০১ অক্টোবর ২০২৫, বুধবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিহার এসআইআর: মুসলিম অধ্যুষিত জেলাগুলি থেকেই সর্বাধিক নাম বাদ

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৩ অগাস্ট ২০২৫, রবিবার
  • / 322

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: বিজেপি মহিলাদের ক্ষমতায়নের কথা বলে অথচ, বিহারে এসআইআর (ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধন)-এর যে খসড়া রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে তাতে দেখা গিয়েছে, ভোটার তালিকা থেকে যাদের নাম বাদ পড়েছে তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি মহিলা। তথ্য ও পরিসংখ্যান বলছে, নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত খসড়া তালিকা থেকে ৫৫ শতাংশের বেশি মহিলার নাম বাদ পড়েছে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল-রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত ১০ জেলার মধ্যে ৫ জেলা থেকেই সর্বাধিক নাম বাদ পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীদের অভিযোগ, বেছে বেছে মুসলিমদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। বিরোধীদের আরও অভিযোগ, রাজ্যের বড় অংশের মুসলিম ভোটার বিজেপিকে ভোট দিতে আগ্রহী নয়। সেটা গেরুয়া শিবির ভালো করেই জানে। আর সেজন্যই মুসলিমদের ভোটার তালিকার বাইরে রাখার চক্রান্ত হচ্ছে।

বিহারের একটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলা গোপালগঞ্জ। এখানে প্রায় ২০ শতাংশ মুসলিম। এই জেলা থেকে সর্বাধিক নাম বাদ গিয়েছে। নাম বাদ যাওয়ার নিরিখে রাজ্যের জেলাগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে এই গোপালগঞ্জ। এই জেলা থেকে সর্বাধিক ১৫.১ শতাংশ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে। এর ফলে এই গোপালগঞ্জ জেলার গোপালগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ১৮.২৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। যদিও নির্বাচন কমিশনের তরফে দাবি করা হয়েছে, তাদের খসড়া তালিকা থেকে ৬৫.৬ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে।

আরও পড়ুন: সোনম ওয়াংচুকের গ্রেফতারিতে ক্ষোভ, বিজেপিকে আক্রমণ উদ্ধব ঠাকরের

 

আরও পড়ুন: গ্রেফতার Sonam Wangchuk! ‘তৈরিই ছিলাম’ বললেন লাদাখের ‘র‍্যাঞ্চো’

তাদের মধ্যে ২২.৩ লক্ষ ভোটারের মৃত্যু হয়েছে। ৩৬.৩ লক্ষ ভোটার পাকাপাকিভাবে অন্যত্র চলে গিয়েছে অথবা এসআইআর-এর সময় অনুপস্থিত ছিল। আর ৭ লক্ষ ভোটারের নাম একাধিক কেন্দ্রের ভোটার হিসেবে রেজিস্টার্ড ছিল। কমিশনের প্রকাশিত তথ্য থেকে স্পষ্ট-২৪৩ বিধানসভা আসন বিশিষ্ট বিহারে ৪৩টি এমন আসন রয়েছে যেখানে ভোটার খসড়া তালিকা থেকে যাদের নাম বাদ পড়েছে তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি শুধু মহিলা রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিহারে ভোটার তালিকায় মহিলাদের উপস্থিতি ছিল ৪৭.৭ শতাংশ। এসআইআর-এর পর তা নেমে এসেছে ৪৭.২ শতাংশে।

আরও পড়ুন: বেশি অপরাধ বজরং, আরএসএস-এর, বলেও সিদ্ধারামাইয়া নির্দোষ কোর্টে

 

দক্ষিণ বিহারের কাইমুর জেলার রাজপুর আসনটি এসসি ভোটারদের জন্য সংরক্ষিত। এই আসন থেকে ৬৯ শতাংশ মহিলার নাম বাদ পড়েছে, যা অন্যান্য আসনের তুলনায় সর্বাধিক। এরপরই রয়েছে এই জেলার বেরাহামপুর আসন। সেখান থেকে ৬৩ শতাংশ মহিলা ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে। আর জেলার নিরিখে সবথেকে বেশি সংখ্যক মহিলা ভোটারের নাম বাদ পড়েছে কাইমুর জেলা থেকে। এই জেলা থেকে সর্বাধিক ৬৪ শতাংশ মহিলা ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। আর এরপরই রয়েছে বক্সার জেলা। এই জেলা থেকে ৬৩ শতাংশ মহিলা ভোটারের নাম বাদ পড়েছে।

 

আর পুরুষ ভোটারদের নিরিখে সবথেকে বেশি ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে ভোজপুর জেলার বারহারা কেন্দ্র থেকে। এই কেন্দ্র থেকে প্রায় ৭৫ শতাংশ পুরুষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। তবে যে ১০ জেলা থেকে সবথেকে বেশি ভোটারদের নাম বাদ পড়েছে সেই জেলাগুলির মধ্যে ৫টি জেলাই মুসলিম অধ্যুষিত। আর এই ৫ জেলা হল-পুর্ণিয়া, কিষাণগঞ্জ, মধুবনি, ভাগলপুর ও সীতামারহি। বিহারে মোট জেলা ৩৮টি। অভিযোগ, এই ৩৮ জেলা থেকে নাম বাদের ক্ষেত্রে মুসলিমদেরই মূলত টার্গেট করা হয়েছে। যে জেলায় মুসলিম ভোটার সবথেকে বেশি সেই জেলা থেকে নাম বাদ পড়ার ঘটনা সর্বাধিক।

 

এককথায়, যে জেলায় যত বেশি মুসলিম ভোটার, সেই জেলা থেকে তত বেশি নাম বাদ। যদিও এসসি (তপশিলি জাতি) ভোটারদের ক্ষেত্রে ছবিটি এর সম্পূর্ণ উলটো। রাজ্যে এসসি ভোটারের সংখ্যা উল্লেখ্যযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও নাম বাদ পড়েছে ততধিক কম। অন্যদিকে রাজ্যে যে ২০টি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে সর্বাধিক সংখ্যায় ভোটারদের নাম বাদ পড়েছে তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে গোপালগঞ্জ জেলার ৬টি বিধানসভা। আর এই ৬ বিধানসভা হল-গোপালগঞ্জ, কুচাইকোট, বারাউলি, হাথুয়া, বৈকণ্ঠপুর ও ভোরে।

 

পুর্ণিয়া জেলার যে তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে সর্বাধিক নাম বাদ পড়েছে সেগুলি হল–পুর্ণিয়া, আমৌর ও ধামদহ। উল্লেখ্য, রাজ্যের কিষাণগঞ্জ জেলায় সর্বাধিক ৬৮ শতাংশ মুসলিমের বাস। এর পাশাপাশি কাটিহার, আরারিয়া, পুর্ণিয়া, দ্বারভাঙ্গা, পশ্চিম চম্পারণ, সীতামারহি, পূর্ব চম্পারণ, ভাগলপুর ও মধুবনিতে মুসলিম জনসংখ্যা যথাক্রমে ৪৪ শতাংশ, ৪৩ শতাংশ, ৩৯ শতাংশ, ২২ শতাংশ, ২২ শতাংশ, ২২ শতাংশ, ১৯ শতাংশ, ১৮ শতাংশ ও ১৮ শতাংশ।

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বিহার এসআইআর: মুসলিম অধ্যুষিত জেলাগুলি থেকেই সর্বাধিক নাম বাদ

আপডেট : ৩ অগাস্ট ২০২৫, রবিবার

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: বিজেপি মহিলাদের ক্ষমতায়নের কথা বলে অথচ, বিহারে এসআইআর (ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধন)-এর যে খসড়া রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে তাতে দেখা গিয়েছে, ভোটার তালিকা থেকে যাদের নাম বাদ পড়েছে তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি মহিলা। তথ্য ও পরিসংখ্যান বলছে, নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত খসড়া তালিকা থেকে ৫৫ শতাংশের বেশি মহিলার নাম বাদ পড়েছে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল-রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত ১০ জেলার মধ্যে ৫ জেলা থেকেই সর্বাধিক নাম বাদ পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীদের অভিযোগ, বেছে বেছে মুসলিমদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। বিরোধীদের আরও অভিযোগ, রাজ্যের বড় অংশের মুসলিম ভোটার বিজেপিকে ভোট দিতে আগ্রহী নয়। সেটা গেরুয়া শিবির ভালো করেই জানে। আর সেজন্যই মুসলিমদের ভোটার তালিকার বাইরে রাখার চক্রান্ত হচ্ছে।

বিহারের একটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলা গোপালগঞ্জ। এখানে প্রায় ২০ শতাংশ মুসলিম। এই জেলা থেকে সর্বাধিক নাম বাদ গিয়েছে। নাম বাদ যাওয়ার নিরিখে রাজ্যের জেলাগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে এই গোপালগঞ্জ। এই জেলা থেকে সর্বাধিক ১৫.১ শতাংশ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে। এর ফলে এই গোপালগঞ্জ জেলার গোপালগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ১৮.২৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। যদিও নির্বাচন কমিশনের তরফে দাবি করা হয়েছে, তাদের খসড়া তালিকা থেকে ৬৫.৬ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে।

আরও পড়ুন: সোনম ওয়াংচুকের গ্রেফতারিতে ক্ষোভ, বিজেপিকে আক্রমণ উদ্ধব ঠাকরের

 

আরও পড়ুন: গ্রেফতার Sonam Wangchuk! ‘তৈরিই ছিলাম’ বললেন লাদাখের ‘র‍্যাঞ্চো’

তাদের মধ্যে ২২.৩ লক্ষ ভোটারের মৃত্যু হয়েছে। ৩৬.৩ লক্ষ ভোটার পাকাপাকিভাবে অন্যত্র চলে গিয়েছে অথবা এসআইআর-এর সময় অনুপস্থিত ছিল। আর ৭ লক্ষ ভোটারের নাম একাধিক কেন্দ্রের ভোটার হিসেবে রেজিস্টার্ড ছিল। কমিশনের প্রকাশিত তথ্য থেকে স্পষ্ট-২৪৩ বিধানসভা আসন বিশিষ্ট বিহারে ৪৩টি এমন আসন রয়েছে যেখানে ভোটার খসড়া তালিকা থেকে যাদের নাম বাদ পড়েছে তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি শুধু মহিলা রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিহারে ভোটার তালিকায় মহিলাদের উপস্থিতি ছিল ৪৭.৭ শতাংশ। এসআইআর-এর পর তা নেমে এসেছে ৪৭.২ শতাংশে।

আরও পড়ুন: বেশি অপরাধ বজরং, আরএসএস-এর, বলেও সিদ্ধারামাইয়া নির্দোষ কোর্টে

 

দক্ষিণ বিহারের কাইমুর জেলার রাজপুর আসনটি এসসি ভোটারদের জন্য সংরক্ষিত। এই আসন থেকে ৬৯ শতাংশ মহিলার নাম বাদ পড়েছে, যা অন্যান্য আসনের তুলনায় সর্বাধিক। এরপরই রয়েছে এই জেলার বেরাহামপুর আসন। সেখান থেকে ৬৩ শতাংশ মহিলা ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে। আর জেলার নিরিখে সবথেকে বেশি সংখ্যক মহিলা ভোটারের নাম বাদ পড়েছে কাইমুর জেলা থেকে। এই জেলা থেকে সর্বাধিক ৬৪ শতাংশ মহিলা ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। আর এরপরই রয়েছে বক্সার জেলা। এই জেলা থেকে ৬৩ শতাংশ মহিলা ভোটারের নাম বাদ পড়েছে।

 

আর পুরুষ ভোটারদের নিরিখে সবথেকে বেশি ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে ভোজপুর জেলার বারহারা কেন্দ্র থেকে। এই কেন্দ্র থেকে প্রায় ৭৫ শতাংশ পুরুষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। তবে যে ১০ জেলা থেকে সবথেকে বেশি ভোটারদের নাম বাদ পড়েছে সেই জেলাগুলির মধ্যে ৫টি জেলাই মুসলিম অধ্যুষিত। আর এই ৫ জেলা হল-পুর্ণিয়া, কিষাণগঞ্জ, মধুবনি, ভাগলপুর ও সীতামারহি। বিহারে মোট জেলা ৩৮টি। অভিযোগ, এই ৩৮ জেলা থেকে নাম বাদের ক্ষেত্রে মুসলিমদেরই মূলত টার্গেট করা হয়েছে। যে জেলায় মুসলিম ভোটার সবথেকে বেশি সেই জেলা থেকে নাম বাদ পড়ার ঘটনা সর্বাধিক।

 

এককথায়, যে জেলায় যত বেশি মুসলিম ভোটার, সেই জেলা থেকে তত বেশি নাম বাদ। যদিও এসসি (তপশিলি জাতি) ভোটারদের ক্ষেত্রে ছবিটি এর সম্পূর্ণ উলটো। রাজ্যে এসসি ভোটারের সংখ্যা উল্লেখ্যযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও নাম বাদ পড়েছে ততধিক কম। অন্যদিকে রাজ্যে যে ২০টি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে সর্বাধিক সংখ্যায় ভোটারদের নাম বাদ পড়েছে তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে গোপালগঞ্জ জেলার ৬টি বিধানসভা। আর এই ৬ বিধানসভা হল-গোপালগঞ্জ, কুচাইকোট, বারাউলি, হাথুয়া, বৈকণ্ঠপুর ও ভোরে।

 

পুর্ণিয়া জেলার যে তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে সর্বাধিক নাম বাদ পড়েছে সেগুলি হল–পুর্ণিয়া, আমৌর ও ধামদহ। উল্লেখ্য, রাজ্যের কিষাণগঞ্জ জেলায় সর্বাধিক ৬৮ শতাংশ মুসলিমের বাস। এর পাশাপাশি কাটিহার, আরারিয়া, পুর্ণিয়া, দ্বারভাঙ্গা, পশ্চিম চম্পারণ, সীতামারহি, পূর্ব চম্পারণ, ভাগলপুর ও মধুবনিতে মুসলিম জনসংখ্যা যথাক্রমে ৪৪ শতাংশ, ৪৩ শতাংশ, ৩৯ শতাংশ, ২২ শতাংশ, ২২ শতাংশ, ২২ শতাংশ, ১৯ শতাংশ, ১৮ শতাংশ ও ১৮ শতাংশ।