ইডেনে শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে প্লে অফের পথে থাকল কলকাতা নাইট রাইডার্স

- আপডেট : ৪ মে ২০২৫, রবিবার
- / 111
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা : শেষ ওভারে রাজস্থানের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২২ রান। বৈভব আরোরার প্রথম বলে ২ রান নেন আর্চার। দ্বিতীয় বলে নেন ১ রান। চার বলে জয়ের জন্য তখনও প্রয়োজন ছিল ১৯ রান। ঠিক তখনই শুভম ছক্কা হাঁকিয়ে নাইটদের চাপে ফেলে দেন। রাসেলের মিস ফিল্ডে পরের বলে বাউন্ডারি হাঁকান শুভম। ওভারের পঞ্চম বলে তিনি আবারও ওভারবাউন্ডারি মারায় শেষ বলে রাজস্থানের জয়ের জন্য ৩ রান প্রয়োজন হয়ে পড়ে। হাতে বাকি এক বল। রাজস্থানের জয়ের দেওয়াল লিখন ক্রমে স্পষ্ট হয়ে আসছিল।
ঠিক তখনই বৈভবের ইয়র্কার সামলাতে ব্যর্থ হলেন শুভম (২৫)। একরান নিয়ে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রান আউট হন তিনি। তাতেই শেষ পর্যন্ত ঘরের মাঠে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসকে ১ রানে হারিয়ে চলতি আইপিএলের প্লে অফের পথে টিকে থাকলেন আজিঙ্কা রাহানেরা।
মাত্র চার জয়ে এবং একটি ম্যাচের অমিমাংসিত ফলাফলের কারণে ৯ পয়েন্টের পুঁজি নিয়ে রবিবার ইডেনে প্লে অফ থেকে ছিটকে যাওয়া রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ডু-অর-ডাই ম্যাচে খেলতে নামে কলকাতা নাইট রাইডার্স। প্লে অফের দৌড়ে থাকতে হলে হাতে থাকা চার ম্যাচের চারটিতেই জিততে হবে, এমন সমীকরণ নিয়ে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন নাইট নেতা আজিঙ্কা রাহানে।ইডেনের ২২গজ রীতিমতো শুকনো, তার ওপর সন্ধেবেলায় শিশির পড়ার সম্ভাবনা না থাকায় সম্ভাবত রাহানে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে অনেকেই জানিয়েছেন। আর সেই মতো পরিকল্পনামাফিক ব্যাটিং করে প্রথম ইনিংসে নিজেদের স্কোরবোর্ডে পাহাড়প্রমাণ ২০৬ রান জমা করে ফেলে নাইটরা।
মে মাসের প্রবল গরমের মধ্যে ইডেনে দুপুরের ম্যাচে মাঠে দর্শক সংখ্যা যে কম থাকবে, সেটা কমবেশি সবার জানা ছিল।তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের তেজ কমতেই ক্রমে ভরতে থাকে ইডেনের ফাঁকা পেট।যদিও শেষ পর্যন্ত দর্শক সংখ্যা ৩৫ হাজারের থেকে বেশি ছিল না। এর জন্য অবশ্য রাজস্থানের আইপিএল থেকে আগে বিদায় নেওয়ার পাশাপাশি ওই দলে তারকাখচিত ক্রিকেটারদের অভাবকে দায়ী করছেন অনেকেই।যদিও তার মধ্যেই এ ম্যাচের মশলা হিসেবে ইডেনের গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন ইংল্যান্ড ফুটবল দলের প্রাক্তন তারকা কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। রাজস্থান রয়্যালসনের সিইও’র সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে আগের ম্যাচেও ওয়াংখেড়েতে দেখা গিয়েছিল সাউথগেটকে। এর পাশাপাশি নাইটদের হয়ে কর্পোরেট বক্সে হাজির ছিলেন দলের মালকিন জুহি চাওলা।
চলতি আইপিএলে ইডেনের এই পিচে আরসিবির বিপক্ষে আগে ব্যাট করে নাইট রাইডার্স ৮ উইকেটের বিনিময়ে তুলেছিল ১৭৪ রান। যদিও পাল্টা ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৬.২ ওভারে ৩ উইকেটের বিনিময়ে জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে গিয়েছিলেন বিরাট কোহলিরা। অথচ সেই একই পিচে এদিনের শুরুটা ব্যাট হাতে তেমন চমকপ্রদ করতে পারেননি সুনীল নারিন, রহমানউল্লাহ গুরবাজ ওপেনিং জুটি।দলের স্কোর বোর্ডে বড় রান জমা করতে গুরবাজ তবুও চেষ্টা করছিলেন। ২৫ বলে ৩৩ রানের ইনিংস খেলার পথে বড় শট খেলতে গিয়ে থিকসানার বলে মিডউইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা হেটমায়ারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন গুরবাজ। সেখানে নাইটদের ব্যাটিং ভরসা নারিন ব্যাট হাতে আবারও ব্যর্থ হলেন। যুধবীর সিংয়ের বলে মাত্র ১১ রান করেই সাজঘরে ফেরেন তিনি।
আঙুলের চোটের কারণে রবিবারের ইডেনে রাহানের খেলা অনিশ্চিত থাকলেও, দলের কঠিন সময়ে ব্যাট হাতে মাঠে নেমে পড়লেন নাইট অধিনায়ক। রাহানে ক্রিজে আসায় নাইটদের রানের গতিও কিছুটা বেড়ে যায়। কঠিন সময়ে দলকে দিশা দেখানোর পাশাপাশি পাওয়ার প্লে’কেও কাজে লাগানোর চেষ্টা চালান তিনি। মাঝে অঙ্গকৃষ রঘুবংশীকে সঙ্গে নিয়ে দলের স্কোরবোর্ড সচল রাখতে গিয়ে উইকেটরক্ষক ধ্রুব জুরেলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। আঙুলে সেলাই নিয়েও রাহানের ২৪ বলে ৩০ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসটি একজন যোগ্য নেতার পরিচয় দিল। ক্রিজের অন্যপ্রান্তে রঘুবংশীও ৪৪ রানের একটা ভদ্রস্থ ইনিংস খেলেন। সেই সময় মনে হচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত ১৬০-১৭০ রানে থেমে যাবে কেকেআরের স্কোর।ঠিক তখনই সবাইকে অবাক করে দলের রক্ষাকর্তার ভূমিকা পালন করে মাত্র ২২ বলে চলতি আইপিএলে নিজের প্রথম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন আন্দ্রে রাসেল। শেষ পর্যন্ত ২৫ বলে ৬টি ছক্কা ও ৪টি চারের সাহায্যে খেলা ৫৭ রানের বহুমূল্যবান একটি ইনিংস খেলে দলকে রীতিমতো স্বস্তি এনে দেন এই ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারটি।অন্যদিকে, শেষবেলায় ৬ বলে ১৯ রানের মারকাটারি ইনিংস খেলে নাইটদের ঝুলিতে ২০৬ রান জমা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেন রিঙ্কু সিংও।
[ আরও পড়ুন: ভারতে বন্ধ করা হল PSL-এর সম্প্রচার ]
নাইটদের স্কোর বোর্ডে ২০৬ রান জমা পড়লেও, প্রতিপক্ষ শিবিরে বৈভব সূর্যবংশী থাকায় মাথায় দুশ্চিন্তার পাহাড় নিয়ে মাঠে নামেন অধিনায়ক রাহানে। কারণ, দু’শো স্কোর ওই বিষ্ময় বালকের সামনে কিছুই নয়, সেটা বৈভব গুজরাত টাইটান্সের বিপক্ষে প্রমাণ দিয়েছিল ৩৫ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে। তবে রবিবাসরীয় ইডেনে নিজের বাবা-মায়ের সামনে বড় ইনিংস খেলতে পারল না ১৪ বছরের ছেলেটি। যদিও ২০৭ রান তাড়া করতে নেমে প্রথম বলটি সে কভার দিয়ে চার মারতেই আনন্দে নেচে ওঠে গোটা ইডেন। কিন্তু তার পরের বলেই বৈভবের সব জারিজুরি শেষ। নাইট পেসার বৈভব আরোরার বল পুল করতে গিয়ে ব্যাটে ঠিকমতো লাগাতে পারেনি। সেই সুযোগে অনেকটা দৌড়ে বাউন্ডারি লাইনের কাছে বৈভবের ক্যাচটি ধরে ছোট্ট ছেলেটির চোখে জল এনে দিলেন রাহানে। মুম্বই ম্যাচের মতো কলকাতাতেও ব্যর্থ হল বৈভব। মাত্র দুই বল খেলে ৪ রান করে আউট হল বিহারের এই জুনিয়র সেহওয়াগ।
[আরও পড়ুন: Gautam Gambhir: পহেলগাঁও হামলায় প্রতিবাদ, গম্ভীরকে হত্যার হুমকি আরএসএস কর্মীর ]
বৈভবের মতো এ ম্যাচেও বড় রান করতে ব্যর্থ হন যশস্বী জয়সওয়াল। মঈন আলির বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ৩৪ রান করে ফেরেন যশস্বী। তার আগে কুনাল সিং রাঠোরকেও শূন্যরানে প্যাভিলিয়নে ফেরান সেই মঈন আলি। এরপরই ধ্রুব জুরেল ও ওয়ানেন্দু হাসারাঙ্গাকে শূন্যরানে ফিরিয়ে ম্যাচে প্রতিপক্ষদের কোণঠাসা করে দেন নাইট স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী। ইডেনে নাইট স্পিনারদের দাপাদাপির মধ্যেও পিচ কামড়ে পড়েছিলেন রাজস্থানের স্টপগ্যাপ অধিনায়ক রিয়ান পরাগ। এর ফাঁকেই মঈন আলির এক ওভারে ৩২ রান নিয়ে পরপর ছ’টা ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচের মোড় একার হাতে ঘুরিয়ে দেন রাজস্থান অধিনায়ক। এর মাঝে হর্ষিত রানার বলে ২৯ রান করে হেটমায়ার হঠাৎ নিজের মূল্যবান উইকেট বিলিয়ে দিলেও, লড়াই জারি রাখেন পরাগ। ৯৩ রানের মাথায় তার নিশ্চিত ক্যাচ রিঙ্কু সিং মিস করলেও, বৈভব মিস করেননি। ম্যাচের অন্তিমলগ্নে হর্ষিতের বলে ৯৫ রান করে আউট হয়ে যান পরাগ। শেষদিকে শুভম দুবে ও জোফ্রা আর্চার (১২) চেষ্টা করলেও, রাজস্থানকে তারা এক অভাবনীয় জয় এনে দিতে পারেননি।