অদম্য জেদই এনে দিল সাফল্য, উচ্চ মাধ্যমিকে মেধা তালিকায় অষ্টম স্থানাধিকারী বীরভূমের শাহিনা খাতুন

- আপডেট : ১০ জুন ২০২২, শুক্রবার
- / 14
কৌশিক সালুই, বীরভূম: ছোট্ট বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই দুই মেয়েকে নিয়ে মায়ের জীবন সংগ্রাম দেখছে। আর তা থেকেই সংসারের জন্য কিছু করার অদম্য জেদ আজকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাফল্যের শিখরে তুলেছে তাকে। এ বছরে রাজ্যের মেধা তালিকায় অষ্টম স্থান দখল করেছে সে। ভূগোল নিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ভালো চাকরি করার ইচ্ছা আছে তার।
শাহিনা খাতুন, বীরভূমের সিউড়ি শহরের কালীগতি স্মৃতি নারী শিক্ষা নিকেতন থেকে এবছর উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছে এবং রাজ্যস্তরে মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছে সে। কলা বিভাগ থেকে ৪৯১ নাম্বার পেয়েছে। বাড়ি সিউড়ির লালকুঠি পাড়ায়। শিশু বয়সে বাবার মৃত্যু হালফিলের ছেলেমেয়েদের থেকে অনেকটাই ভিন্ন করেছে তাকে। মোবাইল বা টিভি কোনকিছুই নেশা নেই তার।
একমাত্র শখ বলতে রং তুলি নিয়ে ক্যানভাস-এর উপর আঁচড় কাটা। আর নিজের পড়ার বইয়ে পড়াশোনায় ডুবে থাকা। ক্লাস সিক্সে পড়াশোনা করার সময় বাড়ির একমাত্র রোজগেরে সদস্য বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক বছর রোগভোগের পর মৃত্যু হয় তার। মা সাবিনা বেগম বাবা অসুস্থ থাকাকালীন তাদের আইসক্রিম কারখানার হাল ধরেন। ফলে বাবা মারা গেলেও কারখানা সচল রয়েছে তাদের। তা হলেও মাস পাঁচেক মেরে কেটে আইসক্রিম বিক্রি হয় বাজারে।
আর মাত্র ওই কয়েক মাসের রোজকার থেকেই সারাবছর কোনরকম দিন গুজরান হয় তাদের। শাহিনা খাতুন বলেন, ‘খুব কম বয়সে বাবাকে হারিয়েছি। আর তারপর থেকেই মাকে দেখছি আমাকেও বোনকে ভালো কিছু করার জন্য কঠোর পরিশ্রম। একজন গৃহবধূ হয়েও বাবার আইসক্রিম কারখানা এখনও সচল রেখেছে মা। শুধুমাত্র তার দুই সন্তানকে ঠিক রাখার জন্য। মায়ের এই লড়াই আমাকে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জেদ চাপিয়েছে’।
মা সাবিনা বেগম বলেন, ‘বাবা মারা গেলেও মেয়েদেরকে সেই অভাব আমি বুঝতে দিইনি। আর তাতেই আমার মান রেখেছে মেয়ে। কঠোর পড়াশোনা তাকে আজকে সাফল্যের শীর্ষে এনেছে’।