অন্তর্তদন্ত রিপোর্ট: সমকামিতার প্রচার-প্রসারে ত্রয়ী সংগঠন ও সম্পর্কিত আলোচনা

- আপডেট : ১৫ মে ২০২৩, সোমবার
- / 17

সায়েন্স কংগ্রেস হলে 'ঈদ মিলন' অনুষ্ঠানে আঙুল উঁচিয়ে অধ্যাপক আবু সালেহ সাংবাদিক নিজাম পারভেজকে গেট-আউট করেছেন। রয়েছেন ওরিয়েন্টাল মিডিয়া ফোরামের কর্মকর্তা মুজিবর রহমান ও অন্যান্যরা।
আহমদ আবদুল্লাহ: সম্প্রতি সম-মনোভাবাপন্ন তিনটি সংগঠন যৌথভাবে ঈদ মিলন উৎসব পালন করে পার্ক সার্কাসের সায়েন্স কংগ্রেস হলে। ইদানীং ঈদ মিলন অনুষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ, রমযানের সময় আজকাল অনেকেই ‘ইফতার পার্টি’তে যেতে চান না। কারণ, সারাদিন রোযা শেষে সেগুলি ‘পার্টি’ হয়ে ওঠে। তাতে ইবাদত-আধ্যাত্মিকতার কোনও রেশ তেমন থাকে না। অনেক ঈমানদার তাতে আপত্তি তুলছেন।
সে যাই হোক, তিনটি সংগঠন হল বেঙ্গলী অ্যাকাডেমিয়া ফর সোশ্যাল এমপাওয়ারমেন্ট (বেস) আলিয়া সংস্কৃতি সংসদ এবং ওরিয়েন্টাল মিডিয়া ফোরাম। বেস ট্রাস্টের সভাপতি হচ্ছেন জনাব ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লা। আলিয়া সংস্কৃতি সংসদেরও তিনিই প্রধান কর্ণধার। আর ওরিয়েন্টাল মিডিয়া ফোরামের সর্বেসর্বা হচ্ছেন মুজিবর রহমান। এ ছাড়া বেস-এর ট্রাস্টি ও অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন আবু সালেহ, শহিদুল ইসলাম, হাসান ধাবক, আবিদ হাসান প্রমুখ। আবিদ হাসান বেস-এর হয়ে বক্তব্য রাখেন। তবে তাঁর একটি ইসলাম-বিরোধী বিস্ফোরক পোস্টের পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে আবিদ হাসান বলছেন, তিনি কিছুদিন আগে বেস থেকে নাকি অবসর নিয়েছেন। তবে বেস-এর হয়ে মন্তব্য, বিবৃতি আবিদ হাসান চালিয়ে যাচ্ছেন সমানে।
এই পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। কিন্তু গোলমাল বাধে ৩০ এপ্রিল ২০২৩-এ ত্রয়ী অয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে সমকামিতার প্রতি এদের বিপুল সমর্থন এবং প্রচার-প্রসারে অনড় মনোভাবের প্রকাশ দেখে।
শেখ আবিদ হাসানের পোস্টের তরজমা
‘জাকাতের টাকা আমরা নিই না। ইসলাম এলজিবিটিআইকিউ-র বিরুদ্ধে নয়। আর বেস ইসলামি সংগঠনও নয়। বেস হচ্ছে মুসলিম এলজিবিটিআইকিউ-দের জন্য একটি নিরাপদ জায়গা। এদের সমাজ বর্জন করে চলে। সমকামি ইমামও রয়েছে। ইসলাম পায়ুমৈথুনের বিরুদ্ধে। কিন্তু মুসলিম দম্পতিরা সব সময় এটা করে। কিন্তু তাদেরকে এজন্য কলঙ্কিত করা হয় না। যতক্ষণ পর্যন্ত না সমকামি মুসলিম পুরুষরা যৌনতায় লিপ্ত না হয় এবং ট্রান্সওমেন যৌন কাজে লিপ্ত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত ইসলামের কোনও আপত্তি নেই। রাসূল সা. তাঁর বাড়িতে সমকামিদের পরিচারক হিসেবে নিয়োগ করতেন’।
দেখা যায়, সমকামী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত জনৈক অনুরাধা দোসাদ নামে এক মহিলা কবি ইংরেজিতে সমকামিতার পক্ষে একটি কবিতা পাঠ করেন। সেখানে উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকদের মধ্যে ৮০-৯০ শতাংশই ছিলেন মুসলিম। তাঁদের অনেকেই ‘কুয়ের মি’ ইংরেজি কবিতাটির আসল অর্থ বুঝে উঠতে পারেননি। তবে সেখানে উপস্থিত এক তরুণ সাংবাদিক নিজাম পারভেজ উপলব্ধি করেন যে, পবিত্র ঈদ উপলক্ষে মিলনের মঞ্চে আহ্বান করে এই তিনটি সংগঠন মূলত মুসলিম নারী-পুরুষের মধ্যে সমকামিতার প্রচার-প্রসারে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ পবিত্র কুরআন ও ইসলামে সমকামিতা চরমভাবে নিষিদ্ধ। সমকামিতা, লেসবিয়ানিজম এবং পশুমৈথুনকে মানব সমাজের জন্য ইসলাম ক্ষতিকর বলে মনে করে। শুধু ইসলাম কেন, খ্রিস্টান ও ইহুদিরাও সমকামিতাকে দণ্ডযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করে।

সম্প্রতি রাশিয়া সমকামিতার প্রচার-প্রসার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তাদের সংসদে আইন পাশ করেছে। এ ছাড়া অফ্রিকার দেশ উগান্ডা মাত্র মাস কয়েক আগে সমকামিতাকে দণ্ডযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করেছে। আর শুধু ইসলাম নয়, খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মগ্রন্থেও সমকামিতা বিরাট অপরাধ এবং তাদের বিরুদ্ধে ‘ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট’ বা মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে।
নিজাম পারভেজ এর বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখতে চেষ্টা করলে তাঁর হাত থেকে মাইক কেড়ে নেওয়া হয়। তাঁকে প্রথমে ভদ্রভাবে বাধা দেন বেস ট্রাস্টের সভাপতি জনাব সাইফুল্লা। আর তাঁর আওয়াজ বন্ধ করতে নিজামের হাত থেকে জোর করে শহিদুল ইসলাম মাইক কেড়ে নেন। আর চিৎকার করে বলতে থাকেন ‘এটা মুসলিমদের কোনও অনুষ্ঠান নয়’। অর্থাৎ এখানে সমকামিতার পক্ষে প্রচার চলতেই পারে।
শহিদুল ইসলাম নিজামকে আরও বলেন, তুমি বেরিয়ে যাও। নিজামকে বেস ও আলিয়া সংস্কৃতি সংসদের সদস্য-সমর্থকরা পাকড়াও করে দরজার দিকে নিয়ে যান। আবু সালেহ লাফিয়ে উঠে হাত উত্তোলন করে ইংরেজিতে বলেন, ‘গেটআউট’। তাঁকে প্রায় গলাধাক্কা দিয়ে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। কারণ, নিজাম পারভেজ ঈদ মিলন মঞ্চে সমকামিতার প্রশংসা ও প্রচার নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। এরপর হট্টগোলের মধ্যে হলের সিকুরিটি অফিসাররা তিনি সংগঠনের কর্মকর্তাদের বের করে দেন।
কেন মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা ক্ষুব্ধ?
ঘটনাটি সেখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু শেষ হতে দিলেন না এই তিন সংগঠনের কর্মকর্তারা। তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় শুধু নিজেদের ডিফেন্ড করা নয়, বরং সমকামিতার পক্ষে প্রচার চালাতে লাগলেন। আর সমকামিতা ইসলামে জায়েয এই ধরনের কথাও তাঁরা জোরেশোরে প্রচার করতে শুরু করলেন। উদাহরণ দেওয়া যেতে পারেn শেখ আবিদ হাসানের ইংরেজি পোস্টটির বাংলা করলে দাঁড়ায়
‘জাকাতের টাকা আমরা নিই না। ইসলাম এলজিবিটিআইকিউ-র বিরুদ্ধে নয়। আর বেস কোনও ইসলামি সংগঠনও নয়। বেস হচ্ছে মুসলিম এলজিবিটিআইকিউ-দের জন্য একটি নিরাপদ জায়গা। এদেরকে সমাজ বর্জন করে চলে। সমকামী ইমামও রয়েছে। ইসলাম পায়ুমৈথুনের বিরুদ্ধে। কিন্তু মুসলিম দম্পতিরা সবসময় এটা করে। কিন্তু তাদেরকে এজন্য কলঙ্কিত করা হয় না। যতক্ষণ পর্যন্ত না সমকামী মুসলিম পুরুষরা যৌনতায় লিপ্ত না হয় এবং ট্রান্সওমেন যৌন কাজে লিপ্ত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত ইসলামের কোনও আপত্তি নেই। রাসূল সা. সমকামীদের তাঁর বাড়িতে পরিচারক হিসেবে নিয়োগ করতেন।’
দেখা যাচ্ছে, এতে শেখ আবিদ হাসান ‘আমরা’ বলতে স্পষ্টভাবেই বেস-কেই বুঝিয়েছেন। বেস-এর তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও বিবৃতি দিয়ে কেউ বলেননি যে, উপরোক্ত বক্তব্য তাঁদের নয়। আর বেস-এর ‘আমরা’ অন্তর্ভুক্ত এই ভদ্রলোক যেসব কথা বলেছেন, তা তসলিমা নাসরিন প্রমুখকেও ছাড়িয়ে গেছে।
তিনি বলেছেন, ‘ইসলাম নাকি সমকামিতা, লেসবিয়ানিজম এগুলির নাকি বিরুদ্ধে নয়! সমকামি মুসলিম ইমামরাও নাকি মসজিদে ইমামতি করেন! আল্লাহ্র নবীর গৃহে নাকি সমকামীদের পরিচারক হিসেবে রাখা হত!’

তাহলে দেখা যাচ্ছে, ‘বেস’ পবিত্র কুরআন, হাদিস, সীরাত এবং ইসলামের শিক্ষাকে আমূল পালটে দেওয়ার অভিযানে নেমে পড়েছে। তারা কোনও পরোয়াই করছে না। আল্লাহ্র নবী সা.-র সম্পর্কে, ইসলাম সম্পর্কে এই ধরনের ভুল, বানোয়াট এবং গর্হিত কথা বলেও তারা আশা করে কেউ তাদের বক্তব্যে প্রতিবাদ করবে না! কিন্তু অন্য কেউ যেমন নিজাম পারভেজ বা যারা প্রশ্ন করায় বেস যাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বহিষ্কার করেছে, সেটা বৈধ! ভিন্ন মত বা মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা বেস-এর বিরোধীদের সম্পর্কে প্রযোজ্য নয়। তাদের বলা হবে ‘গেটআউট’। যেমনটি নিজাম পারভেজকে ‘গেটআউট’ বলে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়।
দেখা যাচ্ছে, এই তিনটি সংগঠন সবাইকে বাদ দিয়ে ‘নেড়েদেরই’ ধরেছে। অবশ্য তাদের সঙ্গে পৃথকভাবে আছেন লেডি ব্রাবোর্ন কলেজের প্রিন্সিপাল শিউলি সরকার। এরা টার্গেট করেছেন শিক্ষিত মুসলিম অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, তরুণ ছাত্রছাত্রীদের। নারীরাও তাদের বিশেষ নিশানা।
এ বিষয়ে বিশ্লেষণ করার আগে আমরা বেস-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ‘ভুতুম প্যাঁচা’র কথা তুলে ধরতে চাই। ভুতুম প্যাঁচা ছদ্মনাম নিয়ে এক অধ্যাপিকা প্রায়ই মুসলিম সমাজ ও ইসলামকে কটাক্ষ করে থাকেন। ওইদিন সমকামিতা প্রচারে ব্যবহৃত ঈদ অনুষ্ঠানের উল্লেখ করে আচার্য গিরিশচন্দ্র কলেজের ইংরেজির অধ্যাপিকা নাসিমা ইসলাম বলেছেন, নিজামের মতে, সমকামিতা হলে আরশ কাঁপতে থাকে। অবশ্য ব্যঙ্গ করেই হয়তো আল্লাহ্র সিংহাসন বা আরশকে তিনি বিকৃত করে লিখেছেন ‘আড়োস’। এরপরই নাসিমা ইসলামের বক্তব্য যা তিনি পোস্ট করেছেন তাহল, ‘এরপরেও আমরা বুঝব না মুসলিম সমাজের আসল শত্রু কারা যারা কমিউনিটির মধ্যে বাসা বেঁধে ভেতর থেকে এতটা ক্ষতি করছে এবং কোনও মুক্ত চিন্তাকে ডানা মেলতে দিচ্ছে না? এতখানি অন্তর্নিহিত ডগমা নিয়ে একটা মাইনরিটি কমিউনিটি অন্য আর এক মাইনরিটিইজড আইডেন্টিটির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে তারপর আশা করে যে, তারা বৃহত্তর রাজনৈতিক-সামাজিক সলিডারিটি গড়ে তুলবে নিজেদের উপর হওয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে?
তারপর ওই পোস্টে অধ্যাপিকা লিখেছেন একটি অশ্লীল কথা। ‘আআর ইউ ফাকিং, কিডিং ইয়োরসেলফ? একজন অধ্যাপিকা যাকে ছাত্রছাত্রীদের শ্রদ্ধা করার কথা, তিনি ‘ফাকিং’ শব্দ ব্যতীত আর কোনও বিকল্প শধ খুঁজে পেলেন না। হয়তো তিনি ইংরেজি পড়ানো প্রগ্রেসিভ, তাই ‘ফাকিং’ শধটি তাঁর কাছে আপত্তিজনক নয়, বরং ‘জলবততরলং’। আর সমকামিতার সপক্ষে তিনি বলছেন, যারা সমকামিতার বিরুদ্ধে তারা হচ্ছে মুসলিম সমাজের ‘আসল শত্রু’। তারা সমকামিতার সঙ্গে না থেকে (মুসলিম সমাজের) বিরাট ক্ষতি করে দিচ্ছে। আর একটি সমকামি সম্প্রদায়কে তিনি বলছেন, ‘মুসলিমদের মতো তারাও মাইনরিটি। এদেরকে সমর্থন না করে মুসলিমরা কী করে মুসলিমদের উপর হওয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর রাজনৈতিক-সামাজিক সলিডারিটি গড়ে তুলবে’?
খুব ভালো কথা ভুতুম প্যাঁচা! তাহলে যেসব পুরুষ বা নারী পশুমৈথুনে আগ্রহী, তারাও তো মাইনরিটি! ধরা পড়তে ভারতে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়। ভুতুম প্যাঁচা তো একটি পাখি। পশুদের প্রতি মানুষের যৌনপ্রেমে তাঁর তো সমর্থন করার কথা। তাঁর বক্তব্য অনুসারে আশা করা যায়, তিনি পশুমৈথুনকারী নারী-পুরুষদের পাশেও দাঁড়াবেন। আর তিনি লিখেছেন, মুসলিমরা নাকি ‘মুক্ত চিন্তা-ভাবনাকে ডানা মেলতে দিচ্ছে না’। এই ভুতুম প্যাঁচাদের সম্পর্কেই হয়তো দ্বিজেন্দ্রলাল রায় লিখেছিলেন, ‘ভ্যালারে ন¨, বেঁচে থাক চিরকাল’। যারা নিজাম পারভেজের পাঁচ মিনিটের স্বাধীন বক্তব্য সহ্য করতে না পেরে, তাঁর কাছ থেকে মাইক কেড়ে, ধাক্কা মেরে, গেটআউট বলে হল বের করে দিল। আর বেস-এর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে তাঁকে এবং সমমতাবলম্বী না হলে অন্যদেরও বেস-এর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এই হচ্ছে নাসিমা এবং কোং-এর মুক্ত চিন্তার বহর।
এরকম আরও অনেকে আছেন, যারা পবিত্র কুরআনের শিক্ষা, হাদিস ও ইসলামের চিন্তাবিদদের কথা না মেনে সমকামিতা প্রচার করা, প্র্যাক্টিস করা, সমাজে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নিরলস কাজ করে চলেছেন। এদের কথা হয়তো পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করা হবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সমকামিতা নিয়ে নেট-যুদ্ধ হওয়ার পর তা কিছুটা স্তিমিত হয়ে এলে মনে করা হয়েছিল, এ বিষয়ে পত্রিকায় আর লেখালেখি করা হবে না। কিন্তু বেস-এর সমর্থকরা থেমে নেই। নেট-লড়াই স্তিমিত হওয়ার পর তারা ময়দানে নামিয়েছেন বিজেপি সরকারের দ্বারা পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত কাজী মাসুম আখতার।
তিনি এক ভিডিয়ো সাক্ষাৎকারে হিজাব থেকে শুরু করে মুসলিমদের বহু আচরণ ও প্রথার নিন্দা করেছেন। আর সমর্থন করেছেন সমকামিতাকে। বলেছেন, ঈদ মিলন অনুষ্ঠানে সমকামিতার পক্ষে কবিতা এবং সমকামিতার প্রচার-প্রসার করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা বেস এবং ওই মহিলা কবির রয়েছে। তিনি তাঁর মতে, মুসলিম পরিচালিত একটি দৈনিক পত্রিকাকেও আক্রমণ করেছেন। ওই দৈনিক পত্রিকা নাকি ফতোয়া দিয়ে চলেছে! কিন্তু কাজী মাসুম আখতার পদ্মশ্রী-র জানা উচিত, পত্রিকার কাজ ফতোয়া দেওয়া নয়। তবে অবশ্যই পত্রিকা সংবাদ পরিবেশ করে এবং করবে। তাতেই মাসুমবাবুর আপত্তি। তিনি একজন শিক্ষক এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক। তার উপর মোদিজির সঙ্গে তাঁর ছবিও রয়েছে। কাজেই তাঁর গুরুত্ব ভারতবর্ষে অপরিসীম। সেই মাসুম আখতার নিদান দিয়েছেন, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বললে সমকামিতাকে সবাইকে মেনে নিতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট কোনও রায় বা পরামর্শ দেওয়ার পরও কেউ যদি তা ব্যক্তি জীবনে পালন না করে, তাহলে মনে হয় না সুপ্রিম কোর্টের অবমাননা হবে! যদি সুপ্রিম কোর্ট বলে, দুর্ভিক্ষের সময় ভারতের সকলের গো-মাংস ও শূকরের মাংস ব্যবহারে বাধা নেই, আর যদি মুসলিম এবং ইহুদিরা এরপরও শূকরের মাংস ভক্ষণ না করে, তাহলে কাজী মাসুম আখতারের খুব গোঁসা হলেও কোনও আইন কিন্তু লঙ্ঘন হবে না!

এই মাসুম আখতার এক সময় মেটিয়াবুরুজের একটি মেয়েদের মাদ্রাসা প্রধানশিক্ষক ছিলেন। সে-সময় তিনি সমস্ত মিডিয়ায় প্রচার করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসা জাতীয় সংগীত গাওয়া বারণ, বারণ জাতীয় পতাকা তোলাও ইত্যাদি ইত্যাদি। আর এই মাদ্রাসার একটু উঁচু ক্লাসের মেয়েরা মেটিয়াবুরুজ থানায় যে চিঠি লিখে তাঁর সম্পর্কে যে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তা আমাদের কাছে রয়েছে। কেন প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের থানায় যেতে হয়েছিল, সে-সব কথা কাজী মাসুম আখতার হয়তো ভুলে যাননি। যে ভদ্রলোকেরা সমকামিতা, অবাধ যৌনতায় বিশ্বাস করেন, এগুলিকে ব্যক্তি স্বাধীনতা মনে করেন, সেইসব লোকেদের কাছে বেশি আর কি আশা করা যেতে পারে।