ডব্লিউবিসিএস অফিসার: আর্থিক দূরাবস্থার মধ্যেও স্বপ্নপূরণ জীবনতলার জাহাঙ্গীর মোল্লার

- আপডেট : ৯ জুন ২০২৫, সোমবার
- / 159
নাজির হোসেন লস্কর, ক্যানিং: বাংলার অন্যতম কঠিন পরীক্ষা পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস (ডব্লিউবিসিএস)। হাজার হাজার শিক্ষার্থী স্বপ্ন দেখে, সিভিল সার্ভিসে যোগ দিয়ে সেবা করার। বারবার চেষ্টা করেও অনেকে ব্যর্থ হন, আবার কেউ কেউ প্রথম চেষ্টাতেই নজরকাড়া সাফল্য অর্জন করেন। তেমনই এক অনুপ্রেরণামূলক নাম জাহাঙ্গীর মোল্লা। প্রথম চেষ্টাতেই ডব্লিউবিসিএস ২০২২ প্রিলিমস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর ধাপে ধাপে মেইনস, পার্সোনালিটি টেস্টের পর আজ স্বপ্নপূরণ৷ শীঘ্রই যোগ দেবেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রেভিনিউ সার্ভিসের ডব্লুবিসিএস গ্রুপ ‘এ’ আধিকারিক হিসেবে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ক্যানিংয়ের জীবনতলা থানা এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম দেউলির বাসিন্দা জাহাঙ্গীর মোল্লা৷ অত্যন্ত গরিব পরিবার থেকে উঠে আসা এই কৃতীর আব্বা আইয়ুব আলি মোল্লা ছিলেন সামান্য ফেরিওয়ালা৷ মা রাবিয়া মোল্লা গৃহবধূ৷ জাহাঙ্গীরের কথায়, তাঁর আব্বা খুব কষ্ট করে মানুষ করেছেন। কলকাতার বড়বাজার থেকে কষ্ট করে বস্ত্র কিনে হাটে–বাজারে বসতেন বিক্রির জন্য৷ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সাইকেলে চেপে পাড়ায় পাড়ায় ফেরি করতেন নতুন জামাকাপড় নিয়ে৷ পরিস্থিতি দেখে ছোটবয়সে লিজে নেওয়া চাষের জমিতে আব্বার সঙ্গে কাজে হাত লাগাতেন জাহাঙ্গীর৷ তাঁদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকলেও ছেলের পড়াশুনার প্রতি সদা নজর রাখতেন৷ জাহাঙ্গীর বলেন, আব্বা এখন শারীরিক ভাবে অক্ষম৷ আমার বন্ধু–বান্ধব সকলেই চাকরি করলেও আমি সামান্য মনরেগার গ্রাম রোজগার সহায়ক হিসেবে পঞ্চায়েতে কাজ করি৷ বিষয়টি আব্বা–মায়ের চোখে একটা উদ্বিগ্নতা লক্ষ্য করা যেত৷ আজ তাঁরা খুবই খুশি৷
ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র জাহাঙ্গীর মোল্লা মাধ্যমিকে ধুতুরদহ কল্যাণ পরিষদ হাইস্কুলে প্রায় ৭৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে৷ বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ থাকায় ২৪ কিমি দূরে ভাঙড় হাইস্কুলে ভর্তি হন৷ পড়াশুনোর চাপ ও দূরত্বে সময় ব্যয়ে চাষের কাজে আর আব্বার সঙ্গে সময় দিতে পারতেন না জাহাঙ্গীর৷ ২০১১ সালে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান শাখায় স্কুলের টপার হন৷ গণিতে পেয়েছিলেন ৯৮ শতাংশ৷ এই বিষয়ের প্রতি ছিল তাঁর ভালোবাসা৷ অর্নাস স্নাতকে প্রায় ৭৬ শতাংশ নম্বর নিয়ে মওলানা আজাদ কলেজ থেকে উত্তীর্ণ হন৷ স্নাতকোত্তর শেষ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজ থেকে৷
প্রথমে শিক্ষকতার ইচ্ছে থাকলেও পরে মত বদল করেন৷ এরমধ্যেই সংসার পাতেন৷ ২০২০ সালে সন্তান জন্মের পরেই শুরু করেন বিসিএসের প্রস্তুতি৷ এ বিষয়ে উদ্ভুদ্ধ করতেন তাঁর স্ত্রীও৷ মেন্টর সিরাজুল ইসলামের ভূমিকার কথাও তিনি ভোলেননি৷ যিনি এই প্রস্তুতির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাহায্য করেছেন জানান জাহাঙ্গীর মোল্লা৷
আজ শুধু নিজের স্বপ্ন পূরণই করেননি, মানসিক হতাশা কাটিয়ে তুলতে পেরেছেন তাঁর গর্বিত আব্বা–মার৷ তিনি হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর জন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছেন। দারিদ্র্য ও সীমাবদ্ধতার সত্ত্বেও কীভাবে দৃঢ় সংকল্প, কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাস দিয়ে সাফল্য অর্জন করা যায়, তার জ্বলন্ত উদাহরণ এই জাহাঙ্গীর মোল্লা।