয়। স্থানীয় পুলিশ একটি বিশাল গর্ত লক্ষ্য করেছে, যা ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের কারণে হয়েছে, তবে বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।

আরও পড়ুন: শিক্ষা পুড়িয়ে যখন ক্ষুধার আগুন নেভানো হয়, ফিলিস্তিনি বই প্রেমির গল্প।

হুতি মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারেয় বলেছেন, “ইসরাইলের প্রধান বিমানবন্দর এখন আর আকাশ পরিবহণের জন্য নিরাপদ নয়” । বিমানবন্দরের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে প্রায় সব কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে, তবু কয়েকটি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন যেমন লুফথান্সা, ডেল্টা, এয়ার ফ্রান্স এবং ইতালিয়ান এয়ারওয়েজ মঙ্গলবার ও বুধবারের উড়ান বাতিল করেছে। ইসরাইলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং সামরিক ঘাঁটিতে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দ্রুতই হামলার জন্য হুতিদের তীব্র সমালোচনা ও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “হুতিদের  আমাদের প্রধান বিমান বন্দর আক্রমণ, ইরান থেকে উদ্ভূত। ইসরাইল প্রয়োজনীয় সময়ে তাদের (হুতি ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের) বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবে”। নেতানিয়াহু এরই মধ্যে গাজার যুদ্ধকে বাড়ানোর জন্য নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় ও ক্যাবিনেটের বৈঠকে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন যে ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় প্রতিরক্ষার ইন্টারসেপ্টর সিস্টেমে প্রযুক্তিগত গোলযোগ ছিল এবং তা ব্যর্থ হয়েছে। এর আগে অনেক হুতি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা ইসরাইলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অবমুক্ত করলেও এটাই মার্চ মাসের পর প্রথম হামলা যা রক্ষা করা যায়নি। প্রতিরক্ষার এই ব্যর্থতার বিষয়টি যথেষ্ট ভাবে লক্ষনীয়। ইসরাইলি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা গাজায় নিজেদের সামরিক অভিযানের পরিসর বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা ক্যাবিনেটে এই বিষয়ে আলোচনা চলছে এবং প্রয়োজন হলে অগ্রিম রিজার্ভ বাহিনী মোতায়েন করা হবে। তারা মনে করছে, বন্দী ফিরিয়ে আনা না হলে গাজার তল্লাশি অব্যাহত থাকবে। উভয় পক্ষের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টা এখনো ফলপ্রসূ হয়নি।

হুতিদের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তেল আবিব ও গাজার রুটের ফ্লাইট বাতিল করেছে। জার্মানির লুফথান্সা ছাড়াও মার্কিন ডেল্টা, ইতালির ইটিএ, ফ্রান্সের এয়ার ফ্রান্স প্রভৃতি মঙ্গলবার ও বুধবারের কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করেছে। এয়ারলাইনগুলো নিরাপত্তা পরিবহণ নিশ্চিতের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হুতিরা পূর্বেই তাদের ইমেইলে আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলোকে ইসরাইলি রুট বাতিলের পরামর্শ দিয়েছিল। নিরাপত্তা পরিস্থিতি আঁচ করেই বেশ কিছু বিমান সংস্থা ফ্লাইট রুট পরিবর্তন বা বাতিলের পথ বেছে নিয়েছে, ফলে ইসরাইলের সাথে আন্তর্জাতিক বিমান যোগাযোগের ওপর স্বল্প মেয়াদে প্রভাব পড়েছে।

হুতিরা গত নভেম্বরে শুরু থেকে সমুদ্রপথে বিভিন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ ও ইসরাইলি সমর্থনপুষ্ট জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে। এই সময়ে তারা একশোরও বেশি হামলা চালিয়েছে, দুটি জাহাজ ডুবিয়েছে, একটি জাহাজ জব্দ করেছে এবং চারজন নাবিককে হত্যা করেছে। এ হামলার জেরে আন্তর্জাতিক শিপিং রুটে বিপত্তি সৃষ্টি হয়েছে, অনেক জাহাজ দীর্ঘ পথ (আফ্রিকার ক্যাপ পথ) বেছে নিয়েছে। এর ফলে বিমার বীমা ব্যয় ও নৌপথ পরিবহনের খরচ বাড়েছে, যা বিশ্ববাজারে মূল্যস্ফীতি উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

ইউএস এবং ব্রিটেন নেতৃত্বে সমুদ্রপথ নিরাপত্তায় যৌথ অভিযান (Operation Prosperity Guardian) December 2023 থেকে চলছে। তবুও হুতিরা এই হামলা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে। ইসরাইল তাদের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইয়েমেনের হুতি নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়েছে; গত সপ্তাহে দুটি বন্দর এবং একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে গুপ্তাস্ত্রাগারে ক্ষতিসাধন করেছে । ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান নেয়ার এটাই শুধু শুরু।

হুতিরা গাজায় সাধারণ মানুষের ওপর ইসরাইলের তীব্র নৃশংসতা এবং মানবিক বিপর্যয়ের প্রতিবাদ জানিয়ে সামরিক পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে দাবি করে। হুতি মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেছেন, তারা ইসরাইলের “বিরতিহীন গনহত্যা” বন্ধ না করলে আক্রমণ থামাবে না। গাজায় খাদ্য, ওষুধ আটকে দেয়ার অভিযোগ তুলে তারা জানায়, ইসরাইলি হামলা বন্ধ না হলে নিজেদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। তাদের এই পদক্ষেপকে প্যালেস্টাইনের পক্ষে আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক সমর্থন হিসেবে দেখছে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

হুতি মুখপাত্র বলেছেন, তারা ইসরাইলের “বিরতিহীন গনহত্যা” বন্ধ না করলে আক্রমণ থামাবে না। লুফথান্সা, ডেল্টা, এয়ার ফ্রান্স এবং ইতালিয়ান এয়ারওয়েজ মঙ্গলবার ও বুধবারের উড়ান বাতিল করেছে।

হুতি আক্রমণে স্তব্ধ ইসরাইলি বিমান বন্দর, উড়ান বাতিল একাধিক সংস্থার

আপডেট : ৫ মে ২০২৫, সোমবার

পুবের কলম ডেস্ক:   হুতিরা ইসরাইলের সব বিমানবন্দরে হামলা চালিয়ে ‘সম্পূর্ণ বিমান বন্দর অবরোধ’ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে, যা বেঞ্জি গুরিয়ন বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে শুরু হয়েছে।

ইয়েমেন ভিত্তিক হুতিরা  জানিয়েছে যে তারা ইসরাইলের বিভিন্ন বিমান বন্দরকে বারবার লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে একটি “সম্পূর্ণ বিমান বন্দর অবরোধ” আরোপ করবে। হুতি পক্ষের খবরে বলা হয়, বেঞ্জি গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এই অভিযানের শীর্ষ লক্ষ্য হবে । হুতি মহড়া বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারেয়ি এক পোস্টে জানিয়েছেন, ইসরাইল গাজার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বাড়ানো, এবং নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারণের জন্য তাদের এই হামলা।

আরও পড়ুন: ইসরাইল গাজায় “যুদ্ধের কৌশল হিসেবে অনাহারকে” ব্যবহার করছে। গাজার ৭০ শতাংশ এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ

হুতিদের মানবিক সমন্বয় কেন্দ্র (Humanitarian Operations Coordination Center) গতকাল এক বিবৃতিতে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (IATA) এবং ICAO-সহ বিশ্বব্যাপী বিমান সংস্থাগুলোকে একটি মেইল পাঠিয়ে সতর্ক করেছে। ওই মেইলে সব আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সকে “দখলদার ইসরাইলের বিমানবন্দরে যাওয়া সব রুট বাতিল করে নিতে” অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে তাদের বিমান ও যাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত থাকে। হুতিরা তাদের এই নতুন বিমান বন্দর লড়াইকে গাজার মানুষের পক্ষে একাত্মতা ও প্রতিবাদ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

আরও পড়ুন: ইসরাইলি অবরোধে মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে গাজার ২,৯০,০০০ শিশু

মঙ্গলবার তেল আবিবের নিকটবর্তী বেঞ্জি গুরিয়ন বিমানবন্দরের বাইরে রাস্তায় একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, যার ফলে আটজন অভ্যন্তরীণ কর্মচারী সামান্য আহত হয়। স্থানীয় পুলিশ একটি বিশাল গর্ত লক্ষ্য করেছে, যা ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের কারণে হয়েছে, তবে বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।

আরও পড়ুন: শিক্ষা পুড়িয়ে যখন ক্ষুধার আগুন নেভানো হয়, ফিলিস্তিনি বই প্রেমির গল্প।

হুতি মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারেয় বলেছেন, “ইসরাইলের প্রধান বিমানবন্দর এখন আর আকাশ পরিবহণের জন্য নিরাপদ নয়” । বিমানবন্দরের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে প্রায় সব কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে, তবু কয়েকটি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন যেমন লুফথান্সা, ডেল্টা, এয়ার ফ্রান্স এবং ইতালিয়ান এয়ারওয়েজ মঙ্গলবার ও বুধবারের উড়ান বাতিল করেছে। ইসরাইলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং সামরিক ঘাঁটিতে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দ্রুতই হামলার জন্য হুতিদের তীব্র সমালোচনা ও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “হুতিদের  আমাদের প্রধান বিমান বন্দর আক্রমণ, ইরান থেকে উদ্ভূত। ইসরাইল প্রয়োজনীয় সময়ে তাদের (হুতি ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের) বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবে”। নেতানিয়াহু এরই মধ্যে গাজার যুদ্ধকে বাড়ানোর জন্য নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় ও ক্যাবিনেটের বৈঠকে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন যে ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় প্রতিরক্ষার ইন্টারসেপ্টর সিস্টেমে প্রযুক্তিগত গোলযোগ ছিল এবং তা ব্যর্থ হয়েছে। এর আগে অনেক হুতি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা ইসরাইলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অবমুক্ত করলেও এটাই মার্চ মাসের পর প্রথম হামলা যা রক্ষা করা যায়নি। প্রতিরক্ষার এই ব্যর্থতার বিষয়টি যথেষ্ট ভাবে লক্ষনীয়। ইসরাইলি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা গাজায় নিজেদের সামরিক অভিযানের পরিসর বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা ক্যাবিনেটে এই বিষয়ে আলোচনা চলছে এবং প্রয়োজন হলে অগ্রিম রিজার্ভ বাহিনী মোতায়েন করা হবে। তারা মনে করছে, বন্দী ফিরিয়ে আনা না হলে গাজার তল্লাশি অব্যাহত থাকবে। উভয় পক্ষের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টা এখনো ফলপ্রসূ হয়নি।

হুতিদের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তেল আবিব ও গাজার রুটের ফ্লাইট বাতিল করেছে। জার্মানির লুফথান্সা ছাড়াও মার্কিন ডেল্টা, ইতালির ইটিএ, ফ্রান্সের এয়ার ফ্রান্স প্রভৃতি মঙ্গলবার ও বুধবারের কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করেছে। এয়ারলাইনগুলো নিরাপত্তা পরিবহণ নিশ্চিতের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হুতিরা পূর্বেই তাদের ইমেইলে আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলোকে ইসরাইলি রুট বাতিলের পরামর্শ দিয়েছিল। নিরাপত্তা পরিস্থিতি আঁচ করেই বেশ কিছু বিমান সংস্থা ফ্লাইট রুট পরিবর্তন বা বাতিলের পথ বেছে নিয়েছে, ফলে ইসরাইলের সাথে আন্তর্জাতিক বিমান যোগাযোগের ওপর স্বল্প মেয়াদে প্রভাব পড়েছে।

হুতিরা গত নভেম্বরে শুরু থেকে সমুদ্রপথে বিভিন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ ও ইসরাইলি সমর্থনপুষ্ট জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে। এই সময়ে তারা একশোরও বেশি হামলা চালিয়েছে, দুটি জাহাজ ডুবিয়েছে, একটি জাহাজ জব্দ করেছে এবং চারজন নাবিককে হত্যা করেছে। এ হামলার জেরে আন্তর্জাতিক শিপিং রুটে বিপত্তি সৃষ্টি হয়েছে, অনেক জাহাজ দীর্ঘ পথ (আফ্রিকার ক্যাপ পথ) বেছে নিয়েছে। এর ফলে বিমার বীমা ব্যয় ও নৌপথ পরিবহনের খরচ বাড়েছে, যা বিশ্ববাজারে মূল্যস্ফীতি উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

ইউএস এবং ব্রিটেন নেতৃত্বে সমুদ্রপথ নিরাপত্তায় যৌথ অভিযান (Operation Prosperity Guardian) December 2023 থেকে চলছে। তবুও হুতিরা এই হামলা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে। ইসরাইল তাদের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইয়েমেনের হুতি নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়েছে; গত সপ্তাহে দুটি বন্দর এবং একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে গুপ্তাস্ত্রাগারে ক্ষতিসাধন করেছে । ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান নেয়ার এটাই শুধু শুরু।

হুতিরা গাজায় সাধারণ মানুষের ওপর ইসরাইলের তীব্র নৃশংসতা এবং মানবিক বিপর্যয়ের প্রতিবাদ জানিয়ে সামরিক পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে দাবি করে। হুতি মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেছেন, তারা ইসরাইলের “বিরতিহীন গনহত্যা” বন্ধ না করলে আক্রমণ থামাবে না। গাজায় খাদ্য, ওষুধ আটকে দেয়ার অভিযোগ তুলে তারা জানায়, ইসরাইলি হামলা বন্ধ না হলে নিজেদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। তাদের এই পদক্ষেপকে প্যালেস্টাইনের পক্ষে আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক সমর্থন হিসেবে দেখছে।