০৬ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডিভিসি-র জল ছাড়াকে ঘিরে তীব্র সংঘাত: ‘ম্যান মেড বন্যা’-র অভিযোগে কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তৃণমূলের

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ৬ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার
  • / 52

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: টানা বৃষ্টির জেরে এবং দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)-র জল ছাড়াকে ঘিরে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির মুখে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলা। বিশেষ করে হুগলির আরামবাগ এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল চরম ক্ষতিগ্রস্ত। ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট অভিযোগ করেছেন, ডিভিসি পরিকল্পিতভাবে জল ছেড়ে রাজ্যকে ডুবিয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিকে ‘ম্যান মেড বন্যা’ আখ্যা দিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত ফের চরমে উঠেছে।

 

এই আবহে রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁর দাবি, ডিভিসি দু’মাসে কতটা জল ছেড়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ হিসাব না দিয়ে কেন্দ্র মাত্র ২৮ দিনের তথ্য উপস্থাপন করেছে। এছাড়াও, জল ছাড়ার আগে ডিভিসি রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনায় বসেছিল কি না, তার স্পষ্ট জবাব কেন্দ্র এড়িয়ে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: এসআইআর নিয়ে কোনও আলোচনা নয় পার্লামেন্টে! কেন্দ্রের নিদান

 

আরও পড়ুন: ডিভিসি-র “বন্যা নিয়ন্ত্রণ” আবারও বাংলাকে ‘ডুবিয়ে’

ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় জলশক্তি মন্ত্রকের কাছে চারটি নির্দিষ্ট প্রশ্ন রেখেছিলেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন:

আরও পড়ুন: না জানিয়ে ফের ৫৫ হাজার কিউসেক!

১. ১৮ জুন থেকে ডিভিসি কি ২৭ হাজার লক্ষ কিউবিক মিটার জল পশ্চিমবঙ্গে ছেড়েছে?

২. জল ছাড়ার আগে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল কি না?

৩. যদি আলোচনা হয়ে থাকে, তার তথ্য কোথায়?

৪. যদি আলোচনা না হয়ে থাকে, তবে তার কারণ কী?

 

এই প্রশ্নের লিখিত জবাবে জলশক্তি মন্ত্রী সি আর পাতিল জানান, ১৮ জুন থেকে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে মোট ২৭,৯৮৭ লক্ষ কিউবিক মিটার জল ছাড়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় ডিভিসি কর্তৃপক্ষ, যেখানে ‘রিভার ম্যানেজমেন্ট কমিটি’, সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন (CWC), ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। ডিভিসি ওই কমিটির নির্দেশ মেনে পানীয় জল, সেচ, নৌ চলাচল ও শিল্প ক্ষেত্রে উপযোগিতার দিক বিবেচনায় বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

 

তবে এই ব্যাখ্যায় অসন্তুষ্ট তৃণমূল সাংসদ ঋতব্রত। তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শুধু কমিটির কথা বললেও আলোচনার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। ‘‘কমিটি থাকা মানেই কি আলোচনা হয়েছে? যদি হয়ে থাকে, তার প্রমাণ কোথায়?’’— প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর দাবি, ২০২৩ সালের তুলনায় এ বছর ডিভিসি-র জল ছাড়ার পরিমাণ ৩০ গুণ বেশি। আর ২০২৪ সালের তুলনায় ১১ গুণ। এ ছাড়া জুন-জুলাই মিলিয়ে ডিভিসি মোট ৫০,২৮৭ লক্ষ কিউবিক মিটার জল ছেড়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

 

ঋতব্রতের অভিযোগ, ‘‘ডিভিসি ইচ্ছাকৃতভাবে জল ছেড়ে দক্ষিণবঙ্গের ফসল এবং মানুষের জীবন-জীবিকা ধ্বংস করেছে। এটা নিছক প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটা বিজেপি-প্রভাবিত ম্যান মেড ডিজ়াস্টার।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে বাংলার মানুষ এই বন্যার স্মৃতি ভুলবে না। বিজেপি-র রাজনৈতিক সলিল সমাধি অনিবার্য।’’

 

তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্র তথ্য গোপন করছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রাজ্যের ক্ষতি করছে। ডিভিসি এবং জলশক্তি মন্ত্রক যদিও বলেছে, সমস্ত পদক্ষেপ নিয়ম মেনে হয়েছে। তবে এই যুক্তি মানতে নারাজ তৃণমূল। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের নতুন উত্তাপ ছড়াচ্ছে এই জলবিস্ফোরণ ঘিরে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ডিভিসি-র জল ছাড়াকে ঘিরে তীব্র সংঘাত: ‘ম্যান মেড বন্যা’-র অভিযোগে কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তৃণমূলের

আপডেট : ৬ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: টানা বৃষ্টির জেরে এবং দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)-র জল ছাড়াকে ঘিরে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির মুখে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলা। বিশেষ করে হুগলির আরামবাগ এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল চরম ক্ষতিগ্রস্ত। ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট অভিযোগ করেছেন, ডিভিসি পরিকল্পিতভাবে জল ছেড়ে রাজ্যকে ডুবিয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিকে ‘ম্যান মেড বন্যা’ আখ্যা দিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত ফের চরমে উঠেছে।

 

এই আবহে রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁর দাবি, ডিভিসি দু’মাসে কতটা জল ছেড়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ হিসাব না দিয়ে কেন্দ্র মাত্র ২৮ দিনের তথ্য উপস্থাপন করেছে। এছাড়াও, জল ছাড়ার আগে ডিভিসি রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনায় বসেছিল কি না, তার স্পষ্ট জবাব কেন্দ্র এড়িয়ে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: এসআইআর নিয়ে কোনও আলোচনা নয় পার্লামেন্টে! কেন্দ্রের নিদান

 

আরও পড়ুন: ডিভিসি-র “বন্যা নিয়ন্ত্রণ” আবারও বাংলাকে ‘ডুবিয়ে’

ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় জলশক্তি মন্ত্রকের কাছে চারটি নির্দিষ্ট প্রশ্ন রেখেছিলেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন:

আরও পড়ুন: না জানিয়ে ফের ৫৫ হাজার কিউসেক!

১. ১৮ জুন থেকে ডিভিসি কি ২৭ হাজার লক্ষ কিউবিক মিটার জল পশ্চিমবঙ্গে ছেড়েছে?

২. জল ছাড়ার আগে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল কি না?

৩. যদি আলোচনা হয়ে থাকে, তার তথ্য কোথায়?

৪. যদি আলোচনা না হয়ে থাকে, তবে তার কারণ কী?

 

এই প্রশ্নের লিখিত জবাবে জলশক্তি মন্ত্রী সি আর পাতিল জানান, ১৮ জুন থেকে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে মোট ২৭,৯৮৭ লক্ষ কিউবিক মিটার জল ছাড়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় ডিভিসি কর্তৃপক্ষ, যেখানে ‘রিভার ম্যানেজমেন্ট কমিটি’, সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন (CWC), ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। ডিভিসি ওই কমিটির নির্দেশ মেনে পানীয় জল, সেচ, নৌ চলাচল ও শিল্প ক্ষেত্রে উপযোগিতার দিক বিবেচনায় বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

 

তবে এই ব্যাখ্যায় অসন্তুষ্ট তৃণমূল সাংসদ ঋতব্রত। তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শুধু কমিটির কথা বললেও আলোচনার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। ‘‘কমিটি থাকা মানেই কি আলোচনা হয়েছে? যদি হয়ে থাকে, তার প্রমাণ কোথায়?’’— প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর দাবি, ২০২৩ সালের তুলনায় এ বছর ডিভিসি-র জল ছাড়ার পরিমাণ ৩০ গুণ বেশি। আর ২০২৪ সালের তুলনায় ১১ গুণ। এ ছাড়া জুন-জুলাই মিলিয়ে ডিভিসি মোট ৫০,২৮৭ লক্ষ কিউবিক মিটার জল ছেড়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

 

ঋতব্রতের অভিযোগ, ‘‘ডিভিসি ইচ্ছাকৃতভাবে জল ছেড়ে দক্ষিণবঙ্গের ফসল এবং মানুষের জীবন-জীবিকা ধ্বংস করেছে। এটা নিছক প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটা বিজেপি-প্রভাবিত ম্যান মেড ডিজ়াস্টার।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে বাংলার মানুষ এই বন্যার স্মৃতি ভুলবে না। বিজেপি-র রাজনৈতিক সলিল সমাধি অনিবার্য।’’

 

তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্র তথ্য গোপন করছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রাজ্যের ক্ষতি করছে। ডিভিসি এবং জলশক্তি মন্ত্রক যদিও বলেছে, সমস্ত পদক্ষেপ নিয়ম মেনে হয়েছে। তবে এই যুক্তি মানতে নারাজ তৃণমূল। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের নতুন উত্তাপ ছড়াচ্ছে এই জলবিস্ফোরণ ঘিরে।