০১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লাম্পি ভাইরাসে আক্রান্ত গবাদি পশুর দুধ খাওয়া কি নিরাপদ!

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার
  • / 6

বিশেষ প্রতিবেদন: করোনা, মাঙ্কিভাইরাসের পর এবার লাম্পি ভাইরাস আতঙ্ক। গবাদি পশুর শরীরে এই ভাইরাস তার থাবা বসাচ্ছে। ক্রমশই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দেশে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৫টি রাজ্যের প্রায় ২০ লক্ষ প্রাণী এই লাম্পি ভাইরাস চর্মরোগে আক্রান্ত।

মৎস্য, পশুপালন ও দুগ্ধজাত মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লাম্পি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২০ লক্ষ পশু। এই অবস্থায় গবাদি পশুর দুধ খাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

 

চলতি বছরে প্রথম লাম্পি ভাইরাস আক্রান্তের খবর পাওয়া যায় এপ্রিল মাসে গুজরাতে কচ্ছ অঞ্চলে। জুলাইয়ের মধ্যে ৭৫ হাজার গবাদি পশুর মৃত্যু হয়। এর পরে সব থেকে খারাপ অবস্থার খবর পাওয়া যায় রাজস্থান থেকে। অফিসিয়াল তথ্য অনুযায়ী ১৪ লক্ষ গবাদি পশুর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে ১৫টি রাজ্যে সহ কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে এই ভাইরাস তার থাবা বসিয়েছে। সেই রাজ্যগুলি হল গুজরাত, হিমাচল প্রদেশ, পঞ্জাব, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, গোয়া, পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ সহ দিল্লি ও বিহার।

লাম্পি ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে উত্তরপ্রদেশ সরকার চারটি প্রতিবেশী রাজ্যের সঙ্গে গবাদি পশুর ব্যবসা নিষিদ্ধ করেছে এবং ২৮টি জেলার পশুদের আন্তঃরাজ্য চলাচলের উপর একটি “লকডাউন” আরোপ করেছে।

প্রাণী দফতরের মন্ত্রী ধরমপাল সিং শুক্রবার জানিয়েছেন, ২৬,১৯৭ গরু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১৬,৮৭২ জনের চিকিৎসা করানো হয়েছে। গোটা ভারতে প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ গবাদি পশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে।

লাম্পি ভাইরাসের লক্ষণ কি?

এই ভাইরাস ক্যাপ্রিপক্স ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট, যা মানুষের শরীরে প্রভাব ফেলে না। মশা, মাছি, উকুনের মধ্যে দিয়ে এই ভাইরাস গবাদি পশুর শরীরে প্রবেশ করে। সংক্রামিত হলে আক্রান্ত পশুর চামড়ায় গোল গোল চাকা করে দাগ তৈরি করে জায়গাটিকে ফুলিয়ে দেয়। এই চর্মরোগে আক্রান্ত হলে জ্বর, দুধের উৎপাদন কমে যাওয়া, ত্বকে ফোলাভাব, খিদে কমে যাওয়া, নাক দিয়ে জল পড়া, চোখ সব সময় জলে ভরে থাকা এই লক্ষণগুলি ফুটে ওঠে।

গবাদি পশু এই রোগে আক্রান্ত হলে তার দুধ খাওয়া কতখানি নিরাপদ?

আক্রান্ত গবাদি পশুদের দুধ খাওয়া কতখানি নিরাপদ তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ।
এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান ভেটেরিনারি রির্সাচ ইনস্টিটিউটের (আইভিআরআই)-এর বর্ষীয়ান আধিকারিক জানিয়েছেন, লাম্পি একটি নন জুনেটিক সংক্রমণ, যা প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয় না।

আইভিআরআই-র যুগ্ম ডিরেক্টর অশোক কুমার মহান্তি জানিয়েছেন, আক্রান্ত গবাদি পশুর দুধ খাওয়া নিরাপদ। দুধ জাল দিয়ে খাওয়া বা দুধ না ফুটিয়ে খাওয়া এর মধ্যে দুধের গুণমানের কোনও পরিবর্তন হয় না। সময়মতো গবাদি পশুর টিকা দেওয়া হলে এই রোগ এবং দুধ উৎপাদনের উপর এর প্রভাব আটকানো যায়। যদি গবাদি পশু প্রথমবার সংক্রমিত হয় এবং টিকা না দেওয়া হয়, তাহলে দুধ উৎপাদন ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

উল্লেখ্য, লাম্পি ভাইরাস চর্মরোগের ঘটনা ভারতে প্রথম জানা যায় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে, যখন মহারাষ্ট্রে এই ভাইরাসের একটি স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছিল।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

লাম্পি ভাইরাসে আক্রান্ত গবাদি পশুর দুধ খাওয়া কি নিরাপদ!

আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার

বিশেষ প্রতিবেদন: করোনা, মাঙ্কিভাইরাসের পর এবার লাম্পি ভাইরাস আতঙ্ক। গবাদি পশুর শরীরে এই ভাইরাস তার থাবা বসাচ্ছে। ক্রমশই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দেশে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৫টি রাজ্যের প্রায় ২০ লক্ষ প্রাণী এই লাম্পি ভাইরাস চর্মরোগে আক্রান্ত।

মৎস্য, পশুপালন ও দুগ্ধজাত মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লাম্পি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২০ লক্ষ পশু। এই অবস্থায় গবাদি পশুর দুধ খাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

 

চলতি বছরে প্রথম লাম্পি ভাইরাস আক্রান্তের খবর পাওয়া যায় এপ্রিল মাসে গুজরাতে কচ্ছ অঞ্চলে। জুলাইয়ের মধ্যে ৭৫ হাজার গবাদি পশুর মৃত্যু হয়। এর পরে সব থেকে খারাপ অবস্থার খবর পাওয়া যায় রাজস্থান থেকে। অফিসিয়াল তথ্য অনুযায়ী ১৪ লক্ষ গবাদি পশুর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে ১৫টি রাজ্যে সহ কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে এই ভাইরাস তার থাবা বসিয়েছে। সেই রাজ্যগুলি হল গুজরাত, হিমাচল প্রদেশ, পঞ্জাব, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, গোয়া, পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ সহ দিল্লি ও বিহার।

লাম্পি ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে উত্তরপ্রদেশ সরকার চারটি প্রতিবেশী রাজ্যের সঙ্গে গবাদি পশুর ব্যবসা নিষিদ্ধ করেছে এবং ২৮টি জেলার পশুদের আন্তঃরাজ্য চলাচলের উপর একটি “লকডাউন” আরোপ করেছে।

প্রাণী দফতরের মন্ত্রী ধরমপাল সিং শুক্রবার জানিয়েছেন, ২৬,১৯৭ গরু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১৬,৮৭২ জনের চিকিৎসা করানো হয়েছে। গোটা ভারতে প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ গবাদি পশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে।

লাম্পি ভাইরাসের লক্ষণ কি?

এই ভাইরাস ক্যাপ্রিপক্স ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট, যা মানুষের শরীরে প্রভাব ফেলে না। মশা, মাছি, উকুনের মধ্যে দিয়ে এই ভাইরাস গবাদি পশুর শরীরে প্রবেশ করে। সংক্রামিত হলে আক্রান্ত পশুর চামড়ায় গোল গোল চাকা করে দাগ তৈরি করে জায়গাটিকে ফুলিয়ে দেয়। এই চর্মরোগে আক্রান্ত হলে জ্বর, দুধের উৎপাদন কমে যাওয়া, ত্বকে ফোলাভাব, খিদে কমে যাওয়া, নাক দিয়ে জল পড়া, চোখ সব সময় জলে ভরে থাকা এই লক্ষণগুলি ফুটে ওঠে।

গবাদি পশু এই রোগে আক্রান্ত হলে তার দুধ খাওয়া কতখানি নিরাপদ?

আক্রান্ত গবাদি পশুদের দুধ খাওয়া কতখানি নিরাপদ তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ।
এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান ভেটেরিনারি রির্সাচ ইনস্টিটিউটের (আইভিআরআই)-এর বর্ষীয়ান আধিকারিক জানিয়েছেন, লাম্পি একটি নন জুনেটিক সংক্রমণ, যা প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয় না।

আইভিআরআই-র যুগ্ম ডিরেক্টর অশোক কুমার মহান্তি জানিয়েছেন, আক্রান্ত গবাদি পশুর দুধ খাওয়া নিরাপদ। দুধ জাল দিয়ে খাওয়া বা দুধ না ফুটিয়ে খাওয়া এর মধ্যে দুধের গুণমানের কোনও পরিবর্তন হয় না। সময়মতো গবাদি পশুর টিকা দেওয়া হলে এই রোগ এবং দুধ উৎপাদনের উপর এর প্রভাব আটকানো যায়। যদি গবাদি পশু প্রথমবার সংক্রমিত হয় এবং টিকা না দেওয়া হয়, তাহলে দুধ উৎপাদন ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

উল্লেখ্য, লাম্পি ভাইরাস চর্মরোগের ঘটনা ভারতে প্রথম জানা যায় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে, যখন মহারাষ্ট্রে এই ভাইরাসের একটি স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছিল।