১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘থ্যালাসেমিয়া নিয়েও কি সুখী জীবন সম্ভব?’ যোদ্ধাদের আলোচনাসভা

চামেলি দাস
  • আপডেট : ৩ মে ২০২৫, শনিবার
  • / 110

রমিত বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রতিবেদক: থ্যালাসেমিয়ার নামেই আতঙ্ক দেখা যায় আমাদের সমাজে। রবিবার ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্মানো একাদশ শ্রেণির ছাত্রী থ্যালাসেমিয়া যোদ্ধা মাহিকা গোস্বামী, তার মা শ্রাবণী দাস ও তার পরিবারের উদ্যোগে এক আলোচনাসভা আয়োজন করা হয় এজিসি বোস রোডের স্রাচী সেন্টারের এক কনফারেন্স রুমে। এদিনের আলোচনা সভায় কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, নিউটউন, হাওড়া-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় ৬০ জন থ্যালাসেমিয়া যোদ্ধা এবং তাদের পরিবার এই আলোচনা সভায় যোগ দেন। অনুষ্ঠানে আসা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা নেয়।

থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জীবনযুদ্ধের পাশাপাশি যে এক সুখী জীবন-যাপন করাও সম্ভব? এই অনুষ্ঠানের বেশকিছু থ্যালাসেনিয়া যোদ্ধারা ‘উপায়’ খোঁজার চেষ্টা করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই নিজ নিজ কর্মজীবনে সাফল্যও অর্জন করেছে।

প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. প্রান্তর চক্রবর্তী। একইসঙ্গে এই সভায় বক্তব্য রাখেন এনআরএস হাসপাতালের কাউন্সিলর তথা থ্যালাসেমিয়া যোদ্ধা সুস্মিতা নাথ এবং ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা মাহিকা গোস্বামী। মাহিকা শোনালেন বিদেশে থ্যালাসেমিয়ার সঙ্গে লড়াই করার চিকিৎসা সুবিধা এবং সংগ্রামের কথা জানান।

‘থ্যালাসেমিয়া নিয়েও কি সুখী জীবন সম্ভব?’ যোদ্ধাদের আলোচনাসভা

কথায় আছে, ‘ডাক্তার-শিক্ষকরা সমাজের বন্ধু’। এই আপ্তবাক্যর উপস্থিতি বারবার জানান দিচ্ছিলেন অধ্যাপক ডা. প্রান্তর চক্রবর্তী। যোদ্ধাদের কাছে তাঁর উপস্থিতি এবং ব্যক্তিত্ব যেন এক আশ্রয় এবং প্রশ্রয়ের মেলবন্ধন। এই ইন্টারেক্টিভ সেশনে রোগীদের মনস্তাত্বিক অবস্থা, রোগের সঙ্গে লড়াইয়ের নানান অনুভূতি, হাসপাতাল এবং ব্লাড ব্যাংকের নিয়মিত অভিজ্ঞতা কিছুই বাদ যায়নি।

আরও পড়ুন:‘মোস্ট হোলি রোজারি’ চার্চকে কেন্দ্র করে ক্যালকাটা সিড ও আইএইচএ ফাউন্ডেশনের মানবিক প্রচেষ্টা

 

শোনা গেল, রোগীদের বিভিন্ন জরুরি এবং প্রয়োজনীয় চাহিদার কথা। রক্তের প্রয়োজনে দেড় থেকে দু’ঘণ্টার লাইন দাঁড়ানো অভিজ্ঞতা, ফেনোটাইপ ব্লাডের অপ্রাপ্যতা ও প্রয়োজনীয়তা, সরকারি হাসপাতাল থেকে দেওয়া কিছু ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে অভিযোগ এবং প্রবীণ বয়সে যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে সুরাহার দাবি। তবে ক্যালিফোর্নিয়ার মতো শহরের সঙ্গে তুলনার পরেও উঠে এসেছে কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের যোদ্ধাদের ভালো থাকা এবং সাফল্যের কথাও। কিছুক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আন্তরিকতার কথাও স্বীকার করেন যোদ্ধারা।

এনআরএস হাসপাতালের কাউন্সিলর এবং থ্যালাসেমিয়া যোদ্ধা সুস্মিতা নাথের বক্তব্যে বার বার উঠে আসে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে পজিটিভ ইমোশনকে বাড়ানো এবং ভালো থাকার পদ্ধতির সন্ধানের উপায়ে। সুস্থ জীবন-যাপনের জন্য চিকিৎসার পাশাপাশি নাচ, গান, আবৃত্তি এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার উপদেশও দেন তিনি।

‘থ্যালাসেমিয়া নিয়েও কি সুখী জীবন সম্ভব?’ যোদ্ধাদের আলোচনাসভা

উপস্থিত থ্যালাসেমিয়া যোদ্ধা সোমা, সৌরভ, রাজশ্রী, সুমনার কথায়, ‘আমাদের মতো জীবন এই পৃথিবীতে যেন আর কারও না হয়। সমাজে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে আরও একটু সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়জোনীয়তা রয়েছে। বিবাহের আগে কিছু রক্ত পরীক্ষার মধ্যে এই রোগ নির্মূল করাও সম্ভব বলে আমরা জেনে এসেছি। প্রয়োজনে সরকারি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা আছে।’

মাহিকা গোস্বামী,তার মা শ্রাবণী দাস বললেন, ‘আমার মেয়ের শারীরিকির কষ্টটা প্রতি মুহূর্তে উপলব্ধি করি নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা হাওয়ায় বেশ কিছু চিকিৎসাগত সুবিধা পেয়ে থাকি। মাহিকা একজন ভালো ফটোগ্রাফার। সরীসৃপ নিয়ে ওর অদম্য কৌতূহল। ও খুব ভালো ভায়োলিন বাদক। আমি চাই কলকাতা তথা সারা ভারতবর্ষের থ্যালাসেমিয়া যোদ্ধাদের সঙ্গে আমার মেয়েও যুক্ত হোক এবং এই মারণ রোগের সচেতনতা এবং নির্মূলের প্রয়াসে নিজেকে নিযুক্ত করুক

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

‘থ্যালাসেমিয়া নিয়েও কি সুখী জীবন সম্ভব?’ যোদ্ধাদের আলোচনাসভা

আপডেট : ৩ মে ২০২৫, শনিবার

রমিত বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রতিবেদক: থ্যালাসেমিয়ার নামেই আতঙ্ক দেখা যায় আমাদের সমাজে। রবিবার ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্মানো একাদশ শ্রেণির ছাত্রী থ্যালাসেমিয়া যোদ্ধা মাহিকা গোস্বামী, তার মা শ্রাবণী দাস ও তার পরিবারের উদ্যোগে এক আলোচনাসভা আয়োজন করা হয় এজিসি বোস রোডের স্রাচী সেন্টারের এক কনফারেন্স রুমে। এদিনের আলোচনা সভায় কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, নিউটউন, হাওড়া-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় ৬০ জন থ্যালাসেমিয়া যোদ্ধা এবং তাদের পরিবার এই আলোচনা সভায় যোগ দেন। অনুষ্ঠানে আসা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা নেয়।

থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জীবনযুদ্ধের পাশাপাশি যে এক সুখী জীবন-যাপন করাও সম্ভব? এই অনুষ্ঠানের বেশকিছু থ্যালাসেনিয়া যোদ্ধারা ‘উপায়’ খোঁজার চেষ্টা করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই নিজ নিজ কর্মজীবনে সাফল্যও অর্জন করেছে।

প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. প্রান্তর চক্রবর্তী। একইসঙ্গে এই সভায় বক্তব্য রাখেন এনআরএস হাসপাতালের কাউন্সিলর তথা থ্যালাসেমিয়া যোদ্ধা সুস্মিতা নাথ এবং ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা মাহিকা গোস্বামী। মাহিকা শোনালেন বিদেশে থ্যালাসেমিয়ার সঙ্গে লড়াই করার চিকিৎসা সুবিধা এবং সংগ্রামের কথা জানান।

‘থ্যালাসেমিয়া নিয়েও কি সুখী জীবন সম্ভব?’ যোদ্ধাদের আলোচনাসভা

কথায় আছে, ‘ডাক্তার-শিক্ষকরা সমাজের বন্ধু’। এই আপ্তবাক্যর উপস্থিতি বারবার জানান দিচ্ছিলেন অধ্যাপক ডা. প্রান্তর চক্রবর্তী। যোদ্ধাদের কাছে তাঁর উপস্থিতি এবং ব্যক্তিত্ব যেন এক আশ্রয় এবং প্রশ্রয়ের মেলবন্ধন। এই ইন্টারেক্টিভ সেশনে রোগীদের মনস্তাত্বিক অবস্থা, রোগের সঙ্গে লড়াইয়ের নানান অনুভূতি, হাসপাতাল এবং ব্লাড ব্যাংকের নিয়মিত অভিজ্ঞতা কিছুই বাদ যায়নি।

আরও পড়ুন:‘মোস্ট হোলি রোজারি’ চার্চকে কেন্দ্র করে ক্যালকাটা সিড ও আইএইচএ ফাউন্ডেশনের মানবিক প্রচেষ্টা

 

শোনা গেল, রোগীদের বিভিন্ন জরুরি এবং প্রয়োজনীয় চাহিদার কথা। রক্তের প্রয়োজনে দেড় থেকে দু’ঘণ্টার লাইন দাঁড়ানো অভিজ্ঞতা, ফেনোটাইপ ব্লাডের অপ্রাপ্যতা ও প্রয়োজনীয়তা, সরকারি হাসপাতাল থেকে দেওয়া কিছু ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে অভিযোগ এবং প্রবীণ বয়সে যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে সুরাহার দাবি। তবে ক্যালিফোর্নিয়ার মতো শহরের সঙ্গে তুলনার পরেও উঠে এসেছে কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের যোদ্ধাদের ভালো থাকা এবং সাফল্যের কথাও। কিছুক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আন্তরিকতার কথাও স্বীকার করেন যোদ্ধারা।

এনআরএস হাসপাতালের কাউন্সিলর এবং থ্যালাসেমিয়া যোদ্ধা সুস্মিতা নাথের বক্তব্যে বার বার উঠে আসে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে পজিটিভ ইমোশনকে বাড়ানো এবং ভালো থাকার পদ্ধতির সন্ধানের উপায়ে। সুস্থ জীবন-যাপনের জন্য চিকিৎসার পাশাপাশি নাচ, গান, আবৃত্তি এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার উপদেশও দেন তিনি।

‘থ্যালাসেমিয়া নিয়েও কি সুখী জীবন সম্ভব?’ যোদ্ধাদের আলোচনাসভা

উপস্থিত থ্যালাসেমিয়া যোদ্ধা সোমা, সৌরভ, রাজশ্রী, সুমনার কথায়, ‘আমাদের মতো জীবন এই পৃথিবীতে যেন আর কারও না হয়। সমাজে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে আরও একটু সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়জোনীয়তা রয়েছে। বিবাহের আগে কিছু রক্ত পরীক্ষার মধ্যে এই রোগ নির্মূল করাও সম্ভব বলে আমরা জেনে এসেছি। প্রয়োজনে সরকারি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা আছে।’

মাহিকা গোস্বামী,তার মা শ্রাবণী দাস বললেন, ‘আমার মেয়ের শারীরিকির কষ্টটা প্রতি মুহূর্তে উপলব্ধি করি নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা হাওয়ায় বেশ কিছু চিকিৎসাগত সুবিধা পেয়ে থাকি। মাহিকা একজন ভালো ফটোগ্রাফার। সরীসৃপ নিয়ে ওর অদম্য কৌতূহল। ও খুব ভালো ভায়োলিন বাদক। আমি চাই কলকাতা তথা সারা ভারতবর্ষের থ্যালাসেমিয়া যোদ্ধাদের সঙ্গে আমার মেয়েও যুক্ত হোক এবং এই মারণ রোগের সচেতনতা এবং নির্মূলের প্রয়াসে নিজেকে নিযুক্ত করুক