০৫ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার, ১৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বীরভূমের সংখ্যালঘুরা এই দশা থেকে কিভাবে মুক্তি পাবে!

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২২, শুক্রবার
  • / 122

পরিজন হারানোর নৃশংস স্মৃতিতে নীরব কান্না

আহমদ হাসান ইমরান :  রাঙামাটির জেলা বীরভূম। মুসলিমরা এই জেলায় প্রায় ৩৮ শতাংশ (২০১১ সেনসাস)। বীরভূমে রয়েছে রাজনগরের স্বাধীনতা সংগ্রামী লালবিধি-র ঐতিহ্য। এই বীরভূমে কিন্তু অনেক জায়গাতেই সংখ্যালঘু মুসলিমদের অবস্থা ভাল নয়। বহু জায়গাতেই তাদের এখনও মাটির তৈরি আধ-ভাঙা বাড়িতেই থাকতে হয়। রোজগারের পথও তেমন কিছু নেই। রয়েছে পাথর ও বালির খাদান। সেখানে দিনমজুরের কাজ করেন অনেকেই। আর পরিবেশ দূষণের শিকার হয়ে নানা রোগে ভোগেন তারা। এইসব এলাকার বাসিন্দাদের তাই পেটের ভাতের জন্য তীব্র সংগ্রাম করতে হয়। আর সর্বেসর্বা রাজনীতিবিদ্দের কাছে হাত পাততে হয়, তাদের কথামতো চলতে হয়। বীরভূমের নানুর কিংবা বগটুইতে যে হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, তার পিছনে রাজনীতি যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে অর্থনৈতিক আধিপত্যের লড়াই। আর তারই শিকার হন গরীর মানুষগুলি। কিন্তু তাদের কাছে রোজগারের পথ কোথায়!

 

আরও পড়ুন: ৩০ বছর পর আদালতের মুক্তি: স্ত্রীর আত্মহত্যায় অভিযুক্ত স্বামীকে অব্যাহতি বম্বে হাই কোর্টের

মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুর, দুই ২৪ পরগনার সংখ্যালঘুরা রুজির খোঁজে পাড়ি দেন ভিন রাজ্যে। তারা চলে যান কেরল, দিল্লি, সুরাট, আহমদাবাদ, মুম্বই্‌, তামিলনাডু, হরিয়ানা বা পঞ্জাবে। ইদানিং কিছু বাঙালি মুসলিম দুবাই, সউদি আরব ও মালয়েশিয়া প্রভৃতি ভিন দেশেও রোজগারের তাড়নায় চলে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: বন দফতরের আপত্তিতে বসন্ত উৎসব নিষিদ্ধ বোলপুরের সোনাঝুরিতে

 

আরও পড়ুন: পোপ ফ্রান্সিসের আরোগ্য কামনা আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমামের

কিন্তু বীরভূমের দরিদ্র সংখ্যালঘুদের মধ্যে দেশান্তরে যাওয়ার খুব এতটা প্রবণতা নেই। তাই তাদেরকে ‘বদ্ধ ঘরে’ থেকেই পরিবারের জন্য অন্নের সন্ধান করতে হয়। আর তারই সুযোগ নেন ভোটকারবারী মাফিয়ারা। মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া প্রভৃতি জেলার গরিব মুসলিমরা বিড়ি বেঁধে, জরির কাজ করে বা মুড়ি ভেজে ধীরে ধীরে অবস্থার খানিকটা হলেও পরিবর্তন করেছে। কিন্তু বীরভূমে এই ধরনের কোনও কুটির শিল্প গড়ে ওঠেনি। আর ভারী শিল্পের তো কথাই নেই। বর্ধমানে মতো চাষবাসের মাটিও সেখানে খুব উর্বর নয়।

বীরভূমের সংখ্যালঘুরা এই দশা থেকে কিভাবে মুক্তি পাবে!
আহমদ হাসান ইমরান

অন্যদের কথা বাদ দিলেও যেসব মুসলিম শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ইদানিং উঠে এসেছেন, তাঁরাও কিন্তু বীরভূমের দিকে খুব একটা নজর দেননি বা নজর দেওয়ার মতো পরিবেশ পরিস্থিতি পাননি। তাই সেই পুরনো খাদান কেন্দ্রিক অর্থনীতিতেই নির্ভর করতে হচ্ছে এইসব মানুষদের। আর সেইজন্য বীরভূমের গরিব সংখ্যালঘুদের খুন-খারাবীতে ব্যবহার করা খুবই সহজ। ইদানিং অবশ্য কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সেখান থেকে ছেলে-মেয়েরা ভাল রেজাল্টও করছে।

 

এছাড়া বীরভূমের বেশ কিছু এলাকার গ্রামে সামাজিক উন্নতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রসারেও খুব বেশি মানুষকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। বীরভূমের ওইসব এলাকায় মুসলিমদের নামগুলি থেকেও আন্দাজ করা যায়, ইসলামী জীবনবোধের প্রসারে মাওলানা, সমাজকর্মীরা খুব একটা তৎপর নয়। তাই তাদের নাম ভাদু শেখ, মিহিলাল শেখ, হাজু শেখ ইত্যাদি। কিন্তু এত দারিদ্র ও অব্যবস্থার মধ্যেও বীরভূমের এই সংখ্যালঘুরা নিজেদের আইডেনটিটি ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন প্রয়োজন এই মানুষগুলির জন্য রুজিরোজগারের পথ খুলে দেওয়ার মতো প্রকল্প, আরও বেশি সংখ্যায় স্কুল-মাদ্রাসা-মিশন, সমাজকর্মীদের সহযোগিতা। সেইরকম দিন এলে তবেই হয়তো বীরভূমের বেশ কিছু অঞ্চলের অধিবাসীরা ‘রুদ্ধ দশা’ থেকে মুক্তি পাবে।

 

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বীরভূমের সংখ্যালঘুরা এই দশা থেকে কিভাবে মুক্তি পাবে!

আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২২, শুক্রবার

আহমদ হাসান ইমরান :  রাঙামাটির জেলা বীরভূম। মুসলিমরা এই জেলায় প্রায় ৩৮ শতাংশ (২০১১ সেনসাস)। বীরভূমে রয়েছে রাজনগরের স্বাধীনতা সংগ্রামী লালবিধি-র ঐতিহ্য। এই বীরভূমে কিন্তু অনেক জায়গাতেই সংখ্যালঘু মুসলিমদের অবস্থা ভাল নয়। বহু জায়গাতেই তাদের এখনও মাটির তৈরি আধ-ভাঙা বাড়িতেই থাকতে হয়। রোজগারের পথও তেমন কিছু নেই। রয়েছে পাথর ও বালির খাদান। সেখানে দিনমজুরের কাজ করেন অনেকেই। আর পরিবেশ দূষণের শিকার হয়ে নানা রোগে ভোগেন তারা। এইসব এলাকার বাসিন্দাদের তাই পেটের ভাতের জন্য তীব্র সংগ্রাম করতে হয়। আর সর্বেসর্বা রাজনীতিবিদ্দের কাছে হাত পাততে হয়, তাদের কথামতো চলতে হয়। বীরভূমের নানুর কিংবা বগটুইতে যে হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, তার পিছনে রাজনীতি যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে অর্থনৈতিক আধিপত্যের লড়াই। আর তারই শিকার হন গরীর মানুষগুলি। কিন্তু তাদের কাছে রোজগারের পথ কোথায়!

 

আরও পড়ুন: ৩০ বছর পর আদালতের মুক্তি: স্ত্রীর আত্মহত্যায় অভিযুক্ত স্বামীকে অব্যাহতি বম্বে হাই কোর্টের

মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুর, দুই ২৪ পরগনার সংখ্যালঘুরা রুজির খোঁজে পাড়ি দেন ভিন রাজ্যে। তারা চলে যান কেরল, দিল্লি, সুরাট, আহমদাবাদ, মুম্বই্‌, তামিলনাডু, হরিয়ানা বা পঞ্জাবে। ইদানিং কিছু বাঙালি মুসলিম দুবাই, সউদি আরব ও মালয়েশিয়া প্রভৃতি ভিন দেশেও রোজগারের তাড়নায় চলে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: বন দফতরের আপত্তিতে বসন্ত উৎসব নিষিদ্ধ বোলপুরের সোনাঝুরিতে

 

আরও পড়ুন: পোপ ফ্রান্সিসের আরোগ্য কামনা আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমামের

কিন্তু বীরভূমের দরিদ্র সংখ্যালঘুদের মধ্যে দেশান্তরে যাওয়ার খুব এতটা প্রবণতা নেই। তাই তাদেরকে ‘বদ্ধ ঘরে’ থেকেই পরিবারের জন্য অন্নের সন্ধান করতে হয়। আর তারই সুযোগ নেন ভোটকারবারী মাফিয়ারা। মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া প্রভৃতি জেলার গরিব মুসলিমরা বিড়ি বেঁধে, জরির কাজ করে বা মুড়ি ভেজে ধীরে ধীরে অবস্থার খানিকটা হলেও পরিবর্তন করেছে। কিন্তু বীরভূমে এই ধরনের কোনও কুটির শিল্প গড়ে ওঠেনি। আর ভারী শিল্পের তো কথাই নেই। বর্ধমানে মতো চাষবাসের মাটিও সেখানে খুব উর্বর নয়।

বীরভূমের সংখ্যালঘুরা এই দশা থেকে কিভাবে মুক্তি পাবে!
আহমদ হাসান ইমরান

অন্যদের কথা বাদ দিলেও যেসব মুসলিম শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ইদানিং উঠে এসেছেন, তাঁরাও কিন্তু বীরভূমের দিকে খুব একটা নজর দেননি বা নজর দেওয়ার মতো পরিবেশ পরিস্থিতি পাননি। তাই সেই পুরনো খাদান কেন্দ্রিক অর্থনীতিতেই নির্ভর করতে হচ্ছে এইসব মানুষদের। আর সেইজন্য বীরভূমের গরিব সংখ্যালঘুদের খুন-খারাবীতে ব্যবহার করা খুবই সহজ। ইদানিং অবশ্য কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সেখান থেকে ছেলে-মেয়েরা ভাল রেজাল্টও করছে।

 

এছাড়া বীরভূমের বেশ কিছু এলাকার গ্রামে সামাজিক উন্নতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রসারেও খুব বেশি মানুষকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। বীরভূমের ওইসব এলাকায় মুসলিমদের নামগুলি থেকেও আন্দাজ করা যায়, ইসলামী জীবনবোধের প্রসারে মাওলানা, সমাজকর্মীরা খুব একটা তৎপর নয়। তাই তাদের নাম ভাদু শেখ, মিহিলাল শেখ, হাজু শেখ ইত্যাদি। কিন্তু এত দারিদ্র ও অব্যবস্থার মধ্যেও বীরভূমের এই সংখ্যালঘুরা নিজেদের আইডেনটিটি ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন প্রয়োজন এই মানুষগুলির জন্য রুজিরোজগারের পথ খুলে দেওয়ার মতো প্রকল্প, আরও বেশি সংখ্যায় স্কুল-মাদ্রাসা-মিশন, সমাজকর্মীদের সহযোগিতা। সেইরকম দিন এলে তবেই হয়তো বীরভূমের বেশ কিছু অঞ্চলের অধিবাসীরা ‘রুদ্ধ দশা’ থেকে মুক্তি পাবে।