১৮ মে ২০২৫, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সামশেরগঞ্জ থানার অধীনে আলিনস্করপুর গ্রামে এক হিন্দু পরিবারের দাবি, তাঁদের ঘরছাড়া করেছে বিজেপির লোকজন, মুসলিমরা নয়- এমনই এক ভাইরাল ভিডিও ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক; পাল্টা প্রতিক্রিয়া তৃণমূল ও বিজেপির, জেলা প্রশাসনের তরফে ঘরছাড়া পরিবারদের ফেরানোর উদ্যোগ চলছে।

‘মুসলিমরা নয়, বিজেপিই আমাদের তাড়িয়েছে’ – সামশেরগঞ্জে ঘরছাড়া হিন্দু পরিবার এর বিস্ফোরক অভিযোগ

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ৩ মে ২০২৫, শনিবার
  • / 205

পুবের কলম ডেস্ক:  ঘরছাড়া হিন্দু পরিবার নিয়ে সামশেরগঞ্জে শুরু হয়েছে প্রবল রাজনৈতিক বিতর্ক। একটি ভাইরাল ভিডিয়ো ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জ থানার আলিনস্করপুর গ্রামে। ভিডিয়োতে এক মহিলা দাবি করেছেন, ‘মুসলিমরা নয়, বিজেপির লোকজনই আমাদের ঘরছাড়া করেছে। আমাদের সমস্ত কিছু লুটপাট করে নিয়ে গেছে।’ এমন অভিযোগে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মহল।

ভাইরাল ভিডিয়োটি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যদিও তার সত্যতা পুবের কলম যাচাই করেনি। তবে এতে এক ঘরছাড়া হিন্দু পরিবারের সদস্যকে স্পষ্টভাবে বলতে শোনা যাচ্ছে, বিজেপির আক্রমণের জেরেই তাঁদের ঘর ছাড়তে বাধ্য হতে হয়েছে। ওই মহিলা বর্তমানে আমুয়া কদমতলা এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি আলিনস্করপুর গ্রামে।

ঘটনার জেরে মুখ খুলেছেন এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী আমিরুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন, ‘স্থানীয় মুসলিমরা নয়, বহিরাগত বিজেপি কর্মীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা হিন্দুদের বাড়িঘর আগলে রেখেছিলাম। কেউ তাঁদের ক্ষতি করার চেষ্টা করেনি।’ তাঁর বক্তব্য, ঘরছাড়া হিন্দু পরিবার নিয়ে গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করার চেষ্টা করছে বিজেপি।

ঘটনায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বেশি সংখ্যায় ঘরছাড়া মানুষ দেখানোর জন্য বিজেপি পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে ভয় দেখাচ্ছে এবং তাঁদের জোর করে ঘরছাড়া করছে। এমনকি তাঁদের বক্তব্য, বিজেপি চক্রান্ত করে এমন ভিডিয়ো ছড়াচ্ছে যাতে তৃণমূল ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা যায়।

পাল্টা প্রতিক্রিয়া এসেছে বিজেপির দিক থেকেও। জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি সুবলচন্দ্র ঘোষ অভিযোগ করেন, ‘ওই মহিলা তৃণমূল নেতাদের শেখানো বুলি আওড়াচ্ছেন। এই ঘটনার সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। তৃণমূল রাজনৈতিকভাবে বিজেপিকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছে।’

অন্যদিকে তৃণমূল বিধায়ক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিজেপি নেতাদের সত্যি কথা শোনার অভ্যাস নেই। তাঁরা প্রতিদিন মিথ্যা বলেই দিন শুরু করেন। এখন সকলকেই তাঁদের মতো মনে করেন।’

ঘরছাড়া হিন্দু পরিবারকে নিয়ে শুরু হওয়া এই বিতর্কের মধ্যেই জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, অশান্তির সময় প্রায় ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছিলেন। প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকায় তাঁরা ধীরে ধীরে বাড়ি ফিরছেন। রবিবার ১৯ জন, সোমবার ৪৯ জন ও মঙ্গলবার কয়েকশো মানুষকে তাঁদের ঘরে ফেরানো সম্ভব হয়েছে।

জঙ্গিপুর পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, বুধবার আরও ছয়টি ঘরছাড়া পরিবারকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বাকি পরিবারগুলিকেও দ্রুত ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে।

এই মুহূর্তে আলিনস্করপুর, আমুয়া, কদমতলা-সহ বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে প্রশাসনের নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ এবং প্রশাসন চেষ্টা করছে যাতে পরিস্থিতি আর উত্তপ্ত না হয় এবং ঘরছাড়া হিন্দু পরিবার সহ সকল নাগরিক নিরাপদে নিজ ঘরে ফিরতে পারেন।

এই গোটা ঘটনায় রাজনৈতিক তরজা যেমন তীব্র হয়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষ উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠছে, ঘরছাড়া হওয়ার পেছনে দায়ী কে— রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র নাকি সত্যিকারের দাঙ্গার আশঙ্কা? উত্তর খুঁজছে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

সামশেরগঞ্জ থানার অধীনে আলিনস্করপুর গ্রামে এক হিন্দু পরিবারের দাবি, তাঁদের ঘরছাড়া করেছে বিজেপির লোকজন, মুসলিমরা নয়- এমনই এক ভাইরাল ভিডিও ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক; পাল্টা প্রতিক্রিয়া তৃণমূল ও বিজেপির, জেলা প্রশাসনের তরফে ঘরছাড়া পরিবারদের ফেরানোর উদ্যোগ চলছে।

‘মুসলিমরা নয়, বিজেপিই আমাদের তাড়িয়েছে’ – সামশেরগঞ্জে ঘরছাড়া হিন্দু পরিবার এর বিস্ফোরক অভিযোগ

আপডেট : ৩ মে ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম ডেস্ক:  ঘরছাড়া হিন্দু পরিবার নিয়ে সামশেরগঞ্জে শুরু হয়েছে প্রবল রাজনৈতিক বিতর্ক। একটি ভাইরাল ভিডিয়ো ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জ থানার আলিনস্করপুর গ্রামে। ভিডিয়োতে এক মহিলা দাবি করেছেন, ‘মুসলিমরা নয়, বিজেপির লোকজনই আমাদের ঘরছাড়া করেছে। আমাদের সমস্ত কিছু লুটপাট করে নিয়ে গেছে।’ এমন অভিযোগে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মহল।

ভাইরাল ভিডিয়োটি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যদিও তার সত্যতা পুবের কলম যাচাই করেনি। তবে এতে এক ঘরছাড়া হিন্দু পরিবারের সদস্যকে স্পষ্টভাবে বলতে শোনা যাচ্ছে, বিজেপির আক্রমণের জেরেই তাঁদের ঘর ছাড়তে বাধ্য হতে হয়েছে। ওই মহিলা বর্তমানে আমুয়া কদমতলা এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি আলিনস্করপুর গ্রামে।

ঘটনার জেরে মুখ খুলেছেন এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী আমিরুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন, ‘স্থানীয় মুসলিমরা নয়, বহিরাগত বিজেপি কর্মীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা হিন্দুদের বাড়িঘর আগলে রেখেছিলাম। কেউ তাঁদের ক্ষতি করার চেষ্টা করেনি।’ তাঁর বক্তব্য, ঘরছাড়া হিন্দু পরিবার নিয়ে গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করার চেষ্টা করছে বিজেপি।

ঘটনায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বেশি সংখ্যায় ঘরছাড়া মানুষ দেখানোর জন্য বিজেপি পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে ভয় দেখাচ্ছে এবং তাঁদের জোর করে ঘরছাড়া করছে। এমনকি তাঁদের বক্তব্য, বিজেপি চক্রান্ত করে এমন ভিডিয়ো ছড়াচ্ছে যাতে তৃণমূল ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা যায়।

পাল্টা প্রতিক্রিয়া এসেছে বিজেপির দিক থেকেও। জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি সুবলচন্দ্র ঘোষ অভিযোগ করেন, ‘ওই মহিলা তৃণমূল নেতাদের শেখানো বুলি আওড়াচ্ছেন। এই ঘটনার সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। তৃণমূল রাজনৈতিকভাবে বিজেপিকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছে।’

অন্যদিকে তৃণমূল বিধায়ক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিজেপি নেতাদের সত্যি কথা শোনার অভ্যাস নেই। তাঁরা প্রতিদিন মিথ্যা বলেই দিন শুরু করেন। এখন সকলকেই তাঁদের মতো মনে করেন।’

ঘরছাড়া হিন্দু পরিবারকে নিয়ে শুরু হওয়া এই বিতর্কের মধ্যেই জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, অশান্তির সময় প্রায় ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছিলেন। প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকায় তাঁরা ধীরে ধীরে বাড়ি ফিরছেন। রবিবার ১৯ জন, সোমবার ৪৯ জন ও মঙ্গলবার কয়েকশো মানুষকে তাঁদের ঘরে ফেরানো সম্ভব হয়েছে।

জঙ্গিপুর পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, বুধবার আরও ছয়টি ঘরছাড়া পরিবারকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বাকি পরিবারগুলিকেও দ্রুত ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে।

এই মুহূর্তে আলিনস্করপুর, আমুয়া, কদমতলা-সহ বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে প্রশাসনের নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ এবং প্রশাসন চেষ্টা করছে যাতে পরিস্থিতি আর উত্তপ্ত না হয় এবং ঘরছাড়া হিন্দু পরিবার সহ সকল নাগরিক নিরাপদে নিজ ঘরে ফিরতে পারেন।

এই গোটা ঘটনায় রাজনৈতিক তরজা যেমন তীব্র হয়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষ উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠছে, ঘরছাড়া হওয়ার পেছনে দায়ী কে— রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র নাকি সত্যিকারের দাঙ্গার আশঙ্কা? উত্তর খুঁজছে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ।