০৭ অগাস্ট ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটার তালিকা ও বাংলা ভাষা ঘিরে জোড়া কৌশল

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ৭ অগাস্ট ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 35

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার তালিকা বিতর্ক এবং বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন – এই দুই বিষয়কে হাতিয়ার করেই বিজেপির বিরুদ্ধে জোড়া আক্রমণের পথে হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের মঞ্চ থেকে রাজ্যবাসীর সামনে তাঁর নির্বাচনী রণকৌশল স্পষ্ট করে দিলেন তিনি।

 

নির্বাচন কমিশনের স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR) নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ নতুন নয়, তবে এদিন তাঁর বক্তব্যে সেই ক্ষোভ আরও জোরালো হয়ে উঠল। মমতার অভিযোগ, “লোকজনকে ভুল বুঝিয়ে ফর্ম ফিলআপ করানো হচ্ছে, পরে তাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। এরপরেই তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে এনআরসি-র নোটিস!”

আরও পড়ুন: রক্ত দেব, কলিজা দেব, বিনাযুদ্ধে এক ইঞ্চি জমি ছাড়ব না, স্লোগান বেঁধে দিলেন মমতা

 

আরও পড়ুন: ‘ভাষা সন্ত্রাস মানব না’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে ফের একবার গর্জে উঠলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

তিনি বলেন, “আমরা মানব না। আদিবাসী, তফসিলি, দলিত, হিন্দু, মুসলিম – সবার নাম ভোটার লিস্টে থাকা উচিত। শুধু EPIC কার্ড থাকলেই হবে না, নতুন করে নাম তোলার নামে চক্রান্ত চলছে। আগে ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও তা যথেষ্ট নয়, নতুন তালিকায় গিয়ে ক্রস-চেক করতে হবে।”

আরও পড়ুন: কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়াতে তৃণমূলের নতুন কৌশল, বৈঠকে বসছেন মমতা

 

মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, “২০০২ সালের আগে যাঁরা ভোটার ছিলেন, তাঁদের কাছ থেকে বাবা-মায়ের বার্থ সার্টিফিকেট চাওয়া হচ্ছে। অথচ তখন ৬০ শতাংশ মানুষের জন্ম শংসাপত্রই ছিল না। ২০০৪-এর পর জন্ম হওয়াদের পক্ষে তো এটা অসম্ভব।”

 

তাঁর তির্যক মন্তব্য, “আমরাও তো হোম ডেলিভারিতে জন্ম নিয়েছি, আমাদের স্কুলের সার্টিফিকেটই আছে। যারা এই নিয়ম করছে, তাদের বাবা-মায়ের সার্টিফিকেট আছে তো? ওরা সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মেছে, খেটে খাওয়া মানুষের যন্ত্রণা বুঝবে কী করে?”

 

বাংলা ভাষা নিয়ে বিজেপি নেতাদের মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মমতা প্রশ্ন তোলেন, “বাংলা ভাষা না থাকলে জাতীয় সঙ্গীত কোন ভাষায় লেখা? রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায়, নেতাজি – এঁরা কোন ভাষায় কথা বলতেন?”

 

তিনি বলেন, “ভাষা মানুষের সম্মান, ভাষা তার গর্ব। অপদার্থগুলো বলছে, বাংলা বলে কোনও ভাষা নেই! এটা অপমান, এটা বাংলার মাটির বিরুদ্ধে অপপ্রচার। ভোটার লিস্টের মতো ভাষার সম্মানও কেউ ছেড়ে দেবে না।”

 

ভোটার তালিকা বিতর্কে প্রশাসনিক আধিকারিকদের ওপর নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধেও মুখ্যমন্ত্রীর কড়া অবস্থান। তিনি বলেন, “সরকারি কর্মচারীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। আমার দুই অফিসারকে নোটিস পাঠানো হয়েছে, সাসপেন্ডও করা হয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করছি, নির্বাচন এখনও ঘোষণা হয়নি, কোন আইনের বলে নোটিস পাঠানো হচ্ছে?”

 

প্রসঙ্গত, ভোটার তালিকা সংশোধনে দায়িত্বে থাকা রাজ্যের দুই ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ERO)-এর বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগে পদক্ষেপ করেছে নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে পাঠানো চিঠিতে ওই দুই আধিকারিকের বিরুদ্ধে FIR-এর সুপারিশ করেছে কমিশন।

 

তবে এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “আমি কারও শাস্তি হতে দেব না। আমার সরকার কর্মীদের পাশে আছে।”

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটার তালিকা ও বাংলা ভাষা ঘিরে জোড়া কৌশল

আপডেট : ৭ অগাস্ট ২০২৫, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার তালিকা বিতর্ক এবং বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন – এই দুই বিষয়কে হাতিয়ার করেই বিজেপির বিরুদ্ধে জোড়া আক্রমণের পথে হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের মঞ্চ থেকে রাজ্যবাসীর সামনে তাঁর নির্বাচনী রণকৌশল স্পষ্ট করে দিলেন তিনি।

 

নির্বাচন কমিশনের স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR) নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ নতুন নয়, তবে এদিন তাঁর বক্তব্যে সেই ক্ষোভ আরও জোরালো হয়ে উঠল। মমতার অভিযোগ, “লোকজনকে ভুল বুঝিয়ে ফর্ম ফিলআপ করানো হচ্ছে, পরে তাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। এরপরেই তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে এনআরসি-র নোটিস!”

আরও পড়ুন: রক্ত দেব, কলিজা দেব, বিনাযুদ্ধে এক ইঞ্চি জমি ছাড়ব না, স্লোগান বেঁধে দিলেন মমতা

 

আরও পড়ুন: ‘ভাষা সন্ত্রাস মানব না’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে ফের একবার গর্জে উঠলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

তিনি বলেন, “আমরা মানব না। আদিবাসী, তফসিলি, দলিত, হিন্দু, মুসলিম – সবার নাম ভোটার লিস্টে থাকা উচিত। শুধু EPIC কার্ড থাকলেই হবে না, নতুন করে নাম তোলার নামে চক্রান্ত চলছে। আগে ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও তা যথেষ্ট নয়, নতুন তালিকায় গিয়ে ক্রস-চেক করতে হবে।”

আরও পড়ুন: কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়াতে তৃণমূলের নতুন কৌশল, বৈঠকে বসছেন মমতা

 

মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, “২০০২ সালের আগে যাঁরা ভোটার ছিলেন, তাঁদের কাছ থেকে বাবা-মায়ের বার্থ সার্টিফিকেট চাওয়া হচ্ছে। অথচ তখন ৬০ শতাংশ মানুষের জন্ম শংসাপত্রই ছিল না। ২০০৪-এর পর জন্ম হওয়াদের পক্ষে তো এটা অসম্ভব।”

 

তাঁর তির্যক মন্তব্য, “আমরাও তো হোম ডেলিভারিতে জন্ম নিয়েছি, আমাদের স্কুলের সার্টিফিকেটই আছে। যারা এই নিয়ম করছে, তাদের বাবা-মায়ের সার্টিফিকেট আছে তো? ওরা সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মেছে, খেটে খাওয়া মানুষের যন্ত্রণা বুঝবে কী করে?”

 

বাংলা ভাষা নিয়ে বিজেপি নেতাদের মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মমতা প্রশ্ন তোলেন, “বাংলা ভাষা না থাকলে জাতীয় সঙ্গীত কোন ভাষায় লেখা? রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায়, নেতাজি – এঁরা কোন ভাষায় কথা বলতেন?”

 

তিনি বলেন, “ভাষা মানুষের সম্মান, ভাষা তার গর্ব। অপদার্থগুলো বলছে, বাংলা বলে কোনও ভাষা নেই! এটা অপমান, এটা বাংলার মাটির বিরুদ্ধে অপপ্রচার। ভোটার লিস্টের মতো ভাষার সম্মানও কেউ ছেড়ে দেবে না।”

 

ভোটার তালিকা বিতর্কে প্রশাসনিক আধিকারিকদের ওপর নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধেও মুখ্যমন্ত্রীর কড়া অবস্থান। তিনি বলেন, “সরকারি কর্মচারীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। আমার দুই অফিসারকে নোটিস পাঠানো হয়েছে, সাসপেন্ডও করা হয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করছি, নির্বাচন এখনও ঘোষণা হয়নি, কোন আইনের বলে নোটিস পাঠানো হচ্ছে?”

 

প্রসঙ্গত, ভোটার তালিকা সংশোধনে দায়িত্বে থাকা রাজ্যের দুই ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ERO)-এর বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগে পদক্ষেপ করেছে নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে পাঠানো চিঠিতে ওই দুই আধিকারিকের বিরুদ্ধে FIR-এর সুপারিশ করেছে কমিশন।

 

তবে এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “আমি কারও শাস্তি হতে দেব না। আমার সরকার কর্মীদের পাশে আছে।”