১৯ জুলাই ২০২৫, শনিবার, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইরানে মাটির নিচে থাকা পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালাতে অক্ষম ইসরাইল: দাবি ট্রাম্পের, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বার্তা

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ২১ জুন ২০২৫, শনিবার
  • / 190

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ইরানের মাটির গভীরে অবস্থিত পরমাণুকেন্দ্রগুলিতে ইসরাইল কোনও বড়সড় হামলা চালাতে পারবে না—এই মন্তব্য করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার তিনি বলেন, “ইসরাইলের ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত। তারা (ইরানের পরমাণুকেন্দ্রের) ছোট একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে ঠিকই, কিন্তু মাটির গভীরে ঢুকে মূল কেন্দ্র ধ্বংস করার সক্ষমতা তাদের নেই।”

বর্তমানে ইরানে তিনটি সক্রিয় পরমাণুকেন্দ্র রয়েছে, যেগুলিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ফোরদো পরমাণুকেন্দ্র, যা পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রটির সমস্ত কাজ চলে মাটির গভীরে, যা একে সম্ভাব্য সামরিক হামলা থেকে রক্ষা করে। এই সুরক্ষা কৌশল ইরানের প্রতিরক্ষা কৌশলেরই অংশ।

ইতিপূর্বে ইসরাইলি বাহিনী ফোরদো কেন্দ্রে হামলা চালায়। তবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) নিশ্চিত করেছে, তাতে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ফলে প্রশ্ন ওঠে, ফোরদোর মতো কৌশলগত কেন্দ্র ধ্বংসে আসলেই ইসরাইলের সামরিক সক্ষমতা কতটা কার্যকর?

আরও পড়ুন: ‘শত্রুদের হাত কেটে দিয়েছে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র; আবার ভুল করলে আরও কঠোর প্রতিশোধ’, হুঁশিয়ারি ইরানের সেনা প্রধানের

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানায়, ট্রাম্প এখন নিশ্চিত হতে চাইছেন, আমেরিকার ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা ফোরদোর মতো গভীর স্থাপনাকে ধ্বংস করতে পারবে কি না। ট্রাম্প নাকি প্রতিরক্ষা আধিকারিকদের জানিয়েছেন, এই ধরনের আক্রমণ যদি পুরোপুরি সফল না হয়, তবে ইরানে হামলা চালানো বৃথা।

আরও পড়ুন: রাজনীতিতে আসছেন ইমরান খানের দুই ছেলে!

ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ অনুমান করছে, ফোরদো পরমাণুকেন্দ্রটি মাটির প্রায় ৩০০ ফুট (৯০ মিটার) গভীরে অবস্থিত। এই পরিমাণ গভীরতায় প্রচলিত বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে আঘাত হানা প্রায় অসম্ভব। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ইসরাইলের একার পক্ষে এটি ধ্বংস করা দুঃসাধ্য।

আরও পড়ুন: গাজা শিশু ও ক্ষুধার্তদের কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে: রাষ্ট্র সংঘ সংস্থার প্রধানের অভিযোগ

‘ইসরাইলের ক্ষমতা সীমিত’—এই মন্তব্য করে ট্রাম্প মূলত ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা সামনে আনতে চাইছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। তবে ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, “ওটা হবে শেষ পদক্ষেপ।” অর্থাৎ, সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নিতে হলে পরিস্থিতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে।

ট্রাম্প ইতিপূর্বে ঘোষণা করেছিলেন, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে জড়াবে কি না, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনি দুই সপ্তাহের মধ্যে নেবেন। শুক্রবার আবারও তিনি বলেন, “ইরানকে তাদের বক্তব্য জানানোর জন্য কিছুটা সময় দেওয়া হয়েছে।”

মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইরান ও ইসরাইলের সংঘাত নতুন মোড় নিচ্ছে। মাটির নিচে থাকা পরমাণুকেন্দ্র ফোরদো বর্তমানে একটি কৌশলগত প্রতীক হয়ে উঠেছে। ইসরাইলের সীমিত ক্ষমতা ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ ইঙ্গিত দিচ্ছে, সামনে এক বড় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে গোটা বিশ্ব।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ইরানে মাটির নিচে থাকা পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালাতে অক্ষম ইসরাইল: দাবি ট্রাম্পের, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বার্তা

আপডেট : ২১ জুন ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ইরানের মাটির গভীরে অবস্থিত পরমাণুকেন্দ্রগুলিতে ইসরাইল কোনও বড়সড় হামলা চালাতে পারবে না—এই মন্তব্য করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার তিনি বলেন, “ইসরাইলের ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত। তারা (ইরানের পরমাণুকেন্দ্রের) ছোট একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে ঠিকই, কিন্তু মাটির গভীরে ঢুকে মূল কেন্দ্র ধ্বংস করার সক্ষমতা তাদের নেই।”

বর্তমানে ইরানে তিনটি সক্রিয় পরমাণুকেন্দ্র রয়েছে, যেগুলিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ফোরদো পরমাণুকেন্দ্র, যা পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রটির সমস্ত কাজ চলে মাটির গভীরে, যা একে সম্ভাব্য সামরিক হামলা থেকে রক্ষা করে। এই সুরক্ষা কৌশল ইরানের প্রতিরক্ষা কৌশলেরই অংশ।

ইতিপূর্বে ইসরাইলি বাহিনী ফোরদো কেন্দ্রে হামলা চালায়। তবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) নিশ্চিত করেছে, তাতে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ফলে প্রশ্ন ওঠে, ফোরদোর মতো কৌশলগত কেন্দ্র ধ্বংসে আসলেই ইসরাইলের সামরিক সক্ষমতা কতটা কার্যকর?

আরও পড়ুন: ‘শত্রুদের হাত কেটে দিয়েছে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র; আবার ভুল করলে আরও কঠোর প্রতিশোধ’, হুঁশিয়ারি ইরানের সেনা প্রধানের

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানায়, ট্রাম্প এখন নিশ্চিত হতে চাইছেন, আমেরিকার ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা ফোরদোর মতো গভীর স্থাপনাকে ধ্বংস করতে পারবে কি না। ট্রাম্প নাকি প্রতিরক্ষা আধিকারিকদের জানিয়েছেন, এই ধরনের আক্রমণ যদি পুরোপুরি সফল না হয়, তবে ইরানে হামলা চালানো বৃথা।

আরও পড়ুন: রাজনীতিতে আসছেন ইমরান খানের দুই ছেলে!

ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ অনুমান করছে, ফোরদো পরমাণুকেন্দ্রটি মাটির প্রায় ৩০০ ফুট (৯০ মিটার) গভীরে অবস্থিত। এই পরিমাণ গভীরতায় প্রচলিত বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে আঘাত হানা প্রায় অসম্ভব। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ইসরাইলের একার পক্ষে এটি ধ্বংস করা দুঃসাধ্য।

আরও পড়ুন: গাজা শিশু ও ক্ষুধার্তদের কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে: রাষ্ট্র সংঘ সংস্থার প্রধানের অভিযোগ

‘ইসরাইলের ক্ষমতা সীমিত’—এই মন্তব্য করে ট্রাম্প মূলত ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা সামনে আনতে চাইছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। তবে ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, “ওটা হবে শেষ পদক্ষেপ।” অর্থাৎ, সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নিতে হলে পরিস্থিতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে।

ট্রাম্প ইতিপূর্বে ঘোষণা করেছিলেন, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে জড়াবে কি না, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনি দুই সপ্তাহের মধ্যে নেবেন। শুক্রবার আবারও তিনি বলেন, “ইরানকে তাদের বক্তব্য জানানোর জন্য কিছুটা সময় দেওয়া হয়েছে।”

মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইরান ও ইসরাইলের সংঘাত নতুন মোড় নিচ্ছে। মাটির নিচে থাকা পরমাণুকেন্দ্র ফোরদো বর্তমানে একটি কৌশলগত প্রতীক হয়ে উঠেছে। ইসরাইলের সীমিত ক্ষমতা ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ ইঙ্গিত দিচ্ছে, সামনে এক বড় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে গোটা বিশ্ব।