১০ নভেম্বর ২০২৫, সোমবার, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে সাইবার হামলার শিকার ভারত: পাঁচ মাসে খোয়া গেছে প্রায় ৭০০০ কোটি টাকা

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৫, সোমবার
  • / 87

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ভারত লাগাতার সাইবার হানার (Cyber Attack on India) মুখে পড়ছে, মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাঁচটি দেশ থেকে সংগঠিত এই আক্রমণেই চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে প্রায় ₹৭০০০ কোটি টাকার প্রতারণা ঘটেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও ‘ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার’ (I4C)-এর নথির ভিত্তিতে এমনই উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশ করেছে ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সাইবার অপরাধের উৎস দেশগুলি হল: মায়ানমার (Myanmar), কম্বোডিয়া (Cambodia), ভিয়েতনাম (Vietnam), লাওস (Laos), থাইল্যান্ড (Thailand)।

এই দেশগুলি থেকে পরিচালিত চিনা সাইবার অপরাধী চক্র ভারতের আর্থিক ও ডিজিটাল পরিকাঠামোকে টার্গেট করছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক সূত্র জানাচ্ছেন, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সাইবার প্রতারকেরা ভারত থেকে যে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছে, তার পরিমাণ:

  • জানুয়ারি: ₹১,১৯২ কোটি

  • ফেব্রুয়ারি: ₹৯৫১ কোটি

  • মার্চ: ₹১,০০০ কোটি

  • এপ্রিল: ₹৭৩১ কোটি

  • মে: ₹৯৯৯ কোটি

এই প্রতারণাগুলির বেশিরভাগই শেয়ার বাজারে স্টক ট্রেডিং ফাঁদ এবং ডিজিটাল গ্রেফতারির নামে টাকা আদায় করে ঘটানো হয়েছে।

তদন্তে উঠে এসেছে, এই সাইবার প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু ভারতীয় নাগরিকও রয়েছেন। যদিও তাঁরা মূলত পাচারচক্রের শিকার। তাঁদের মিথ্যা চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদেশে নিয়ে গিয়ে উচ্চ নিরাপত্তার ঘাঁটিতে আটকে রেখে এই কাজ করানো হচ্ছে।

সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, এর মধ্যে অনেক ‘সাইবার প্রতারণা ঘাঁটির (Cyber Scam Centers)’ হদিসও পাওয়া গেছে: কম্বোডিয়ায় ৪৫টি ঘাঁটি, লাওসে ৫টি ঘাঁটি, মায়ানমারে ১টি ঘাঁটি।

এই ঘাঁটিগুলিতে শুধু ভারতীয় নয়, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকেও মানুষ পাচার করে এনে এই প্রতারণায় বাধ্য করা হচ্ছে।

এই সংক্রান্ত তদন্তে ভারত সরকার ও বিদেশ মন্ত্রক ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। সম্প্রতি দিল্লিতে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে, কম্বোডিয়ার সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসে কেন্দ্র। সেখানে কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে চিহ্নিত সাইবার অপরাধীদের ঘাঁটির অবস্থান জানতে চাওয়া হয়, যাতে দ্রুত পদক্ষেপ করা যায়।

এক সরকারি আধিকারিক জানিয়েছেন, গোয়েন্দাদের তথ্যের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন ভারতীয়কে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের জবানবন্দির ভিত্তিতে প্রতারকদের ঘাঁটি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।

সরকারি নথি অনুযায়ী, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পাচারচক্রের সঙ্গে যুক্ত কিছু এজেন্ট মানুষ পাচার করছে: মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি।

এই রাজ্যগুলির কিছু এজেন্ট মোটাতাজা রোজগারের লোভ দেখিয়ে মানুষকে লাওস, মায়ানমার, কম্বোডিয়ায় পাঠাচ্ছে। পরে তাঁদের বন্দি করে সাইবার অপরাধে যুক্ত করা হয়।

উদ্ধার হওয়া কিছু ভারতীয় জানিয়েছেন, তাঁদের প্রথমে দুবাই পাঠানো হয়েছিল, তার পর চিন হয়ে কম্বোডিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। আবার কেউ কেউ জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, জয়পুর থেকে সরাসরি কম্বোডিয়া বা থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে সাইবার হামলার শিকার ভারত: পাঁচ মাসে খোয়া গেছে প্রায় ৭০০০ কোটি টাকা

আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৫, সোমবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ভারত লাগাতার সাইবার হানার (Cyber Attack on India) মুখে পড়ছে, মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাঁচটি দেশ থেকে সংগঠিত এই আক্রমণেই চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে প্রায় ₹৭০০০ কোটি টাকার প্রতারণা ঘটেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও ‘ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার’ (I4C)-এর নথির ভিত্তিতে এমনই উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশ করেছে ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সাইবার অপরাধের উৎস দেশগুলি হল: মায়ানমার (Myanmar), কম্বোডিয়া (Cambodia), ভিয়েতনাম (Vietnam), লাওস (Laos), থাইল্যান্ড (Thailand)।

এই দেশগুলি থেকে পরিচালিত চিনা সাইবার অপরাধী চক্র ভারতের আর্থিক ও ডিজিটাল পরিকাঠামোকে টার্গেট করছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক সূত্র জানাচ্ছেন, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সাইবার প্রতারকেরা ভারত থেকে যে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছে, তার পরিমাণ:

  • জানুয়ারি: ₹১,১৯২ কোটি

  • ফেব্রুয়ারি: ₹৯৫১ কোটি

  • মার্চ: ₹১,০০০ কোটি

  • এপ্রিল: ₹৭৩১ কোটি

  • মে: ₹৯৯৯ কোটি

এই প্রতারণাগুলির বেশিরভাগই শেয়ার বাজারে স্টক ট্রেডিং ফাঁদ এবং ডিজিটাল গ্রেফতারির নামে টাকা আদায় করে ঘটানো হয়েছে।

তদন্তে উঠে এসেছে, এই সাইবার প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু ভারতীয় নাগরিকও রয়েছেন। যদিও তাঁরা মূলত পাচারচক্রের শিকার। তাঁদের মিথ্যা চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদেশে নিয়ে গিয়ে উচ্চ নিরাপত্তার ঘাঁটিতে আটকে রেখে এই কাজ করানো হচ্ছে।

সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, এর মধ্যে অনেক ‘সাইবার প্রতারণা ঘাঁটির (Cyber Scam Centers)’ হদিসও পাওয়া গেছে: কম্বোডিয়ায় ৪৫টি ঘাঁটি, লাওসে ৫টি ঘাঁটি, মায়ানমারে ১টি ঘাঁটি।

এই ঘাঁটিগুলিতে শুধু ভারতীয় নয়, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকেও মানুষ পাচার করে এনে এই প্রতারণায় বাধ্য করা হচ্ছে।

এই সংক্রান্ত তদন্তে ভারত সরকার ও বিদেশ মন্ত্রক ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। সম্প্রতি দিল্লিতে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে, কম্বোডিয়ার সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসে কেন্দ্র। সেখানে কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে চিহ্নিত সাইবার অপরাধীদের ঘাঁটির অবস্থান জানতে চাওয়া হয়, যাতে দ্রুত পদক্ষেপ করা যায়।

এক সরকারি আধিকারিক জানিয়েছেন, গোয়েন্দাদের তথ্যের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন ভারতীয়কে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের জবানবন্দির ভিত্তিতে প্রতারকদের ঘাঁটি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।

সরকারি নথি অনুযায়ী, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পাচারচক্রের সঙ্গে যুক্ত কিছু এজেন্ট মানুষ পাচার করছে: মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি।

এই রাজ্যগুলির কিছু এজেন্ট মোটাতাজা রোজগারের লোভ দেখিয়ে মানুষকে লাওস, মায়ানমার, কম্বোডিয়ায় পাঠাচ্ছে। পরে তাঁদের বন্দি করে সাইবার অপরাধে যুক্ত করা হয়।

উদ্ধার হওয়া কিছু ভারতীয় জানিয়েছেন, তাঁদের প্রথমে দুবাই পাঠানো হয়েছিল, তার পর চিন হয়ে কম্বোডিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। আবার কেউ কেউ জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, জয়পুর থেকে সরাসরি কম্বোডিয়া বা থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়।